তিনজন মানুষ

তিনজন মানুষ

গাড়ি বারান্দার নিচে আমরণ অনশনে বসে আছে
তিনজন শ্রমিক
আজ তের দিন ধরে ওদের দেখছি!
শীর্ণ মুখে জ্বলজ্বলে চোখ, রুখু দাড়ি, জট-পাকানো চুল
আধো-হেলান দিয়ে বসা, ওদের ঘুম নেই, খালি পেট
তেতো জিভে ঘুম আসে না
ওদের দেখার জন্য ভিড় জমোনি, ওদের জন্য
মেডিক্যাল বুলেটিন বেরুবে না
আরও তিনচারজন শুধু চাটাইয়ের এক কোণে হাঁটু
আলোয়ানে মুড়ে বসা
নিঃশব্দ, সব কথা ফুরিয়ে গেছে—
বাড়ি ফেরার পথে আজ তের দিন ধরে ওদের দেখছি!

মৃত্যু শিয়রে নিয়ে বসেছে কেন? কেড়ে খেতে পারলে না?
একথা স্বতই আমার মনে আসে, নিজেই লজ্জা পাই—
ওদের নেতারা কেউ এখানে নেই, তারা বাড়িতে ঘুমোচ্ছে
ওদের মালিকরা দিল্লি-বোম্বাইতে ঘুমন্ত
রাষ্ট্রপতির প্রাসাদে খাটাখাটনি করছে দেড়শোজন ভৃত্য
দরজির কাছে কোমরের মাপ দিচ্ছে রোজ অসংখ্য মানুষ,
গোটা বড়বাজার জুড়ে চোঁয়া ঢেকুরের শব্দ
এখানে মৃত্যু শিয়রে নিয়ে বসে আছে তিনটি অভুক্ত মানুষ,
নিঃশব্দ
চোখে ঘুম নেই, ক্লান্ত, জিভে তেতো স্বাদ
থমথম করছে।
হাওয়া, কেউ জানে নাকী সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড হতে চলেছে–
আমি রাজনীতি-ফিতি বুঝি না। আমি সইতে পারছিনা ঐ
তিনজন মানুষের নিঃশব্দ বসে থাকা
তোলপাড় করছে আমার বুক, আমি বলতে চাই
সাবধান!
মানুষ আর ব্যর্থ মৃত্যু মেনে নেবে না।
সাবধান! মানুষ আর ব্যর্থ মৃত্যু মেনে নেবে না!
বাড়িতে ফিরে ভাতের থালার সামনে আমার গা
গুলিয়ে ওঠে–সারা রাত আমার ঘুম আসে না!