সেদিন সন্ধ্যার কিছু আগে হঠাৎ উঠলো বেজে
আমার নিথর টেলিফোন
রিসিভার তুলে শুনলাম খুব মৃদু স্বরে যখন একটি ছোটো নাম…
মনে হলো এই সূর্যাস্ত উঠলো ভরে ফের ভোরের আলোয়
প্রায় অস্তমিত আমি পুনরায় হয়ে উঠলাম যেন উদিত সকাল;
কতোকাল নিথর নীরব পড়ে থাকা এই ব্যর্থ টেলিফোন
কানায় কানায় বরে গেলো, হয়ে উঠলো মুহূর্তে যেন চঞ্চল হরিণ;
মনে হলো এই টেলিফোনে একসঙ্গে বেজে ওঠে হাজার তারের বীণা
বিসমিল্লা খাঁর স্পন্দিত সানাই,
হেমন্তের সব অপূর্ব লাবণ্যময গান্ত
সহসা আমার মাথার ওপরে মনে হলো এক দিব্য চায়াময়
স্নিগ্ধ নীলাকাশ।
বুঝি আর কখনো আমার বুকে ওঠেনি এমন তোলপাড় করা ঝড়
চারদিক ঢেকে অঝোর ধারায় নামেনি বর্ষণ।
টেলিফোন তুলে শুনি এ যে স্বপ্নপুরীর রহস্যবার্তা একে একে
কবিতার অপরূপ শব্দরাজি সদ্যফোটা শিউলির মতো
টেলিফোন বেয়ে টুপটাপ শুধু ঝরে পড়ে-
কিংবা বর্ষার অজস্র কদমফুলের মতো মনে হয়
দূর থেকে ভেসে আসা সেই শব্দগুলি;
এইখানে টেলিফোনের সামনে বসে আমি তাই
কেবলই আড়ষ্ট হয়ে পড়ি
পাই না মোটেও খুঁজে একটিও যোগ্য শব্দ
বলি খুব সাধারণ দু’একটি কুশল সংবাদ-
অসহায় তোতলার মতো দুটি জড় ঠোঁটে কেবল আটকে যায় কথা
মনে হয় জীবনে কখনো আর ধরিনি কারুর টেলিফোন।
টেলিফোন হাতে নিয়ে হঠাৎ আমার মনে হলো বুষি
নিঃশ্বাস এক্ষুনি বন্ধ হয়ে যাবে
আর একটিও শব্দ বেরুবে না এই নির্বাক নিস্পন্দ কণ্ঠ দিয়ে
আমি বুঝি চিরতরে বোবা হয়ে যাবো;
আর কেবল আমার বুকের ভেতর বেজে যাবে
অন্তহীন এই গাঢ় টেলিফোন।
আমি তাই টেলিফোনে কী বলতে কী যে বলেছি
কিংবা যা বলা উচিত ছিলো তার কিছুই বলিনি
হায় বোকা, টেলিফোনে কেউ কি কখনো এমন সুখের কথা বলে,
এমন দুঃখের কথা বলে!