দর্পণে প্রতিবিম্বিত কাঁটা – ৬

ছয়

মোহনমঞ্জিল একটা দর্শনীয় স্থাপত্য। প্রায় দশবিঘা জমির কেন্দ্রস্থলে তিনতলা বাড়ি। ত্রিতলে অবশ্য একটি মাত্র বড় ঘর। রায়বাহাদুরের শয়নকক্ষ। মানুষভর উঁচু পাঁচিলে জমিটা ঘেরা। সামনে প্রকাণ্ড ঢালাই-লোহার গেট। পাশেই দ্বাররক্ষীর কুঠুরি। বাইরে বার হয়ে না এসেও সে বাঙ্কারের ছিদ্রপথে আগন্তুককে দেখতে পায়। গেট থেকে চওড়া ডাবল লেন একটা সুরকির রাস্তা বাড়ির দিকে এগিয়ে গেছে। দুপাশে ফুলের কেয়ারি। কিছু দূরে-দূরে মর্মরমূর্তি। গ্রিক ও রোমান ভাস্কর্যের দেবদেবী ও উপদেবতা। অ্যাপোলো, মার্কারি, ভেনাস, বাক্কাস, ফন! সুরকির রাস্তাটা একদিক দিয়ে পোর্টিকোয় ঢুকে অপরদিক থেকে বার হয়ে এসেছে। সামনে গ্র্যান্ড স্টেয়ার্স—মিউ-ভিক্টোরিয়ান যুগের শৈলীতে। সামনে একসারি কোরিস্থিয়ান কলম। চওড়া মার্বেলের বারান্দা। জানলা-দরজায় ডাবল পাল্লা। কাচের ও ভেনিশিয়ান খড়খড়ির। সামনেই বৈঠকখানা। ডাইনে স্টাডি, বাঁয়ে লাইব্রেরি তথা বিলিয়ার্ড রুম। এই তিনটি ঘরের পিছনে প্রকাণ্ড হল-কাম-ডাইনিং রুম। একসঙ্গে পঞ্চাশজন মানুষ পংক্তি ভোজনে বসতে পারে। বিরাট হলের কেন্দ্রস্থলে শুধু একটি শ্বেতপাথরের টেবিল। পাঁচ-পাঁচ দশজন, দুদিকে বসলে টেবিলের দুপ্রান্তে দুজন, একূনে বারোজনের একত্রে বসার নিত্য আয়োজন। বড় জাতের ডিনার হলে খাজাঞ্চিখানা থেকে বাড়তি টেবিল-চেয়ার নিয়ে আসতে হয়। আসবাবপত্র সবই মিড- ভিক্টোরিয়ান যুগের

রায়বাহাদুরের শয়নকক্ষ তিনতলায়। ভোজনাগার একতলায়, প্রতিদিন তিনি এই বয়সেও দিনে দুবার ওপর-নিচ করেন। দ্বিতলেও দক্ষিণ-পূর্বে ভাল ঘর আছে; কিন্তু রায়বাহাদুর তাতে বাস করতে গররাজি। যুক্তি একটাই—এককালে দৌড়ঝাঁপ’ প্রচণ্ড করেছি। এ বয়সে দুবার তিনতলায় সিঁড়ি ভাঙার অভ্যেসটা ছাড়লে অথর্ব হয়ে যাব।

ওঁর জীবনযাত্রা একেবারে ঘড়ির ছকে বাঁধা। প্রত্যূষে ব্রাহ্মমুহূর্তে শয্যাত্যাগ। সূর্যোদয়ের আগেই প্রাতঃকৃত্যাদি সারা। সূর্যোদয় মুহূর্তে তিনি ছাদে পদ্মাসনে বসে ধ্যান করেন। তারপর সকাল সাতটায় প্রাতরাশ। সময়ের ফলমূল, একগ্লাস দুধ। চা-পানের অভ্যাস নেই; তদনন্তর দু’তিনটি সংবাদপত্র পাঠ দুটি ঘণ্টা। বেলা এগারোটায় আসে তৈলমর্দনকারী। পাক্কা একঘন্টা সে ওঁকে তেল মাখায়। তৈলমর্দনান্তে রায়বাহাদুর স্নানে যান। গৃহউদ্যান সংলগ্ন উৎসর্গীত পুষ্করিণীতে। ঠিক সাড়ে বারোটায়। ফলে বাড়ির লোকজন হয় সওয়া বারোটার মধ্যে পুকুরে স্নান সেরে আসে, ‘না হলে কর্তামশাই দেড়টায় স্নানান্তে ফিরে এলে। রায়বাহাদুরের ফর্মান : তিনি যখন ঘাটে স্নান করবেন তখন দশরথ জানা ব্যতিরেকে ঘাটে যারা থাকবে তারা শুধু ঘুঘু, মাছরাঙা আর গাঙশালিক। স্নানান্তে ভিজা-কাপড়টা পাষাণ রানায় ছেড়ে উনি ধুতি পরে ফিরে এসে বসবেন স্টাডিতে। তখন একজন খিদ্‌মদ্‌গার একগাদা রেকর্ড এবং সেকালের চোঙমুখ গ্রামোফোন নিয়ে প্রস্তুত থাকবে। রায়বাহাদুর তা থেকে ওঁর বাল্য কৈশোরের শ্রুত গুটিকতক রেকর্ড বেছে দেবেন। গোনা গুতি সাতটি। সপ্তম রেকর্ডটির সুর মিলিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে প্যাসেজে মানে ভিতরকার বারান্দায় পেটা ঘড়িটা বেজে উঠবে : ঢং!

রায়বাহাদুর তৎক্ষণাৎ সংলগ্ন স্নানাগারে যাবেন। কোন কবিরাজ নাকি এককালে বলেছিলেন, আহারের পূর্বে ব্লাডারটাকে নিরম্বু করে ফেলতে পারলে হজম ভাল হয়। ঠিক সাত মিনিট পরে বাজবে দ্বিতীয়বার ধাতব ঘন্টা! ফাইনাল কল : ঢং

তার আগেই পরিবারের মধ্যাহ্নভোজন খানেওয়ালার দল যে যার চেয়ারে বসে যান। টেবিলের দুই প্রান্তে বসেন দু’জন : গৃহস্বামী ও স্বামিনী!

মধ্যাহ্ন আহারের জন্য বরাদ্দ পাক্কা একটি ঘণ্টা। অতঃপর মুখ প্রক্ষালনান্তে রায়বাহাদুর একটি আরাম-কেদারায় বিশ্রাম করেন। পঁয়তাল্লিশ মিনিটের ‘যোগনিদ্রা’ বলতে পারেন। ঘুম নয়। ‘ঘুম’ বললে চটে যান। তারপর কিছু বইটই নাড়াচাড়া করেন। পড়েন বলে মনে হয় না। এই সময় এসে যায়— না, ‘চা’ নয়। গ্রীষ্মে বেলের পানা, শীতে গরম হরলিক্স। সাড়ে চারটে থেকে সাড়ে পাঁচটা সান্ধ্যভ্রমণ। কম্পাউন্ডের ভিতরেই। খালি পায়ে। দুর্বাঘাসের ওপর। সন্ধ্যায় টি. ভি.-তে সংবাদ শোনেন। সেটা শেষ হয় সওয়া সাতটায়। তারপর আবার উঠে যান স্টাডিতে। দেরি হয়ে গেছে—তাহোক, এবার উনি বংশের আদিপুরুষ পুরুষোত্তমদাস শেঠজীর অনুকরণে নিজের কথা লিখতে বসেন। না, দিনপঞ্জিকা নয়— আত্মজীবনী। জ্ঞান হওয়া ইস্তক তাঁর কালের কথা। প্রাক্-স্বাধীনতা যুগের নানান খণ্ডকাহিনী থেকে শুরু করে আজতক্। এ কাজ পাক্কা দেড়ঘন্টার। কারণ ঠিক নটা বাজতে সাত মিনিটে স্টাডিরুমের বাইরে পেটা ঘণ্টায় আবার একটা শব্দ হয় : ঢং!

কলমটা খাপ বন্ধ করে রায়বাহাদুর এগিয়ে যান সংলগ্ন ইউরিনালের দিকে। সেই নিত্যকর্মান্তে পাশের ঘরে ডিনার টেবিলে গিয়ে বসেন, প্যাসেজের ধাতব ঘণ্টায় দশরথ দ্বিতীয়বার ঘণ্টাধ্বনি করার পূর্বেই। প্রথম ও দ্বিতীয়বার ঘণ্টাধ্বনির মাঝখানে সময়ের ব্যবধান সাত মিনিট।

কেউ যদি সময়মতো উপস্থিত হতে না পারে তাহলে অলিখিত আইন অনুসারে সে আর ভোজানাগারে যায় না। তার খাবারের থালা তার ঘরে রেখে আসে গৃহভৃত্যরা। পরদিন সকালটা সে কাঁটা হয়ে থাকে— কখন রায়বাহাদুরের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হয়ে যায়। পূর্বরাত্রে সময়মতো খানা-কামরায় হাজিরা দিতে না পারার কৈফিয়ৎ দেবার ডাক পড়ে।

ডক্টর মিস স্মিথ-এর জীবনও নিয়মানুগ, তবে এমন যান্ত্রিক ছকে বাঁধা নয়। হয়তো সে জন্যই তিনি আহার-বিহারের পৃথক ব্যবস্থা করতে পীড়াপীড়ি করেছিলেন। উনি থাকেন আউট-হাউসের একটি পৃথক ঘরে। ভাল ভাল আসবাব দিয়ে সেটিকে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সংলগ্ন স্নানাগারও আছে। আছে একটি ছোট কিচেনেট, তাতে গ্যাস স্টোভ। মিস স্মিথ স্ব-পাক রন্ধন করেন। তবে ‘বড় বাড়ি থেকে টিফিন কেরিয়ারে প্রত্যহই তাঁর জন্য এত রান্না করা ‘পদ’ আসে যে শুধু ভাতটুকু ফুটিয়ে নেওয়া ছাড়া ডক্টর স্মিথ সবসময়েই গবেষণায় মগ্ন থাকেন। অপরাজিতা সময়-অসময়ে খোঁজ নিয়ে যায়। হাতে-হাতে কাজও করে। ঘরটা গুছিয়ে দেয়। টেবিলে ফুল সাজিয়ে রেখে যায়।

রায়বাহাদুরের ইচ্ছা ও ব্যবস্থাপনা মোতাবেক সেদিন সন্ধ্যাবেলা একটা নোট খাতা হাতে ডক্টর মিস রমলা স্মিথ এলেন বড়বাড়ির বৈঠকখানায়। তখন সন্ধ্যা ছয়টা কুড়ি। রায়বাহাদুর দশরথ মারফত সবাইকে সংবাদ দিয়ে রেখেছিলেন সন্ধ্যা ছয়টা পঁচিশের ভিতর বৈঠকখানায় হাজিরা দিতে। কারণ মিস স্মিথ শেঠবাড়ির জন্মকথা শুরু করবেন সাড়ে ছয়টায়।

ঘরটা বড় নয়। মাঝারি আকারের। বাইরের দিকে যে দরজাটা আছে তার রুজুরুজু অন্দরমহলের দিকে আছে একটি দরজা। তা দিয়ে ভিতরের প্যাসেজে যাওয়া যায়। ওই প্যাসেজ দিয়ে ভোজনাগারে যাওয়ার পথ। ডানদিকে মোড় ফিরে। ঠিক বাঁকের মাথায় সেই কাঁসর-ঘণ্টাটা প্রলম্বিত। যার ধাতব-নিনাদে আতঙ্কিত হয়ে গৃহবাসী আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নিত্য দু’বেলা পড়ি-তো-মড়ি খানা কামরার দিকে ছুটতে থাকে।

রমলা এসে দেখলেন, মধ্যমণি ব্যতিরেকে আর সবাই সমবেত হয়েছেন! গৃহস্বামিনী শশীকলা একটি লালপাড় হালকা নীলরঙের শাড়ি পরে টেবিলের দূরতম প্রাপ্তে বসেছেন। এখনও তিনি ফ্রিল হাতাওয়ালা ব্লাউজ পড়েন রবীন্দ্রযুগের মতো। প্রসাধন প্রায় করেনই না, গরমের দিনে গায়ে পাউডার দেওয়াকে ধর্তব্যের মধ্যে না ধরলে। মাথায় কাঁচা-পাকা চুলে চওড়া করে সিঁদুর। বিন্দি-টিপ ব্যবহার করেন না। আজীবন সিন্দুর-বিন্দু ধারণ করেছেন ললাটে। আজীবন নয়, আ-বিবাহিত জীবন।

দেওয়ানজী সত্যপ্রসন্ন দুগার বসেছেন তাঁর ঠিক পাশে। সুদর্শন, সৌখিন প্রৌঢ়। এককালে এস্টেটের দেওয়ান ছিলেন। জমিদারি খোয়াবার পর বর্তমানে তিনি শেঠরায়-এস্টেটের ম্যানেজার, কিন্তু প্রাচীন প্রথায় এখনও তাঁকে সবাই দেওয়ানজী ডাকে। তিনি শশীকলার বাল্যবন্ধু— দুজনের মধ্যে, জনশ্রুতি, কোন সুদূর অতীতে নাকি ‘বাছুরে ইস্ক’ গড়ে উঠেছিল। এটা সত্য কি না সেকথা আজ আর কেউ ভাবে না, তবে অতি দীর্ঘদিন দুগারজী এ-পরিবারের শুভাকাঙ্খী, একথা মোহনপুরের সবাই জানে।

দেওয়ানজীর বিপরীতে বসেছে সঞ্জয় দুগার। অত্যন্ত সুদর্শন যুবাপুরুষ। বয়স বত্রিশ- তেত্রিশ। দীর্ঘকায়, সুঠাম, মাথায় বাবরি চুল। বাবার মতো সেও সাজপোশাক সম্বন্ধে খুবই সচেতন। ছাত্র ভালই ছিল। কিন্তু টি. ভি.-তে অভিনয় করবার ফাঁদে পড়ে লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। মুম্বাইতে গিয়ে সুবিধা করতে পারে না। এদিকে ওকালতির ডিগ্রিটাও পায় না। বছরখানেক সে বেকার। শোনা যাচ্ছে, আবার কলকাতায় গিয়ে নাইট-কোর্সে পড়ে আইনের উপাধিটা নিয়ে আসবে। তাকে চাকরি বা প্র্যাকটিস করতে হবে না। বাবার এন্তেকাল হলে আশা করা যায়–সে এই এস্টেটের শুধু ম্যানেজার নয়, মালিকও বনে যেতে পারে। অপরাজিতার মতিগতি বোঝা ভার; কিন্তু পিসেমশাই তাকে নেকনজরে দেখেন। কারণ তাঁর হুকুম তামিল করতে সঞ্জয় সবসময় একপায়ে খাঁড়া।

সঞ্জয়ের পাশে ওই শ্যামবর্ণ ছেলেটি ডাক্তার সলিল বসু। রমলার মতো পি. এইচ. ডি. ডিগ্রিধারী নয়, তবে সেও ডক্টর। রীতিমতো পাঁচ বছর নীলরতনে জ্যান্ত-মরা ঘেঁটে এবং কেটে এম. বি. পাশ ডাক্তার। ভালভাবে পাশ করা সত্ত্বেও সলিল শহরের মোহ ত্যাগ করে এই গ্রামে এসে প্র্যাকটিসে বসেছে। ওর বাবা সুধাময় বসু ছিলেন এই অঞ্চলের একমাত্র পাস করা ডাক্তার। বাবার প্র্যাকটিসটা সলিল ধীরে ধীরে অধিগ্রহণ করছে। বৃদ্ধ সুধাময় আজকাল আর সকাল-সন্ধ্যা চেম্বারে এসে বসেন না। ছেলেই সেই কাজটা করে। শুধু দু-তিনটি বিত্তবান পরিবারে পুরনো ফোর্ড গাড়িটা বার করে তাঁকে রোগী দেখতে যেতে হয় আজও। মোহনমঞ্জিলে কারও শরীর বেজুত হলে অনিবার্যভাবে ডাক পড়ে সুধাময়ের। তবে ডাক্তার সুধাময়ের আদেশ অনুসারে সলিলকে প্রতি রবিবার সন্ধ্যায় একবার করে মোহনমঞ্জিলে আসতে হয়। একতলায় দাবা খেলার আসরে কর্তাকে এবং তিনতলায় গৃহস্বামিনীকে পেড়ে ফেলে রক্তাচাপ নিতে হয়। সেটা খাতায় লিখে রাখার দায়িত্ব অপরাজিতার। সলিল শ্যামলা হলেও সুদর্শন। তার হাসিটা বড় মিষ্টি, আর কথাবার্তা ভারি সরস, সপ্রতিভ।

এছাড়া এসেছেন কবিরাজ বলরাম মোহান্তি। আদি নিবাস কটক। তাঁর পুত্রটি মোহনপুর কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। বিপত্নীক বলরাম এখন পুত্রের সংসারেই বাস করেন। ভদ্রলোক খুব ভাল দাবা খেলেন। আন্তজার্তিক আইনে নয়—প্রতিটি বোড়ে যে ঘরে পড়ে সেই স্থান-মাহাত্ম্যেই পুনজীবন লাভ করে, সবাই রানী হয়ে যায় না। বস্তুত তাঁর জীবনের রানী যেমন স্বামীকে ত্যাগ করে প্রৌঢ়ত্বের প্রথমেই স্বর্গারোহণ করেছেন, তেমনি ওঁর দাবার ছকেও রাজা-রানীর ঘরছাড়া অন্য ঘরের প্রতিটি বোড়ে রানীত্ব লাভের সৌভাগ্য বঞ্চিত। সপ্তাহে একদিন, প্রতি রবিবার সন্ধ্যায় টি. ভি.-তে বাংলার সংবাদপাঠ শেষ হলে তিনি মোহনমঞ্জিলে হাজিরা দেন পুঁটুলি বগলে। রায়বাহাদুর সাড়ে সাতটা থেকে পৌনে ন’টা পর্যন্ত তিন দান দাবা খেলেন। দু-একবার খেলা ‘চটে গেলেও ‘বেস্ট-অফ-থ্রি’-তে রায়বাহাদুর প্রতি সপ্তাহেই জেতেন। কোনও-কোনওবার মোহান্তিমশাই প্রায় জিততে জিততে শেষ মুহূর্তে হেরে যান। উপায় নেই! বস্তুত রায়বাহাদুরকে আনন্দ দিতেই তিনি দাবা খেলতে আসেন। জেতার উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। দাবায় জিতে আনন্দ পাওয়ার চেয়ে রায়বাহাদুরকে খুশি রেখে তাঁর করুণালাভ করা অনেক বেশি বাঞ্ছনীয়।

কাঁটায়-কাঁটায় সাড়ে-ছ’টায় রায়বাহাদুর এসে বসলেন বৈঠকের মধ্যমণি হয়ে—ডক্টর স্মিথের বিপরীতে। সকলেই চেয়ার সরিয়ে নাড়িয়ে উত্থানোদ্যতের ভঙ্গিমা করে আবার নিজ নিজ চেয়ারে বসে পড়ে। মিস স্মিথ তা করেন না। তিনি যুক্ত করে রায়বাহাদুরকে নমস্কার করেন। রায়বাহাদুর তাঁর সোনাবাঁধানো মুঠওলা ছড়িটা বিঘত খানেক উঁচু করেন—অর্থাৎ প্রতিনমস্কারমুদ্রা’। মুখে বলেন, এবার শোনাও রমলা, তোমার কেচ্ছা। মহারাজ মোহনলালের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নতুন নবাব মীরজাফর বাজেয়াপ্ত করে দেওয়া সত্ত্বেও কীভাবে এই জমিদারির পত্তন হল?

ডক্টর মিস স্মিথ ধীরে ধীরে মেলে ধরলেন, সেই অজ্ঞাত অতীত-কাহিনী।