২
কৌশিককে নিয়ে বাসুসাহেব যখন এয়ারপোর্ট হোটেলের ডাইনিং হলে ঢুকলেন রাত তখন আটটা। হেড স্টুয়ার্ড ওঁকে দেখে এগিয়ে এল। একটা ‘কার্টসি বাও’ করে ইংরেজিতে বলে, এবার অনেকদিন পরে এলেন স্যার। বলুন, কী দেব? আপনার ইউজুয়াল শিভাস রিগাল?
বাসু বললেন না, বাল্টিমোর। আজ ড্রিংক করব না। আমরা দুজন স্রেফ ডিনার খাব— ড্রাই ডিনার; কিন্তু আমি একটা জরুরি ফোন, ফল আশা করছি। তাই এমন একটা জায়গায় আমাদের নিয়ে গিয়ে বসাও যেখান থেকে ফোনটা কাছে হবে। আর অপারেটরকে ব্যাপারটা জানিয়ে রেখ।
হেড স্টুয়ার্ড বললে, আপনি তাহলে ডাইনিং হলে না বসে এই কেবিনটাতে বসুন। আমি অপারেটরকে বলে রাখছি, আপনার কোন ফোন এলে কর্ডলেস টেলিফোনটা এখানে পাঠিয়ে দেবে।
—দ্যাটস ফাইন। চল, কোথায় নিয়ে যেতে চাইছ।
মেনু কার্ড দেখে উনি খাবারের অর্ডার দিলেন। সংক্ষিপ্ত তিন-কোর্সের ডিনার। যাতে প্রয়োজন হলে তাড়াতাড়ি উঠে চলে যেতে পারেন।
নটা বেজে পনের মিনিটে এল প্রথম টেলিফোন। বাসু আত্মঘোষণা করতেই ও প্রান্ত থেকে প্রশ্ন হল, তোমরা ভালভাবে পৌঁছেছ তো? অপরাজিতা কি ফোন করেছে?
—কে রানু? না। তুমি ব্যস্ত হয়ো না। ড্রিঙ্কস নিইনি আমরা। ফিরতে আমাদের রাত হতে পারে। অপরাজিতা এখনো ফোন করেনি।
তিন-কোর্সের সংক্ষিপ্ত ডিনার শেষ হল। বাসু বিল মিটিয়ে দিলেন। এর পরে বসে থাকতে হলে একটা আফটার ডিনার ড্রাই-মার্টিনি নিতেই হয়। কী করবেন স্থির করতে করতেই খিদমদার দ্বিতীয়বার এসে হাজির হল কর্ডলেস ফোনটা নিয়ে : সাব! আপকা ফোন!
বাসু টেলিফোনটা নিয়ে আত্মঘোষণা করতেই ও প্রান্ত থেকে ভেসে এল, শুভ সন্ধ্যা স্যার। আমি অপরাজিতা বলছি।
—কোথা থেকে?
—বারাসাত থেকে মাইল চারেক দূরে দমদমের দিকে একটা পেট্রল পাম্প থেকে।
—তোমার কাজ কেমন হল?
—এভরিথিং ফাইন স্যার, কেউ কিছু সন্দেহ করেনি। মিস্টার পাল যথারীতি অনুপস্থিত। মিসেস পাল জানালেন উনি খুবই দুঃখিত, ঠিক এখনই ওঁরা ‘এইচটুও গার্ড’ যন্ত্রটা কিনতে পারছেন না। পরে জানাবেন বললেন।
বাসু বললেন, তোমাকে জানাবার মতো একটা খবর আছে, অপরাজিতা। আমি ইতিমধ্যে আমার বিশ্বস্ত কেমিস্টের কাছ থেকে রিপোর্ট পেয়েছি। টিস্যু পেপারে ঐ বিশেষ কেমিক্যালটার টেস পাওয়া গেছে!
—গুড গড। এ রকম লোককে তো গুলি করে মেরে ফেলা উচিত!
বাসু বলেন, টেলিফোনে এসব কথা বলতে নেই।
—তা তো বলতে নেই; কিন্তু আপনি আমাকে না জানিয়ে আমার দেহরক্ষীর ব্যবস্থা করেছিলেন কেন? আমি ভীষণ ঘাবড়ে গেছিলাম প্রথমটায়, পরে আন্দাজ হল ও হয় আপনার, না হলে সুকৌশলীর এজেন্ট।
—‘ও’ মানে? ‘ও’ কে? খুলে বলতো?
—আহা! যেন কিছুই জানেন না। যাই হোক, কৌশিকবাবুর সঙ্গে দেখা হলে বলবেন, তাঁর এজেন্ট আমাকে মাঝপথেই রুখে দিয়েছিল। তাকে নিয়েই আমি এই পেট্রল পাম্পে এসেছি। সে তার গাড়ির চাকা মেরামত করাচ্ছে। তাকে আবার সেই রায়চৌধুরী-ভিলার কাছে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরব আমি।
বাসু বলেন, বিশ্বাস কর অপরাজিতা, আমি বা সুকৌশলী কোনও এজেন্টকে বারাসাত পাঠাইনি। তুমি যদি কোনও অজানা লোককে গাড়িতে তুলে থাক তাহলে সে আমাদের লোক নয়। ইম্পস্টার! তুমি আত্মরক্ষা…
কথাটা শেষ হল না। অপরাজিতা বললে, আপনি চিন্তা করবেন না, স্যার। আমার হাতে এখন একটা রিভলভার আছে, তাতে ছয়-ছয়টা তাজা বুলেট। ঐ ইম্পসটারটির যদি বিন্দুমাত্র বেচাল দেখি তাহলে আমি তার বুকের ওপর রিভলভার ঠেকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলব! আপনি চিন্তা করবেন না। ইতিমধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে। কাল সকালেই আপনার সঙ্গে দেখা করে সব কিছু বলব। টিস্যু পেপারের রেজাল্ট যখন পজেটিভ তখন আমি রাত পোহালেই ঐ বাড়ি ছাড়ব। কোনও হোটেলে গিয়ে উঠব। তার আগে সুশোভনের হাতে আপনার কার্ডখানা ধরিয়ে দিতে হবে।
—কেন ওর বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছ তা কি তুমি নির্মলাকে বলে যেতে চাও?
—অফ কোর্স। তার স্বামী…
—না, অপরাজিতা! সুশোভন রায় তোমার নিকটতমা বান্ধবীর স্বামী নয়। আইনের চোখেও নয়। ওরা এক বিছানায় শোয়, এইমাত্র!
—বিগেমির চার্জে ম্যাক্সিমাম কত বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়, স্যার?
—কাল সকাল সাড়ে দশটায় এস। এ প্রশ্নের জবাব দেব। তবে মনে রেখ, সুশোভনের সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্র তুমি জানিও তাকে আমি খুঁজছি। আমার কার্ডখানা ওকে ধরিয়ে দিও।
—দেব, গুড নাইট, স্যার।
—গুডনাইট। বি পাঙ্কচুয়াল। কাল আমার অনেক কাজ। ঠিক সকাল সাড়ে দশটায় আসবে।