০৩.
রাত তখন বারোটা। সোনালি আজ প্রচুর ওমসমন্বিত আট নম্বরে আরামে শুয়েছে। ধ্রুব নম্বরে। কর্নেল সেই যে বিকেলে পুলিসভ্যানে অফিসারদের সঙ্গে টোগাড়ি চলে গেলেন সঞ্জয়ের মড়া দেখতে, রাত দশটা ত্রিশ অব্দি তাঁকে ফিরতে দেখা যায়নি। কী অদ্ভুত মানুষ! আর এ বয়সেও তার শরীরকে বাহাদুরি দিতে হয়। ভীষণ ঠাণ্ডায় বরফের মধ্যে এখনও ঘোরাঘুরি করতে যেন একটুও কষ্ট হয় না।
ওপরে ও নিচে করিডরে কড়া পুলিস পাহারা আছে। সদর দরজাতেও রয়েছে। বিনা হুকুমে কারও বেরোবার সাধ্য নেই। আর বেরোবেই বা কোথায়? গত রাতে জুতোর খটাখট আর হইচইতে ঘুমোনো কঠিন ছিল। আজ সব নিঃঝুম।
কিন্তু ধ্রুব অস্থির। তাকে একবার বেরোতেই হবে। করিডর দিয়ে যাওয়া, অসম্ভব। আলো আর পুলিস আছে। সে দাঁত কামড়ে ধরে ভাবছিল। সেই পাহাড়ের চুড়োটা তাকে তীব্রভাবে আকর্ষণ করেছে।
খাটের তলা থেকে বরফের পাহাড়ে চড়ার জন্যে বিশেষভাবে তৈরি জুতো বের করল, সে। টাইট একটা চামড়ার পোশাক পরে নিল। পা থেকে মাথা অব্দি। সুরক্ষিত করে একটা ছোট্ট টর্চও নিল। তারপর জানলার কাছে গেল। গরাদবিহীন জানলা সাবধানে খুলে ফেলতেই তীব্র ঠাণ্ডা একঝলক হাওয়া বরফের গুঁড়িসুদ্ধ, তার গায়ে মুখে এসে ধাক্কা দিল। কিন্তু ধ্রুবর মাথায় যখন ঝোঁক চাপে, তখন। কিছুই গ্রাহ্য করে না। এ তার চরিত্রগত ব্যাপার। এরজন্যে অনেকবার তাকে। বিপদে পড়তে হয়েছে। ভাগ্যের জোরে এবং কিছুটা বুদ্ধিচাতুর্যে বেঁচেও গেছে।
জানলার একমিটার দূরে একটা পাইপ আছে দেখেছিল। নিঃশব্দে সে জানলা গলিয়ে সেই পাইপটা ধরল। তারপর জানলার কপাট দুটো বাইরে থেকে ঠেলে বন্ধ করে দিল। পাইপ বেয়ে অদ্ভুত দক্ষতায় নিচে নামল।
এটা বাড়ির পিছনদিক। অজস্র পাতাঝরা গাছের জঙ্গল আছে। সে জঙ্গল পেরিয়ে অনেক কষ্টে পাহাড়টার পশ্চিম সীমানায় পৌঁছল। এদিকে পাহাড়টা খাঁজকাটা। বড় বড় পাথরের ওপর বরফ জমে রয়েছে। উঠতে অসুবিধে হলো না। কিন্তু এবার সামনে বিপদ। পাহাড়টা পুব-পশ্চিমে লম্বা। এখান থেকে তাকে পুবে এগোতে হবে। একটু গেলেই লিফটের কাছে পৌঁছতে পারবে। কিন্তু ডাইনে–অর্থাৎ দক্ষিণদিকে সামান্য তফাতে স্কিয়ার-গার্ডদের সেই গুমটি ঘরে গুলাব সিং-এর সেন্ট্রিরা বন্দুক তাগ করে আছে। একটা ভরসার কথা যে অন্ধকার। আছে। তবে বরফের রাজ্যে অন্ধকার অনেকটা রঙ হারিয়ে স্বচ্ছ হয়ে ওঠে।
হামাগুড়ি দিয়ে এগোল ধ্রুব। লিফটের চাকার কেন্দ্রটা পাহাড়ের উত্তরে। ঢালু গায়ে রয়েছে। ধ্রুব যখন মাথা তুলল, দেখল আবছাভাবে একটা চেয়ার ঝুলে আছে শূন্যে। সে এবার বুকে হেঁটে বাঁদিকে ঢালু গায়ে নামতে থাকল। কিছুটা নেমেই সোজা হয়ে বসল। আর কোন ভয় নেই। সেন্ট্রিরা পাহাড়ের ওপারে। সামনে কিছুদূরে হোটেল ও ট্রেনিং সেন্টারের আলো দেখা যাচ্ছে। সে নির্ভয়ে নিচে টর্চ জ্বালল। কী সর্বনাশ! ব্যাটারি ফুরিয়ে গেছে নাকি? মাত্র কয়েক বর্গফুট পরিধিতে ক্ষীণ লালচে ছটা পড়ল। নতুন ব্যাটারি ভরে আনা উচিত ছিল। সে কুঁজো হয়ে হুইল চেয়ার চলার পথ বরাবর ওই সামান্য আলোর সাহায্যে খুঁজতে আরম্ভ করল। কিন্তু ক্রমশ ঠাণ্ডায় তার শরীর জমে যাচ্ছে। পোশাক বরফগুড়িতে ভারি হয়ে উঠেছে। বার বার বিশ্রাম নিতে হচ্ছে তাকে। বরফ ঝেড়ে ফেলতে হচ্ছে। খোলা মুখটা নির্ঘাত নীল হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। দাঁত ঠকঠক করে কাঁপছে।
বার বার এই আড়াই-তিনশো ফুট পাহাড়ী ঢাল বেয়ে ওঠানামা করা তার পক্ষে অসম্ভব। তাছাড়া যে জিনিসটা খুঁজতে বেরিয়েছে, তা সারাদিনের বরফে নিশ্চয় তলিয়ে গেছে কোথাও। এবার তার মনে হলো, কী কাজে লাগবে ওই ছোট্ট জিনিসটা?
নিজের বোকামিতে নিজের ওপর রাগ হলো তার। এই হঠকারী অভিযানের কোন মানে হয় না। এই জিনিসটা থেকে সে সত্যি কি কোন সূত্র পাবে আশা করেছিল?
কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সে এবার পালাক্রমে ডাইনে আর বাঁয়ে খুঁজতে থাকল। নিছক চোখ বুলিয়ে নয় বরফ আঁকড়ে বরফ সরিয়ে আবিষ্কার করতে চাইল জিনিসটা। আবার দাঁড়াল। উড়ন্ত গতিশীল চেয়ার থেকে কোন জিনিস পড়লে–সে জিনিসটা খুব ভারি ছিল না কতদূরে ছিটকে পড়তে পারে? পা বাড়াল আবার। বরফের ওপর একটুকরো রবারের মতো কালো কী পড়ে রয়েছে। ঝাঁপিয়ে পড়ল সে। হা–এটা সেই জিনিসটার একটা অংশ। তাহলে কাছাকাছি কোথাও নিশ্চয় আছে। চারপাশে দ্রুত হাতড়ে এবং বরফ সরিয়ে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। ফের বিশ্রাম নিয়ে আবার বরফ সরাতেই একটা অস্পষ্ট শব্দ শুনতে পেল। অমনি হামাগুড়ি দিয়ে বসল ধ্রুব। আলো নেভাল তক্ষুনি। কিন্তু আর তেমন সন্দেহজনক কোন শব্দ নেই। পুবদিকে কিছু তফাতে পাইনের জঙ্গলে ঝোড়ো হাওয়া উঠেছে সদ্য। গাছ থেকে বরফ পড়ার শব্দেই হয়তো ঢেকে গেছে সেই শব্দটা।
কিন্তু আর এখানে থাকা অসম্ভব। ঠাণ্ডায় আড়ষ্ট হয়ে গেছে সারা শরীর। হি হি কাঁপুনি শুরু হয়েছে। মরিয়া হয়ে আরেকবার শেষ চেষ্টার মতো হাত বাড়িয়ে বরফ সরাতেই সে লাফিয়ে উঠল। ইউরেকা! পাওয়া গেছে। পাওয়া যেতই। সে তুলে ধরল জিনিসটা। একটা জুতোর চেয়ে কিছু বড়ো–স্কি পোলের ডগায় লাগানো থাকে যা–সেই বাস্কেট। এটাই স্কি-পোল থেকে খুনী খুলে পোলটা বিঁধিয়ে দিয়েছিল ললিতার বুকে।
বাস্কেটটা ধরে পরমুহূর্তে নিরাশ হলো ধ্রুব। পাওয়া তো গেল কিন্তু কী কাজ হবে এ দিয়ে–তা তো জানা নেই। ভ্যাট, মিছিমিছি এর জন্যে এত প্রচণ্ড কষ্ট করার কোন মানে হয় না! টর্চ নিবিয়ে ফেলল সে।
আচমকা তার বাস্কেট ধরা হাতের ওপর হাতুড়ির মতো কী পড়ল। যন্ত্রণায় অস্ফুট চেঁচিয়ে উঠল সে। পরক্ষণে ফের তাকে কে ধাক্কা মারল। বাস্কেটটা ছিটকে পড়েছিল। ধ্রুব মুহূর্তে ব্যাপারটা টের পেয়ে গেল। সে সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং কার সঙ্গে অনিবার্যভাবে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেল।
লোকটা তার চেয়ে শক্তিমান সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড ধাক্কায় তাকে ছিটকে ফেলে দিতেই ধ্রুব গড়িয়ে অনেকটা নিচে পড়ে গেল।
উঠে ঝোঁক সামলে সে ওপরে তাকাল। কিছু দেখা যায় না। আবছা শব্দ হচ্ছে বরফের ওপর দৌড়ে যাওয়ার। টর্চটা কোথায় পড়ে গেছে কে জানে। রাগে ক্ষোভে ধ্রুব মরিয়া হয়ে শব্দ লক্ষ্য করে দৌড়তে চেষ্টা করল।
শব্দটা পুবদিকে। তাহলে আততায়ী জঙ্গলের দিকে পালাচ্ছে। একটু সমতল জায়গায় পৌঁছনোমাত্র ধ্রুব যেই দৌড়তে গেছে, অমনি কার গায়ের ওপর পড়ল। সে তক্ষুনি তাকে দুহাতে জাপটে ধরল। লোকটা বরফে পড়ে তাকে ধাক্কা দেবার চেষ্টা করছিল দুপায়ের সাহায্যে। ধ্রুব তার একটা পা দুমড়ে দিতেই সে বলে উঠল–বাই জোভ! ধ্রুব, ধ্রুব, করছ কী?
কর্নেল! ধ্রুব বিস্ময়ে হতবাক।
কর্নেল উঠে দাঁড়িয়ে পোশাক থেকে বরফ ঝেড়ে চাপা গলায় বললেন, বাস্কেটটা পেয়েছ?
পেয়েছিলাম। বেহাত হয়ে গেল।
সে কী!
হ্যাঁ–আমার একটা হাত জখম করে দিয়েছে মনে হচ্ছে।
চলো। ফেরা যাক।
দুজনে ঢালু বেয়ে আস্তে আস্তে নামতে থাকল। একজায়গায় দাঁড়িয়ে কর্নেল বললেন, হুম! পথ ভুল হয়ে যাচ্ছে। দাঁড়াও, এখানে একটা ভালো রাস্তা আছে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে অনেকটা ঘুরে যেতে হবে। পাহাড়ের এদিকটা আস্তে আস্তে নেমে গেছে–চলতে অসুবিধে হবে না।
ধ্রুব বলল, আপনি টর্চ আনেননি?
কর্নেল বললেন, মাই গুডনেস! টর্চটা তোমার সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময়ে পড়ে গেছে। যাক্ গে, আর দেরি করা ঠিক হবে না।
ট্রেনিং সেন্টারের কাছাকাছি এসে ধ্রুব বলল, কিন্তু এবার ঢুকবেন কী করে?
তুমি কি জানলা গলিয়ে পাইপ বেয়ে নেমেছিলে?
আজ্ঞে হ্যাঁ। আপনি?
আমিও তাই। তবে আমার ঘর তো নিচে।
তাহলে সেইভাবে ঘরে পৌঁছতে হবে। ধ্রুব একটু হাসল।
বাস্কেটটা পেলে ভালো হত। ওর তলায় নাম্বার লেখা থাকে। ওই নাম্বারের স্কিপোল কার নামে ইস্যু হয়েছে খাতাপত্র থেকে জানা যেত। তাছাড়া দুটো স্কিপোলে একই নাম্বার এঁটে একজন স্কিয়ারকে দেওয়া হয়। এই একই নাম্বার তার একজোড়া স্কিবুট আর একজোড়া স্কিতেও থাকে। তুমি তো একজন স্কিয়ার–তোমার নাম্বার কত?
ধ্রুব বলল বারো।
তোমার স্কি-বুট, স্কি-পোল–প্রত্যেকটার গায়ে বারো খোদাই করা আছে দেখনি?
দেখেছি। আচ্ছা কর্নেল, আপনি তো সঞ্জয়ের লাশ দেখতে গিয়েছিলেন। ওর বুকেও তো স্কি-পোল বিঁধিয়ে খুন করা হয়েছে। ওটার বাস্কেট পাননি?
খুব খোঁজা হয়েছে–পাইনি। পুলিস অবশ্য এখনও এ ব্যাপারটা ভাবেনি। আমি ওদের তাক লাগাতে চাই–তাই কিছু বলিনি।
তাহলে খুনী ওটা সামলে ছিল। এটার বেলায় পারেনি।
তুমি ভীষণ কাঁপছ। চুপ করো।…
.
পরদিন সকালে দেখা গেল আবহাওয়া প্রচণ্ডভাবে আয়ত্তের বাইরে চলেছে। যাকে রিজার্ভ বলে, তাই। এই মারাত্মক তুষারঝড়ে বাইরে যাবার সাধ্য কারও নেই। এমন কি লন পেরিয়ে গ্যারেজ বা স্টোর রুমে যাওয়াটাও বেশ বিপজ্জনক। উত্তাপ জিরো পয়েন্টের নিচে দশডিগ্রি নেমে গেছে। ঘন তুষারে ছেয়ে যাচ্ছে সবকিছু।
পুলিস অফিসার ইউসুফ তে কাশ্মীরি মুসলমান। কর্নেলের সঙ্গে তাঁর খুব জমে গেছে। শের সিং এ খবর জানাল ধ্রুবকে। শের সিং কর্নেলের অনুগত কাজেই আগের রাতের সেই নির্বিকার ভাবটা আর তার মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছিল না। বরং এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন সোনালি আর ধ্রুবকর্নেলের দুটি স্নেহধন্য আত্মীয়ের সেবা করতে পারলে তার জীবন ধন্য হবে।
শের সিং যেচে দুটো ব্রেকফাস্ট বয়ে আনল নিচে থেকে। ডিম ভেজিটেবল রোল, দুপট কফি। ধ্রুবর ডানহাতে ব্যথা–শরীরও প্রায় ধরাশায়ী গত রাতের যুদ্ধে। সে কোনক্রমে বাথরুম থেকে ফিরে শুয়েছিল। সোনালি তার খাটের সামনে চেয়ারে বসে কফি টেবিলে ব্রেকফাস্ট সাজাল। কিছু আপেলও কাটল নিজেদের স্টক থেকে। শের সিংকে ধ্রুব অপেক্ষা করতে বলেছে, তাই সে সোজা অ্যাটেনশান দাঁড়িয়ে আছে।
ধ্রুব বলল, তাহলে কর্নেলের ঘরে পুলিস অফিসারকে দেখে এলে, শের সিং! কিন্তু তোমাদের গুলাব সিং কী করছেন?
শের সিং হাসল।…গুলাব সিং মনমরা হয়ে বসে আছেন ডাইনিং হলে।
মনমরা কেন?
ওয়েদার খারাপ হয়ে গেল। হয়তো তাই।
লাশদুটো এতক্ষণ নিশ্চয় শ্রীনগরে পৌঁছে গেছে! তাই না শের সিং?
হারাতেই পৌঁছে যাবার কথা। এদিকে ওয়েদার খারাপ হয়ে গেল। ওখান থেকে আরও পুলিস অফিসার আসবেন। তদন্তও খুব জব্বর হবে। যতক্ষণ না ফয়সালা হয়, ততক্ষণ তো গুলাব সিং-এর ছুটি নেই।…শের সিং হাসতে লাগল।
আচ্ছা শের সিং, তুমি কোম্পানিতে কতদিন আছো?
জি, তিনবছর হবে প্রায়। দুগাল সায়েবের একটা ফার্ম আছে দিল্লীতে আমি সেখানেই কাজ করতাম। স্কি ট্রেনিং সেন্টার খোলার গোড়া থেকেই আমি আছি।
শ্রীবাস্তব কি এ বছর নতুন?
না স্যার। শ্রীবাস্তবজিও গোড়া থেকে আছেন।
মিস ললিতাও কি গোড়া থেকে ছিলেন এখানে?
ললিতাজি গতবছর প্রথম আসেন।
শ্রীবাস্তবজির সঙ্গে ললিতাজির আগে থেকে চেনাজানা ছিল নাকি?
জি হ্যাঁ। উনিই ললিতাকে আনেন এখানে।
শের সিং, তুমি তো খুব বুদ্ধিমান লোক…
না স্যার, আমার মাথায় কিছু নেই বড় সায়েব দুগালজি বলেন।
আচ্ছা শের সিং, সঞ্জয় ওয়াড়েকার এবার নতুন এসেছিল, নাকি আগেও এসেছে? কবে প্রথম আসে সে?
এবারই নতুন ট্রেনি হয়ে আসে।
শের সিং, তুমি তো এখানকার অনেক খবর রাখো। ললিতাজির সঙ্গে– তোমার মতে কার মেলামেশা বেশি ছিল? শ্রীবাস্তব, না সঞ্জয়ের?
ললিতাজি খুব দিলখোলা মেয়ে ছিলেন স্যার। সবার সঙ্গেই যেচে পড়ে মিশতেন। আমরা জানতাম, শ্রীবাস্তব সায়েবের সঙ্গে ওঁর বিয়ে হবে। কিন্তু শেষের দিকে উনি সঞ্জয়জির সঙ্গে বেশি মেলামেশা শুরু করেন।
তার জন্যে নিশ্চয় তিনজনের মধ্যে মনকষাকষি কিছু হয়ে থাকবে?
শের সিং একটু চুপ করে থেকে বলল, আপনাকে বলা যায়–আপনি এদের মধ্যে সবচেয়ে ভদ্র মানুষ, স্যার। ট্রেনিং ক্যাম্পের সব কটা মানুষ বেলেল্লা–শরাব খায়, মস্তানি করে সারারাত। কেবল আপনি আর এই দিদিজি বাদে।
সোনালি বলল, আমরাও কম নই শের সিং।
শের সিং সেলাম করে জিভ কেটে বলল, কক্ষনো না দিদিজি। আমি মানুষ দেখলেই চিনতে পারি।
ধ্রুব বলল, তা শের সিং, ওদের মধ্যে নিশ্চয় মনকষাকষি হয়েছিল?
খুব হয়েছিল। শ্রীবাস্তবজি সঞ্জয়জিকে কদিন থেকে শাসাচ্ছিলেন। ললিতাজি বাধা না দিলে তো ভীষণ মারামারি হয়ে যেত দুজনে। ললিতাজি দুজনের কাঁধ ধরে নিজের নিজের ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। তবে স্যার, সঞ্জয়কে শ্রীবাস্তব কাবু করতে পারতেন না। কারণ মানুষের আসল জোর তো পায়ে। পা যার জখম, সে লড়বে কীভাবে?
ওর পা কবে জখম হলো? কীভাবে?
সে এক ভয়ানক অ্যাকসিডেন্ট, স্যার। দিন সাতেক আগে লিটচেয়ার থেকে উনি বেমক্কা পড়ে যান। পাহাড়ের ওপিঠে না পড়লে পা জখম হত না হয়তো-ওপিঠ তো বেশ ঢালু করা আছে স্কি করার জন্যে। ওঠবার মুখেই পড়ে যান একদিকে কাত হয়ে। পায়ে স্কি পরা ছিল যথারীতি। এত জোরে পড়েন যে ডানস্কিটা ভেঙে যায়। কিন্তু ভাগ্য ভালো যে পায়ের হাড় মচকে যায়। ডাক্তার এলেন। তখন ওয়েদার বেশ ভালো ছিল। ডাক্তার বললেন, অন্তত মাসখানেক লাগবে সেরে যেতে। ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলেন। চলাফেরা করতে নিষেধ করলেন। কিন্তু শ্রীবাস্তবজি খুব গোঁয়ার আর চঞ্চল মানুষ। অগত্যা পরে ক্রাচের ব্যবস্থা হলো। উনি কিছুতেই একজায়গায় বসে থাকতে রাজি নন। ক্রাচ নিয়ে হরদম হাঁটাহাঁটি করেন।
ওঁর ভাঙা স্কিটা ফেলে দিয়েছিলে তোমরা নাকি…
শের সিং একটু অবাক হয়ে বলল, কেন স্যার?
এমনি বলছি। স্কিয়ের তো বেশ দাম আছে। আর তুমিই বলেছিলে, দুগাল সায়েব খুব হিসেবী লোক। নিশ্চয় মেরামত করার চেষ্টা তিনি করেছিলেন?
তা ঠিক। দুগালজি স্কি ভাঙার জন্যে যতটা দুঃখ পেয়েছিলেন, ততটা ওঁর পা জখম হবার জন্যে নয়।..শের সিং হেসে বলল।…অথচ হিসেব করে দেখলে এই মরশুমে একজন ইনস্ট্রাক্টার অকেজো হয়ে যাবার ফলেই ক্ষতিটা বেশি। স্যার, দুগালজি একটা ঝাড়তি-পড়তি জিনিসও আবর্জনা ভাবতে রাজি নন। স্টোররুমে আপনি লেডিজ হেয়ার ক্লিপও খুঁজে পাবেন। সব কুড়িয়ে রাখা অভ্যেস আছে দুগালজির। আমাদেরও তাই হুকুম আছে। বলেন, কিছুই ফেলবার জিনিস নয়–কোন এক সময় সব কাজে লাগবে।
সোনালি বলল, আমাদের বাংলায় বলে–যাকে রাখো, সেই রাখে।
ধ্রুব বলল, তাহলে ভাঙা স্কিটা নিশ্চয় স্টোররুমে আছে?
আছে। কিন্তু… হঠাৎ শের সিং নড়ে উঠল। স্যার, এই ব্যাপারটা তো ভেবে দেখিনি। স্কি দুটো–ভাঙা ও ভালোটা রাখা হয়েছে। স্কি-বুট জোড়াও রয়েছে। কিন্তু স্কি-পোল দুটো শের সিং ভুরু কুঁচকে মেঝেয় কী খুঁজতে থাকল যেন।
ধ্রুব একটু উঠে বসল বিছানা থেকে। বলল, স্কি-পোল দুটো রাখা হয়নি?
না স্যার। তক্ষুনি তো রাখা হয়েছিল। অ্যাকসিডেন্টের পরই। কিন্তু…
কিন্তু কী শের সিং?
স্যার গতকাল দুপুরে স্টোররুমে ঢুকে যখন স্কিয়ারদের স্কি-সেট ফেরত জমা নিচ্ছিলাম, তখন শ্রীবাস্তবজির সেটটার দিকে চোখ পড়েছিল। তখন এতটা ভাবিনি। কিন্তু স্টোর বন্ধ করার পর অনেকক্ষণ ধরে মনে কী একটা অস্বস্তি থেকে যাচ্ছিল-স্টোররুমে কী যেন অদ্ভুত খাপছাড়া লাগল, কী যেন গোলমাল আছে! তারপর ভুলে গেলাম ভাবনাটা। এইমাত্র হঠাৎ মনে পড়ে গেল স্যার, স্টোরে কী গোলমাল ছিল।
কী গোলমাল ছিল?
স্যার, শ্রীবাস্তবজির সেটের সঙ্গে স্কি-পোলদুটো ছিল না। আগের দিন ছিল–অথচ গতকাল দুপুরে ছিল না। ঠিক, ঠিক। স্কি-পোল দুটো দেখতে পাইনি।
উত্তেজনা চেপে ধ্রুব বলল, তোমার চোখের ভুল হতেও পারে।
অসম্ভব স্যার। শের সিং হন্তদন্ত হয়ে উঠল।…একমিনিট। স্টোরের চাবি আমার কাছেই থাকে। এক্ষুনি ফের দেখে এসে বলছি। সে তক্ষুনি বেরিয়ে গেল।
সোনালি বলল, উঃ কান ঝালাপালা করে দিল দুজনে। ভ্যাট, এলুম ফুর্তি করতে–এসে পড়লুম খুনখারাপি আর গোয়েন্দাদের পাল্লায়। আমি উঠি।
কোথায় যাবে?
রিটা মবলঙ্করের সঙ্গে আড্ডা দিইগে।
সে আবার কে?
একজন স্কিয়ার। তুমি তো সার্কাস দ্যাখো না। গ্রেট এশিয়ান সার্কাসদলের বিখ্যাত খেলোয়াড় রিটা মবলঙ্করের নামও তুমি শোননি। তাকে হঠাৎ এখানে আবিষ্কার করেছি।
একমিনিট। নামটা শোনা মনে হচ্ছে। আচ্ছা, যাকে ওয়াইল্ড গুজ– বনহংসী বলা হয়েছিল খবরের কাগজে?
আজ্ঞে হ্যাঁ–তিনিই। কোম্পানি ছেড়ে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন মনে সুখে। কী স্বাস্থ্য আর সৌন্দর্য! তোমার চোখ কপালে উঠে যাবে মশাই।
কী যে বলো! আমি ছবিতে দেখেছি–এমন কিছু রূপসী নয়। তবে ইয়া হোঁকা গদার মতো দুটো পা আছে বটে। ওই গদাই লস্করী পা দিয়ে স্কি পরতে পারবেন তো?
খুব পারবেন। তুমি গোয়েন্দাগিরি করো–আমি আসছি।.বলে সোনালি দরজার কাছে গেল। দরজা খুলল।
ধ্রুব গলা চড়িয়ে বলল, যাকে ইংরেজিতে বলে–চেজিং আফটার দা ওয়াইল্ড গুজ। বুনো হাঁসের পিছনে দৌড়চ্ছো!
সোনালি একটু ঘুরে বলে গেল—তা তোমার রেড হেরিং মাছের পিছনে দৌড়নোর চেয়ে অনেক ভালো।
ধ্রুব স্কি-পোল দুটোর কথা ভাবতে থাকল। নির্ঘাত ওদুটো দিয়েই খুনী ললিতা আর সঞ্জয়কে খুন করেছে কিন্তু স্টোররুমের চাবি তো থাকে শের সিং–এর কাছে। তার অজান্তে খুনীর পক্ষে স্কি-পোল নেওয়া অসম্ভব। স্টোর রুম একটা গুদাম বিশেষ। একটি মাত্র দরজা। কোন জানলা, এমন কি ভেন্টিলেটারও নেই। অবশ্য ডুপ্লিকেট চাবি থাকতে পারে। সে চাবি কার কাছে থাকে? সম্ভবত
কিন্তু খুনীর পক্ষে কি চাবি ছাড়া তালা খোলাটা শক্ত ব্যাপার? তেমন দুর্ভেদ্য তালা পৃথিবীতে আজও কি আবিষ্কৃত হয়েছে?
বাইরে পায়ের শব্দ শোনা গেল। দরজার নক করতেই ধ্রুব বলল, এস শের সিং।
শের সিং নয় কর্নেল। ঢুকে বললেন, ব্লিজার্ড শুরু হয়েছে। কী দুর্যোগ, ভাবা যায় না। ইউসুফ সায়েব বলল–অন্তত চব্বিশ ঘণ্টা এ বরফঝড় বইবে। ইয়ে–সোনালির সঙ্গে দেখা হল নিচে। তুমি বেরোচ্ছ না?
ধ্রুব বলল, না কর্নেল। বসুন। এইমাত্র শের সিং-এর সঙ্গে শ্রীবাস্তবের স্কিসেট নিয়ে কথা হচ্ছিল। স্টোররুমের চার্জে…।
কর্নেল বসে বললেন, জানি। স্কি-পোল দুটো হারিয়ে গেছে।
সে কী! আপনি কখন শুনলেন? কার কাছে?
কর্নেল হাসলেন না অবশ্য।..আরে, আমি তো শ্রীবাস্তবের অ্যাকসিডেন্টের সময় এখানে উপস্থিত ছিলুম। ওর স্কি সেটটা স্টোরে রাখা হয়েছিল–তাও জানি। কাল বিকেলে সঞ্জয়ের লাশ দেখতে যাবার আগে শ্রীবাস্তব আমাকে বলল, স্টোরে ওর স্কি-পোল দুটো আছে না নেই–দেখা দরকার। ওর কাছে ডুপ্লিকেট চাবি ছিল। আমাকে দিল। দেখে এলুম–সব আছে, স্কি-পোল নেই।
ডুপ্লিকেট চাবি শ্রীবাস্তবের কাছে আছে?
হ্যাঁ। কিন্তু একটা ব্যাপার কিছুতেই বুঝতে পারছিনে–শ্রীবাস্তবের স্কি-পোল নিয়েই যদি খুন করা হয়ে থাকে, তাহলে খুনী বাস্কেট লোপাট করতে চাইছে। কেন? শ্রীবাস্তবের সেট নম্বর হচ্ছে তিন। কাজেই তার পোলদুটোর বাস্কেটের নম্বরও তিন। বুঝলে ধ্রুব, বাস্কেট দুটোই একটা ধাঁধার সৃষ্টি করেছে। মাথামুণ্ডু কিছু বোঝা যায় না।
ঠিক বলেছেন। শ্রীবাস্তবের, ধরা যাক, পায়ের জখমটা বানানো এবং সেই খুনী। তাহলে নিজের স্কি-পোল দিয়ে খুন করা সম্ভব হলেও বাস্কেট লুকিয়ে কী লাভ হবে তার? নাম্বার তো জানা। খাতা দেখলেই বোঝা যাবে–ওই তিন নম্বর সেট কাকে ইস্যু করা হয়েছে। কাজেই বাস্কেট লুকিয়ে ফেলেও তো লাভ নেই। আবার, খুনী যদি অন্য কেউ হয় এবং শ্রীবাস্তবের কাঁধে দায় চাপানোর। মতলব থাকে, তাহলে সে বাস্কেট লুকোতে ব্যস্ত হবে না। বাস্কেট দুটো প্রকাশ্যে পড়ে থাকলেই সে গা বাঁচাতে পারবে বরং। তা সে করেনি।
কর্নেল দাড়িতে মৃদু আঙুল বোলাতে বোলাতে বললেন, আমার মনে হচ্ছে এই হত্যারহস্যের চাবিকাঠি ওই বাস্কেট দুটোর মধ্যেই রয়েছে।
সেইসময় দরজায় নক করল কে। এবার শের সিং। ঘরে ঢুকে উত্তেজিত মুখে কী বলতে গিয়ে কর্নেলকে দেখে একটু থতমত খেল। সেলাম করে বলল, কর্নেল সায়েব, আপনি এখানে? আমি খুব মুশকিলে পড়ে গেলাম যে কর্নেল সায়েব?
তোমার আবার কী হলো শের সিং?
চাউন্ড্রি সায়েব জানেন সব। স্টোরে…
হুম। জানি। দুটো স্কি-পোল হারিয়েছে।
জি সায়েব।
কর্নেল ওকে হাত তুলে আশ্বস্ত করে বললেন, ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এখন আমার একটা কথার জবাব দাও তো শের সিং।
বলুন সায়েব।
খুনের দিন–পাঁচই ডিসেম্বরের আগের রাত্রে তুমি কটা অব্দি জেগে ছিলে?
শের সিং-এর মুখটা কেমন গম্ভীর হয়ে গেল। নিচের দিকে তাকিয়ে সলজ্জ আড়ষ্টতার সঙ্গে বলল, বেয়াদপি মাফ করবেন কর্নেল সায়েব। সে রাতে স্কিয়াররা সবাই ডাইনিং হলে শরাব খেয়ে নাচ গান হল্লা করছিলেন। তো
হ্যাঁ। আমি বেরিয়ে নিজের ঘরে যাবার পরে হইহল্লা হচ্ছিল খুব।
তো স্যার, আমি একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়েছিলুম। তখন সবাই মিলে আমাকে তেড়ে এলেন–এই শের সিং, তুমি চুপচাপ কেন? এস, ফুর্তি করো। আমি বললাম, অনারেবল লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলম্যান, আমি নিতান্ত নোকর মানুষ। আমার কি তা উচিত হবে? ওঁরা তখন পুরোদস্তুর মাতাল। আমাকে চেপে ধরলেন জেন্টলম্যানরা–আর, লেডিজ, মানে মিস রিটা মবলঙ্কর আর দুতিন জন লেডি আমার মুখে মদ ঢেলে দিলেন।
তারপর?
আমি স্যার, অল্পস্বল্প খাই কখনও সখনও। তেমন অভ্যেস নেই। ওঁরা আমাকে নিয়ে এমন মাতালেন যে আমি আর আপত্তি করতে পারলাম না। অনবরত খেয়ে নাচতে গাইতে শুরু করেছিলুম–এ অব্দি মনে পড়ছে। তারপর ওঁরাই হয়তো আমাকে ধরাধরি করে আমার ঘরে শুইয়ে দিয়ে এসেছিলেন। ঘুম ভাঙল ভোরবেলা। উঠতে গিয়ে টের পেলাম–সারা গায়ে ব্যথা। মাথা ভার হয়ে আছে। শরীর ভীষণ দুর্বল। কিন্তু উপায় নেই–উঠতেই হবে। আটটার মধ্যে স্কিয়ের সরঞ্জাম তৈরি করতে হবে। তাই উঠে পড়তে হলো। সারাদিন শরীর খারাপ রইল।
সর্বনাশ! তোমাকে আমি ওই অবস্থায় ডাক্তারের কাছে পাঠিয়েছিলাম!
না স্যার–তাতে ক্ষতি হয়নি। আমি ডাক্তার সায়েবের কাছে ওষুধ খেয়ে এসেছিলাম। সেইজন্যেই তো বলামাত্র চলে গেলাম।
তাহলে সেরাতে কোন শব্দ বা কিছু শোননি, দেখও নি।
না স্যার।
অনেকেরই সেরাতে ওই অবস্থা ছিল নিশ্চয়।
ধ্রুব বলল, সেটাই সম্ভব। তা না হলে সেই ঘরঘর শব্দ সবাই শুনতে পেত। আপনি শোনেননি কর্নেল?
উঁহু। আমার ঘরটা তো পিছনে। তোমার ঘর থেকে শোনা সম্ভব। কারণ স্টোরটা এখান থেকে সামনা-সামনি–মাত্র বিশ পঁচিশ গজ তফাতে।
স্টোর? স্টোর থেকে ঘরঘর আওয়াজ হবে কিসের?
ওখানে একটা গ্রাইন্ডিং হুইল আছে। চাকায় ঘষে কোনকিছু ধারালো করার যন্ত্র ওটা।
কী কাণ্ড! তাহলে খুনী কী ওই দিয়ে স্কি-পোলের ডগা ছুঁচলো করছিল?
হ্যাঁ–ঠিক তাই। তারপর আসা যাক, তোমাদের আট নম্বর রুমে। চাপা শব্দ শুনেছিলে। একটু ফুটোও মেঝেতে আবিষ্কার করেছি আমরা।
তার মানে…। তার মানে খুনী স্কি-পোলে শান দেওয়ার পর চুপি চুপি ওঘরে ঢোকে। সে ললিতাকে দেখতে এসেছিল—কি অবস্থায় আছে। কিংবা ধরা যাক, সন্দেহভঞ্জন করতে এসেছিল।
কিসের কর্নেল?
ললিতা একা আছেনা, অন্য কেউ তার সঙ্গে আছে।
কিন্তু শ্রীবাস্তবের পক্ষে ক্রাচ নিয়ে…
আহা, তুমি ঝট করে শ্রীবাস্তবের ঘাড়েই বা চাপাচ্ছ কেন? অন্য কেউও তো হতে পারে।
না কর্নেল। শ্রীবাস্তবের সঙ্গেই তো ললিতার বিয়ের কথা ছিল। কাজেই তার পক্ষে এমন আচরণ সম্ভব। অবশ্য দ্বিতীয় ব্যক্তি সঞ্জয়–সঞ্জয়ের পক্ষেও এটা সম্ভব।
কিন্তু সঞ্জয় খুন হয়েছে। যে খুন হয়েছে–সে খুনী নয়।
ধ্রুব তর্কে মেতে বলল, খুনী এক্ষেত্রে দুজন নয়–তাই বা বলি কেমন করে? হয়তো শ্রীবাস্তবের ধারণা মতো সঞ্জয়ই ললিতাকে খুন করে পালাচ্ছিল তারপর পথে অন্য কেউ তাকে খুন করেছে।
বেশ–তাই যদি হয়, তবে সে কে? শ্রীবাস্তব কি?
মোটেও অসম্ভব নয়।
শ্রীবাস্তবের পায়ের জখম সম্ভবত জেনুইন, ধ্রুব। তার পক্ষে এই বরফ বৃষ্টির মধ্যে সাত মাইল পাখির বেগে এগিয়ে খুন করা অসম্ভব। বিশেষ করে মোটরে চেপে যাচ্ছিল সঞ্জয়।
শের সিং এবার বিনীতভাবে বলল, কর্নেল সায়েব, আমি একটা কথা বলব?
কর্নেল বললেন, আলবৎ। বলো, কী তোমার ধারণা?
শের সিং বলল, মোটর রাস্তার পথে টোগাড়ি এখান থেকে সাত মাইল। কিন্তু এখান থেকে একটা সোজাসুজি নাক বরাবর হাঁটা পথ আছে–সে পথে। মাত্র দুমাইল। পাহাড়, পাহাড়তলি, জঙ্গলের তলা–সব জায়গায় এখন পুরু বরফ পড়ে গেছে। স্যার, একজন ভালো স্কিয়ারের পক্ষে দুমাইল যাওয়া মাত্র দশ মিনিটের ব্যাপার।
কর্নেল হেসে উঠলেন।…রাইট, রাইট। আমি এদিকটা একেবারে ভাবিনি তা নয়, কিন্তু সরেজমিনে এই হাঁটা পথের অবস্থা কোনদিন দেখিনি–তাই ভেবেছিলুম খাড়া পাহাড় আর জঙ্গল থাকা সম্ভব।
খাড়া পাহাড় আছে, জঙ্গলও আছে স্যার। কিন্তু বরফের মরশুমে এ পথটা অন্তত স্কিয়ারদের পক্ষে মোটামুটি ভালই।
সবাই কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। তারপর ধ্রুব বলে উঠল, কর্নেল, কাল লিফটম্যানের প্রসঙ্গ তুলেছিলাম। আপনি জবাব দিতে গিয়ে বাধা পড়ল।
কর্নেল বললেন, লিফটম্যান তোমার কথামতো ললিতা খুন হওয়ার খবর দিতে যথেষ্ট দেরি করেছিল। তার দেরি হয়েছিল কেন–এর জবাবে একটা অদ্ভুত ব্যাপার বলেছে সে। সত্যি, বড় অদ্ভুত। আমি বিশ্বাস করিনি।
কী বলেছে, বলুন কর্নেল? ধ্রুব অধৈর্য হয়ে বলল।
খবর দিতে আসবার পথে লিফটম্যান নাকি একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখতে পেয়ে থমকে দাঁড়ায়। লিট হুইল থেকে এখানে আসবার পথটা আশা করি লক্ষ্য করেছে। একটা বাঁধমতো রাস্তা–দুধারে নিচে যথেষ্ট জঙ্গল রয়েছে। জঙ্গলের একটা অংশ ট্রেনিং সেন্টারকে বেড় দিয়ে স্টোররুমের পিছনে এসে মিশেছে। সেখানে কিছুটা সমতল জায়গা ফাঁকা–তারপর আবার ঢালু জঙ্গল। নেমে গেছে উপত্যকার দিকে। লিম্যান বাঁধের মাঝামাঝি এসে তার ডানদিকে জঙ্গলের ভিতরে কাকে স্কি করে যেতে দ্যাখে। বরফ পড়ার ফলে কুয়াশামতো থাকায় স্বভাবত দশফুট দূরের কিছু স্পষ্ট দেখা যায় না–আবছা লাগে। কিন্তু একটা নিস্পন্দ জায়গার মধ্যে কিছু নড়াচড়া করলে যত দূরেই হোক–খানিকটা আভাস পাওয়া যায়। লিফটম্যানের এই ধারণা। যাই হোক, সে একজনকে স্কি করে যেতে দেখেছিল। তার অবাক লেগেছিল দুটো ব্যাপার দেখে। প্রথমে ওখানে কেউ স্কি করে যেতে সাহস পায় না। কারণ, জায়গাটা কোম্পানির বলে। প্রায়ই নিজেদের কাঠের দরকারে গাছ কাটা হয়। সেই গাছের কাটা গুঁড়িগুলো যেখানে সেখানে বরফের মধ্যে মাথা উঁচিয়ে থাকো স্কিয়ারের পক্ষে ভারি বিপজ্জনক। দ্বিতীয় ব্যাপারলিফটম্যান হলফ করে বলল, সেই স্কিয়ারের হাতে একটামাত্র স্কি-পোল ছিল।
ধ্রুব অস্ফুটে বলল, দা মারডারার।
হ্যাঁ। লিফটম্যানের বর্ণনা সত্যি হলে অন্তত আমরা বুঝতে পারছি, সে খুনীকেই দেখতে পেয়েছিল। যাই হোক, সে ভাবল কোন আনাড়ি স্কিয়ার লিট হুইলে চাপার হুজ্জত না পোহাতে চেয়ে এভাবেই নিজের খুশিমতো স্কিয়ের সখ মেটাচ্ছে। অতএব ওকে সাবধান করা এখনি দরকার।
শের সিং বলে উঠল, কিন্তু যে সদ্য খুনের খবর দিতে যাচ্ছে, তার পক্ষে ওসব নিয়ে ভাবা কি যুক্তিসঙ্গত কর্নেল সায়েব? অবশ্য আমাদের লিফটম্যানটি বয়সে জওয়ান–গায়ে তাকতও আছে প্রচুর। ব্যাটার নার্ভও খুব কড়া।
কর্নেল বললেন, তোমাদের লিফটম্যানটির গায়ে জোর আছে বলেই সম্ভবত নিজেকে দারুণ বুদ্ধিমান মনে করে। অতিবুদ্ধি যাকে বলে। এ ছাড়া আর ব্যাখ্যা কিছু খুঁজে পাচ্ছিনে।
ধ্রুব বলল, তারপর সে কী করল?
সে বাঁধে নেমে চেঁচিয়ে উঠল হুশিয়ার করে দিতে চাইল। তারপর দেখল স্কিয়ারটা ট্রেনিং সেন্টারের পিছন দিকে এগোচ্ছে। তখন জঙ্গলের পথে না গিয়ে লিফটম্যান ট্রেনিং সেন্টারে ঢুকে এক দৌড়ে পূর্বপ্রান্তে কাঠের বেড়ার কাছে চলে যায়। এখানে একটা ব্যাপার আমি নোট করে রেখেছি। লিফটম্যান ট্রেনিং সেন্টারে ঢুকে লক্ষ্য করেছিল, স্কিয়ারটা স্টোররুমের পিছনে অদৃশ্য হলো। কিন্তু শেষ প্রান্তে বেড়ার ধারে পৌঁছে আর তাকে দেখতে পেল না কোথাও। তার ভয় হলো। নির্ঘাত পিছনের সেই সমতল ফাঁকা জমি পেয়ে মনের সুখে যেই স্কি চালিয়েছে, গিয়ে পড়েছে ঢালুতে কোন গর্তে বা খাদে। তখন সে লোকটাকে খুব খোঁজাখুঁজি করে কিছুক্ষণ–তারপর তার নাকি খেয়াল হয় যে সে ললিতা টোমলের খুনের খবর দিতে যাচ্ছিল অফিসে। বোঝো কাণ্ড! কর্নেল হেসে উঠলেন।
শের সিং মাথা নাড়তে থাকল অবিশ্বাসে। ধ্রুবও মাথা দুলিয়ে বলল, এ বর্ণনার মধ্যে আগাগোড়া গোঁজামিল আছে। এ সম্পূর্ণ বানানো। লিটম্যানের আচরণ ভীষণ সন্দেহজনক। অবিশ্বাস্য। শের সিং ঠিকই ধরেছে–যে খুনের খবর দিতে যাচ্ছে, সে… চিন্তিতভাবে ধ্রুব নেমে গেল।
কর্নেল বললেন, কিন্তু লিফটম্যান যা দেখেছিল, তা সত্য, ধ্রুব।
তার মানে?
আমি ও জায়গাটা ঘুরে দেখে এসেছি সেদিনই। ওই জঙ্গলে স্কিয়ের দাগ দেখেছি। স্কি-পোল যে একটা ছিল, বাস্কেটের দাগেই তার প্রমাণ। ভাগ্যিস, খুব বেশি দেরি করিনি–তাহলে বরফে সব চাপা পড়ে যেত। তাছাড়া সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার-স্টোররুমের পিছনের দেয়ালের নিচে একজায়গায় প্রায় তিনফুট বাই তিনফুট কেউ কাঠ ছাড়িয়ে ফের আলগা করে চেপে রেখেছিল। আমি একটু টানতেই খুলে গেল। স্টোররুমের চারটে দেয়ালই কাঠের।
শের সিং লাফিয়ে উঠল। কর্নেল সায়েব, কর্নেল সায়েব। নির্ঘাত আমার চাকরি যাবে। আমি একেবারে অন্ধ কিছু লক্ষ্য করিনে। দুগালজি ফিরে এসেই আমাকে ছাড়িয়ে দেবেন।
কর্নেল হাত তুলে বললেন, সবুর। তোমার কোন দোষ নেই। ভিতরে ঢুকলে ওই জায়গাটা তোমার চোখে পড়বে না। কারণ ওখানে স্কিসেটের গাদা আছে। আমার ধারণা, খুনী আগের রাত্রে তোমাকে বেঁহুশ করে তোমার পকেট থেকে চাবি নিয়েছিল।
শের সিং চমকে উঠল, বেহুশ করে?
হ্যাঁ। আমার এটা অনুমান অবশ্য। তোমাকে মদ খাওয়ানোর সময় খুনী কোন ফাঁকে কোন ড্রাগ মিশিয়ে দিয়েছিল। সেকথায় পরে আসছি। খুনী চাবি নিয়ে স্টোরে ঢোকে। তারপর গ্রাইন্ডিং মেশিনে নিজের স্কি-পোল দুটো বাস্কেট থেকে খুলে ধারালো করে নেয় এবং বাস্কেটে যথারীতি বিঁধিয়ে রাখে মাত্র। একজন ভালো স্কিয়ারের পক্ষে ওভাবে আলগা অবস্থায় বাস্কেটে পোল বিধিয়ে রেখে স্কি করা কঠিন নয়। হাতে খুব চাপ রাখলে সহজে খুলে পড়ে যাবার চান্স নেই। যাই হোক, তারপর সে কোন ধারালো জিনিস দিয়ে দেয়ালের কোনটা অতখানি চারকোনা করে কাটে–যাতে বাইরে থেকে চাপ দিলে বা টানলে তিনফুট বাই তিনফুট কাঠ খসে যায়। ওখানেই সে শ্রীবাস্তবের তিন নম্বর স্কি পোল দুটো এমনভাবে রাখে, যাতে কাঠের কাটা অংশটা সরালেই বাইরে থেকে হাতে পড়ে। শের সিং, তুমি সকালে স্কিসেট ইস্যু করার সময় কোন গরমিল লক্ষ্য করোনি? খুব ভেবে জবাব দেবে কিন্তু।
শের সিং একটু ভেবে বলল, দেখুন কর্নেল সায়েব, স্টোররুমের ভিতরে তো আজকাল সবসময় অন্ধকার লাগে। একটা বাতি আছে–মাত্র চল্লিশ ওয়াট। দুগালজি খুব হিসেবী মানুষ, সে তো জানেন। তাছাড়া পিছনের দিকের দেয়ালে স্কিসেট ছাড়াও অজস্র কাঠ জড়ো করা আছে। আমি খুঁটিয়ে দেখিনি অতটা। আমারই কসুর, স্যার। এখনই গিয়ে ওটা মেরামত করতে হবে।
উঁহু। পুলিস যতক্ষণ না অনুমতি দেয়, আর ওতে হাত দেওয়া ঠিক হবে না শের সিং। কর্নেল বললেন।…এখন আরেকটা কথার জবাব দাও। সেরাতে তোমাকে মিলে মদ খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল বলছ। কিন্তু নিশ্চয় জোকটা সকলের মাথায় একই সঙ্গে আসেনি। প্রথমে একজনের মাথায় এসেছিল–তখন সবাই সায় দিয়েছিল। তাই না?
জি–সে তো ঠিকই।
প্রথমে কে তোমাকে মদ খাওয়াতে চেয়েছিল–কিংবা ওই জোকের প্রস্তাব দিয়েছিল শের সিং?
শের সিং বিপন্নমুখে ভাবতে ভাবতে বলল, ঠিক মনে করতে পারছি না স্যার। কে প্রথম আমাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠেছিল, আরে, শের সিং তুমি কেন ফুর্তি করছ না..কে যেন…কে…
মেয়ে না পুরুষ?
মেয়ে? উঁহু–পুরুষ। না, না কর্নেল সায়েব–একটুও মনে নেই। মানে লক্ষ্য করিনি একেবারে। মেয়ে-না পুরুষকে প্রথমে বলেছিল!
তুমি ভাবতে সময় নাও শের সিং। আজ সারাটি রাত তুমি সময় পাবে। কাল সকালে আমাকে বলবে। কর্নেল গম্ভীরভাবে যেন হুকুমই দিলেন।…ঠিক আছে। এবার এসো। তোমাকে হয়তো খুঁজছেন শ্রীবাস্তব।
শের সিং আস্তে আস্তে চলে গেল। ধ্রুব বলল, আপনার প্রকল্পটি বাস্তব সাক্ষ্য অনুসারে খুব চমৎকারই বলব। কিন্তু তাহলেও লিটম্যানের ব্যাপারটা মানে, তার অমন আচরণ আমার কেমন ঠেকছে। তাকে পাঠিয়েছি একটা সাংঘাতিক খবর দিতে–আর সে অতক্ষণ ওইভাবে পরোপকার করতে দৌড়াদৌড়ি করে সময় নষ্ট করল? এটা একেবারে অ্যাবসার্ড।
তার বিবরণ সত্য। বর্ণনায় গোলমাল থাকতে পারে।
অস্বীকার করছি না। বলছি, তার আচরণ অ্যাবসার্ড।
ধ্রুব, ওর বিবরণের ফ্যাক্টটুকু যদি সত্যি হয়, তাহলে আচরণও সত্যি। দুটোই পরস্পর সম্পর্কিত ব্যাপার–একটা সত্য হলে অপরটাও সত্য হতে বাধ্য।
কিন্তু…।
ধ্রুব, তবু তুমি স্বস্তি পাচ্ছ না কেন, তা বুঝি। আসলে দুটো সত্যকে একজায়গায় মেলানোর কমন ভিত্তি তুমি হাতড়াচ্ছ। তাই না?
সম্ভবত তাই।
ধ্রুব, এই ভিত্তি হলো–লিফটম্যান স্কিয়ারকে চিনতে পেরেছিল। কিংবা আরও স্পষ্ট করে বললে লিফটম্যান তাকে ভালো চেনে। এবং সম্ভবত তাকেই লিফট চেয়ারে খুন করতে দেখেছিল বলেই ওই জঙ্গলে তাকে আবিষ্কার করে সে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। মনে রেখো, লিট হুইলের কেন্দ্রে নিচে লিফটম্যান দাঁড়িয়ে থাকে–হেলপার দুজন থাকে খানিকটা দূরে। যত অস্পষ্ট হোক, সবগুলো চেয়ার লিটম্যানের পক্ষে লক্ষ্য রাখা সম্ভব। ললিত চেয়ার মাঝামাঝি আসার পর যদি খুনী ওর বুকে পোল বিধিয়ে থাকে, লিফটম্যানের পক্ষে পরিষ্কার দেখতে পাওয়া সম্ভব। আগের বা পিছনের চেয়ার থেকে তা দেখা যাবে না। তাই না?
ধ্রুব সায় দিয়ে বলল, হ্যাঁ–ঠিকই বলেছেন।
এখন প্রশ্ন : সব স্কিয়ারের পোশাক একরকম এবং আপাদমস্তক ঢাকা। চোখে গগস। ঠোঁট আর নাকও স্কার্ফে ঢাকা। ও চিনল কীভাবে তাই না?
হ্যাঁ কর্নেল। আমি তো চিনতেই পারিনি–অথচ খুনীকে ললিতার পাশে বসতে দেখেছি।
দ্যাখ ধ্রুব–খুব চেনা মানুষের অনেক ভঙ্গি লক্ষ্য করে তাকে ডিটেক্ট করা সম্ভব। যতই ঢাকা থাক, দেহের কোন অংশের ভঙ্গি থেকেই সে ধরা পড়তে বাধ্য। তাছাড়া লিফটম্যানটি অভিজ্ঞ। কতদিন ধরে সে এখানে একই কাজ করছে। তাই স্কিয়ারদের চেয়ারে ওঠা, নামা এবং স্কি করার ভঙ্গি তার মুখস্থ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
ধ্রুব উত্তেজিত মুখে বলল, দা আইডিয়া! লিফটম্যান খুনীকে চেনে। দেখেছেও তার কীর্তি। কিন্তু যে কোন কারণে হোক, সে প্রকাশ করতে চায় না। এবং সেজন্যেই তার ফ্যাক্ট অংশ সত্য, আচরণও সত্য–শুধু বর্ণনার মধ্যে কিছু অংশ মিথ্যে হতে পারে।
সোনালি এল এতক্ষণে।
কর্নেল বলল, হ্যাল্লো সোনালি, খুব আড্ডা দেওয়া হলো নিশ্চয়। স্কিয়াররা সব কে কী করছে?
সোনালি বলল, কারো খবর জানিনে। আমি মিস মবলন্ধরের ঘরে আড্ডা দিচ্ছিলুম। তার অভিজ্ঞতার গল্প শোনা হলো অনেক রীতিমতো থ্রিলিং।
রিটার ঘরে ছিলে? বাই জোভ! কর্নেল হেসে উঠলেন!..রিটা মেয়েটি ভারি চমৎকার কিন্তু এখানে কারো সঙ্গে বিশেষ মিশতে দেখি নে। তোমার সঙ্গে বুঝি খুব ভাব হয়ে গেছে?
সোনালি মাথা দুলিয়ে বলল, হু-উ! এই মিঃ ধ্রুব চৌধুরী, রিটা তোমার সঙ্গে আলাপ করবে। বিকেলে আসবে। কোথাও যাবে না কিন্তু।
ধ্রুব বলল, পাগল। এই ব্লিজার্ডে কোথায় বেরোব?
কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, চলি। লাঞ্চের সময় হয়ে এল। সোনালি, ধ্রুব! তোমরা একটু পরে এসো তাহলে। এক টেবিলেই বসব আমরা।
কর্নেল চলে গেলে সোনালি ধ্রুবর পাশে চুপ করে বসে ওর গলা জড়িয়ে ধরল। চাপা গলায় বলল, আজ রাতে দুজন একঘরে শোব কিন্তু। কাল সারারাত আমার ঘুম হয়নি। যা ভয় লাগছিল। নিচেই যে ললিতার ঘর।
ধ্রুব ওর গালে ঠোঁট রেখে বলল, আমিও তাই ভাবছিলুম।
.