দি পেল হর্স – ৮

অষ্টম অধ্যায়

বাইরের পথে অতি পরিচিত সিনেমার গানের সুর কানে যেতেই গোয়েন্দা ইনসপেক্টর লেজুন মাথা তুলে দেখলেন ডাক্তারবাবু ঘরে ঢুকেছেন। 

—সবাই বিমুখ করায় দুঃখিত, বললো করিগ্যান, কিন্তু জাগুয়ার গাড়িখানার তেল ফুরিয়ে গেছে। অথচ পুলিশ কমিশনার এলিস দেখেশুনে বলেছিল, যে গাড়িতে তেল রয়েছে। এটা এলিসের কল্পনা কিংবা মনের ভুল ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু মোটর ড্রাইভারদের এসব প্রাত্যহিক অভাব নিয়ে মাথা ঘামাবার ইচ্ছে লেজুনের নেই। তাই সে বললো, এসে এটা দেখ তো। 

চিঠিখানা হাতে নিয়ে করিগ্যান নজর বুলাতে লাগলো। সুন্দর একখানা কাগজে চিঠিখানা লেখা। চিঠির মাথায় ছাপা, এভারেস্ট, গ্লেন ডাওয়ার ক্লোজ, বোরনিমাউথ। 

****

প্রিয় ইনসপেক্টর লেজুন, 

আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে যে, আপনি আমাকে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন একটা ব্যাপারে, যে রাতে ফাদার গোরম্যান খুন হন সে রাতে যে লোকটি তাঁকে অনুসরণ করেছিলো তাকে যদি আমার নজরে পড়ে তবে আমি যেন আপনাকে জানাই। আমার দোকান যে অঞ্চলে সেখানে আমি ভালোভাবে সন্ধান করেছি; কিন্তু সে লোকটাকে আর কোনোদিন দেখিনি। 

গতকাল এখান থেকে মাইল কুড়ি দূরে একটি গীর্জার উৎসবে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। প্রখ্যাত গোয়েন্দা কাহিনীর লেখিকা মিসেস অলিভার ওখানে যাচ্ছেন দেখে খুব আকৃষ্ট হয়েছিলাম। গোয়েন্দা গল্প পড়তে আমার খুব ভালো লাগে এবং মহিলাকে দেখে আমার মনে দারুণ কৌতূহল জন্মেছিলো। 

ফাদার গোরম্যান খুন হওয়ার রাতে যে লোকটি তাঁকে অনুসরণ করে আমার দোকানের সামনে দিয়ে গিয়েছিলো বলে আপনার কাছে বর্ণনা করেছিলাম, দারুণ অবাক হয়ে তাকে দেখতে পেলাম। লোকটি বোধ হয় ওই খুনের পর একটা কোনো দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। কেননা সে চাকা লাগানো চেয়ারে বসে বেড়াচ্ছিলো। লোকটির সম্পর্কে আমি গোপনে খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি যে, স্থানীয় লোক সে। নাম তার ভেনবলস। সুচ ভিপিঙের প্রায়ার কোর্টে সে থাকে। লোকে বলে, তার হাতে যথেষ্ট পয়সা কড়ি আছে। 

আশা করি এই খবর আপনাকে যথেষ্ট সাহায্য করবে। 

আপনার বিশ্বস্ত/জাকারিয়া অসবর্ণ 

—কি ভাবছো? শুধালেন গোয়েন্দা ইনসপেক্টর লেজুন।

—অবাস্তব মনে হচ্ছে। হতাশ কণ্ঠে বললো করিগ্যান। 

—বোধ হয় চিঠিখানা পড়েই বলছো। তবে আমি নিশ্চিত নই…। 

এই যে অসবর্ণ লোকটা সেদিনকার কুয়াশাচ্ছন্ন রাতে কখনও লোকটার মুখ পরিষ্কার দেখতে পায়নি। এবং কারো মুখ দেখা সম্ভব নয়। আমার মনে হচ্ছে এটা স্রেফ ঘটনার সাদৃশ্য। লোকজনের স্বভাবও তোমার জানা। সারা দেশে খবর ছড়িয়ে দাও যে তারা একজন হারিয়ে যাওয়া লোকের দেখা পেয়েছে কিনা বলার জন্য। এবং দেখবে দশ জনের মধ্যে ন’জনের পাঠানো খবরের মধ্যে কোনো মিল থাকবে না। এমন কি কাগজে হারিয়ে যাওয়া লোকটার ছবি ছাপালেও মিলের সমস্যা মিটবে না। 

—অসবর্ণ ঠিক সে ধরনের মানুষ নয়। বললেন লেজুন। 

–সে কি ধরনের লোক? 

—সামান্য ওষুধ দোকানদার হলেও লোকে তাকে খাতির করে। স্বভাবে পুরানো চালচলনের মানুষ। বলা যায়, সে একটা চরিত্র এবং মানুষ চিনতে ওস্তাদ। তার জীবনের একটা প্রশ্ন হচ্ছে যে, একবার একজন সধবা রমণী—তার দোকান থেকে বিষ কিনে প্রয়োগ করেছিলো, তাকে সে কোনোদিন ঠিক সনাক্ত করবে। 

করিগ্যান হেসে উঠলো। 

—ও ব্যাপারে এটা পরিষ্কার যে, সে সকল চিন্তার মানুষ। 

—বোধহয় তাই। 

করিগ্যান এবার ইনসপেক্টরের দিকে কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে রইলো। এবং কয়েক মুহূর্ত পরে শুধালো, তাহলে তুমি বলছো যে, এর মধ্যে একটা কিছুর সম্পর্ক আছে। কি করবে এখন? 

—এ মিস্টার ভেনবলস সম্পর্কে গোপনে খোঁজখবর নিলে কিছু ক্ষতি তো হবে না…এবং চিঠিখানা দেখিয়ে বললো, সে যখন সুচ ডিপিঙের প্রায়ার কোর্টে বাস করে।