নতুন পথিক তুমি, সবে যাত্রা শুরু
দুর্গম জটিল পথে; গন্তব্য অজানা, তবু হেঁটে
যেতে হবে বহুদূর। দীর্ঘ এই পথে
নানা বাঁক আছে, ঝোপেঝাড়ে
আছে ওত পেতে হিংস্র জন্তু, হয়তো-বা
কোথাও কোথাও চোরাবালি
রয়েছে মোহন রূপে। কোথায় যে কুহকের জাল
থাকে পাতা, সহজে পায় না টের ক্লান্ত পথচারী।
এই যে আমাকে তুমি দেখছ এখন বসে আছি
একা ঘরে, ভগ্নস্বাস্থ্য, সমস্ত শরীরে নিয়ে বয়সের ক্রূর
আঁচড়, দু’চোখে ক্ষীণ দৃষ্টি, শোনো প্রিয়।
একদা আমিও এই প্রফুল্ল তোমারই মতো উড়িয়েছি ঘুড়ি
আর কবুতর নীল আসমানে, কুড়িয়েছি ফুল
শিউলি তলায় কত সতেজ বিহানে। জেনেছিতো
আনন্দ বিহনে প্রাণে বিপুলের তরঙ্গ জাগে না,
অজানা সম্মুখে এগোবার প্রেরণার স্পন্দন নেই।
বুঝেছি আনন্দ আহরণের হাড়ভাঙা খাটুনি কি
সুবিপুল আয়োজন-কিছুরই হয় না প্রয়োজন। শুধু নিজ
অন্তর জাগিয়ে রেখে হাওয়ায় পাতার নড়া, পাখির উড়াল,
বৃষ্টিধারা কিংবা জ্যোৎস্না দেখা,
গাঙের পানির ধ্বনি আর রাঙামাটির পাহাড়ে
ডাগর চাঁদের নিচে গান শোনা অযাচিত অপরূপ উপহার, যার
স্পর্শে চিত্তশুদ্ধি হয় নিমেষে এবং
বাঁচবার তীব্র সাধ জাগে, যেন পুষ্পউন্মীলন।
বহু পথ হেঁটে বহু প্রান্তর পেরিয়ে
অনেক মরীচিকার স্মৃতি নিয়ে
জেনেছি জগতে শিল্প আর জ্ঞানময় প্রেম বিনা
নিরর্থক সব কিছু। শোনো,
ব্যাপক আন্ধারে হাতে নিয়ে একটি প্রদীপ আজও
পথ চলি, এই দীপশিখা তিমিরের প্রাণীকুল
এক ফুঁয়ে সর্বদা নিভিয়ে দিতে চায়। প্রিয়, তুমি
আমার এ দীপশিখা থেকে নেবে কি জ্বালিয়ে আরেকটি দীপ?