দ্বি-বৈবাহিক কাঁটা – ১

ইন্টারকমে রানী দেবীর প্রশ্নটা শুনে খেপে উঠলেন বাসুসাহেব : এসব কী শুরু করেছ তোমরা? বাড়িতে ‘এইচটুও গার্ড’ বসানো হবে কি হবে না, ‘ভ্যাকুয়াম’ ক্লিনার’ কেনা হবে কি হবে না, তাও স্থির করবে এই বুড়োটা? কেন? তুমি আছ কী করতে? সুজাতা সারাদিন কোথায় কোথায় টো-টো করে ঘোরে? তোমরা এসব ডিসাইড করতে পার না?

রানী দেবী জবাবে বলেন, আচ্ছা আমি আসছি ও ঘরে, বুঝিয়ে বলছি ব্যাপারটা।

—বোঝাবার আবার আছেটা কী? – বাকিটা বলা হল না। তার আগেই রানী ইন্টারকমের সুইচটা অফ করে দিয়েছেন। সেলস গার্লটিকে বললেন, ‘আপনি একটু অপেক্ষা করুন, আমি আসছি।’ বলে তাঁর হুইলচেয়ারে পাক মেরে রানী বাসুসাহেবের খাশ কামরার দিকে এগিয়ে গেলেন।

পাঠক-পাঠিকার যে ভগ্নাংশকে এ পর্যন্ত কোনও কণ্টকাকীর্ণ কাহিনীর ঘুলঘুলিয়ায় ঘুরপাক খাওয়ার বিড়ম্বনা সইতে হয়নি তাঁদের এই পর্যায়ে কিছু কৈফিয়ৎ দিতে হয়। পি. কে. বাসু কলকাতা হাইকোর্টের একজন প্রবীণ ব্যারিস্টার – ক্রিমিনাল লইয়ার। জনশ্রুতি, খুনের মামলায় তাঁর কোনও মক্কেলের এ পর্যন্ত কখনো ফাঁসি বা জেল হয়নি। বস্তুত সবাই বেকসুর খালাস পেয়েছে। তথ্যটা সত্য কি না এ নিয়ে মতানৈক্য আছে। তবে কলকাতা বারের প্রবীণ আইনজীবীরাও মনে করতে পারেন না, বাসু কোনও কেস হেরে বাড়ি ফিরেছেন। নিউ আলিপুরে তাঁর দ্বিতল বাড়ি। রানী দেবী ওঁর সহধর্মিণী তথা একাত্তসচিব। এককালে ভাল গান গাইতেন, রান্নার হাতও খুব ভাল ছিল; কিন্তু একটি মারাত্মক দুর্ঘটনার পর সব ছেড়ে দিয়েছেন। ঐ দুর্ঘটনায় তাঁর নিম্নাঙ্গ পঙ্গু হয়ে যায়। তিনি হুইলচেয়ার ব্যবহার করে গোটা একতলাটা ঘোরাঘুরি করেন। এজন্যই একতলায় থাকতে বাধ্য হয়েছেন ব্যারিস্টার-দম্পতি। দ্বিতলে থাকে ওঁদের স্নেহধন্য কৌশিক আর সুজাতা। তারা ঐ বাড়িরই অপর অংশে একটা কনফিডেনশিয়াল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সির দপ্তর খুলেছে। সোজা কথায়, প্রাইভেট গোয়েন্দা অফিস। নামকরণটা বাসুসাহেবই একদিন করে দিয়েছিলেন : ‘সুজাতার সু’ আর কৌশিকের ‘কৌ’ বাকি ‘শলী টা ‘খলু’ অর্থাৎ পাদপূরণার্থে।’

রানী এ ঘরে এলেন দরজাটা ঠেলে। ডোর-ক্লোজারের অমোঘ আকর্ষণে দরজাটা আপনিই বন্ধ হয়ে গেল। রানী বললেন, তোমার কোনটা বিগড়েছে? মাথা না কান? আমি বলছি, ‘ধান’ তুমি শুনছ ‘কান’! হাতে ওটা কী বই? ও বুঝেছি— ‘এ. বি. সি. অব রিলেটিভিটি’। তাতেই এই অবস্থা।

বাসু বললেন, বাঃ! তুমিই তো বললে, একটি সেলস গার্ল এসেছে; সে নাকি বাড়ি-বাড়ি ঐ সব হাবিজাবি বিক্রি করে বেড়ায়….

—হ্যাঁ, তাই ও বিক্রি করে। কিন্তু সেই অপরাধে ওর অসুখ হলে কোনও ডাক্তারের চেম্বারে যেতে পারবে না? বিপাকে পড়লে আইনের পরামর্শ নিতে কোন উকিল-ব্যারিস্টারের চেম্বারে আসতে পারবে না?

—ও! আই সি! ক্লায়েন্ট! তা সেকথা গোড়াতে বললেই হয়। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার-টিনার…

—বলতে তুমি দিলে কোথায়? মাঝপথেই তো ধমকে উঠলে!

—বুঝেছি, বুঝেছি। তা সেকথা তো ইন্টারকমেই বলা চলত রানু। আবার এত কষ্ট করে চাকায় পাক মেরে এঘরে চলে এলে কেন?

—তোমাকে ধমক দিতে। মেয়েটার সামনে সেটা দেওয়া শোভন হবে না বিবেচনা করে। —আই সি! ও ভাবতো, ‘কেবল আমার সঙ্গে দ্বন্দ্ব অহর্নিশ?’ মানে ভুল অর্থে। তা কী নাম? কত বয়স? সমস্যাটা কী?

—অ্যাতক্ষণে আইনস্টাইনের চতুমাত্রিক জগৎ থেকে তোমার চতুষ্পদীর পরিচিত ত্রিমাত্রিক গোয়ালে নেমে এসেছ মনে হচ্ছে। ওর নাম — অপরাজিতা কর। বয়স পঁচিশ-ছাব্বিশ হবে। কিছু বেশিও হতে পারে। তবে ত্রিশের ওপারে নয়। আর সমস্যা? ও একটা দুমড়ানো-মুচড়ানো টিসু- পেপার নিয়ে এসেছে। ও জানতে চায়, তাতে স্ট্রিকনিনের ট্রেস পাওয়া যায় কি না।

—স্ট্রিকনিন! সে তো তীব্র বিষ! কোথায় পেল মেয়েটি?

—সব কথা আমাকে বলেনি। ওর কথা শুনে আমার মনে হল, ওর আশঙ্কা : কেউ ওকে বিষ দিয়ে হত্যা করতে চাইছে।

—বধূহত্যা? স্ট্রিকনিন কি আজকাল কেরোসিনের চেয়ে সহজলভ্য?

—আরে না বাপু! বধূহত্যার কেস নয়। মেয়েটি অবিবাহিতা। ওর আশঙ্কা, ওকে বিষ খাইয়ে মারতে চেয়েছিল ওর সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীর স্বামী!

—স্বামী? যা ব্বাবা! সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী বিষ খাওয়াতে চাইছে শুনলে না হয় ধরে নেওয়া যেত যে, তার স্বামীর সাথেই ওর ‘লটঘট’। তাইতেই…

—তুমি কি ওর কেসটা নেবে?

—নেব কি না এখনি বলতে পারছি না। তবে শুনব তো বটেই! বান্ধবীর স্বামী চুমু খেতে চাইলে তার মানে বুঝি, কিন্তু স্ট্রিকনিন খাওয়াতে চাইবে কেন? পাঠিয়ে দাও।

রানী আবার ঢাকা দেওয়া চেয়ারে রিসেপশনে চলে এলেন। মেয়েটি চোখ তুলে তাকালো। রং ময়লা, কিন্তু মুখশ্রী সুন্দর। আর যৌবন কানায় কানায়। কারণ তার ফিগারটি অনিন্দ্য। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ওর চোখ দুটি। তাতে বুদ্ধির দীপ্তিও আছে, আবার অতলান্ত গভীরতার আভাসও মেলে।

রানী বলেন, মিস্টার বাসু আপনার কেসটা শুনতে চান। আসুন আপনি এ ঘরে।

মেয়েটি বললে, আমাকে ‘তুমিই’ বলবেন। আপনি আমার মায়ের বয়সী।

ম্লান হাসলেন রানী। যে মোটর দুর্ঘটনায় তিনি চিরজীবনের মতো পঙ্গু হয়ে গেছেন সেই দুর্ঘটনাতেই মারা গেছে মিঠু, ওঁদের একমাত্র কন্যাটি। সত্যিই, বেঁচে থাকলে সে এই অপরাজিতার বয়সীই হত বটে।

বাসু বললেন, বস মা। শুনি তোমার সমস্যাটা কী। আমার সেক্রেটারির কাছে শুনলাম- বাই দ্য ওয়ে, উনি আমার স্ত্রীও বটে। তুমি নাকি একটা টিস্যু পেপার নিয়ে এসেছ, আর জানতে চাইছ যে তাতে স্ট্রিকনিন’-এর হদিস পাওয়া যায় কি না।

মেয়েটি বললে, আজ্ঞে হ্যাঁ, সেটা প্রাথমিক পর্যায়ের সমস্যা। আমার মূল সমস্যাটা আরও গভীরে।

—হ্যাঁ, সেকথার আভাসও পেয়েছি। তোমার প্রিয়তমা বান্ধবীর স্বামীকেই তুমি নাকি সন্দেহ করছ। কেন? হেতুটা কী?

—তাহলে আপনাকে গোড়া থেকে সব কথা খুলে বলতে হয়। অনেকটা সময় লাগবে।

—কিন্তু তাই বলতেই তো তুমি এসেছ, মা। সময় লাগুক। সব কথা খুলে বল। কেমিস্ট যদি রাসায়নিক পরীক্ষা করে জানান যে ওতে স্ট্রিকনিনের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি, তাহলেই কি তোমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?

মেয়েটি নড়েচড়ে বসল। বলল, আজ্ঞে না। তা যাবে না। আমার সমস্যাটা বড় বিচিত্র! প্রায় অবিশ্বাস্য। তাই আপনার কাছে ছুটে এসেছি; কিন্তু আপনাকে… মানে… আমাকে কী পরিমাণ….

—না, না, এমন একটা বিচিত্র গল্প শোনানোর জন্য কোনও ফি আমি নেব না। তোমাকে পরামর্শ দিতেও না।

—না, না, তা কেন? আমার যেটুকু সাধ্য…

—দেখ মা। আমার স্ত্রীকে দেখছ তো? একটা দুর্ঘটনায় ও হুইলচেয়ারটা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে। মোটর অ্যাকসিডেন্টে। আমিই চালাচ্ছিলাম। ঐ অ্যাকসিডেন্টে আমাদের একমাত্র মেয়েটি মারা যায়। থাকলে, সে আজ তোমার বয়সী হত। কার জন্য টাকা রোজগার করব? টাকার কথা ভেব না। বল, কী তোমার সমস্যা?

অপরাজিতা উঠে এসে দুজনকে প্রণাম করল। তারপর শুরু করল তার দীর্ঘ জবানবন্দি—

অপরাজিতা কর শৈশবেই মাতৃহীনা। ওর বাবা দ্বিতীয়বার যখন বিবাহ করেন তখন এর বয়স বছরখানেক। দিদিমার কোলেই ও মানুষ। বাবা অথবা বৈমাত্রেয় ভাইদের সঙ্গে ওর যোগাযোগ নেই। দাদামশায়ের আর্থিক সাহায্যে সে পড়াশুনা শেষ করে। ও যে বছর বি. এ. পাস, করে সেই বছরেই ওর দাদামশাই মারা যান। দিদিমা গেছেন তার আগেই। এই সময়েও একটি মালটিন্যাশনাল কোম্পানিতে সেলস গার্লের চাকরি পায়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সুনাম অর্জন করে। প্রমোশন পায় ‘এস. এস. পি.এন.’ পদে। অর্থাৎ ‘সুপারভাইজার অব সেলস পার্সন্স, নৰ্থ, ওর অধীনে দশজন মহিলা কাজ করেন— শ্যামবাজার থেকে উত্তরমুখো বারাসাত, ব্যারাকপুর, বেলুড় পর্যন্ত। ওদের কোম্পানি দুটি প্রোডাক্ট এখন বিক্রি করার দিকে জোর দিয়েছে। প্রথমত এইচটুও-গার্ড’, দ্বিতীয়ত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার। প্রথমটিতে পানীয় জল বিশুদ্ধ করা যায়, দ্বিতীয়টিতে ঘরদোর আসবাবপত্র। প্রতি সপ্তাহে ওর বস ‘ক্যুরিয়ার সার্ভিস’-এ পনের দিনের আগাম একটি তালিকা পাঠিয়ে দেন : সম্ভাব্য ক্রেতার। ওর এলাকায় যেসব পরিবারের মোট উপার্জন একটা নির্দিষ্ট সংখ্যার ঊর্ধ্বে, যারা আধুনিক মনোভাবাপন্ন…

বাসু বাধা দিয়ে বলেন, তোমার চাকরির ব্যাপারটা কি আমার পক্ষে এত বিস্তারিত জানার প্রয়োজন আছে?

—আছে, স্যার। না হলে সমস্যার ধরতাইটা আপনি ধরতে পারবেন না।

—তাহলে প্রশ্ন করি : তোমার ‘বস’ কী ভাবে সম্ভাব্য ক্রেতার তালিকা প্রস্তুত করেন?

মেয়েটি বললে, আমাদের সমান্তরালে, কিন্তু দুই-তিনমাস আগে আর একদল লোক বাড়ি- বাড়ি ঘুরে সংবাদ সংগ্রহ করে। তারা হচ্ছে মার্কেট সার্ভেয়ার। তারা বলে, ‘আমরা কিছু বেচতে আসিনি, বাজারটা যাচাই করতে এসেছি।’

রানী বলেন, বুঝেছি। এই কিছুদিন আগেই আমাদের বাড়িতে এসেছিল এমন একজন। সে যে কী বেচতে চায়— টি.ভি., ফ্যান, সিঙ্গার মেশিন, না এয়ার কন্ডিশনার সেটা বুঝতেই পারলাম না। শুধু যাবতীয় হাঁড়ির খবর জেনে খুশিমনে চলে গেল!

বাসু বলেন, যা হোক, তারপর কী হল বলে যাও

মেয়েটি জানায় সে সপ্তাহে দুদিন সরঞ্জাম বেচতে যায়। সোম আর শুক্র। একদিন সে ওর অধীনস্থ কোনও সেলস পার্সনকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়— ট্রেনিং কোর্সে। অর্থাৎ তাকে তালিম দিতে : কী ভাবে মালটা খদ্দেরকে গছাতে হবে। আর বাকি দুদিন সে অফিসের কাজ করে। ঘরে বসেই। অথবা আগের আগের খদ্দেরদের সঙ্গে ফলো-আপ অ্যাকশনে দেখা করতে যায়। বাকি দুদিন — শনি ও রবি ওর ছুটি।

বছর দেড়েক আগে ওর দাদামশাই মারা যান। মামাদের সংসারে ও থাকতে ইচ্ছুক ছিল না। ঐ সময়ে ওর বান্ধবী নির্মলা ওকে পেয়িং গেস্ট হিসাবে তার সংসারে রাখতে চায়। নিৰ্মলা বাসু ছিল কলেজে ওর সহপাঠিনী, ঘনিষ্ঠতমা বান্ধবী। পরে বছর দুয়েক হল সুশোভন রায়কে বিয়ে করে এখন ও নির্মলা রায়। ওরা বিরাটিতে একটা বাড়ি করেছে। তিনতলা ফাউন্ডেশন, কিন্তু শুধু একতলা শেষ হয়েছে। একতলায় চারখানা বেডরুম। তার একটি সংলগ্ন টয়লেট-সহ সে অপরাজিতাকে ছেড়ে দিয়েছে। সামান্য ভাড়ায়। বাস্তবে সুশোভনের যা রোজগার তাতে নির্মলার পক্ষে পেয়িং গেস্ট রাখার কোনও প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু ওর বিজনেসটা এমন বেয়াড়া ধরনের যে, মাসের মধ্যে পনেরো দিন তাকে বাইরে বাইরে কাটাতে হয়। নির্মলার এখনো কোনও ছেলেপিলে হয়নি। টি.ভি. দেখে আর বই পড়ে পড়ে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। এদিকে অপরাজিতাও গ্রেটার ক্যালকাটার উত্তরাঞ্চলে একটা নিরাপদ মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছিল। ফলে দুপক্ষই এক কথাতে রাজি হয়ে যায়। তাছাড়া কোম্পানি অপরাজিতাকে একটা টেলিফোন দিয়েছে। একটা স্ট্যান্ডার্ড হেরাল্ড গাড়িও দিয়েছে। এসবের যাবতীয় খরচ কোম্পানির। সুশোভনের গাড়ি আছে বটে, তবে টেলিফোন কানেকশন পায়নি। অপরাজিতা আসাতে ওদের খুব সুবিধা হয়েছে। টেলিফোনটা রাখা আছে ডাইনিং হলে। ফলে অপরাজিতা নিজের ঘর তালাবদ্ধ করে গেলেও নির্মলার ফোন করতে বা ফোন ধরতে অসুবিধা হয় না। তাছাড়া সুশোভন মারুতি সুজুকি গাড়িটা নিজের ব্যবসায়ের কাজেই ব্যবহার করে। নির্মলা ড্রাইভিং জানে না। তার গাড়ি চড়াই হয় না। ফলে, অপরাজিতার গাড়িটা আসায় তার খুব সুবিধা হয়েছে। তিনতলার ফাউন্ডেশন বলে সুশোভন তিনটে গ্যারেজ বানিয়েছে। সেদিক থেকে অসুবিধা নেই।

বাসু বললেন, সুশোভনের ব্যবসা তো বেশ জোরদার মনে হচ্ছে। এদিকে তিনতলা ফাউন্ডেশনের বাড়ির একতলা তুলে ফেলেছে, ওদিকে আবার তারই মধ্যে মারুতি সুজুকি গাড়িও কিনেছে। কী করে সে? মন্ত্রী-টন্ত্রী নাকি?

—সেটা স্যার রহস্যের আর একটা দিক। ওর যে কীসের ব্যবসা তা নির্মলাও জানে না। তবে প্রচুর ঘুরতে হয় সুশোভনকে।

বাসু বলেন, তারপর?

অপরাজিতা বলে, গত বছর সাতাশে ডিসেম্বর, সোমবার, ক্যুরিয়ারের ডাকে পঞ্চান্নটা নামের একটি লিস্ট পাই। আমি সেটা থেকে আর একটি লিস্ট বানাই। আমার অধীনের দশজনকে পাঁচটি করে নাম-ঠিকানা দিই, আর নিজের জন্য পাঁচটি নাম রাখি। ঐ সঙ্গে আমার ডায়েরিতে আমার নিজের নামে সংরক্ষিত ক্রেতাদের নাম-ঠিকানা লিখে রাখি। ডায়েরিটা আমার অ্যাটাচি কেসে তালাবন্ধ ছিল কিন্তু টাইপ করা লিস্ট যেটা তৈরি করেছিলাম সেটা আমার টেবিলেই কাগজ চাপা দিয়ে রাখা ছিল। তারপর আমি কাজে বের হয়ে যাই। ঘর তালাবন্ধ ছিল না। সন্ধ্যায় ফিরে এসে লিস্টটা নিয়ে দশটি পৃথক চিঠি টাইপ করতে বসি — প্রত্যেকটি সেলস পার্সনকে তার নির্দিষ্ট সম্ভাব্য ক্রেতার নাম-ঠিকানা জানাতে। সচরাচর রাত্রে টাইপ করে পরদিন পাড়ার এক ক্যুরিয়ার সার্ভিসে খামগুলি দিয়ে আসি। কিন্তু টাইপ করতে বসে আমার মনে হল, কাগজ চাপার নিচে আমি যে টাইপ করা লিস্টটা রেখে গেছিলাম এটা সেটা নয়। কারণ মুখার্জি, চ্যাটার্জি, ব্যানার্জি ইত্যাদি বানান আমি বরাবর ‘ডবল-ই’ দিয়ে লিখি বা টাইপ করি। আমার বেশ মনে আছে, এখানেও তাই করেছিলাম। অথচ এখন দেখছি ‘ডবল-ই’র বদলে ‘আই’ ছাপা রয়েছে। কেউ নিশ্চয় ওটা আবার নতুন করে টাইপ করেছে। কে হতে পারে? নির্মলা বা সুশোভন ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, কী উদ্দেশ্যে এটা করা হয়েছে? যা হোক, আমি কাউকেই কিছু বলিনি। অ্যাটাচি কেস খুলে ডায়েরি বার করতে গিয়ে দেখি, প্রথমবার আমি কার্বন রেখে টাইপ করেছিলাম, সেটা আমার খেয়াল ছিল না। অ্যাটাচি কেসে সেই অফিস কপিটা আছে। দুটো লিস্ট মিলিয়ে দেখলাম ‘Mukherjee Mukherji’ বানানগুলি শুধু নয়, আর একটি মারাত্মক পরিবর্তনও করা হয়েছে। আমার নিজের জন্য নির্দিষ্ট একটি নাম— যেখানে গত শুক্রবারে আমার যাবার কথা ছিল, সেই নাম-ঠিকানা আমার একজন কর্মচারীকে দেওয়া হয়েছে, তার বদলে কর্মচারীর জন্য নির্দিষ্ট একটি নাম-ঠিকানা— আমার তালিকায় পরিবর্তন করা হয়েছে। আমি ডায়েরিতেও দেখলাম লেখা আছে, শুক্রবার সাত তারিখে সকালে আমার যাবার কথা ছিল মিসেস শর্মিষ্ঠা পালের কাছে, বারাসাতে। মিস্টার পরেশচন্দ্র পালের স্ত্রী তিনি। আমার নিজের টাইপ করা চিঠির অফিস কপিতেও তাই লেখা আছে। অথচ পরিবর্তিত টাইপ-করা লিস্টে ঐ নাম-ঠিকানা দেওয়া হয়েছে আর একজনকে

নিজের অজান্তেই রানী দেবী কৌতূহলবশে প্রশ্ন করে বসেন, কে এটা করতে পারে? কেনই বা করবে?

বাসু বলেন, কে করেছে বলা যাবে না, কিন্তু কেন করেছে তা আন্দাজ করা যায়। সে চায় না— অপরাজিতা শর্মিষ্ঠা পালের বাড়িতে যাক।

মেয়েটি বললে, একজ্যাক্টলি। কিন্তু তার হেতুটা একশ বছর ধরে চিন্তা করলেও আপনি আন্দাজ করতে পারবেন না।

বাসু গম্ভীরভাবে বললেন, অতটা সময় আমার হাতে নেই মা, কিন্তু এটুকু আন্দাজ করছি, গত শুক্রবার, সাতই জানুয়ারি, হেতুটা তুমি নিজে বুঝতে পেরেছ।

—তা পেরেছি! শুনুন বলি। আমি কাউকে কিছু বলিনি। দশজনকে দশটা চিঠি ক্যুরিয়ারে ছেড়ে এলাম। শর্মিষ্ঠা পালের নাম কাউকেই না দিয়ে। পাঁচই জানুয়ারি, বুধবার সুশোভন ট্যুরে বেরিয়ে গেল। বলে গেল, দিন পনের পরে ফিরবে। আমি সাত তারিখ, শুক্রবার সকালে নিজের গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম বারাসাতে, শর্মিষ্ঠা পালের ঠিকানায়। বেল বাজাতে দরজা খুলে দিলেন মিসেস পাল স্বয়ং। আমাকে বসতে বললেন, আমি ওঁর সঙ্গে ‘এইচটুও গার্ড’-এর প্রয়োজনীয়তা ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলাপ করতে থাকি। কলের জলে বৃহত্তর কলকাতায় সর্বত্র আন্ত্রিক রোগ বৃদ্ধি পাওয়ায়— শুনতে খারাপ লাগবে আপনাদের— আমাদের কিন্তু ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে উঠছে। ভদ্রমহিলা আমাদের লিটারেচার, টেস্ট রিপোর্ট ইত্যাদি খুঁটিয়ে দেখতে থাকেন। বেলা তখন এগারোটা। এই সময় স্কুলের পোশাক পরে ফিরে এল ওঁর ছেলেটি— বছর সাতেক বয়স। আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। সুশোভনের সঙ্গে তার আশ্চর্য সাদৃশ্য। আমি ছেলেটিকে কাছে ডেকে নিয়ে আলাপ করলাম। ভাব জমালাম। বাচ্চাদের জন্য কিছু টফি সবসময় থাকে আমার ভ্যানিটি ব্যাগে। ওকে জিজ্ঞেস করলাম— মামুলি প্রশ্ন। তোমাকে কে বেশি ভালবাসে? মা না বাবা?

ছেলেটি জবাব দিল না। মাকে বলল, মা, তোমাদের দুজনের ছবিটা কোথায় গেল?

মিসেস পাল বললেন, কাল তোমার বাবা ঝাড়পৌঁছ করতে গিয়ে ছবির কাচটা ভেঙে ফেলেছে, সোনা। আমি সরিয়ে রেখেছি।

—ছবিটা তুমি নিয়ে এস, মা। আমি আন্টিকে দেখাব।

ওর মা বললেন, আন্টি তো তোমার বাবার ছবি দেখতে চাননি, জানতে চেয়েছেন কে বেশি ভালবাসে।’ বাচ্চাটা কিছুতেই শুনবে না। তার আবদারে ভদ্রমহিলা শেষ পর্যন্ত পাশের ঘর থেকে ফাটা কাচ, বাঁধানো ফটোখানা নিয়ে এলেন। বছর সাত-আট আগেকার ছবি। বিয়ের পর কোনও স্টুডিওতে তোলা। আমার মনে হল ঐ ছবির বর যদি সুশোভন রায় না হয় তাহলে নির্ঘাৎ যমজ ভাই! কিন্তু আমি কোনক্রমে মুখের একটি পেশীকেও বিশ্বাসঘাতকতা করতে দিলাম না। ওঁর স্বামী যে আমার পরিচিত, আমরা একই ছাদের তলায় থাকি, এটা উনি বুঝতেই পারেননি।

আরও মিনিট পাঁচেক কথাবার্তা চালিয়ে আমি বিদায় নিলাম। উনি বললেন, ওঁর স্বামীর সঙ্গে ব্যাপারটা শনি-রবিবারের মধ্যে আলোচনা করে রাখবেন। উনি আমাকে সোমবার অর্থাৎ আজ রাত সাড়ে আটটা নাগাদ একবার ওঁর বাড়িতে যেতে বললেন।

—তা তুমি কী স্থির করেছ? যাবে, না না?

—আমাকে যেতেই হবে। না হলে সুশোভন বুঝে ফেলবে আমি ওর গোপন ব্যাপারটা জানতে পেরেছি। ও আমাকে খুন করে ছাড়বে।

—বুঝলাম। এবার তাহলে এই স্ট্রিকনিন টিস্যু কাগজের ব্যাপারটা বুঝিয়ে বল।

অপরাজিতা বলে, পরদিন, শনিবার সকালে নিতান্ত অপ্রত্যাশিতভাবে সুশোভন ট্যুর থেকে ফিরে এল। বলল, ওর কাজ হল না। পার্টি ‘এমার্জেন্সি-কলে’ দিল্লি চলে গেছে। নির্মলা তো খুব খুশি। মাংস আনালো। ফ্রায়েড রাইস বানালো। ডিনারের আগে সুশোভন রোজই ড্রিংক করে। নির্মলা মাঝে মাঝে সঙ্গ দেয়। আমি ড্রিংক করতে চাই না। তবু সঙ্গ দিতে সামান্য পান করতে হয়। আমরা তিনজনে তিনটি গ্লাস নিয়েছি। ড্রিংক মিশিয়ে এনেছে সুশোভন। নিজের জন্য ব্যাগপাইপার হুইস্কি অন রকস্, নির্মলার জন্য বরফ দেওয়া ব্র্যান্ডি, আর আমার জন্য জিন উইথ টনিক। কী বলব আপনাকে প্রথম সিপটা মুখে দিয়েই আমার গা গুলিয়ে উঠল! মনে হল বেশ তেতো! বলতে গিয়েও কি জানি কী ভেবে আমি কোনও কথা বললাম না। কেশে উঠলাম। তারপর গ্লাসটা হাতে নিয়েই আমার ঘরের সংলগ্ন বাথরুমের ওয়াশ বেসিনে থুথু ফেলতে উঠে গেলাম। মুহূর্তমধ্যে গ্লাসটা বেসিনে উবুড় করে সম পরিমাণ সাদা জল গ্লাসে নিয়ে ফিরে এলাম। সুশোভন বারে বারে আমাকে লক্ষ্য করছিল। হঠাৎ বলে উঠল, এটা কেরুর ইউজুয়াল জিন নয়, একটা নতুন ব্র্যান্ড। একটু তিতকুটে স্বাদ, তাই নয়?

আমি বললাম, হ্যাঁ! এক পেগের বেশি খাব না।

তারপর আহারাদি সেরে আমরা যে যার বিছানায় শুতে গেলাম। আমার হঠাৎ মনে পড়ে গেল, ‘সুতপা-হত্যা মামলা’র কথা— স্ট্রিকনিনের স্বাদ তেতো। ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে একটা টিস্যু পেপার নিয়ে বেসিনে যে জলটুকু লেগেছিল তা সযত্নে মুছে নিলাম। রবিবার সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে সুশোভন যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে দেখছিল তাতে মনে হল ও যেন ম্যাকবেথের মতো ব্যাঙ্কোর ভূতকে দেখতে পাচ্ছে ডিনার টেবিলে! আমি নিজে থেকেই বললাম, কাল রাতে আমার শরীরটা খারাপ হয়েছিল। ব্রেকফাস্ট খাব না। নির্মলা আর সুশোভন অনেক পীড়াপীড়ি করল। কিন্তু টিন থেকে নিজে হাতে বার করে নেওয়া বিস্কিট আর তিনজনের-পট থেকে ঢালা চা ছাড়া আমি কিছু মুখে দিইনি। টেলিফোন ডাইরেক্টরিতে আপনার নম্বর লেখা আছে, কিন্তু টেলিফোন করতে সাহস হল না। সুশোভন হয়তো আড়ি পেতে বসে আছে। আমি রবিবারটা একটা হোটেলে কাটিয়েছি। ভেবেছিলাম রবিবারে আপনি কেস নেন না। আজ সকালেই সোজা আপনার কাছে চলে এসেছি।

বাসু বললেন, কালই তোমার আসা উচিত ছিল। যাহোক, খুব বুদ্ধিমতীর মতো কাজ করেছ। প্রথম ঐ টিস্যু পেপারটা এই খামে ভর্তি করে আঠা দিয়ে বন্ধ কর। তারপর খামের ওপর তোমার নাম-ঠিকানা আর তারিখ লিখে দাও। যেখানে খামটা বন্ধ করা হয়েছে সেই ফ্ল্যাপের ওপর আড়াআড়িভাবে তোমার নামটা আবার সই কর!

অপরাজিতা তাই করে দিল।

বাসু জানতে চাইলেন, তুমি কী স্থির করেছ? আজ সন্ধ্যাবেলা বারাসাতে শর্মিষ্ঠা পালের কাছে যাবে?

—বললাম তো, আমাকে যেতেই হবে। না হলে সুশোভন সন্দেহ করবে যে আমি সব জানতে পেরেছি।

—অলরাইট! সেখানে যদি শর্মিষ্ঠার স্বামী পরেশ পালের সঙ্গে ঘটনাচক্রে দেখা হয়ে যায়… বাধা দিয়ে অপরাজিতা বলে, হবে না। আমি বাজি রাখতে পারি। ও কিছুতেই আমার মুখোমুখি হবে না- দূরে বসে সব কিছু লক্ষ্য করবে।

বাসু বলেন, অলরাইট, শোন মন দিয়ে। প্রথম কথা : মিসেস পালের বাড়িতে তুমি কিছু খাবে না, বা পান করবে না। বলবে, তোমার একটা ব্রত আছে। সারাদিন উপবাস করছ। পূজা করে মুখে জল দেবে। দ্বিতীয় কথা : যদি ঘটনাচক্রে পরেশ পালের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হয়ে যায়, এবং বুঝতে পার যে, সে সুশোভন রায়, তাহলে সেটা তার স্ত্রীর সামনে স্বীকারই করবে না। যেন তাকে নতুন দেখছ। তাকে বলবে : মিস্টার পাল, আপনি পি. কে. বাসু, ব্যারিস্টারের নাম শুনেছেন? আমি আজ সকালে, একটা কাজে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম। কথা প্রসঙ্গে আপনার কথা উঠল। উনি বললেন, উনি আপনাকে চেনেন, ইন ফ্যাক্ট একটা কেসে আপনাকে খুঁজছেন। এই কার্ডটা রাখুন। আপনার সময় মতো তাঁকে টেলিফোন করবেন। বলে, আমার এই কার্ডটা তার হাতে ধরিয়ে দেবে। তৃতীয়ত, আজ দুপুরে বাড়িতে লাঞ্চ কর না। কিছু খেও না। বল, এক বন্ধু জোর করে খাইয়ে দিয়েছে। বাড়িতে যদি আজ সুশোভনের দেখা পাও প্ৰথম সুযোগেই ঐ একই কথা বলবে, আর আমার ঐ কার্ডখানা তার হাতে ধরিয়ে দেবে। বুঝলে?

—সার্টেনলি। পরেশ পাল অথবা সুশোভন রায় তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারবে অপরাজিতা করের স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক যে-কোনও ভাবে মৃত্যু হলেই পি. কে. বাসু ঝাঁপিয়ে পড়বেন। কারণ তার সব গোপন কথা আমি ছাড়াও জানেন ঐ পি. কে. বাসু। আমাকে হত্যা করলে তার কোনও লাভ হবে না। তাই নয়?

—একজ্যাক্টলি। টিস্যু পেপারে স্ট্রিকনিন থাক আর নাই থাক, তোমাকে যেটা প্রিক করছে সেটা দ্বিবৈবাহিক কাঁটা

——’দ্বিবৈবাহিক কাঁটা!’ তার মানে?

—Bigamy শব্দটার বাংলা হয়েছে দ্বি-বিবাহ। তাতে ষ্ণিক প্রত্যয় করে শব্দটা এই মাত্ৰ তৈরি করলাম। অর্থাৎ দ্বিবিবাহ সম্বন্ধীয়। ব্যাকরণ থাক। অনুবাদে বুঝবে Bigamous thorn!

মানিব্যাগ বার করে অপরাজিতা জানতে চায়, আপনাকে কী রিটেইনার দেব?

বাসু জানতে চান, রাফলি স্পিকিং, তোমার মাসিক গড় রোজগার কত?

—কেটেকুটে পে প্যাকেট যা হাতে পাই তা প্রায় তিন হাজার।

—ঠিক আছে। তুমি আমাকে অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেকে একশ টাকা দাও। যাতে মক্কেল হিসাবে তোমাকে স্বীকার করতে পারি। দ্বিতীয়ত, সাড়ে আটটার অ্যাপয়েন্টমেন্ট সেরেই তুমি আমাকে যে কোনও পাবলিক টেলিফোন বুথ থেকে ফোন কর। না হলে রাতে আমার ঘুম আসবে না।

—আপনি বাড়িতে থাকবেন?

—না। নিউ আলিপুর থেকে ঘটনাস্থল অনেকটা দূরে। আমি রাত সাড়ে আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত থাকব দমদমের এয়ারপোর্ট হোটেলের ডাইনিং হলে। ওদের হেড স্টুয়ার্ড আমাকে খাতির করে। তাকে আমি বলে রাখব। নম্বর দু’তিনটে আছে। ডায়েরিতে টুকে রেখ।

রানী বলেন, এয়ারপোর্ট হোটেল আবার কেন? সেখানে গেলেই তো পেগের পর পেগ শিভাস রিগাল খাবে।

বাসু হেসে বললেন, শিভাস রিগাল কেউ খায় না গো, পান করে। কতবার বলেছি। কিন্তু শুনলে না, আমাদের একটা ব্রত আছে আজ? অপরাজিতাও যেমন সুশোভন রায় অথবা পরেশ পালের বাড়িতে বিষ মেশানো জলস্পর্শ করবে না আমিও তেমনি এয়ারপোর্ট হোটেলে মদ মেশানো জল স্পর্শ করব না। টিটোটালার্স ডিনার’ খাব আমরা দুজন— কৌশিক আর আমি। বুঝলে না? আমি বারাসাতের কাছাকাছি থাকতে চাইছি আজ রাত সাড়ে আটটায়। যাতে ফোন পেলেই প্রয়োজনে অকুস্থলে পৌঁছাতে দেরি না হয়।