আমার বাবার এখন দ্রুত পাল্টাচ্ছে চোখ তাকে ততো ব্যথিত লাগে না
তিনি অনায়াসে ঘাসের ভিতর আরো পতঙ্গের উৎসাহ দেখেন,
মানুষের নব জাগরণ,
অতিশয় ব্যগ্র তিনি পৃথিবীর ভালো দেখতে চান,
তাকে আর ব্যথিত লাগে না।
সহজে এখন তিনি পাপীকেও তীর্থধূলির মতো বুকে তুলে নেন।
একদিন যেমন তিনি শস্যের সম্ভাব্য ক্ষতি নিশ্চিত জেনেও তবু বলেছেন,
বর্ষণ থামার বেশি বাকি নাই, এবারের শস্য রক্ষা হবে
উথালপাতাল সেই ভাঙনের স্রোতে আমাদের দক্ষিণের দুটি ঘর
ভাসমান দেখে
তবু তিনি কীভাবে যে বলেছেন আমারেদ বাড়ি আর বিশেষ ভাঙবে না,
ভাঙনপবণ এই নদীকেও কোনোদিন এতোটা বিশ্বাস কেউ করে
যেন তিনি এইভাবে বিশ্বাসের বলে ঠেকাবেন যতো সর্বনাশ। এখনো
তেমনি তার অথই বিশ্বাস
সুখী হবে দুর্গত-দুঃখিত এই দেশ, দুর্দিনের দাহ লেশ মুছেযাবে
এই অনশন, অন্নাভাব, অগ্নিমূল্যে বেঁচে থেকে তিনি
অকাতরে এখনো বলেন, আর চাল দুর্মূল্য হবে না, দেখো এইবার
ঠিকই পাওয়অ যাবে অপর্যাপ্ত শিশুখাদ্র দেশে
লোকে তার কথা শুনে হাসে। আমি ভাবি স্বপ্ন আর কোথাও নেই
শুধু তার এই দুটি চোখে
না হলে সবুজ তণ্ডুলে এতো কাঁকরের বিষ কেন তার চোখেই পড়ে না!
বাবার চোখের দিকে আমি ভয়ে তাকাতে পারি না। কী করে যে
তার প্রায় অবলুপ্ত এই দুটি চোখে এতো ভরসা রাখেন
এখন তো তার এই চোখ দ্রুত পাল্টাচ্ছে প্রত্যহ এখন হয়তো সবুজকে
তিনি আর তেমন সবুজ দেখেন না
চশমার পয়েন্ট তার দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে তা হলে কী হবে
আমি জানি তবু এই গভীর কুয়াশাচ্ছন্ন চোখে তিনি
আমাদের ভবিষ্যৎ বড়ো বেশি উজ্জ্বল দেখেন। আমার বাবার মতো
বিশ্বাসী লোক আমি কখনো দেখিনি
তার এখন বয়স বেড়েছে বেশ বোঝা যায় আর ততো তাকে মনে হচ্ছে
তিনি এই পৃথিবীর প্রকৃত প্রেমিক শুধু ভালো দেখতে চান
জেনে যেতে চান বুঝি ব্যথিত বৃক্ষের অব্যাহতি মানুষের কুশলকল্লোল
না হলে কী নিয়ে যাবেন তিনি অতো দূরে নিতান্ত একাকী শেষবেলা,
তাও বুঝি!
আমি জানি আজীবন আমার বাবার এই সামান্য বিশ্বাস ছাড়া তেমন
আর কিছুই ছিলো না
শুধু এইটুকু নিয়ে তিনি দুঃসময়ে আমাদের আদিগন্ত দিয়েছেন দোলা
নিজে তিনি পুড়েছেন ব্যর্থতার রোদে বিপর্যয়ে এই একাকী মানুষ,
তবু চিরদিন তিনি বড়ো স্বপ্নচারী লোক
সেই স্বপ্ন আজো তার চোখে, তাকে ততো ব্যথিত লাগে না।