নিজের ব্যাপারে বলা যায়, ভালোবাসি ভালোবাসি
বলে আমি ফাটাই নি গলা,
দিই নি শ্লোগান পৌরপথে কোনোদিন। পেশাদার
প্রেমিকের মতো টেরি কেটে, পারফিউম ছড়িয়ে
গায়ে লটপট
করিনি তোমার সঙ্গে। অথচ যকন বৃষ্টি নামে
দিগন্ত ডুবিয়ে আর রৌদ্রের আবীর
ঝরে শরতের ক্ষেতে, শিমুল রাঙিয়ে
দেয় গ্রাম্য পথ, বালকেরা দৌড়ে যায়
শর্ষে ক্ষেতে আনন্দের ঢেউ তুলে, তখন তোমাকে
হৃদয়ের সকল উষ্ণতা
অধীর অর্পণ করি, তোমারই উদ্দেশে নিত্য ফোটাই গোলাপ।
যেদিন তোমার বস্ত্রহরণের পালা
শুরু হলো, তোমার চুলের মুঠি ধ’রে পৈশাচিক
উল্লাসে উঠলো মেতে মদমত্ত বর্বরেরা, সেদিন যাদের
চোখ ক্রোধে রক্তজবা হয়ে উঠেছিল লহমায়,
তোমার গ্লানির কালি মুছে দিতে যারা
হলো শস্ত্রপাণি, আমি তাদের করেছি সমর্থন
সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে। তোমার কান্নার পরে দেখি
বৃষ্টিধোয়া রক্তগোলাপের মতো ফুটে আছো তুমি।
তোমার গোলাপে যারা ছড়িয়েছে কীট
সকল ঋতুতে আর দিনরাত্রি উপহাসে তোমাকে বিঁধেছে
শজারুর কাঁটায় কাঁটায়,
তোমার দুর্দিনে যারা শক্রদের হাতে হাত রেখে
খেলেছে করোটি নিয়ে ভুতুড়ে জ্যোৎস্নায়,
এবং তোমাকে চড়িয়েছে
সোৎসাহে নীলামে,
যেমন অতীতে লোভাতুর বণিকেরা লুণ্ঠিতা রূপসীদের
ক্রীতদাসীদের মতো বেচাকেনা করতো বাজারে
দিনারের বিনিময়ে, তারাই এখন
সর্বদা তোমার সঙ্গে লতকা লতকি করে আর
তোমার সাধের লাল গোলাপের জন্যে যারা হুইল চেয়ারে
পোহায় যৌবন, দ্যাখে অস্তরাগ, তাদের দিয়েছে ঠেলে ব্যাপক
ভাগাড়ে,
সর্বদাই প্রস্তুত তাদের জন্য শত কাঠগড়া।
বিবরে লুকিয়েছিল যারা গির্জের ইঁদুর হয়ে
ইদানীং তারা বনবেড়ালের রূপে
তুমুল ঝাঁপিয়ে পড়ে শান্তির চাতালে,
যখন তখন
বসায় নখর দাঁত জায়মান সৌন্দর্যের গোলাপি গ্রীবায়।
এখন লুকাতে চাই আমি
আরো অনেকের মতো মেঘের আড়ালে,
মেঘনার তলদেশে, শস্যের ভেতরে রাত্রিদিন।
এই উল্টোরথ দেখে, শপথ তোমার
প্রেমের, আমার আজ বড় বেশি দেশদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে।