পরিশিষ্ট

দুর্গরহস্য – ২.০১ (উত্তরখণ্ড)

উত্তরখণ্ড

২.১

একদিন কার্তিক মাসের সকালবেলা ব্যোমকেশ ও আমি আমাদের হ্যারিসন রোডের বাসায় ডিম্ব সহযোগে চা-পান শেষ করিয়া খবরের কাগজ লইয়া বসিয়াছিলাম। সত্যবতী বাড়ির ভিতর গৃহকর্মে নিযুক্ত ছিল। পুঁটিরাম বাজারে গিয়াছিল।

ব্যোমকেশের বিবাহের পর আমি অন্য বাসা লইবার প্রস্তাব করিয়াছিলাম; কারণ নবদম্পতির জীবন নির্বিঘ্ন করা বন্ধুর কাজ। কিন্তু ব্যোমকেশ ও সত্যবতী আমাকে যাইতে দেয় নাই। সেই অবধি এই চার বছর আমরা একসঙ্গে বাস করিতেছি। ব্যোমকেশকে পাইয়া আমার ভ্রাতার অভাব দূর হইয়াছিল; সত্যবতীকে পাইয়াছি একাধারে ভগিনী ও ভ্রাতৃবধূরূপে। উপরন্তু সম্প্রতি ভ্রাতুষ্পপুত্র লাভের সম্ভাবনা আসন্ন হইয়াছে। আশাতীত সুখ ও শান্তির মধ্যে জীবনের দিনগুলা কাটিয়া যাইতেছে।

ভাগ করিয়া খবরের কাগজ পাঠ চলিতেছিল। সামনের পাতা আমি লইয়াছিলাম‌, ব্যোমকেশ। লইয়াছিল ভিতরের পাতা। সংবাদপত্রের সদরে মোটা অক্ষরে যেসব খবর ছাপা হয়‌, তাহার প্রতি ব্যোমকেশের আসক্তি নাই‌, সদরের চেয়ে অলিগলিতেই তাহার মনের যাতায়াত বেশি।

হঠাৎ কাগজ হইতে মুখ তুলিয়া ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘ঈশানচন্দ্র মজুমদারের নাম জানো?’

চিন্তা করিয়া বলিলাম‌, ‘নামটা চেনা-চেনা মনে হচ্ছে। কে তিনি?’

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন। বহরমপুরে আমি কিছুদিন তাঁর ছাত্র। ছিলাম। ভদ্রলোক মারা গেছেন।’

বলিলাম‌, ‘তা তুমি যখন তাঁর ছাত্র‌, তখন তাঁর মরবার বয়স হয়েছিল বলতে হবে।’

‘তা হয়তো হয়েছিল। কিন্তু তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। সর্পঘাতে মারা গেছেন।’

‘ও।’

‘গত বছর আমরা যেখানে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে গিয়েছিলাম, তিনি এবছর সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানেই মৃত্যু হয়েছে।’

সাওঁতাল পরগণার সেই পাহাড়-ঘেরা শহরটি! সেখানে কয় হগুপ্ত বড় আনন্দে ছিলাম‌, যাহাদের স্মৃতি ঝাপসা হইয়া আসিতেছিল‌, তাহাদের কথা মনে পড়িয়া গেল। মহীধর বাবু্‌, পুরুন্দর পাণ্ডে‌, ডাক্তার ঘটক‌, রজনী—

বহিদ্বারের কড়া নড়িয়া উঠিল। দ্বার খুলিয়া দেখিলাম‌, ডাকপিওন। একখানা খামের চিঠি‌, ব্যোমকেশের নামে। আমাদের চিঠিপত্র বড় একটা আসে না। ব্যোমকেশকে চিঠি দিয়া উৎসুকভাবে তাহার পানে চাহিয়া রহিলাম।

চিঠি পড়িয়া সে সহাস্যে মুখ তুলিল‌, বলিল‌, ‘কার চিঠি বল দেখি?’

বলিলাম‌, ‘তা কি করে জানব? আমার তো রেডিও-চক্ষু নেই।’

‘ডি. এস. পি‌, পুরন্দর পাণ্ডের চিঠি।’

সবিস্ময়ে বলিলাম‌, ‘বল কি! এইমাত্র যে তাঁর কথা ভাবছিলাম।’

ব্যোমকেশ ঘাড় নাড়িয়া বলিল‌, ‘আমিও। শুধু তাই নয়‌, অধ্যাপক মজুমদারের প্রসঙ্গও আছে।’

‘আশ্চর্য!’

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘এরকম আশ্চর্য ব্যাপার মাঝে মাঝে ঘটে। অনেকদিন যার কথা ভাবিনি তাকে হঠাৎ মনে পড়ে গেল‌, তারপর সে সশরীরে এসে হাজির হল।–পণ্ডিতেরা বলেন‌, ‘কইনসিডেন্স-সমাপতন। কিন্তু এর রহস্য আরও গভীর। কোথাও একটা যোগসূত্র আছে‌, আমরা দেখতে পাই না–’

‘সে যাক। পাণ্ডে লিখেছেন কি?’

‘পড়ে দ্যাখো।’

চিঠি পড়িলাম। পাণ্ডে যাহা লিখিয়াছেন তাহার সারমর্ম এই :-

সম্প্রতি এখানে একটি রহস্যময় ব্যাপার ঘটিয়াছে। শহর হইতে কিছু দূরে পাহাড়ের উপর এক সমৃদ্ধ পরিবার বাস করেন; গৃহস্বামীর এক বৃদ্ধ বন্ধু ঈশান মজুমদার বায়ু পরিবর্তনের জন্য আসিয়াছিলেন। তিনি হঠাৎ মারা গিয়াছেন। মৃত্যুর কারণ সর্পাঘাত বলিয়াই প্রকাশ‌, কিন্তু এ বিষয়ে শব-ব্যবচ্ছেদক ডাক্তার এবং পুলিসের মনে সন্দেহ হইয়াছে। … ব্যোমকেশবাবু রহস্য ভালবাসেন; তার উপর এখন শীতকাল‌, এখানকার জলবায়ু অতি মনোরম। তিনি যদি সবান্ধবে আসিয়া কিছু দিনের জন্য দীনের গরীবখানায় আতিথ্য গ্রহণ করেন‌, তাহা হইলে রথ-দেখা কলা-বেচা দুই-ই হইবে।

চিঠি পড়া শেষ হইলে ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘কি বল?’

বলিলাম‌, মন্দ কি। এখানে তোমার কাজকর্মও তো কিছু দেখছি না। কিন্তু সত্যবতী—’

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘ওকে এ অবস্থায় কোথাও নিয়ে যাওয়া চলে না—’

‘তা বটে। কিন্তু ও যদি যেতে চায়? কিম্বা যদি তোমাকে না ছাড়তে চায়? এ সময় মেয়েদের মন বড় অবুঝ হয়ে পড়ে‌, কখন কি চায় বোঝা যায় না–ভিতর দিকে পায়ের শব্দ শুনিয়া থামিয়া গেলাম।

সত্যবতী প্রবেশ করিল। অবস্থাবশে তাহার মুখখানি শুকাইয়া গিয়াছে‌, দেহাকৃতি ডিম-ভরা কৈ মাছের মত। সে আসিয়া একটা চেয়ারে থপ্‌ করিয়া বসিয়া পড়িল। আমরা নীরব রহিলাম। সত্যবতী তখন ক্লান্তিভরে বলিল‌, ‘আমাকে দাদার কাছে পাঠিয়ে দাও। এখানে আর ভাল লাগছে না।’

ব্যোমকেশের সহিত আমার চোখে চোখে বাত বিনিময় হইয়া গেল। সে বলিল‌, ‘ভাল লাগছে না! ভাল লাগছে না কেন?

সত্যবতী উত্তাপহীন স্বরে বলিল‌, ‘তোমাদের আর সহ্য হচ্ছে না। দেখছি আর রাগ হচ্ছে।’

ইহা নিশ্চয় এই সময়ের একটা লক্ষণ‌, নচেৎ আমাদের দেখিয়া রাগ হইবার কোনও কারণ নাই। ব্যোমকেশ একটা ব্যথিত নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল‌, ‘যাও তাহলে‌, আটকাব না। অজিত তোমাকে সুকুমারের ওখানে পৌঁছে দিয়ে আসুক।–আর আমরাও না হয় এই ফাঁকে কোথাও ঘুরে আসি।’

টেলিগ্রাম পাইয়া পুরুন্দর পাণ্ডে মহাশয় স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন‌, আমাদের নামাইয়া লইলেন। তাঁহার বাসায় পৌঁছিয়া অপব্যাপ্ত খাদ্যদ্রব্য নিঃশেষ করিতে করিতে পরিচিত ব্যক্তিদের খোঁজখবর লইলাম। সকলেই পূর্ববৎ আছেন। কেবল মালতী দেবী আর ইহলোকে নাই; প্রোফেসর সোম বাড়ি বিক্রি করিয়া চলিয়া গিয়াছেন।

অতঃপর কাজের কথা আরম্ভ হইল। পুরন্দর পাণ্ডে অধ্যাপক ঈশানচন্দ্র মজুমদারের মৃত্যুর হাল বয়ান করিলেন। সেই সঙ্গে রামকিশোরের পারিবারিক সংস্থাও অনেকখানি জানা গেল।

অধ্যাপক মজুমদারের মৃত্যুর ব্বিরণ এইরূপ —তিনি মাসখানেক দুর্গে অবস্থান করিতেছিলেন‌, শরীর বেশ সারিয়াছিল। কয়েকদিন আগে তিনি রাত্রির আহার সম্পন্ন করিয়া অভ্যাসমত দুর্গের প্রাঙ্গণে পায়চারি করিলেন; সে সময় মাস্টার রমাপতি তাঁহার সঙ্গে ছিল। আন্দাজ সাড়ে নয়টার সময় রমাপতি বাড়িতে ফিরিয়া গেল; অধ্যাপক মহাশয় একাকী রহিলেন। তারপর রাত্রিকালে দুৰ্গে কি ঘটিল কেহ জানে না। পরদিন প্ৰাতঃকালেই রমাপতি আবার দুর্গে গেল। গিয়া দেখিল‌, অধ্যাপক মহাশয় তাঁহার শয়নঘরের দ্বারের কাছে মরিয়া পড়িয়া আছেন। তাঁহার পায়ের গোড়ালিতে সর্পাঘাতের চিহ্ন‌, মাথার পিছন দিকে ঘাড়ের কাছে একটা কালশিরার দাগ এবং ডান হাতের মুঠির মধ্যে একটি বাদশাহী আমলের চকচকে মোহর।

সপাঘাতের চিহ্ন প্রথমে কাহারও চোখে পড়ে নাই। রামকিশোর সন্দেহ করিলেন‌, রাত্রে কোনও দুৰ্বত্ত আসিয়া ঈশানবাবুকে মারিয়া গিয়াছে; মস্তকের আঘাত-চিহ্ন এই অনুমান সমর্থন করিল। তিনি পুলিসে খবর পাঠাইলেন।

কিন্তু পুলিস আসিয়া পৌঁছবার পূর্বেই সর্পদংশনের দাগ আবিষ্কৃত হইল। তখন আর উপায় নাই। পুলিস আসিয়া শব-ব্যবচ্ছেদের জন্য লাস চালান দিল।

শব-ব্যবচ্ছেদের ফলে মৃতের রক্তে সাপের বিষ পাওয়া গিয়াছে‌, গোখুরা সাপের বিষ। সুতরাং সপঘিাতাই যে মৃত্যুর কারণ তাঁহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু তবু পুরন্দর পাণ্ডে নিঃসংশয় হইতে পারেন নাই। তাঁহার বিশ্বাস ইহার মধ্যে একটা কারচুপি আছে।

সব শুনিয়া ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘সাপের বিষে মৃত্যু হয়েছে একথা যখন অস্বীকার করা যায় না‌, তখন সন্দেহ কিসের?’

পাণ্ডে বলিলেন‌, ‘সন্দেহের অনেকগুলো ছোট কারণ আছে। কোনোটাই স্বতন্ত্রভাবে খুব জোরালো নয় বটে‌, কিন্তু সবগুলো মিলিয়ে একটা কিছু পাওয়া যায়। প্রথমত দেখুন‌, ঈশানবাবু মারা গেছেন সর্পাঘাতে। তবে তাঁর মাথায় চোট লাগল কি করে?’

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘এমন হতে পারে‌, সাপে কামড়াবার পর তিনি ভয় পেয়ে পড়ে যান‌, মাথায় চোট লেগে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তারপর অজ্ঞান অবস্থাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। সম্ভব নয় কি?’

‘অসম্ভব নয়। কিন্তু আরও কথা আছে। সাপ এল কোথেকে? আমি তন্নতন্ন করে খোঁজ করিয়েছি‌, কোথাও বিষাক্ত সাপের চিহ্ন মাত্র পাওয়া যায়নি।’

‘কিন্তু আপনি যে বললেন‌, দু’বছর আগে রামকিশোরবাবুর মেয়েও সর্পাঘাতে মারা গিয়েছিল।’

‘তাকে সাপে কামড়েছিল জঙ্গলে। সেখানে সাপ থাকতেও পারে। কিন্তু দুর্গে সাপ উঠল কি করে? পাহাড়ের গা বেয়ে ওঠা অসম্ভব। সিঁড়ি বেয়ে উঠতেও পারে‌, কিন্তু ওঠবার কোনও কারণ নেই। দুর্গে ইঁদুর‌, ব্যাং কিছু নেই‌, তবে কিসের লোভে সাপ সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠবে?

‘তাহলে–?’

 ‘তবে যদি কেউ সাপ নিয়ে গিয়ে দুর্গে ছেড়ে দিয়ে থাকে‌, তাহলে হতে পারে।’

ব্যোমকেশ চিন্তা করিতে করিতে বলিল‌, ‘হুঁ, আর কিছু?’

পাণ্ডে বলিলেন‌, ‘আর‌, ভেবে দেখুন‌, অধ্যাপক মহাশয়ের মুঠির মধ্যে একটি স্বর্ণমুদ্রা ছিল। সেটি এল কোথেকে?’

‘হয়তো তাঁর নিজের জিনিস।’

‘অধ্যাপক মহাশয়ের আর্থিক অবস্থার যে পরিচয় সংগ্রহ করেছি‌, তাতে তিনি মোহর হাতে নিয়ে সর্বদা ঘুরে বেড়াতেন বলে মনে হয় না।’

‘তবে–কি অনুমান করেন?’

‘কিছুই অনুমান করতে পারছি না; তাতেই তো সন্দেহ আরও বেড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এটা মামুলি সর্পাঘাত নয়‌, এর মধ্যে রহস্য আছে।’

কিয়ৎকাল নীরব থাকিয়া ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘ঈশানবাবুর আত্মীয় পরিজন কেউ নেই?’

পাণ্ডে বলিলেন‌, ‘এক বিবাহিতা মেয়ে আছে। জামাই নেপালে ডাক্তারি করে। খবর পেলাম‌, মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে অধ্যাপক মহাশয়ের সদ্ভাব ছিল না।’

ব্যোমকেশ নীরবে বসিয়া ভাবিতে লাগিল। পাঁচ মিনিট কাটিবার পর পাণ্ডে আবার কহিলেন‌,’ যেসব কথা শুনলেন সেগুলোকে ঠিক প্রমাণ বলা চলে না তা মানি‌, কিন্তু অবহেলা করাও যায় না। তা ছাড়া‌, আর একটা কথা আছে। রামকিশোরবাবুর বংশটা ভাল নয়।’

ব্যোমকেশ চকিত হইয়া বলিল‌, ‘সে কি রকম?’

 পাণ্ডে বলিলেন‌, ‘বংশের একটা মানুষও সহজ নয়‌, স্বাভাবিক নয়। রামকিশোরবাবুকে আপাতদৃষ্টিতে ভােলমানুষ বলে মনে হয়‌, কিন্তু সেটা পোষ-মানা বাঘের নিরীহতা; সহজাত নয়‌, মেকি। তাঁর অতীত জীবনে বোধ হয় কোনও গুপ্তরহস্য আছে‌, নৈলে যৌবন পার না হতেই তিনি এই জঙ্গলে অজ্ঞাতবাস শুরু করলেন কেন তা বোঝা যায় না। তারপর‌, বড় ছেলে বংশীধর একটি আস্ত কাঠগোঁয়ার; সে যেভাবে জমিদারী শাসন করে‌, তাতে মনে হয় সে চেঙ্গিস খাঁর ভায়রাভাই। শুনেছি জমিদারীতে দু’একটা খুন-জখমও করেছে‌, কিন্তু সাক্ষী-সার্বুদ নেই—’

ব্যোমকেশ জিজ্ঞাসা করিল‌, ‘বয়স কত বংশীধরের? বিয়ে হয়েছে?’

‘বয়স ছাব্বিশ-সাতাশ। বিয়ে হয়েছিল‌, কিন্তু দু’মাস যেতে না যেতেই বৌয়ের অপঘাত মৃত্যু হয়। দেখা যাচ্ছে‌, এ বংশে মাঝে মাঝে অপঘাত মৃত্যু লেগেই আছে।’

‘এরও কি সর্পাঘাত?’

‘না। দুপুর রাত্রে ওপর থেকে খাদে লাফিয়ে পড়েছিল কিম্বা কেউ ঠেলে ফেলে দিয়েছিল।’

‘চমৎকার বংশটি তো! তারপর বলুন।’

‘মেজ ছেলে মুরলীধর আর একটি গুণধর। ট্যারা এবং কুঁজো; বাপ বিয়ে দেননি। বোপকে লুকিয়ে লোচ্চামি করে। একটা মজা দেখেছি‌, দুই ছেলেই বোপকে যমের মতন ভয় করে। বাপ যদি গো-বেচারি ভালমানুষ হতেন‌, তাহলে ছেলেরা তাঁকে অত বেশি ভয় করত না।’

‘হুঁ–তারপর?’

‘মুরলীধরের পরে এক মেয়ে ছিল‌, হরিপ্রিয়া। সে সর্পাঘাতে মারা গেছে। তার চরিত্র সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানি না। তবে জামাইটি সহজ মানুষ।’

‘জামাই!’

পাণ্ডে জামাই মণিলালের কথা বলিলেন। তারপর গদাধর ও তুলসীর পরিচয় দিয়া ব্বিরণ শেষ করিলেন‌, ‘গদাধরটা ন্যালা-ক্যাবলা; তার যেটুকু বুদ্ধি সেটুকু দুষ্ট্র-বুদ্ধি। আর তুলসী-তুলসী মেয়েটা যে কী তা আমি বুঝে উঠতে পারিনি। নির্বোধ নয়‌, ন্যাকাবোকা নয়‌, ইচড়ে পাকাও নয়; তবু যেন কেমন একরকম।’

ব্যোমকেশ ধীরে-সুস্থে একটি সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করিয়া বলিল‌, ‘আপনি যেভাবে চরিত্রগুলিকে সমীক্ষণ করেছেন‌, তাতে মনে হয় আপনার বিশ্বাস। এদের মধ্যে কেউ পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে ঈশানবাবুর মৃত্যুর জন্য দায়ী।’

পাণ্ডে একটু হাসিয়া বলিলেন‌, ‘আমার সন্দেহ তাই‌, কিন্তু সন্দেহটা এখনও বিশ্বাসের পযায়ে পৌঁছয়নি। বৃদ্ধ অধ্যাপককে মেরে কার কি ইষ্টসিদ্ধি হল সেটা বুঝতে পারছি না। যা হোক‌, আপনার মন্তব্য এখন মুলতুবি থাক। আজ বিকেলবেলা দুর্গে যাওয়া যাবে; সেখানে সরেজমিন তেজবিজ করে আপনার যা মনে হয় বলবেন।’

পাণ্ডে অফিসের কাজ দেখিতে চলিয়া গেলেন। ব্যোমকেশ আমাকে জিজ্ঞাসা করিল‌, ‘কি মনে হল?’

বলিলাম‌, ‘সবই যেন ধোঁয়া-ধোঁয়া।’

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘ধোঁয়া যখন দেখা যাচ্ছে‌, তখন আগুন আছে। শাস্ত্ৰে বলে‌, পর্বতো বহ্নিমান ধূমাৎ।’