দীপংকর
দীপংকর তোমার জন্মদিনে
ভেবেছিলুম একটা কবিতা লিখব।
কিন্তু কিছুতেই হাত দিয়ে বেরুচ্ছে না,
তাই কবিতার বদলে গবিতা লিখছি॥
ষোলই জুন উনিশ শ একচল্লিশ
রাত দুপুরে ঘোর দুর্যোগ,
সেই সময় তুমি অবতীর্ণ হলে।
চোদ্দ ইঞ্চি লম্বা, সাড়ে তিন সের ওজন,
( ঠিক জানা নেই আন্দাজে বলছি )।
ভূমিষ্ঠ হবার তিন মিনিট পরে
ডাক্তার লক্ষ্মী হালদারের চড় খেয়ে
তোমার মুখে ফুটল হুলো বেরালের বাণী—
হোয়াঁ ওয়াঁ ওয়াঁও॥
তারপর ষোল বছর কেটে গেছে,
তোমার খাড়াই এখন সাড়ে পাঁচ ফুট,
ওজন ঠিক জানি না, বোধ হয় দেড় মন।
গৌতম যদি তালগাছ আর গৌরচাঁদ
যদি নারকেল গাছ হয় তবে তুমি খেজুর গাছ।
কিন্তু তোমাদের বাড় এখনও শেষ হয়নি,
পঁচিশ বছর পর্যন্ত চলবে,
এই কথা পণ্ডিতরা বলেন।
তার পরেও যা বাড়ে
তা হচ্ছে গোঁফ আর দাড়ি
আর গায়ের চর্বি বা fat॥
তোমার বুদ্ধির দৌড় কত দূর?
শুনেছি ষোল বছরের পরে
বুদ্ধি আর বাড়ে না।
যা বাড়ে তা হচ্ছে অভিজ্ঞতা, experience,
দেখে শেখা, ঠেকে শেখা, আর শুনে শেখা।
এর মধ্যে শেষেরটাই risky।
কালিদাস বলেছেন—
মূঢ়ঃ পরপ্রত্যয়নেয় বুদ্ধিঃ;
অর্থাৎ বোকারা পরের বুদ্ধিতে চলে।
কিন্তু নিজের বুদ্ধিতে যখন কুলোয় না
তখন পরের বুদ্ধি নিতেই হয়।
যদি তুমি চালাক হও
তবে মূর্খ humbug-এর মত নেবে না,
জ্ঞানী লোকের পরামর্শ নেবে,
তা হলেই সিদ্ধিলাভ।
আজ এই পর্যন্ত। যদি টিকে থাকি
তবে আসছে বছর আবার লিখব॥
রাজশেখর বসু
১৬/৬/৫৭
আরও তিন বছর ‘টিকে’ ছিলেন, কিন্তু আর লেখানো হয় নি। দীপংকর