রাত্রিটা নিরুপদ্রবে কাটিয়া গেল।
পরদিন সকালে ব্যোমকেশ ঈশানবাবুর খাতা লইয়া বসিল। কখনও খাতাটা পড়িতেছে, কখনও ঊর্ধ্বপানে চোখ তুলিয়া নিঃশব্দে ঠোঁট নাড়িতেছে, কথাবার্তা বলিতেছে না।
বলিলাম, ‘কিসের গবেষণা হচ্ছে?’
ব্যোমকেশ সংক্ষেপে বলিল, ‘মোহনলাল।’
মোহনলালের নামে আজ, কেন জানি না, বহুদিন পূর্বে পঠিত ‘পলাশীর যুদ্ধ মনে পড়িয়া গেল। বলিলাম, ‘আবার আবার সেই কামান গর্জন…কাঁপাইয়া গঙ্গাজল–’
ব্যোমকেশ ভর্ৎসনা-ভরা চক্ষু তুলিয়া আমার পানে চাহিল। আমি বলিলাম, ‘দাঁড়ারে দাঁড়ারে ফিরে দাঁড়ারে যবন, গৰ্জিল মোহনলাল নিকট শমন।’
ব্যোমকেশের চোখের ভর্ৎসনা ক্রমে হিংস্র ভাব ধারণ করিতেছে দেখিয়া আমি ঘর ছাড়িয়া চলিয়া আসিলাম। কেহ যদি বীররসাত্মক কাব্য সহ্য করিতে না পারে, তাহার উপর জুলুম করা উচিত নয়।
বাহিরে স্বণেজ্জ্বিল হৈমন্ত প্রভাত। দূরবীনটা হাতেই ছিল, আমি সেটা লইয়া প্রাকারে উঠিলাম। চারিদিকের দৃশ্য অতি মনোরম। দূরের পর্বতচূড়া কাছে আসিয়াছে, বনানীর মাথার উপর আলোর ঢেউ খেলিতেছে। ঘুরিয়া ঘুরিয়া দেখিতে দেখিতে রামকিশোরবাবুর বাড়ির সম্মুখে আসিয়া পৌঁছিলাম। বাড়ির খুঁটিনাটি সমস্ত দেখিতে পাইতেছি। রামকিশোর শহরে যাইবার জন্য বাহির হইলেন, সঙ্গে দুই পুত্র এবং জামাই। তাঁহারা সিঁড়ি দিয়া নামিয়া গেলেন; কিছুক্ষণ পরে মোটর চলিয়া গেল। …বাড়িতে রহিল মাস্টার রমাপতি, গদাধর। আর তুলসী।
ঝুঁকিয়া খাতা পড়িতেছে, আবার উঁচু দিকে মুখ তুলিয়া আপন মনে বিজ বিজ করিতেছে। বলিলাম, ‘ওহে, রামকিশোরবাবুরা শহরে চলে গেলেন।’
ব্যোমকেশ আমার কথায় কৰ্ণপাত না করিয়া মুরগীর মত জল পান করিতে লাগিল। তারপর হঠাৎ বলিল, ‘মোহনলাল মস্ত বীর ছিল–না?’
‘সেই রকম তো শুনতে পাই।’
ব্যোমকেশ আর কথা কহিল না। তাহার ভাবগতিক দেখিয়া মনে হইল, সে আজ খাতা ছাড়িয়া উঠিবে না। সকালবেলাটা নিক্রিয়ভাবে কাটিয়া যাইবে ভাবিয়া বলিলাম, চল না, সাধু-দৰ্শন করা যাক। তিনি হয়তো হাত গুনতে জানেন।’
অন্যমনস্কভাবে চোখ তুলিয়া ব্যোমকেশ বলিল, ‘এখন নয়, ওবেলা দেখা যাবে।’
দুপুরবেলা শয্যায় শুইয়া তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় খানিকটা সময় কাটিয়া গেল। রামকিশোরবাবু ঠিক বলিয়ছিলেন; এই নির্জনে দুদিন বাস করিলে প্ৰাণ পালাই-পালাই করে।
পৌঁনে তিনটা পর্যন্ত বিছানায় এপাশি-ওপাশ করিয়া আর পারা গেল না, উঠিয়া পড়িলাম। দেখি, ব্যোমকেশ ঘরে নাই। বাহিরে আসিয়া দেখিলাম, সে প্রাকারের উপর উঠিয়া পায়চারি করিতেছে। রৌদ্র তেমন কড়া নয় বটে, কিন্তু এ সময় প্রাকারের উপর বায়ু সেবনের অর্থ হৃদয়ঙ্গম হইল না। তবু হয়তো নূতন কিছু আবিষ্কার করিয়াছে ভাবিয়া আমিও সেই দিকে, 5ळेिळ्लभ।
আমাকে দেখিয়া সে যেন নিজের মনের ভিতর হইতে উঠিয়া আসিল, যন্ত্রবৎ বলিল, ‘একটা তুরপুন চাই।’
‘তুরপুন।’ দেখিলাম, তাহার চোখে অধীর বিভ্রান্ত দৃষ্টি। এ-দৃষ্টি আমার অপরিচিত নয়, সে কিছু পাইয়াছে। বলিলাম, ‘কি পেলে?’
ব্যোমকেশ এবার সম্পূর্ণ সচেতন হইয়া আমাকে দেখিতে পাইল, ঈষৎ লজ্জিতভাবে বলিল, ‘না না, কিছু না। তুমি দিব্যি ঘুমুচ্ছিলে, ভাবলাম এখানে এসে দূরবীনের সাহায্যে নিসর্গ-শোভা নিরীক্ষণ করি। তা দেখবার কিছু নেই। —এই নাও, তুমি দ্যাখে।’
গেল। আমি একটু অবাক হইলাম। ব্যোমকেশের আজ এ কী ভাব!
চারিদিকে দৃষ্টি ফিরাইলাম। আতপ্ত বাতাসে বহিঃপ্রকৃতি ঝিম ঝিম করিতেছে। দূরবীন চোখে দিলাম; দূরবীন এদিক-ওদিক ঘুরিয়া রামকিশোরবাবুর বাড়ির উপর স্থির হইল।
দূরবীন দিয়া দেখার সহিত আড়ি পাতার একটা সাদৃশ্য আছে; এ যেন ‘চোখ দিয়া আড়ি পাতা। রামকিশোরবাবুর বাড়িটা দূরবীনের ভিতর দিয়া আমার দশ হাতের মধ্যে আসিয়া গিয়াছে; বাড়ির সবই আমি দেখিতে পাইতেছি, অথচ আমাকে কেহ দেখিতে পাইতেছে না।
বাড়ির সদরে কেহ নাই, কিন্তু দরজা খোলা। দূরবীন উপরে উঠিল। হাঁটু পর্যন্ত আলিসা-ঘেরা ছাদ, সিঁড়ি পিছন দিকে। রমাপতি আলিসার উপর গালে হাত দিয়া বসিয়া আছে, তাহার পাশের ভাগ দেখিতে পাইতেছি। ছাদে আর কেহ নাই; রমাপতি কপাল কুঁচকাইয়া কি যেন ভাবিতেছে।
রমাপতি চমকিয়া মুখ তুলিল। সিঁড়ি দিয়া তুলসী উঠিয়া আসিল, তাহার মুখেচোখে গোপনতার উত্তেজনা। লঘু দ্রুতপদে রিমাপতির কাছে আসিয়া সে আচলের ভিতর হইতে ডান হাত বাহির করিয়া দেখাইল। হাতে কি একটা রহিয়াছে, কালো রঙের পেন্সিল কিম্বা ফাউন্টেন পেন।
দূরবীনের ভিতর দিয়া দেখিতেছি, কিন্তু কিছু শুনিতে পাইতেছি না; যেন সে-কালের নির্বাক চলচ্চিত্র। রমাপতি উত্তেজিত হইয়া কি বলিতেছে, হাত নাড়িতেছে। তুলসী তাহার গলা জড়াইয়া অনুনয় করিতেছে, কালো জিনিসটা তাহার হাতে ধরাইয়া দিবার চেষ্টা করিতেছে।
এই সময় রঙ্গমঞ্চে আরও কয়েকটি অভিনেতার আবির্ভাব হইল। রামকিশোরবাবু সিঁড়ি দিয়া উঠিয়া আসিলেন, তাঁহার পিছনে বংশীধর ও মুরলীধর; সর্বশেষে মণিলাল।
সকলেই ক্রুদ্ধ; রিমাপতি দাঁড়াইয়া উঠিয়া কাঠ হইয়া রহিল। বংশীধর বিকৃত মুখভঙ্গী করিয়া তুলসীকে তাড়না করিল এবং কালো জিনিসটা তাহার হাত হইতে কড়িয়া লইল। তুলসী কিছুক্ষণ সতেজ তর্ক করিল, তারপর কাদো-কাঁদো মুখে নামিয়া গেল। তখন রমাপতিকে ঘিরিয়া বাকি কয়জন তর্জন-গর্জন করিতে লাগিলেন, কেবল মণিলাল কটমটে চক্ষে চাহিয়া অধরোষ্ঠ সম্বদ্ধ করিয়া রাখিল।
বংশীধর সহসা রমাপতির গালে একটা চড় মারিল। রামকিশোর বাধা দিলেন, তারপর আদেশের ভঙ্গীতে সিঁড়ির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিলেন। সকলে সিঁড়ি দিয়া নামিয়া গেল।
এই বিচিত্র দৃশ্যের অর্থ কি, সংলাপের অভাবে তাহা নির্ধারণ করা অসম্ভব। আমি আরও দশ মিনিট অপেক্ষা করিলম, কিন্তু নাটকীয় ব্যাপার আর কিছু দেখিতে পাইলাম না; যাহা কিছু ঘটিল। বাড়ির মধ্যে আমার চক্ষুর অন্তরালে ঘটিল।
নামিয়া আসিয়া ব্যোমকেশকে বলিলাম। সে গভীর মনোযোগের সহিত শুনিয়া বলিল, ‘রামকিশোরবাবুরা তাহলে সদর থেকে ফিরে এসেছেন।–তুলসীর হাতে জিনিসটা চিনতে পারলে না?’
‘মনে হল ফাউন্টেন পেন।’
‘দেখা যাক, হয়তো শীগগিরই খবর পাওয়া যাবে। রমাপতি আসতে পারে।’
রমাপতি আসিল না, আসিল তুলসী। ঝড়ের আগে শুষ্ক পাতার মত সে যেন উড়িতে উড়িতে আসিয়া আমাদের ঘরের চৌকাঠে আটকাইয়া গেল। তাহার মূর্তি পাগলিনীর মত, দুই চক্ষু রাঙা টিকটক করিতেছে। সে খাটের উপর ব্যোমকেশকে উপবিষ্ট দেখিয়া ছুটিয়া আসিয়া তাহার কোলের উপর আছড়াইয়া পড়িল, চীৎকার করিয়া কাঁদিয়া উঠিল, ‘আমার মাস্টার মশাইকে তাড়িয়ে দিয়েছে।’
‘তাড়িয়ে দিয়েছে?’ তুলসীর কান্না থামানো সহজ হইল না। যা হোক, ব্যোমকেশের সস্নেহ সাত্মনায় কান্না ক্রমে ফোঁপানিতে নামিল, তখন প্রকৃত তথ্য জানা গেল।
জামাইবাবুর দুইটি ফাউন্টেন পেন আছে; একটি তাঁহার নিজের, অন্যটি তিনি বিবাহের সময় যৌতুক পাইয়াছিলেন. জামাইবাবু দুইটি কলম লইয়া কি করিবেন? তাই আজ তুলসী জামাইবাবুর অনুপস্থিতিতে তাঁহার দেরাজ হইতে কলম লইয়া মাস্টার মশাইকে দিতে গিয়াছিল-মাস্টার মশায়ের একটিও কলম নাই-মাস্টার মশাই কিন্তু লইতে চান নাই, রাগ করিয়া কলম যথাস্থানে রাখিয়া আসিতে হুকুম দিয়াছিলেন, এমন সময় বাড়ির সকলে আসিয়া উপস্থিত হইল এবং মাস্টার মশাইকে চোর বলিয়া ধরিল…তুলসী এত বলিল মাস্টার মশাই চুরি করেন নাই কিন্তু কেহ শুনিল না। শেষ পর্যন্ত মারধর করিয়া মাস্টার মশাইকে বাড়ি হইতে তাড়াইয়া দিয়াছে।
আমি দূরবীনের ভিতর দিয়া যে দৃশ্য দেখিয়াছিলাম তাহার সহিত তুলসীর কাহিনীর কোথাও গরমিল নাই। আমরা দুইজনে মিলিয়া তুলসীকে প্ৰবোধ দিতে লাগিলাম, মাস্টার আবার ফিরিয়া আসিবে, কোনও ভাবনা নাই; প্রয়োজন হইলে আমরা গিয়া তুলসীর বাবাকে বলিব।
দ্বারের কাছে গলা খাঁকারির শব্দ শুনিয়া চকিতে ফিরিয়া দেখি, জামাই মণিলাল দাঁড়াইয়া আছে। তুলসী তাঁহাকে দেখিয়া তীরের মত তাহার পাশ কাটাইয়া অদৃশ্য হইল।
ব্যোমকেশ বলিল, ‘আসুন মণিবাবু।’
মণিলাল ঘরে প্রবেশ করিয়া বলিল, ‘কতা পাঠিয়েছিলেন তুলসীর খোঁজ নেবার জন্যে। ও ভারি দুরন্ত, আপনাদের বেশি বিরক্ত করে না তো?’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘মোটেই বিরক্ত করে না। ওর মাস্টারকে নাকি তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাই বলতে এসেছিল।’
মণিলাল একটু অপ্ৰস্তুত হইয়া পড়িল, বলিল, ‘হ্যাঁ, রমাপতিকে কত বিদেয় করে দিলেন। আর কেউ বাড়িতে ছিলাম না, পচাৰি দিয়ে আমার দেরাজ খুলে একটা কলম চুরি করেছিল। দামী কলম—’
ব্যোমকেশ হাত বাড়াইয়া বলিল, ‘যে কলমটা আপনার বুক পকেটে রয়েছে ঐটে কি?’
‘হ্যাঁ!’ মণিলাল কলাম ব্যোমকেশের হাতে দিল। পার্কারের কলম, দামী জিনিস। ব্যোমকেশ কলম ভালবাসে, সে তাহার মাথার ক্যাপ খুলিয়া দেখিল, পিছন খুলিয়া কালি ভরিবার যন্ত্র দেখিল; তারপর কলম ফিরাইয়া দিয়া বলিল, ‘ভাল কলম। চুরি করতে হলে এই রকম কলমই চুরি করা উচিত। বাড়িতে আর কার ফাউন্টেন পেন আছে?’
মণিলাল বলিল, ‘আর কারুর নেই। বাড়িতে পড়ালেখার বিশেষ রেওয়াজ নেই। কেবল কর্তা দোয়াত কলমে লেখেন।’
‘হুঁ। তুলসী বলছে ও নিজেই আপনার দেরাজ থেকে কলম বার করেছিল–’
মণিলাল দুঃখিতভাবে বলিল, ‘তুলসী মিথ্যে কথা বলছে। রমাপতির ও দোষ বরাবরই আছে। এই সেদিন একটা ইলেকট্রিক টর্চ—’
আমি বলিতে গেলাম, ‘ইলেকট্রিক টর্চ তো—’
কিন্তু আমি কথা শেষ করিবার পূর্বে ব্যোমকেশ বলিয়া উঠিল, ইলেকট্রিক টর্চ একটা তুচ্ছ জিনিস। রমাপতি হাজার হোক বুদ্ধিমান লোক, সে কি একটা টর্চ চুরি করে নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবে?’
মণিলাল কিছুক্ষণ ব্যোমকেশের পানে চাহিয়া থাকিয়া বলিল, ‘আপনার কথায় আমার ধোঁকা লাগছে, কি জানি যদি সে টর্চ না চুরি করে থাকে। কিন্তু আজ আমার কলমটা–। তবে কি তুলসী সত্যিই—’
আমি জোর দিয়া বলিলাম, ‘হ্যাঁ, তুলসী সত্যি কথা বলেছে। আমি-’
ব্যোমকেশ আবার মুখে থাবা দিয়া বলিল, ‘মণিলালবাবু্, আপনাদের পারিবারিক ব্যাপারে। আমাদের মাথা গলানো উচিত নয়। আমরা দুদিনের জন্যে বেড়াতে এসেছি, কি দরকার আমাদের ওসব কথায়! আপনারা যা ভাল বুঝেছেন করেছেন।’
‘তাহলেও–কারুর নামে মিথ্যে বদনাম দেওয়া ভাল নয়–’ বলিতে বলিতে মণিলাল দ্বারের দিকে পা বাড়াইল।
ব্যোমকেশ বলিল, ‘আজ। আপনাদের সদরের কাজ হয়ে গেল?’
‘হ্যাঁ, সকাল সকাল কাজ হয়ে গেল। কেবল দস্তখৎ করা বাকি ছিল।’
‘যাক, এখন তাহলে নিশ্চিন্ত।’
‘আজ্ঞে হ্যা।’
মণিলাল প্ৰস্থান করিলে ব্যোমকেশ দরজায় উঁকি মারিয়া আসিয়া বলিল, ‘আর একটু হলেই দিয়েছিলে সব ফাঁসিয়ে।’
‘সে কি! কী ফাঁসিয়ে দিয়েছিলাম!’
‘প্ৰথমে তুমি বলতে যাচ্ছিলে যে হারানো টর্চ পাওয়া গেছে।’
‘হ্যাঁ।’
‘তারপর বলতে যাচ্ছিলে যে দূরবীন দিয়ে ছাদের দৃশ্য দেখেছ!’
‘হ্যাঁ, তাতে কী ক্ষতি হত?’
‘মণিলালকে কোনও কথা বলা মানেই বাড়ির সকলকে বলা। গর্দভচমাবৃত যে সিংহটিকে আমরা খুঁজছি। সে জানতে পারত যে আমরা তোষাখানার সন্ধান পেয়েছি এবং দূরবীন দিয়ে ওদের ওপর অষ্টপ্রহর নজর রেখেছি। শিকার ভড়কে যেত না?’
এ কথাটা ভাবিয়া দেখি নাই।
এই সময় সীতারাম চা লইয়া আসিল। কিছুক্ষণ পরে পাণ্ডেজি আসিলেন। তিনি আমাদের জন্য অনেক তাজা খাদ্যদ্রব্য আনিয়াছেন। সীতারাম সেগুলা মোটর হইতে আনিতে গেল। আমরা চা পান করিতে করিতে সংবাদের আদান-প্ৰদান করিলম।
আমাদের সংবাদ শুনিয়া পাণ্ডেজি বলিলেন, ‘জাল থেকে মাছ বেরিয়ে যাচ্ছে। আজ রমাপতি গিয়েছে, কাল বংশীধর আর মুরলীধর যাবে। তাড়াতাড়ি জাল গুটিয়ে ফেলা দরকার।–হ্যাঁ, বংশীধর কলেজ হোস্টেলে যে কুকীর্তি করেছিল তার খবর পাওয়া গেছে।’
‘কি কুকীর্তি করেছিল?’
‘একটি ছেলের সঙ্গে ওর। ঝগড়া হয়, তারপর মিটমাট হয়ে যায়। বংশীধর কিন্তু মনে মনে রাগ পুষে রেখেছিল; দোলের দিন সিদ্ধির সঙ্গে ছেলেটাকে ধুতরোর বিচি খাইয়ে দিয়েছিল। ছেলেটা মরেই যেত, অতি কষ্টে বেঁচে গেল।’
ব্যোমকেশ একটু চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, ‘হুঁ। তাহলে বিষ প্রয়োগের অভ্যাস বংশীধরের আছে।’
‘তা আছে। শুধু গোঁয়ার নয়, রাগ পুষে রাখে।’
পাঁচটা বাজিল। ব্যোমকেশ বলিল, চলুন, আজ সন্ন্যাসী ঠাকুরের সঙ্গে একটু আলাপ করে আসা যাক।।’