তুমি কি করেছো শুরু,প্রকৃত আরম্ভ যাকে বলে?
না, করোনি। অবশ্য ভেবেছো তুমি অনন্তের খুঁট
লক্ষ্য করে পেরিয়ে এসেছো চলে
প্রায় গন্তব্যের কাছে। সময়ের উট
তোমার অস্তিত্বে বালি ছড়াতে ছড়াতে
এবং কিছুটা নুলো বানিয়ে তোমাকে যাচ্ছে ছুটে
অবিরত, অদৃশ্য করাতে
তোমার সত্তায় তপ্ত ছেঁকার দাগের মতো ক্ষত নিয়ত উঠছে ফুটে।
তোমাকে দিই না দোষ। সাফল্যের দ্যুতি
মাঝে-মাঝে উঠলে ঝিকিয়ে চতুর্দিক
করতালিময় হয়, ললাটে বিভূতি
জেগে ওঠে, তখন এ ভাবনা স্বাভাবিক-
আখেরে পৌঁছুনো গেল সাধের মানস সরোবরে।
না, যায়নি। যদি যেত, তাহলে এখনো
কেন তুমি তোমার আপন কণ্ঠস্বরে
অমর্ত্য কিন্নর সুর লাগাতে হয়েছো ব্যর্থ? শোনো,
ফুলের আড়ালে অন্য ফুল
অথবা ফলের অন্তঃস্থলে ভিন্ন ফল
দেখার ক্ষমতা তুমি এখনো কি করেছো অর্জন? বাষ্পাকুল
চোখ কিংবা সুরাইয়ের সর্পিল ফাটল,
ধাবিত অশ্বের পাল, শুঁয়োপোকা, লাউডগাসহ
নিটোল শিশিরকণা অথবা পাখির ডাক, বৃদ্ধার তাকানো
পেরেছে কি করতে অর্থবহ
তোমার শব্দের পুঁতি? পারেনি যে তা’ তুমি নিজেই ভালো জানো।
তাহলে কীভাবে বলা যায়
অনেক আগেই তুমি করেছিলে শুরু? অন্ধকারে
সারাক্ষণ হাতড়ে বেড়াল পথ ভারি অসহায়,
প্রকৃত আরম্ভ তাকে বলা দায়। পথের কিনারে
বসে আছো দূরে চোখ মেলে কায়ক্লেশে
মুহ্যমান, পরিণামহীন;
এসেছো এ কোন্ দেশে রুক্ষ ছিন্ন বেশে
অবেশেষে, ভাবছো প্রমথাক্রান্ত মনে; যায় দিন।
অবশ্য ছাড়েনি হাল। মজ্জমান মানুষের হাত
যেমন মাটিকে ছুঁতে চায়,
তেমনি তুমি চাও পেতে ঘনিষ্ঠ সাক্ষাৎ
এখনো প্রকৃত আরম্ভের। মননের সাহারায়
কী করে ফোটাবে ফুল? মানুষ নিয়ত
সীমার শেকলে পিষ্ট, তবু তার স্বপ্নের মরাল
আকাশে আকাশে ওড়ে ধ্রুপদের মতো।
জেনেছো করাল
মূর্তির আড়ালে আছে ভবিষ্যত আর
গোলকধাঁধায় ঘুরে মরছো সর্বদা। ক্ষণে ক্ষণে
তোমার ভেতর থেকে অন্তর্ভেদী পবিত্র চিৎকার
জেগে ওঠে-‘হারিয়ে ফেলেছি পথ শ্বাপদসংকুল এক বনে,
কোথায় প্রকৃত শুরু, কোথায় বা শেষ?
কখনো হঠাৎ প্রার্থনায় নতজানু
হও তুমি, সে-ও তো যন্ত্রণা সীমাহীন, নিরুদ্দেশ
ঠিকানার অন্বেষণে ক্রমাগত হতে থাকা স্থানু।