শীতার্ত সন্ধ্যায়
ছিলাম পুরানো ঘরে বসে একা উদাসীনতায়
গা ভাসিয়ে; অকস্মাৎ এলে তুমি বসন্তের উচ্ছ্বাসের মতো
স্পন্দিত শরীর নিয়ে; বসলে মোড়ায়, ইতস্তত
তাকালে এবং কী খেয়ালে
নিলে তুলে তরুণ কবির বই; সত্তার দেয়ালে
বেহেজাদ আর মাতিসের ছবি করে মেলা-মেশা।
খৃষ্ঠপূর্ব শতকের পুরুষের অনুরূপ শোণিতের নেশা
আমার শিরায় জাগে; এ ধূসর সাঁঝে
রেকর্ড প্লেয়ার বাজে,
শুনি আমি অবিশ্বাসী, রাবীন্দ্রিক বিশ্বাসের গান।
মনে পড়ে তোমার পরনে ছিল সেদিন মেরুন কার্ডিগান।
আমার প্রেমিকা তুমি নও; সহোদার,
অথবা আত্মাজা তা-ও নয়। তবে তুমি কি অধরা
সত্তা কোনো রঙিন কুয়াশাঘেরা? কোনো প্রহেলিকা
জ্বালিয়ে আমার মধ্যে সাপের জিভের মতো অগণন শিখা
চকিতে উধাও হয়ে যাও,
আবার কখনো দাও
প্রতীক্ষার অঞ্জলিতে হঠাৎ দেখার পুষ্পোচ্ছ্বাস? তুমি কোনো
মরীচিকা নও জানি। দৈবাৎ কখনো
আমার পুরানো ঘরে, হে নবীনা, তুমি এলে ভাবি
অমর্ত্যলোকের চাবি
এসে গেছে বামন মুঠোয়। কিন্তু পুনরায় না ফুরোতে প্রিয় তিথি
সন্ধি শূন্যে মিলায় তোমার উপস্থিতি।
সম্পর্কের সম্মোহন কিউপিড করেনি রচনা
তোমার আমার মধ্যে, তবু এককণা
নিভৃত কস্তুরী খুব কৌতূহলভরে
বিলায় সুবাস থ্যাঁৎলানো অস্তিত্বের স্তরে স্তরে।
এখনো তোমাকে ভালো লাগে, এইটুকু বলা যায়;
যখন তোমাকে ভাবি আমার নিদ্রালু, চেতনায়
কিছু স্বপ্ন, কিছু স্মৃতি, অস্পষ্ট গুঞ্জন
ভেসে ওঠে, জাগে আলোড়ন
অন্তর্গত প্রাণীর কংকালে আর দেখি, হে আমার হ্রস্বকেশী,
স্বপ্নিল বারান্দা এক, গৃহকোণে মোড়া, খাঁচা; সবচেয়ে বেশি
দেখি পুষ্পাগমে প্রীত বিনীত বাগান
এবং দোদুল্যমান কীটদষ্ট তোমার মেরুন কার্ডিগান।