দ্বিতীয় অনুভূতি

দ্বিতীয় অনুভূতি

প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী জেনারেল রাউলের মনমেজাজ বেশি ভালো নয়। যে ব্যাপারটি সবার কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হবার কথা সেটি কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সবার কাছে গোধূলিলগ্নের মতো অস্পষ্ট। পৃথিবীর ইতিহাসে একবার চোখ বুলালেই স্পষ্ট দেখা যায় এর সভ্যতা গড়ে উঠেছে ছাড়া–ছাড়াভাবে–গুটিকতক মানুষ দিয়ে। প্রাচীন মিসরে ফারাওরা ছিল সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী, দেশের সাধারণ মানুষেরা ছিল প্রায় ক্রীতদাসের মতো। ফারাও আর পুরোহিতেরা মিলে নীলনদের অববাহিকায় বিশাল সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। দক্ষিণ আমেরিকার মায়া–ইনকা সভ্যতাও সেরকম। ক্ষমতাবান রাজপুরুষেরা গুটিকতক মানুষ নিয়ে সভ্যতা গড়ে তুলেছে, ঠিক তখন সাধারণ মানুষের বুক কেটে হৃৎপিণ্ড বের করে রুটিনমতো সূর্যদেবতার উপাসনা করা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে ব্যাপারটা আরো সুসংহত করা হল। বিশ্বের বেশিরভাগ অংশকে নাম দেয়া হল তৃতীয় বিশ্ব। সেখান থেকে বেছে বেছে যারা প্রতিভাবান তাদের ধনসম্পদের লোভ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হল উন্নত বিশ্বে। সেখানে গুটিকতক মানুষ মিলে নূতন সত্যতার জন্ম দিল। জ্ঞান বিজ্ঞান শিল্প সাহিত্য নূতন করে জন্ম নিল এই নূতন বিশ্বে।

জেনারেল রাউল একটা নিশ্বাস ফেললেন, সব সময়েই তাই হয়েছে তবু কেন সবাই এই সত্যিটা স্বীকার করতে চায় না কে জানে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই এবং ইতিহাসে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে যে পৃথিবীতে সবসময় গুটিকতক মানুষ–যারা জ্ঞানী, বুদ্ধিমান এবং সুদর্শন তারা সভ্যতার দিকনির্দেশ করে। অন্য সবাই তুচ্ছ এবং সাধারণ। ব্যাপারটির গুরুত্ব প্রথমে বুঝতে পেরেছিলেন একজন সত্যিকারের কালজয়ী পুরুষ, দিকদ্রষ্টা, তার নাম ছিল এডলফ হিটলার। তিনিই প্রথমে আঁচ করেছিলেন যে শ্রেষ্ঠ প্রজাতি বলে একটা প্রজাতি থাকা সম্ভব। কিন্তু এই কালজয়ী পুরুষের জন্ম হয়েছিল সময়ের অনেক আগে। পৃথিবীর মূর্খ অর্বাচীন আর প্রাচীনপন্থী সমাজব্যবস্থার কারণে এই ক্ষণজন্মা পুরুষকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল, তাকে অপমান আর কলঙ্ক নিয়ে পৃথিবীর ইতিহাস থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল।

আজ পঞ্চবিংশ শতাব্দীতে এডলফ হিটলারের স্বপ্ন আবার সফল হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তার যে সমস্যা ছিল এখন আর সেই সমস্যা নেই। সমস্ত পৃথিবীর মানচিত্র অপসারিত হয়ে সারা পৃথিবীতে এখন একটিমাত্র রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্রের ক্ষমতা এখন সারা বিশ্বে, যারা এই রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আছেন তারা আক্ষরিক অর্থে সারা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করেন। এই রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী হচ্ছেন জেনারেল রাউল, তার দায়িত্ব যেরকম বিশাল, ক্ষমতাও সেরকম আকাশছোঁয়া। দায়িত্ব হচ্ছে নেশার মতো আর ক্ষমতাটি হচ্ছে সেই নেশার মাদক। দায়িত্বের এই প্রচণ্ড নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে রাউল সাধারণ একজন জেনারেল থেকে আজ বিশ্বরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী। ব্যাপারটি ছেলেখেলা নয়। কিন্তু এই প্রচও ক্ষমতাশালী জেনারেল রাউলের মনটি বেশি ভালো নয়, ঠিক যেভাবে সবকিছু কাজ করার কথা সেভাবে কাজ করছে না। মানুষকে ইতিমধ্যে দু ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যারা সর্বশ্রেষ্ঠ তাদেরকে আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়েছে, সব রকম সুযোগ সুবিধে এবং ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। যারা সাধারণ, যারা তুচ্ছ যারা, অসুন্দর অমার্জিত তাদেরকে এর মাঝে পৃথিবীর অনুন্নত এলাকায় আটকে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মানুষের মাঝে এই পার্থক্যটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্যে উন্নত শ্রেণীর মানুষের জিনেটিক কোডকে আইন করে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, এই মানুষদের নাম দেয়া হয়েছে ডন সম্প্রদায়। জিনেটিকভাবে তুচ্ছ এবং সাধারণ মানুষদের পৃথিবীর অনুন্নত জায়গায় আটকে রেখে ডুন সম্প্রদায়কে তাদের যোগ্য। স্থানে নিয়ে আসা; জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প সাহিত্য প্রযুক্তির সুযোগ করে দেয়াই হচ্ছে এই শতাব্দীর মূল লক্ষ্য। পৃথিবীর সম্পদ কমে আসছে, সবাইকে সবকিছু দেয়া সম্ভব নয়, যার যেটুকু প্রয়োজন তাকে ঠিক ততটুকু দেয়া হবে। ড়ন সম্প্রদায় উচ্চতর মানব সম্প্রদায়, তারা বেশি পাবে–সেটি অত্যন্ত সহজ স্বাভাবিক সত্য, কিন্তু এটি একটি বিচিত্র কারণে সবার কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট নয়। সাধারণ এবং তুচ্ছ মানুষেরা কিছুতেই সেটা মেনে নিতে চাইছে না, তারা সমান অধিকারের কথা বলছে, সারা পৃথিবীতে সেটা নিয়ে বিশৃঙ্খলা। জেনারেল রাউল শক্ত হাতে সেটাকে দমন করে যাচ্ছেন কিন্তু কাজটি দিনে দিনে সহজ না হয়ে আরো কঠিন হয়ে আসছে।

অফিসে বসে জেনারেল রাউল দীর্ঘ সময় জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলেন, তারপর একটা বড় নিশ্বাস ফেলে টেবিলের কাগজপত্রের দিকে তাকালেন, সেগুলো এক নজর দেখে তিনি তার সেক্রেটারি নুবাকে ডেকে পাঠালেন। নুবা কমবয়সী হাসিখুশি একজন অত্যন্ত চৌকস মেয়ে, জেনারেল রাউল নানাভাবে নুবার ওপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।

নুবা ঘরে ঢুকে অভিবাদন করে কোমল গলায় বলল, আমাকে ডেকেছেন?

হ্যাঁ। জেনারেল রাউল টেবিলের উপরে রাখা কাগজগুলো সামনে এগিয়ে দিয়ে বললেন, টাউনশিপগুলোতে আবার নূতন করে হাঙ্গামা হচ্ছে?

জি। নুবা মাথা নেড়ে বলল, হাঙ্গামা হচ্ছে।

আমি যে শক্ত হাতে থামানোর কথা বলছিলাম তার কী হল?

সেটাও করা হচ্ছে জেনারেল। তারপরেও হচ্ছে। মানুষজনের ভয়ভীতি আজকাল কমে গিয়েছে।

প্রজেক্টগুলোর কী খবর?

ভালোই। প্রজেক্ট এক্স শেষ হবার দিকে। টাউনশিপগুলোতে খাবারের চালান আটকে দেয়া হয়েছে। খবরে প্রকাশ করা হয়েছে তাদের নিজেদের মাঝে গোলমালের জন্যে এটা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংবাদ মিডিয়াগুলো আমাদের খুব চমৎকারভাবে সাহায্য করছে। পুরো ব্যাপারটাই অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে

প্রজেক্ট লুন?

সেটা মাত্র শুরু করা হয়েছে। জেলখানা থেকে এখন পর্যন্ত দশ হাজার ঘাঘু অপরাধী ছাড়া হয়েছে, তাদের অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা হচ্ছে। নানারকম অপরাধে পুরো এলাকাটা মোটামুটিভাবে বিষাক্ত করে দেয়া হয়েছে। সংবাদ মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে আমরা প্রচার শুরু করেছি যে সাধারণ মানুষ আসলে নিম্নশ্রেণীর মানুষ। তারা অসম্পূর্ণ মানুষ এবং তারা অপরাধপ্রবণ।

বিশ্ব কনফারেন্সের কী খবর?

ভালোভাবে চলছে জেনারেল। আগামীকাল বিজ্ঞানীদের প্যানেলে মূল পেপারটা পড়া হবে। সেখানে বলা হবে ড়ন সম্প্রদায় সাধারণ মানুষ থেকে অন্তত এক শ গুণ উন্নত। তার নানারকম বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দেয়া হবে। পেপারটার একটি কপি এর মাঝে গোপনে তথ্যকেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

জেনাবেল রাউল চিন্তিত মুখে গাল চুলকাতে চুলকাতে বললেন, সবকিছু পরিকল্পনামতো হচ্ছে কিন্তু তবু এই তুচ্ছ সাধারণ মানুষদের মনোবল ভেঙে দেয়া যাচ্ছে না কেন? এরা দুর্বল হচ্ছে না কেন?

নুবা ইতস্তত করে বলল, আমার মনে হয় এর সাথে এদের স্বপ্ন মেশিনের একটা সম্পর্ক রয়েছে।

স্বপ্ন মেশিন?

জি।

সেটা কী?

অল্প কিছুদিন হল একটা রিপোর্টে এটার খোঁজ পাওয়া গেছে। অত্যন্ত হাস্যকর একটা যন্ত্র। যেটা করা হয় সেটা হচ্ছে মস্তিষ্কের মাঝে বাইরে থেকে এক ধরনের স্টিমুলেশান দেয়া হয়। পুরো জিনিসটা একটা হেলমেটের মতো। সেটা যখন মাথায় লাগানো হয় তখন মানুষ নাকি স্বপ্ন দেখে। ভবিষ্যতের স্বপ্ন।

ভবিষ্যতের স্বপ্ন?

জি।

জেনারেল রাউলের ভুরু কুঞ্চিত হল, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এই যন্ত্র তাদের হাতে কেমন করে গেল?

নুবা ইতস্তত করে বলল, তাদের হাতে যায় নি। তারা নিজেরাই তৈরি করেছে।  

জেনারেল রাউল সোজা হয়ে বসে বললেন, তারা নিজেরা তৈরি করেছে? অশিক্ষিত মূর্খ অমার্জিত মানুষেরা একটা যন্ত্র তৈরি করেছে?

জি জেনারেল। তাদের মাঝে নাকি একজন বিজ্ঞানী রয়েছে। তার নাম ক্রিটি। সে–ই তৈরি করেছে।

ক্রিটি? সে বিজ্ঞান শিখেছে কেমন করে? তার তো বিজ্ঞান শেখার কথা নয়।

নিজে নিজে শিখেছে।

নিজে নিজে? নিজে নিজে বিজ্ঞান শেখা যায়?

তাই তো দেখছি।

জেনারেল রাউলের মুখ থমথমে হয়ে উঠল। তিনি দীর্ঘ সময় চুপ করে থেকে বললেন, নুবা, আমি এই মানুষটির সাথে কথা বলতে চাই। একটা স্বপ্ন মেশিনসহ তাকে এখানে হাজির কর। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

***

ক্রিটি বিশাল হলঘরে সোজা হয়ে বসে আছে। তার মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখের নিচে কালি, পোশাক জীর্ণ এবং মলিন। এই বিশাল হলঘরের অপরিচিত ঐশ্বর্যের মাঝে সে সম্পূর্ণ বেমানান এবং সে নিজেও এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। তার সামনে টেবিলের উপর একটা স্বপ্ন মেশিন এবং সেটাকে দেখে মনে হচ্ছে কেউ বুঝি মিউজিয়াম থেকে প্রাচীনকালের হাস্যকর একটা যন্ত্র তুলে এনেছে। বিশাল হলঘরের মাঝ দিয়ে যারা যাচ্ছে এবং আসছে, সবাই ভুরু কুঁচকে ক্রিটির দিকে তাকাচ্ছে এবং তার এই বিচিত্র যন্ত্রটিকে দেখছে। মানুষটি জেনারেল রাউলের আহ্বানে এসেছে, না হয় অনেক আগেই তাকে এখান থেকে বের করে দেয়া হত।

জেনারেল রাউল নিজের ঘরে বসে থেকে মনিটরে তীক্ষ্ণ চোখে ক্রিটিকে লক্ষ করছিলেন। এই মানুষটি সমাজের সবচেয়ে নিচু এলাকায় মানুষ হয়েছে, অনাহারে–অর্ধাহারে শৈশব কাটিয়েছে, সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে পড়তে শিখেছে, সবরকম প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে বিজ্ঞান শিখেছে এবং জঞ্জাল ঘেঁটে পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতি দিয়ে একটা স্বপ্ন মেশিন তৈরি করেছে। সেই স্বপ্ন মেশিন যে মানুষ একবার মাথায় পরে স্বপ্ন দেখেছে তাকে আর কোনোদিন ধ্বংস করা যায় না। কী বিচিত্র একটি ব্যাপার! জেনারেল রাউল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নুবাকে ডেকে বললেন, মানুষটাকে তার যন্ত্রটা নিয়ে আসতে বল।

কয়েক মিনিটের মাঝেই নুবা ক্রিটিকে নিয়ে জেনারেল রাউলের ঘরে হাজির হল। মনিটরে মানুষটিকে যেরকম মলিন দেখা যাচ্ছিল সামনাসামনি সে মোটেও সেরকম নয়। তার খোঁচা খোঁচা দাড়ি, উষ্কখুষ্ক চুল এবং জীর্ণ পোশাকের মাঝেও কেমন জানি এক ধরনের তেজস্বিতা রয়েছে। জেনারেল রাউল সাধারণ মানুষের মাঝে তেজস্বিতা পছন্দ করেন না– সাধারণ মানুষ হবে ভীত এবং নম্র। তাদের মাঝে থাকবে দ্বিধা এবং সংশয়। তারা হবে কাপুরুষ। কিন্তু এই মানুষটির মাঝে সেরকম কিছু নেই এবং তার মুখের দিকে তাকিয়ে জেনারেল রাউল নিজের অজান্তেই বলে ফেললেন, বসুন।

মানুষটি খুব সহজ ভঙ্গিতে তার সামনের চেয়ারটিতে বসল।

জেনারেল রাউল একটু ঝুঁকে পড়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এই মেশিন তৈরি করেছেন?

হ্যাঁ।

এর জন্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আপনাকে কে দিয়েছে?

কেউ দেয় নি। আমি জোগাড় করেছি।

আপনি জানেন এটা বেআইনি?

ক্রিটি হেসে ফেলল। হাসতে হাসতেই বলল, না, এটা বেআইনি নয়। আমাদের এলাকায় আপনাদের এলাকার সমস্ত জঞ্জাল ফেলা হয়। সেইসব জঞ্জালে নানা ধরনের ভাঙাচোরা যন্ত্রপাতি রয়েছে আমি সেইসব ঘেঁটে ঘেঁটে বের করে এটা তৈরি করেছি।

এটা কীভাবে কাজ করে?

ক্রিটি একটু অস্বস্তি নিয়ে বলল, আপনি জানতে চাইলে আপনাকে বলতে পারি, কিন্তু আপনি বুঝতে পারবেন কি না আমি জানি না। মানুক্ষের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে, নিউরনের মাঝে দিয়ে কীভাবে তথ্য–সঙ্কেত আদানপ্রদান করে সেসব সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান না থাকলে আপনি কিছু বুঝতে পারবেন না

জেনারেল রাউল নিজের ভিতরে অপমানের একটা সূক্ষ্ম খোঁচা অনুভব করলেন, অনেক কষ্টে সেটা সহ্য করে শান্ত গলায় বললেন, আপনি বলুন, আমি বুঝতে চেষ্টা করব।

মানুষের মস্তিষ্কে তথ্যের আদান–প্রদান করা হয় অত্যন্ত সূক্ষ্ম বৈদ্যুতিক সঙ্কেত দিয়ে, এই সঙ্কেত অনেকদিন থেকেই যন্ত্রপাতি দিয়ে মাপা হয়ে আসছে। আমি পদ্ধতিটি একটু উন্নত করেছি। পরিত্যক্ত জঞ্জালে আমি কমিউনিকেশানের কিছু মডিউল থেকে অত্যন্ত সূক্ষ্ম বৈদ্যুতিক সিগনাল গ্রহণ করতে পারে এ রকম কিছু যন্ত্র নিয়ে এসেছি। তার জন্যে প্রয়োজনীয় কিছু এমপ্লিফায়ার এনেছি পরিত্যক্ত কিছু ভিডিও সেট থেকে। দুটো বসিয়ে একটা সার্কিট তৈরি করেছি। যদি কোনো মানুষের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কম্পনের সাথে সেটা টিউন করা যায় তাহলে তার মস্তিষ্কে কী ধরনের তথ্য আদান–প্রদান হচ্ছে সেটা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা করার একটা উপায় বের করেছি।

জেনারেল রাউল একটু ঝুঁকে পড়ে জিজ্ঞেস করলেন, তার মানে একটা মানুষ কী নিয়ে চিন্তা করছে সেটা এই যন্ত্র বলতে পারে?

ক্রিটি আবার হেসে ফেলল। হাসি থামিয়ে বলল, খুব সোজা করে যদি বলতে চান তাহলে বলতে পারেন। কিন্তু আপনি তো জানেন চিন্তার ঘুঁটিনাটি কী অসম্ভব জটিল ব্যাপার। সেই পর্যায়ে এখনো যেতে পারি নি–আমরা যে পরিবেশে থাকি সেখানে কোনোদিন যেতে পারব বলে মনে হয় না। তবে মোটামুটিভাবে বলা যায় চিন্তাটা কি আনন্দের না দুঃখের, রাগের না অভিমানের।

জেনারেল রাউলকে একটু বিভ্রান্ত দেখাল, ইতস্তত করে বললেন, তাহলে এটাকে স্বপ্ন মেশিন বলে কেন?

ক্রিটি মাথা নেড়ে বলল, আমি জানি না এটাকে কেন স্বপ্ন মেশিন বলে–এর মাঝে স্বপ্নের কিছু নেই। তবে আমার মনে হয় এই যন্ত্রটাতে যখন ফিডব্যাক সার্কিট লাগানো হল তখন হঠাৎ করে এটার সত্যিকারের একটা ব্যবহার শুরু হয়েছে।

কী ব্যবহার?

মনে করা যাক, কারো মনে একটা আনন্দের অনুভূতি হয়েছে এবং এই যন্ত্র সেটি ধরতে পেরেছে। তখন বাইরে থেকে মস্তিষ্কের ভিতরে খুব ছোট একটা স্টিমুলেশান দেয়া হয়। দেখা হয় এই স্টিমুলেশান দেয়ার ফলে মস্তিষ্কে আনন্দের অনুভূতি কি বাড়ছে না কমছে। যদি বাড়তে থাকে তাহলে সেটা আরো বেশি করে দেয়া হয়, তখন আনন্দের অনুভূতিটা আরো বেড়ে যায়, তখন আরো বেশি স্টিমুলেশান দেয়া হয়। কাজেই মনের ভিতরের ছোট একটা আনন্দের অনুভূতি থেকে শুরু করে তীব্র একটা আনন্দ সৃষ্টি করা যায়। ভয়ঙ্কর তীব্র একটা আনন্দ যারা সেটা অনুভব করেছে শুধু তারাই জানে কী অসাধারণ সেই অনুভূতি!

জেনারেল রাউল তীক্ষ্ণ চোখে ক্রিটির দিকে তাকিয়ে রইলেন, একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে বললেন, ড্রাগসের মতো?

ক্রিটি থতমত খেয়ে বলল, কিসের মতো?

ড্রাগস। মাদকদ্রব্য। মানুষ যখন তার শিরার মাঝে সিরিঞ্জ দিয়ে ভিচুবিয়াস ঢুকিয়ে দেয় তখন তাদের যেরকম তীব্র আনন্দ হয় সেরকম?

ক্রিটি মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ, অনেকটা সেরকম। তবে মাদকদ্রব্যের সাথে এর একটা খুব বড় পার্থক্য রয়েছে, এতে কোনো নেশা হয় না। একবার স্বপ্ন মেশিন ব্যবহার করলে বার বার সেটা ব্যবহার করার জন্যে কেউ খেপে ওঠে না।

কেন?

কারণ এই তীব্র অনুভূতি সাময়িক নয়। এই অনুভূতি মস্তিষ্কে আনন্দের একটা পাকাঁপাকি ছাপ রেখে যায়। তাছাড়া মাদকদ্রব্যের মতো এই অনুভূতি শুধু এক ধরনের নয়। এই যন্ত্র দিয়ে আপনি যেকোনো ধরনের অনুভূতি পেতে পারেন। যদি মনের ভিতরে অল্প একটু পবিত্র ভাব জন্ম নেয় সেটা থেকে তীব্র গভীর একটা পবিত্র ভাব আসে। যদি এক ধরনের সুখের অনুভূতি হয় সেটা থেকে তীব্র একটা সুখের অনুভূতির জন্ম হয়। যদি কোনোভাবে মনের মাঝে অল্প একটু প্রশান্তির জন্ম হয় সেখান থেকে গভীর প্রশান্তির জন্ম দেয়া যায়। মনের ভিতরে যদি অল্প একটু আত্মবিশ্বাস তৈরি করে দেয়া যায় সেটা থেকে তৈরি হয় গভীর প্রচণ্ড একটা আত্মবিশ্বাস। অল্প একটু আশা থেকে বুকের ভিতরে নূতন। আশার বান ডেকে যায়। সেইসব অনুভূতি এত তীব্র যে তাকে বলা যায় সম্পূর্ণ নূতন এক ধরনের অনুভূতি। পৃথিবীর মানুষের সেই অনুভূতির সাথে পরিচয় নেই।

জেনারেল রাউল মাথা নেড়ে বললেন, বুঝেছি। এটা একটা অনুভূতি তীব্র করার যন্ত্র। কিন্তু এখনো বুঝতে পারলাম না কেন এর নাম স্বপ্ন মেশিন?

ক্রিটি একটু হেসে বলল, যখন মানুষেরা নানা দুঃখ কষ্ট হতাশায় ডুবে যায় তখন তারা এ রকম একটা যন্ত্রের কাছে আসে। এটা মাথায় লাগিয়ে বসে। তার ভিতরে তখন কোনোভাবে একটা ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি করা হয়। ছোট একটা আশার বাণী বলা হয়। সেটা থেকে তার ভিতরে জন্ম নেয় বিশাল এক উৎসাহ। সত্যিকারের একটা স্বপ্ন জেগে ওঠে তার বুকে। মনে হয় সে জন্যেই এর নাম দিয়েছে স্বপ্ন মেশিন।

জেনারেল রাউল থমথমে মুখে খানিকক্ষণ বসে রইলেন তারপর জিজ্ঞেস করলে আপনাদের এলাকায় এ রকম যন্ত্র কয়টা রয়েছে?

আমি ঠিক জানি না। কীভাবে তৈরি করা যায় সেটা গোপন কিছু নয়, আমি সবাইকেই বলে দিই। ছোটখাটো জঞ্জাল থেকে তৈরি হয় বলে অসংখ্য যন্ত্র রয়েছে। তার মাঝে কিছু কিছু কাজ করে, কিছু করে না। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস দিয়ে সেটা পুষিয়ে নেয়।

জেনারেল রাউল হাত দিয়ে টেবিলের উপরে রাখা বিচিত্র যন্ত্রটাকে দেখিয়ে বললেন, এটা কি সত্যিকারভাবে কাজ করে?

করে।

আমাকে দেখাতে পারবেন?

ক্রিটি একটু অবাক হয়ে জেনারেল রাউলের দিকে তাকাল, জিজ্ঞেস করল, আপনি সত্যি দেখতে চান?

হ্যাঁ, চাই।

ক্রিটি টেবিলের উপর থেকে হেলমেটের মতো একটা জিনিস তুলে জেনারেল রাউলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, প্রথমে এটা আপনার মাথায় পরতে হবে।

জেনারেল রাউল একটু ইতস্তত করে বললেন, না, প্রথমে আমি নিজে এটা পরতে চাই না। প্রথমে অন্য কাউকে দিয়ে পরীক্ষা করানো যাক।

রাউল ঘুরে নুবার দিকে তাকিয়ে বলল, কী বল নুবা?

নুবা মাথা নাড়ল, বলল, নিরাপত্তার দিক থেকে চিন্তা করে সেটা মনে হয় ঠিকই বলেছেন।

কাকে দিয়ে পরীক্ষা করানো যায়? 69

নুবা বলল, আপনার আপত্তি না থাকলে আমি এটা পরতে পারি। এটা সম্পর্কে এত চমৎকার সব রিপোর্ট এসেছে যে আমার এমনিতেই খুব কৌতূহল হচ্ছে।

জেনারেল রাউল নুবার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি পরতে চাও?

জি জেনারেল। আপনি যদি আপত্তি না করেন।

জেনারেল রাউল মাথা নাড়লেন, বললেন, না, কোনো আপত্তি নেই।

নুবা ক্রিটির কাছাকাছি একটা চেয়ারে গিয়ে বসল। ক্রিটি তার মাথায় হেলমেটটি পরিয়ে দেয়। সেটা ঠিকভাবে লাগানো হয়েছে কি না পরীক্ষা করে যন্ত্রটার একটা সুইচ অন করে দেয়। সাথে সাথে যন্ত্রের ভিতর থেকে একটা মৃদু গুঞ্জনের মতো শব্দ শোনা যেতে থাকে। ক্রিটি যন্ত্রের প্যানেলে কিছু একটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ করে নুবার দিকে তাকিয়ে সহৃদয়ভাবে হেসে বলল, এখন তোমাকে মিষ্টি একটা ভাবনা ভাবতে হবে। সুখের বা আনন্দের কোনো স্মৃতি–

নুবা মাথা নাড়ল, ঠিক আছে।

বল, তোমার প্রিয় মানুষ কে?

আমার ছেলে। দু বছরের ছেলে।

কী করে তোমার ছেলে?

ছেলের কথা মনে করে নুবার মুখ হঠাৎ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সে মৃদু হেসে কোমল গলায় বলল, এত দুষ্ট তুমি চিন্তা করতে পারবে না।

কী করে সে?

আমি যখন বাসায় যাই সাথে সাথে দরজার আড়ালে লুকিয়ে যায়। তখন আমাকে ভান করতে হয় তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমি তাকে ডাকাডাকি করি তখন হঠাৎ ছুটে বের হয়ে এসে পিছন থেকে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে–

তুমি কী কর?

আমি তাকে বলি ছাড় ছাড়, সে কিছুতেই ছাড়ে না, আমাকে ধরে ঝুলে থাকে–

ক্রিটি তার যন্ত্রের দিকে তাকিয়ে থেকে নরম গলায় বলল, ফিডব্যাক শুরু হয়ে গেছে। তোমার বাচ্চার কথা মনে করে তোমার ভিতরে আনন্দের যে অনুভূতি জন্ম হয়েছিল এখন সেটা বাড়তে থাকবে।

নুবার সারা মুখ হঠাৎ এক ধরনের বিস্ময়কর আনন্দের আভায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সে সোজা হয়ে বসে এবং তার চোখ দুটি জ্বলজ্বল করতে থাকে। সে ফিসফিস করে বলে, কী আশ্চর্য! কী আশ্চর্য!

ক্রিটি আবার মৃদু গলায় বলল, ফিডব্যাকটা খুব চমৎকারভাবে শুরু হয়েছে। আমি বলতে পারি এটা একেবারে অনায়াসে দশ ডিবি চলে যাবে।

নুবার মুখে আনন্দ এবং ভালবাসার এমন একটি মধুর ছাপ পড়ল যে জেনারেল রাউল সেখান থেকে চোখ ফেরাতে পারলেন না। তিনি এক ধরনের ঈর্ষার দৃষ্টিতে নুবার দিকে তাকিয়ে রইলেন।

নুবাকে প্রায় পনের মিনিট স্বপ্ন মেশিনে স্টিমুলেশান দেয়া হল। নব ঘুরিয়ে যখন ফিডব্যাক কমিয়ে নিয়ে এসে তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হল তখনো তার মুখে বিস্ময়ের ছাপ লেগে রয়েছে।

জেনারেল রাউল নুবার দিকে ঝুঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কেমন লাগছিল নুবা?

নুবা বুকের ভিতর থেকে একটা বড় নিশ্বাস বের করে বলল, আমি–আমি–আমি সেটা বোঝাতে পারব না। ভালবাসা আনন্দ আর সুখের এত তীব্র একটা অনুভূতি যে সেটা আমি কোনোদিন অনুভব করি নি। সাধারণ সুখ, আনন্দ ভালবাসা থেকে সেটা হাজার গুণ, লক্ষ গুণ বেশি। তীব্র। এত মধুর সেই অনুভূতি যে আমার মনে হচ্ছে আমি সারা জীবনের জন্যে পাল্টে গেছি।

মধুর অনুভূতি?

জি। আপনি যতক্ষণ নিজে এটা অনুভব না করছেন ততক্ষণ সেটা আপনাকে বোঝানো সম্ভব নয়। এই অনুভূতি এত তীব্র যে এটাকে বলা যায় সম্পূর্ণ নূতন একটা অনুভূতি। সেই অনুভূতি মানুষ এর আগে কোনোদিন অনুভব করে নি। যখন সেটা এসে ভর করে তখন মনে হবে আপনি বুঝি মানুষ নন, মানুষ থেকে উন্নত কোনো মহাজাগতিক প্রাণী, কিংবা স্বর্গের দূত বা সেরকম একটা কিছু। তাদের অনুভূতিও অন্য রকম–

জেনারেল রাউল হঠাৎ ঘুরে ক্রিটির দিকে তাকালেন, তারপর শক্ত গলায় বললেন, আমি নিজে এখন এটা পরীক্ষা করে দেখতে চাই।

আপনি দেখবেন? ক্রিটি মৃদু হেসে বলল, এটা মাথায় পরবেন?

হ্যাঁ, পরব। জেনারেল রাউল তার চেয়ার ছেড়ে উঠে স্বপ্ন মেশিনের কাছাকাছি একটা চেয়ারে এসে বসলেন।

হেলমেটটি মাথায় পরে নেবার পর ক্রিটি ভালো করে সেটা একবার পরীক্ষা করে নিল। যন্ত্রটার উপর ঝুঁকে পড়ে সুইচটা অন করে দেবার সাথে সাথে আবার যন্ত্রের ভিতর থেকে একটা মৃদু গুঞ্জন শোনা গেল। ক্রিটি জেনারেল রাউলের দিকে তাকিয়ে কৈফিয়ত দেয়ার ভঙ্গিতে বলল, যদি ভালো একটা পাওয়ার সাপ্লাই পেতাম তাহলে যন্ত্রটাকে একেবারে শব্দহীন করে দেয়া যেত।

রাউল কোনো কথা বললেন না, মুখ শক্ত করে বসে রইলেন। ক্রিটি বলল, যন্ত্রটি কাজ করতে শুরু করেছে, এখন আপনাকে মধুর একটা জিনিস ভাবতে হবে। মধুর এবং আনন্দের এবং সুখের

হ্যাঁ, চেষ্টা করছি। রাউল তার চেয়ারে নড়েচড়ে বসে বললেন, আমার বয়সে পৌঁছে গেলে স্মৃতি দুর্বল হয়ে যায়। সহজে কিছু মনে হতে চায় না।

ক্রিটি যন্ত্রটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, সেটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। আপনার প্রিয়জনের কথা ভাবুন। আপনার সন্তান–আপনার স্ত্রী

স্ত্রী! জেনারেল রাউল চমকে উঠলেন–হঠাৎ করে তার স্ত্রীর কথা মনে পড়ে গেল। তার ভয়ঙ্কর স্ত্রী যে তার বিবাহিত জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কলুষিত করে রেখেছিল। ভয়ঙ্কর নিরানন্দ যন্ত্রণায় বিষাক্ত করে রেখেছিল। যে তাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করত আর যাকে তিনি সমস্ত চেতনা দিয়ে ঘৃণা করতেন। জেনারেল রাউল অনেকদিন পর হঠাৎ করে তার ভিতরে আবার সেই সুপ্ত ঘৃণা, ক্রোধ এবং বিতৃষ্ণা অনুভব করলেন।

চমৎকারভাবে শুরু করেছেন। ক্রিটি উত্তেজিত গলায় বলল, দেখা যাচ্ছে আপনার ভিতরে খুব সতেজ একটা অনুভূতির জন্ম হয়েছে। এক্ষুনি ফিডব্যাক শুরু হবে। আপনি অনুভূতিটা ধরে রাখুন।

জেনারেল রাউল তার ভিতরে রাগ, ঘৃণা, বিতৃষ্ণা, বিদ্বেষ এবং তার সাথে সাথে এক ধরনের অসহায় আতঙ্ক অনুভব করতে থাকেন। বুঝতে পারেন আস্তে আস্তে রাগ ঘৃণা আর আতঙ্ক বাড়তে শুরু করেছে, তার চেতনাকে ঐচ্ছিন্ন করতে শুরু করেছে। বিচিত্র এই ভয়ঙ্কর অনুভূতি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে কুৎসিত কালো ঘৃণায় তার সমস্ত শরীর শিউরে উঠতে থাকে, প্রচণ্ড ক্রোধে তার শরীরে রক্ত ফুটতে থাকে। মানুষের প্রতি, জগৎ সংসারের প্রতি ভয়ঙ্কর বিদ্বেষ জীবন্ত কোনো প্রাণীর মতো তার চামড়ার নিচে কিলবিল করতে থাকে। সাথে সাথে বিজাতীয় এক আতঙ্ক তাকে গ্রাস করতে থাকে, যে আতঙ্কের ভয়াবহতার কোনো তুলনা নেই। মহাসমুদ্রের প্লাবনের মতো তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করে–

জেনারেল রাউল ভয়ঙ্কর চোখে ক্রিটির দিকে তাকালেন–ক্রিটি মাথা নিচু করে তার যন্ত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। সেদিকে তাকিয়ে থেকেই সাবধানে নবটি স্পর্শ করে বলল, দেখতে পাচ্ছি আপনার ফিডব্যাক শুরু হয়ে গেছে। বাড়িয়ে দিচ্ছি আমি, আপনার অনুভূতির তীব্রতা এখন বেড়ে যাবে বহুগুণ। হাজার লক্ষ বা আরো বেশি

ক্রিটি যন্ত্রের নবটাকে ঘুরিয়ে দিতেই জেনারেল রাউল এক ভয়ঙ্কর রক্ত–শীতল–করা আর্তনাদ করে জান্তব ক্ষিপ্রতায় চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠলেন। পশুর মতো চিৎকার করতে করতে মাথা কুটতে কুটতে তিনি দুই হাতে নিজের মুখের চামড়া খামচে ধরে নিজেকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলার চেষ্টা করতে লাগলেন। জান্তব স্বরে গোঙাতে লাগলেন, বীভৎস ভঙ্গিতে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে মেঝেতে গড়িয়ে পড়লেন…

***

কয়েকদিন পর জেনারেল রাউলকে তার প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রীর পদ থেকে অবসর দেয়ার খবরটি সংবাদপত্রে ছোট করে ছাপা হল।

কেন তাকে অবসর দেয়া হল সেটি কোনো এক অজ্ঞাত কারণে কোথাও ছাপা হল না।