দার্শনিক
আমার নাম মজনু সিদ্দিকী। পেশায় দার্শনিক। চিন্তা আমার বুটজুতো, সমাজ আমার ফুটবল। সমাজকে সারাক্ষণ আমি লাথির উপরে রাখি, যেন সে আপনাদের নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। আমার কাজ-
সমাজের পশ্চাতযাত্রা রোধ করা।
এতে আপনাদের অসুখ বাড়লেও, সমাজের অসুখ কমতে থাকে। কারণ সমাজ আমাকে তার নাক হিশেবে ব্যবহার করে; যেন তার পচাগলা সর্দি, আপনাদের জামা-কাপড় নষ্ট না করতে পারে।
সেদিন এক তরুণকে জিগ্যেস করলাম— তোমার ঘাড়ে এটা কিসের দাগ? সে উত্তর দিলো— এটা সমাজের কামড়ের দাগ।
সমাজকে যেদিন আমি একটি লাথি কম দিই, সমাজ সেদিন আপনাদের ঘাড়ে একটি কামড় বেশি দেয়। সমাজের যেন দাঁত না গজায়, তার গ্রন্থিতে যেন বিষ না জমে, সে জন্য আমাকে নির্ঘুম পাহারায় থাকতে হয়।
একটি মেয়েকে চিনি, যে একবার সমাজের দোররা খেয়ে রাতের আঁধারে আল্লাহর কাছে চলে গিয়েছিলো। তার দেহটি, কলার ছড়ির মতো ঝুলছিলো আম গাছের ডালে। সে যখন বাইরে বেরোচ্ছিলো, তখন তার মা জিগ্যেস করেছিলো— গুলবাহার, কই যাস?
সে বলেছিলো:
‘মাই, আমি সমাজের মুখে পেচ্ছাব করতে যাই।’
এখন আমি চোখ মুদলে সমাজের যে-গন্ধ পাই, তা মূলত ওই মেয়েটির প্রস্রাবের গন্ধ।
মানুষের জীবনে সমাজের ভূমিকা কনডমের মতো। যা কিছু সৃষ্টিশীল, তার সবকিছু আটকে দেয়াই সমাজের কাজ। সমাজ জানে, তার ভবিষ্যৎ অনাসৃষ্টিতে। সৃষ্টিপ্রিয় শুক্রাণু তার শত্রু। যেখানেই মাথা তুলে দাঁড়ায় সামান্য সৃষ্টি, সেখানেই সমাজ হাজির হয় বাধার বৃষ্টি নিয়ে। সমাজের কালো পর্দা ভেদ করে মানুষ এখন আর আকাশের দিকে তাকাতে পারে না। তাকে হাঁটতে হয় সারাক্ষণ মাটির দিকে চেয়ে চেয়ে।
এ জন্য মাঝেমধ্যে, আমার লাথি খেয়ে সমাজের কালো পর্দা ফেটে গেলে যে-তীব্র আলোর ঝলকানি সৃষ্টি হয়, তাতে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। তারা তখন চিৎকার করতে থাকে-
আগেই ভালো ছিলাম! আগেই ভালো ছিলাম!