তিনটি প্রশ্ন

তিনটি প্রশ্ন

এক
মানুষের শিশু দুধ খায় খুব
দুধ চাই খুব খাঁটি
সকালেও দুধ, বিকেলেও দুধ
দুধে ভরা থাকে বাটি।
মা’র দুধ খেয়ে পেট তো ভরে না
গোরুর দুধও যে চাই
গোরুর পা বেঁধে, বাছুর সরিয়ে
দুধ দোওয়া হয় তাই!
একদিন এক ছোট্ট বাছুর
মা’র কাছে শুয়ে বলে,
‘তোমার দুধ তো ওরা নিয়ে যায়
আমার যে পেট জ্বলে!
ওরা যদি খায় আমাদের দুধ
আমরাও কেন তবে
মানুষের দুধ খাবো না বলো তো
তাতে কোনও দোষ হবে?’

দুই
বনের মধ্যে গাড়ির শব্দ
লোক আসে দলে দলে
ছুটির সময় বেড়াবার ধুম
ছুটে আসে জঙ্গলে।
কচি-কাঁচা আর বুড়ো-বুড়িরাও
বাবা, কাকা আর মামা
কত সাজগোজ, রোদের চশমা
কত না রঙিন জামা।
শহুরে মানুষ অরণ্যে এসে
এদিক ওদিক ছোটে
ঝোপ-ঝাড়ে কোনও হরিণ দেখলে
হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে।
একদিন এক হরিণ শাবক
জিজ্ঞেস করে মাকে,
‘আমরাও কেন বেড়াতে যাই না
যে শহরে ওরা থাকে?’
মা-হরিণ বলে, ‘চুপ চুপ চুপ—
করিস না পাগলামি!’
হরিণ শিশুটি তবুও মানে না,
‘কী ভুল বলেছি আমি?
ওরা এসে কত ডালপালা ভাঙে
ছেঁড়ে ফড়িং-এর ডানা
আমরা শুধুই শহরে বেড়াব
তাতেও রয়েছে মানা?’

তিন
ট্রেনে ভিখিরির টিকিট লাগে না
কত জালিয়াত, চোর
দিব্যি আরামে দূরে দূরে ঘোরে
অনেক রাত্রি ভোর!
ফিরিয়ালা আর মন্ত্রীমশাই
বিনা টিকিটেই যান
সাধু সেজে নাও, টিকিট চাই না
ধরো একখানা গান!
কিংবা যদি-বা হও তুমি কোনও
রেলবাবুদের ছেলে
বিনা ভাবনায় হিল্লি-দিল্লি
যখন ইচ্ছে গেলে।
ক্লাস সেভেনের একটি ছাত্র
জিজ্ঞেস করে মাকে,
‘এবার ছুটিতে কানপুর যাব?
দিদি কানপুরে থাকে।’
মায়ের মুখটা ম্লান হয়ে গেল
বললেন চোখ ঢেকে,
‘ট্রেনের ভাড়া যে অনেক রে খোকা
টাকা পাব কোথা থেকে?
তোর বাবার যে চাকরিটা গেছে
অভাবের সংসার
দু’ বেলা অন্ন জোটানোই দায়
সাধ্য কী বেড়াবার!’
ছেলেটি বলল, ‘দিদির জন্য
মনটা কেমন করে
দিদির মেয়েটা কত দিন ধরে
ভুগছে প্রবল জ্বরে।
টাকা নেই, তাই পারব না যেতে
মুখ করে থাকি কালো
এর চেয়ে চোর, ভিখিরি কিংবা
ফিরিয়ালা হওয়া ভালো?’