দর্পণে প্রতিবিম্বিত কাঁটা – ৯

নয়

কেষ্টপুর লোকালের প্রথম শ্রেণীর কামরাটায় দ্বিতীয় কোনও যাত্রী ছিল না। বাসুসাহেব সেই নির্জন কামরায় পকেট থেকে কাল-রাত্রে-পাওয়া টেলিগ্রামটা আবার বার করে পড়লেন। হ্যাঁ, এইদিনের এই কেষ্টপুর লোকালে কোনও ফার্স্টক্লাস কামরায় রায়বাহাদুর ওঁকে বেলডাঙা আসতে বলেছেন। আশ্বস্ত করেছেন যে, স্টেশনে একজন লোক ওঁকে অ্যাটেন্ড করবে এবং মোহনমঞ্জিলে নিয়ে আসবে। এর বেশি টেলিগ্রামে আর কিছু জানানো হয়নি। বাসু খুশি হতেন সকালের লালগোলো প্যাসেঞ্জারটা ধরতে পারলে। তাহলে দিনে দিনেই অকুস্থলে পৌঁছে যাওয়া যেত। কিছুটা সময় পাওয়া যেত। এ তো মনে হচ্ছে বেলডাঙায় নেমে মোহনপুর যেতে এক প্রহর রাত হয়ে যাবে।

বেলডাঙায় ট্রেনটা পৌঁছনোর কথা সন্ধ্যা সাতটা পঞ্চাশে। কিন্তু মিনিট পনের লেট করায় আটটা পাঁচে গাড়িটা এসে থামল বেলডাঙায়। বাসুসাহেব তাঁর গ্ল্যাডস্টোন ব্যাগটা তুলে নি প্ল্যাটফর্মে নেমে পড়লেন। অন্যান্য কামরা থেকেও দু-চারজন যাত্রী নামল। হুইস্ল্ বাজিয়ে অন্ধকারের মধ্যে ট্রেনটা রওনা দিল গন্তব্যস্থলের দিকে।

যারা নেমেছে তারা গেটের দিকে রওনা হয়েছে। মুঠো মুঠো জোনাকি জ্বলছে ঝোপে- ঝাড়ে। বাসুসাহেব তাঁর ব্যাগটা ওঠাবার উপক্রম করতেই পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল, আপনি তো মোহনপুর যাবেন?

প্রৌঢ় একজন মানুষ। পায়ে ক্যাম্বিসের জুতো, গায়ে হাফশার্ট। বেশ সুন্দর কাঁচাপাকা এক জোড়া মোচ আছে। এককালে হয়তো জমিদারীর নায়েব ছিল।

বাসু সরাসরি জবাব না দিয়ে প্রতি-প্রশ্ন করেন, কেন বলুন তো?

—না মানে ইয়ে, আপনি বাসুসাহেব তো? মোহনমঞ্জিলে যাবেন তো? আমিই আপনাকে নিতে এসেছি।

—অ। আপনার পরিচয়?

—আজ্ঞে। আমার নাম শ্রীধর গোঁসাই। আমাকে ‘তুমি’ বলবেন। রায় বাহাদুরের এস্টেটে কাজ করছি আজ চল্লিশ বছর।

—বুঝলাম। তা আমাকে চিনলে কী করে?

—আজ্ঞে ফাস্টো-কেলাস থেকে আর কেউ তো নামেনি।

—ওয়েল ডিটেকটেড। ঠিক আছে। চল।

কুলি করতে হল না। শ্রীধরই ওঁর ব্যাগটা উঠিয়ে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল। স্টেশনের বাইরে একটা পুরাতন মডেলের কালো শেভ্রলে দাঁড়িয়েছিল। তার ড্রাইভার সেলাম করে পিছনের পাল্লাটা খুলে দিল। শ্রীধর গোঁসাই বাসুসাহেবের ব্যাগটা নিয়ে ড্রাইভারের পাশের আসনে বসল।

গাড়িটা রওনা দিল। কৃষ্ণপক্ষের রাত্রি। স্টেশন-চত্বর পার হবার পর ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন গ্রাম্য পরিবেশে একজোড়া হেড-লাইটের আলোয় এঁকেবেঁকে চলল গাড়িটা। কিছুটা পথ এগিয়ে যাবার পরই গতিবেগ কমাতে হল। পিচমোড়া রাস্তা অতিক্রম করে গাড়িটা এবার খোঁয়া-বাঁধানো গ্রাম্য সড়কে এসে পড়েছে। পিছনে একটা গেরুয়া চালচিত্র রচনা করে এঁকে- বেঁকে চলেছে মোহনপুরের দিকে। মাঝে মাঝে দু-চার ঘর মানুষের বাস। বিজলি বাতির লাইন আসেনি। তারা হ্যারিকেন জ্বালিয়ে কাজকর্ম সারছে।

অবশেষে এক সময় যাত্রা সম্পূর্ণ হল। দূর থেকে হেডলাইটের আলো পড়তেই ঢালাই লোহার গেটটা খুলে গেল। শেভ্রলে গাড়িটা এসে থামল পোর্টিকোর নিচে।

তৎক্ষণাৎ অন্তরীক্ষ থেকে আর্বিভূত হল একজন। তার হাতে পাঁচ সেলের বড় টর্চ। মোহনপুরে কিন্তু বিজলি বাতি আছে। ড্রাইভার দৌড়ে এসে পিছনের দরজাটা খুলে দিল। টর্চ- বাতিটা বোধকরি লোড-শেডিং এমার্জেন্সি বাবদ। টর্চ-হাতে-লোকটা এগিয়ে এসে যুক্ত করে নমস্কার করে বললে, আসেন স্যার, এদিকে।

হাত বাড়িয়ে শ্রীধরের হাত থেকে গ্ল্যাডস্টোন ব্যাগটা গ্রহণ করে গ্র্যান্ড-স্টেয়ার্স বেয়ে ওপরে উঠে এলেন ওঁরা দুজন। শ্রীধর আবার উঠে বসল গাড়িতে। গাড়িটা গ্যারেজের দিকে চলে গেল।

ওঁরা দুজন পাশাপাশি এগিয়ে এলেন বৈঠকখানার দিকে। বাসু আচমকা প্রশ্ন করেন, তোমার নাম তো দশরথ, তাই নয়? দশরথ জানা?

লোকটা থমকে থেমে গেল। অবাক হয়ে বললে, আপনি দশরথদারে চিনেন? আজ্ঞে না, আমার নাম হরিদাস, আজ্ঞে। দশরথদা আমারে বলি রাখিছিল কলকাতা থিকে একজন সাহেব আজ রাত সাড়ে আটটা নাগাদ আসপেন। তাই, হুজুর, আমি টিপবাতি-হাতে ভেঁরিয়ে আছি। আসেন, স্যার!

বৈঠকখানার ভেজানো পাল্লাটা হাট করে খুলে দিয়ে লোকটা বলল, সাহেব আসি গেছেন। বলে আর দাঁড়ালো না। ব্যাগটা নামিয়ে রেখে নিজের কাজে চলে গেল। ঘরে জোরালো নিয়ন বাতি জ্বলছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেশ কয়েকজন লোক সেখানে উপস্থিত। বাসু তাদের ওপর চোখ বুলিয়ে এক লহমার মধ্যে বুঝে নিলেন— এঁরা জানে না যে, তিনি এসময় আসবেন। সবাই অবাক হয়ে তাঁকে দেখছে।

হঠাৎ সে দলের ভেতর একজন প্রৌঢ়া—তাঁর মাথায় কাঁচা-পাকা চুলে সিন্দুর চিহ্ন, ঘোমটাটা তুলে দিয়ে এগিয়ে এলেন। যুক্ত করে নমস্কার করে বললেন, আসুন, আসুন। ভিতরে এসে বসুন। কলকাতা থেকে আসছেন নিশ্চয়—

বাসু প্রতি-নমস্কার করে বললেন, আজ্ঞে হ্যাঁ, কেষ্টপুর লোকালে। আপনি নিশ্চয় শশীকলা দেবী, তাই নয়?

—আজ্ঞে হ্যাঁ, তাই। কিন্তু আমি মানে…….

—আমার নাম প্রসন্নকুমার বাসু। আমি যে এই ট্রেনে আসছি তা কি রায়বাহাদুর আপনাকে বলতে ভুলে গেছেন?

—না, না, ভুলে যাবে কেন? বলেছে, নিশ্চয় বলেছে। আমিই বোধহয় সেকথা ভুলে বসে আছি। আজকাল আমার কিছুই মনে থাকে না। উনি নিশ্চয় আমাকে বলেছিলেন যে, আপনি মাজ সন্ধ্যায় কেষ্টপুর লোকালে আসবেন, আমি… মানে….

গৃহাভ্যন্তরে যাঁরা আড্ডা মারছিলেন তাঁরা এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি। তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে গৃহস্বামিনী বলেন, আপনি তো এঁদের সবাইকে চেনেন। নতুন করে কী আর পরিচয় দেব? আর ইনি হচ্ছেন মিস্টার প্রসন্নকুমার বাসু, রায়বাহাদুরের বাল্যবন্ধু!

বাসুসাহেব আন্দাজ করেন, শশীকলা অনুমান করেছেন আগন্তুক রায়বাহাদুরের বাল্যবন্ধু!

এই সময় রানী-কালার মুর্শিদাবাদী সিল্কের শাড়িপরা একটি সুন্দরী যুবতী এগিয়ে এসে বলে, এক্সকিউজ মি স্যার, আপনি কি ব্যারিস্টার পি. কে. বাসু?

বাসু হেসে বলেন, তুমি আমার নাম শুনেছ দেখছি। কিন্তু আমি যে আজ সন্ধ্যায় আসছি, সেটা তুমিও জান না। না কি তোমাকেও রায়বাহাদুর সেকথা বলে রেখেছিলেন, আর তুমি ভুলে বসে আছো?

—না স্যার। আমাকে তিনি বলেননি। জানা থাকলে আমার ভ্যানিটি ব্যাগে অটোগ্রাফ খাতাখানা নিশ্চয় থাকত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ড্যাডি আমাদের সবাইকে একটা বিরাট সারপ্রাইজ দেবে বলে খবরটা আস্তিনের তলায় লুকিয়ে রেখেছিল।

—কিন্তু তিনি কোথায়? তোমার ড্যাডি?

মেয়েটি জবাব দেবার সুযোগ পেল না। তার আগেই প্যাসেজের দিক থেকে ভেসে এল একটা ধাতব ঘন্টাধ্বনি-–ঢং।

বাসু চট-জলদি নিজের মণিবন্ধের দিকে তাকিয়ে দেখলেন আটটা তিপ্পান্ন। ঠিক তখনি বৈঠকখানার ভিতর দিকের দরজাটা খুলে গেল। একজন খিদমদ্‌গার—এবারও যদি ওঁর আন্দাজে ভুল না হয় থাকে তাহলে—দশরথ জানা, এসে ঘোষণা করল, আসুন আপনারা, খানা…

প্রায় পাঁচ-সেকেন্ড পরে বাক্যটা শেষ করল সে,… তৈয়ার।

ওই পাঁচটা সেকেন্ড দশরথ জানার মুণ্ডুটা সিনেমা টেকনিকের পরিভাষায় ডান-থেকে- বাঁয়ে ধীরে ধীরে ‘প্যান’ করছিল। বাসু লক্ষ্য করে দেখলেন, সকলেই অল্পবেশি উত্তেজিত। শশীকলা বলে ওঠেন, এমনটা তো কখনো হয়নি!

বাসু সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে অপরাজিতাকে প্রশ্ন করেন, তোমার মা কী বলতে চাইছেন? কোন্ জিনিসটা হয়নি?

মেয়েটি সপ্রতিভভাবেই জবাবে বলল, আমি জ্ঞানত কখনও দেখিনি ড্যাডি ডিনারে লেট।

কক্ষে উপস্থিত ভদ্রমণ্ডলীর ভিতর থেকে একজন বৃদ্ধ বলে ওঠেন, জয় জগন্নাথ! অ্যাদ্দিনে তাহলে রায়বাহাদুর শেষপর্যন্ত মাত্ হলেন?

বাসুসাহেব তাঁর দিকে ফিরে বললেন, কেন? এর আগে তাঁকে কোনদিন মাত্ করতে পারেননি নাকি, মোহান্তিমশাই?

ভদ্রলোক স্তম্ভিত হয়ে যান। ওই সম্পূর্ণ অপরিচিত সুটেড-বুটেড সাহেবটি বোধহয় জীবে প্রথমবার মোহনপুরে এল—তা সে হোক না কেন রায়বাহাদুরের বাল্যবন্ধু। সেক্ষেত্রে লোকট তাঁকে এভাবে বেমক্কা ‘মোহান্তিমশাই’ নামে ডাকে কী করে?

মোহান্তিমশাই কিছু বলার আগে ও-প্রান্ত থেকে একটি ভদ্রমহিলা—বছর পঞ্চাশ বয় হবে তাঁর, মাথায় বকাট চুল, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা—দশরথকে প্রশ্ন করেন রায়বাহাদুর কোথায়? তুমি জান?

—কর্তামশাইকে ঘণ্টাদুই আগে ওই পুবদিকের ঘরে, মানে পড়ার ঘরে দেখেছিলাম আজ্ঞে। তারপর আর তাঁরে দেখিনি।

অপরাজিতা প্রশ্ন করে, স্ট্যাডিরুমের দরজাটা কি এখন খোলা নেই? ঘণ্টার শব্দ কি ড্যাডি শোনেনি?

—আজ্ঞে দরজাটা ‘আবজানো’ আছে। তবে তা থাকলেও ঘণ্টার শব্দ তিনি নিশ্চয় শুনেছেন। আমি গিয়ে দেখে আসব?

শশীকলা বলেন, হ্যাঁ নিশ্চয়। দেখে এস তো—

আদেশমাত্র দশরথ ঘর ছেড়ে স্ট্যাডিরুমের দিকে এগিয়ে এল। বাসুসাহেব লক্ষ্য করে দেখলেন, সকলেই রুদ্ধশ্বাসে কী যেন একটা অলৌকিক ঘটনার প্রতীক্ষা করছে। তাদের জ্ঞানত এমন দুর্ঘটনা নাকি মোহনমঞ্জিলে কখনো ঘটেনি। নৈশাহারের আহ্বানধ্বনি কাংস-নির্ঘোষে প্রচারিত হয়ে গেল অথচ গৃহকর্তা তার পূর্বে বৈঠকখানায় এসে উপস্থিত হয়নি—সদলবলে খানা-কামরায় যাবার জন্য। বাসু আরও লক্ষ্য করে দেখলেন, কক্ষে একজন প্রৌঢ়, আরও একজন যুবতী আর তিনজন অল্পবয়সী যুবক উপস্থিত। এদের মধ্যে অনেককে উনি আন্দাজে চিনতে পারলেন।

ইতিমধ্যে দশরথ ফিরে এসেছে। সসম্ভ্রমে বললে, পড়ার ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ আছে, মা-ঠাইরান।

—ভিতর থেকে বন্ধ! মানে? তুমি ধাক্কা দিয়ে দেখলে?

দশরথ দুদিকে মাথা নেড়ে ইঙ্গিতে জানালো, তার ঘাড়ে একটাই মাথা—তাই সে ডাকাডাকি করেনি, ধাক্কাধাক্কি করেনি।

এইমাত্র প্রশ্নটা যে করেছে—বাবরি চুল দেখে বাসু বুঝতে পেরেছেন, সে হচ্ছে সঞ্জয় দুগার—এবার সে শশীকলার দিকে ফিরে জানতে চায়, আমি গিয়ে একবার দেখে আসব পিসিমা?

শশীকলা প্রত্যুত্তর করার সুযোগ পেলেন না, কারণ তার আগেই বাসুসাহেব বলে ওঠেন, না সঞ্জয়। তুমি একা নয়। আমরা সবাই একসঙ্গে যাব। আসুন আপনারা। দশরথ, তুমি পথ দেখাও।

সবাই উত্তেরাত্তর স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছে। কে ওই বৃদ্ধ আগন্তুক? যাকে অপরাজিতা ছাড়া আর কেউ চেনে না, অথচ যে একের পর একজনকে নাম ধরে সম্বোধন করছে!

বাসুসাহেব ভ্রূক্ষেপ করলেন না। দশরথের পিছু পিছু তিনি রওনা হলেন। দলের বাকি সকলেই নীরবে তাঁর অনুগমন করল। সকলের পিছনে সেই অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মহিলা। দলটা এসে থামল স্টাডি-রুমের দোরগোড়ায়। বাসু প্রথমে হ্যান্ডেলটা ঘুরিয়ে দেখলেন, সেটা পাক খেল বটে, কিন্তু দরজা খুলে গেল না। এবার ধীরে ধীরে দরজায় করাঘাত করলেন বাসু। ভিতরে কোন সাড়াশব্দ জাগল না। উপায়ান্তরবিহীন হয়ে এবার বেশ জোরে জোরেই দরজায় আঘাত করলেন। তবু কোন প্রতিক্রিয়া হল না। বাসু এবার হাঁটু গেড়ে মার্বেল-মেজেতে বসে চাবির ফুটো দিয়ে ঘরের ভিতরটা একবার দেখলেন। পরমুহূর্তেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বলে ওঠেন, উপায় নেই। দরজাটা ভেঙে আমাদের ভিতরে যেতে হবে।

এ-ওর মুখের দিকে তাকায়। কেউ কথা বলে না। আগন্তুক বৃদ্ধের হুকুমটা কিন্তু মেনে নেয় অল্পবয়সী কজন। উপর্যুপরি ধাক্কায় সেগুন কাঠের পাল্লায় অবশেষে চিড় ধরল। পরের ধাক্কাতেই প্রচণ্ড শব্দ করে বর্মা-টিকের প্যানেল-দরজাটা ভেঙে পড়ল। দরজা নয়, দরজার সঙ্গে সংলগ্ন তালাটা। ফলে কপাটটা খুলে গেল ভিতরদিকে।

কেউ ভিতরে ঢুকল না। ঘরে আলো জ্বলছে। টেব্‌ ল্যাম্প। চৌকাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে সবাই একসঙ্গে যেন বজ্রাহত হয়ে গেল! ঘরের বাঁ-দিকের দেওয়াল ঘেঁষে একটা বড় মেহগিনিকাঠের সেক্রেটারিয়েট টে। তাতেই জ্বলছিল ওই বাতিটা। দরজার দিকে মুখ করে টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে আছেন রায়বাহাবদুর। তাঁর মাথাটা এক পাশে ঝুলে পড়েছে। শুধু মাথা নয়, শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গের অনেকটা। ডান হাতটা আলগাভাবে ঝুলছে। সাদা মার্বেলের মেঝের ওপর রক্তের একটা ছোপ। ডানহাতের নিচেই পড়ে আছে একটা রিভলভার। ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। রায়বাহাদুর অর্গলবদ্ধ কক্ষে নিজের হাতে নিজের জীবনাবসান ঘটিয়েছেন। নিজের রিভলভারে।