আমি দুঃখ পেলে নক্ষত্রের কিছু এসে যায় না এবং
শালিক চড়ই আর যাবতীয় গাছপালা উদাসীন থাকে।
শহুরে নদীতে পা ডুবিয়ে দেখি তার জলে দুঃখ
ধুয়ে মুছে যায় কি না। অনেক রাত্তিরে ঘরে ফিরি, দুঃখ সঙ্গী
হয়ে বসে থাকে।
ঘরের বেড়ালটার দিকে উৎসুক তাকাই, দেখি তার কটা চোখে
আমার দুঃখের ছায়া পড়ে কি না। আদুরে আওয়াজে নৈঃশব্দকে
দুলিয়ে খানিক
আমার লেখার টেবিলের নিচে নির্বিকার সে ঘুমায় একা
স্বপ্নচ্ছন্ন কবিতার মতো।
ভুলে থাকি বারান্দার অকপট সূর্যাস্তের রঙ,
ভুলে থাকি ওষুধের গন্ধভরা ঘরের দরজা,
ভুলে থাকি পুলিশের বাঁশি আর বন্ধুর ধিক্কার,
ভুলে থাকি সাংস্কৃতিক সভার করুণ কর্মসূচি
ভুলে থাকি মগজের কোষে কবিতার ফিসফাস,
ভুলে থাকি প্রেমিকার আদরিণী বেড়ালের নাম,
ভুলে থাকি ক্যাথলিক চার্চের চূড়ার আর্ত চিল,
ভুলে থাকি নগ্ন পাগলীর হাতে নিষ্প্রাণ মোরগ।
মনে রাখি ফুটপাতে নিঃসঙ্গ বৃষ্টিতে একা ভেজা,
মনে রাখি নৈঃশব্দের সঙ্গে বাতাসের কথা বলা।
হঠাৎ একটি ঘরে ঢুকে দেখি ধোঁয়া আর ত্র্যালকোহলের
ঘ্রাণ ভাসে ঘরময়। ক’জন খেলছে তাস, কেউ কেউ হাতে
গ্লাস নিয়ে আসে কাছে টলতে টলতে, যেন সদ্য
শিখেছে হাঁটতে।
একজন একরাশ ধোঁয়া দ্যায় ছুড়ে আমার বিস্মিত মুখে,
হাসাহাসি চলে কিছুক্ষণ, কেউ কেউ আমার হাতের ত্বকে
সিগ্রেটের ছ্যাঁকা দিতে চায়, চেয়ে থাকি দরজার দিকে, ভাবি-
ক’জন বামন
দেখাচ্ছে কয়েক হাত বেশ।
পারি না বলতে কিছু, যেন ভুলে গেছি মাতৃভাষা। নেরুদার
সেই জলকন্যার মতন
অকস্মাৎ ফিরে আসি স্বকীয় নৈঃসঙ্গে, এলোমেলো পদক্ষেপে
আমার মৃত্যুর দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাই, সকলেই যায়।
মধ্যরাতে অন্ধকারে জেগে উঠে ভয় পাই, দুঃখ পেতে থাকি।