টুপি

টুপি

চু মু লান মি।

উঁহুঃ! চো মো লঙ মা!

না হে, না! আসলে ওটা জা মো লাং মা।

তার চেয়ে বলো নাকাং তন তিং, কিংবা শেরিং চেড়ংগা পোতাং-ও বলতে পারো।

বাহাত্তর নম্বর বনমালি নস্কর লেনের মেসের বাসিন্দারা হঠাৎ খেপে গেছে বলে এ থেকে যদি কারুর ধারণা হয়, তাহলে খুব দোষ দেওয়া যায় না।

ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। এ সব অনুস্বার, বিসর্গ মেশানো কিচির-মিচিরের আসল লক্ষ্য হলেন ঘনাদা।

ঘনাদা আজ দুদিন হল আমাদের সঙ্গে বাক্যালাপ বন্ধ করেছেন। তার যথেষ্ট কারণ অবশ্য বর্তমান)।

দুদিন আগে ঘনাদা যথারীতি মেসের বসবার ঘরের সবচেয়ে লোভনীয় আরামকেদারাটি দখল করে বসে খবরের কাগজে চক্ষু নিবদ্ধ করে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে শিশিরের দিকে ডান হাতটি নিঃশব্দে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলিটি তাতে এমন করে ফাঁক করে ধরা যে তা থেকেই তাঁর ইঙ্গিতটুকু পরিস্ফুট।

শিশির সে ইঙ্গিত অমান্য করেনি। অবিলম্বে একটি সিগারেট সেই আঙুলের মধ্যে ভরে দিয়ে সেটি জ্বালাবার পরিশ্রমটুকু থেকেও ঘনাদাকে বাঁচাবার জন্যে দেশলাই-এর কাঠি বাগিয়ে ধরেছিল।

অপরাধের মধ্যে সে শুধু সেইসঙ্গে মুখ টিপে আমাদের দিকে একটু হেসে বলেছিল, তিন হাজার দুশো তেইশটা হল, ঘনাদা!

ঘনাদা শিশিরের হাসিটুকু দেখতে পাননি, কিন্তু তৎক্ষণাৎ যেন বিছুটি গায়ে লেগেছে এমনইভাবে খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলে উঠে বসেছিলেন।

কী রকম! প্রথমটা আমরা সবাই একটু হকচকিয়ে গেছলাম। ঘনাদার হঠাৎ হল কী?

গৌরই সকলের আগে ব্যাপারটা বুঝে হাসি চেপে বলেছিল, গোনায় কিছু ভুল। হয়েছে বুঝি?

ভুল হয়েছে মানে? ঠকিয়ে যেন আমরা তাঁর সর্বনাশ করে ফেলছি, ঘনাদন এইভাবে বলেছিলেন, একেবারে চার-চারটে বাড়িয়ে বলা।

অন্যদিন হলে শিশির তৎক্ষণাৎ সায় দিয়ে হ্যাঙ্গাম চুকিয়ে দিত। কিন্তু সেদিন সেও কেমন বেয়াড়া জেদ ধরে বসেছিল, না, ঘনাদা, ও তিন হাজার দুশো তেইশ-ই হবে।

না, তিন হাজার দুশো উনিশ! ঘনাদা প্রবল প্রতিবাদ করে জানিয়েছিলেন।

শিশির তবু নাছোড়বান্দা। মাথা নেড়ে বলেছিল, না, আপনি যা ই বলুন, ও দুশো। তেইশ। আমার গুনতে ভুল হয় না।

গুনতে ভুল তাহলে আমারই হয়েছে বলতে চাও। ঘনাদা গরম হয়ে উঠেছিলেন। বেশ গুনতেই যখন জানি না, তখন তোমার সিগারেট আমার না খাওয়াই ভাল।

ঘনাদা হঠাৎ আরামকেদারা থেকে উঠে ঘর থেকেই বেরিয়ে গেছলেন। অবশ্য সিগারেটটি হাতে নিয়েই।

সেই থেকে তিনি যে আমাদের সঙ্গে বাক্যালাপ বন্ধ করেছেন, তাঁর অভিমান তারপর আর ভাঙানোই যায়নি।

এদিকে আমাদের দিন কাটানো দায় হয়ে উঠেছে। এবারের বর্ষা একটু বিলম্বে দেখা দিয়ে শেষের দিকে একেবারে সুদসুদ্ধ পুষিয়ে নিচ্ছে। ফুটবলের রথী-মহারথীরা সব হেলসিঙ্কিতে, কী রাজ্য জয় করতে গেছেন, তাঁরাই জানেন। ওদিকে খেলার মাঠে যেতে মন চায় না, এদিকে আমাদের বর্ষার সন্ধ্যাগুলো মাঠেই মারা যাচ্ছে।

ঘনাদাকে অনেকরকম ঘুষ দিয়ে দলে ভেড়াবার চেষ্টা এ দুদিন করা হয়েছে। প্রথম দিন পাড়ার বিখ্যাত তেলেভাজার দোকান থেকে ফুলুরি বেগুনি ভাজিয়ে এনে ওপরের বসবার ঘরে একেবারে থালাসুদ্ধ সাজিয়ে নিয়ে বসেছিলাম, ঘনাদা যদি গন্ধে এসে বসেন।

ঘনাদা তাঁর ওপরের ঘর থেকে নেমে এলেন ঠিকই, কিন্তু তারপর মাত্র দু সেকেন্ড আমাদের আড্ডা-ঘরের দরজায় দ্বিধাভরে দাঁড়িয়ে আবার নীচে চলে গেলেন।

দ্বিতীয় দিন ঘনাদার জন্য আস্ত একটা সিগারেটের টিন শিশির টেবিলের ওপর রেখে দিয়েছে। সেই সঙ্গে মোড়ের রেস্তোরাঁ থেকে চিংড়িমাছের কাটলেট।

এদিন চৌকাঠ থেকে চলে না গিয়ে ঘনাদা ঘরের ভেতরে এসে বসেছেন, কিন্তু। আমরা যে ঘরে আছি, তা যেন তিনি দেখতেই পাননি।

শিশির অন্যমনস্কভাবে সিগারেটের টিনটা তাঁর দিকে বাড়িয়ে ধরতেই কিন্তু সব মাটি হয়ে গেছে। সিগারেটের বদলে শিশিরকেই যেন জ্বলন্ত চোখের দৃষ্টিতে ভস্ম করে ঘনাদা উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছেন।

আজ তিনদিনের দিন আমরা একেবারে তাই নতুন পচি ধরেছি।

আজ টেবিলের ওপর ফুলুরি, বেগুনি বা কাটলেট নয়, গরম হিঙের কচুরি একথালা সাজানো আছে, সেই সঙ্গে সিগারেটের টিনও বটে। কিন্তু ওগুলো আসল টোপ নয়, চার মাত্র।

আসল টোপ হল আমাদের এই কিচির-মিচির, এবং সেই টোপেই ঘনাদাকে গাঁথা গেল শেষ পর্যন্ত।

গৌর, শিশির ও আমার চালিয়াতি পর্যন্ত ঘনাদা কোনওরকমে সহ্য করেছিলেন, মা শিবুর শেরিং চেড়ংগা পোতাং শুনে একেবারে চিড়বিড়িয়ে উঠে আর থাকতে পারলেন না।

চো—মোহিয়ান মি! ঘনাদা খ্যাপা ঘোড়ার মতো ঘর কাঁপিয়ে যেন চিহি চিহি ডাক ছাড়লেন।

ঠিকমতো টোপ দিয়ে ঘনাদাকে গাঁথতে পেরে আমরা যেমন খুশি তেমনই বেশ একটু হতভম্বও হলাম।

ঘনাদার মান ভাঙানোর সঙ্গে সত্যি কথা বলতে গেলে তাঁকে একটু জব্দ করার ইচ্ছেও আমাদের ছিল। যত বড় সবজান্তা হবার ভানই করুন, আমাদের ও কিচির-মিচিরের মর্ম বোঝা ঘনাদার পক্ষেও সম্ভব নয় বলে আমরা মনে করেছিলাম।

সত্যি কথা বলতে কি গত দুদিন ধরে শিবু আর গৌর একরাশি পুঁথি-পত্র বই কাগজ ঘেঁটে ওই সব উদ্ভট আজগুবি আওয়াজ জড়ো করেছে।

এত করেও ঘনাদার ওপর টেক্কা দেওয়া কিন্তু গেল না।

চো—মোহিয়ান মি! বলে, চিহি ডাক ছেড়ে, ঘনাদা তিনদিন বাদে তাঁর নিজস্ব আরামকেদারায় এসে বসে মুখ বেঁকিয়ে বললেন, চালবাজি তো করছ, জানো মানে এসব কথার?

আমরা যতখানি সম্ভব বেকুবের মতো তাঁর দিকে নীরবে তাকিয়ে রইলাম।

তিনি ততক্ষণে থালার হিঙের কচুরির দিকে মনোনিবেশ করেছেন। পুরো থালাটাই প্রায় সাবাড় করে সিগারেটের টিনটার দিকে হাত বাড়িয়ে তিনি হঠাৎ থেমে ভুরু কুঁচকে শিশিরের দিকে তাকালেন।

আমারই ভুল হয়েছিল ঘনাদা, শিশির তাড়াতাড়ি বলে উঠল, তিন হাজার দুশো উনিশই হবে।

না, তিন হাজার দুশো কুড়ি। বলে শিশিরের ভুল শুধরে ঘনাদা সিগারেট ধরালেন। তারপর আগেকার প্রশ্ন আবার তুলে বললেন, বলো দেখি, কথাগুলোর মানে কী?

এবার চুপ করে থাকলে আর চলে না। গৌর তাই আমতা আমতা করে বললে, ও সব হল মাউন্ট এভারেস্টের নাম।

হ্যাঁ, নাম তো বটে, কিন্তু ও সব নামের মানে কী, আর কোন নামটা ঠিক? ঘনাদা অবজ্ঞাভরে আমাদের দিকে চাইলেন। আমাদের মুখে আর কথা নেই দেখে ঘনাদাই আবার করুণার দৃষ্টিতে আমাদের ওপর চোখ বুলিয়ে শুরু করলেন, কথাগুলো যা আওড়াচ্ছিলে, সবই হল মাউন্ট এভারেস্টের তিব্বতি নাম। চো। মো লঙ মা মানে হল লঙ মা দেবী। লঙ মা বলে কোনও শব্দের অর্থ কিন্তু হয় না। লঙ বলতে অবশ্য দেশ বোঝায়! জা মো লাং মা মানে হল একসঙ্গে পক্ষিণী-দেবী আর গো-দেবী। কাং তন তিং মানে হল ঊধ্ব-লোকের নীল তুষার। নামটায় কবিত্র আছে, কিন্তু এটা বা শেরিং চেড়ংগা পোতাং অর্থাৎ অমর পঞ্চ দেবীর প্রাসাদও আসল। নাম নয়। পৃথিবীর সর্বোচ্চ চুড়ার আসল তিব্বতি নাম হল, চো মো হিয়ান মি অর্থাৎ বিশ্বজননীর পূত সলিল। চিনারা তিব্বতের রাজধানী লাসা অধিকার করার পর এই তিব্বতি নামটিই চালু করেছে। ভুল করে অনেকে এটা অবশ্য চু মুলান মি বলে বানান করে।

বলা বাহুল্য, আমরা এতক্ষণ হাঁ করে ঘনাদার দিকে চেয়ে ছিলাম। গৌরই প্রথম যেন সামলে উঠে জিজ্ঞাসা করলে, আপনি তিব্বতি ভাষা জানেন নাকি?

আইনস্টাইনকে যেন গুণ-ভাগ জানেন কি না জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, ঘনাদা এমনই একটু অনুকম্পার হাসি হাসলেন।

শিবু হঠাৎ অন্য প্রসঙ্গ তুলে বললে, কিন্তু নাম যাই দিক, মাউন্ট এভারেস্ট চড়া আর মানুষের সাধ্যে কুলেল না। সুইসরাও তো হার মেনে ফিরে এল।

হ্যাঁ! ঘনাদা অবজ্ঞাভরে বললেন, রুন-এর শেকড় তো আর চেনে না। রুন-এর শেকড় মানে? আমাদের চোখ কপালে উঠেছে তখন।

রুন-এর শেকড় চিনলে কী হত? অবাক হয়ে আমরা আবার জিজ্ঞাসা না করে পারলাম না।

কী আর হত! টুপিটা তাহলে ফিরিয়ে আনতে পারত! ঘনাদা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে কথাটা বলে ওঠবার উপক্রম করলেন।

রুন-এর শেকড় আর টুপিতে মিলে আমাদের মাথা তখন ঝিমঝিম করছে, তবু একরকম জোর করেই চারজনে তাঁকে ধরে বসিয়ে দিলাম।

ঘনাদা যেন নেহাত নিরুপায় হয়ে অনিচ্ছার সঙ্গে শুরু করলেন, ড. তানাকার নাম তোমরা বোধহয় শোনোনি? অত বড় পণ্ডিত-পর্যটক সোয়েন হেডিন-এর পর কমই দেখা গেছে। ইউরোপ-আমেরিকার লোক হলে তাঁর নাম অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়ত। এশিয়ার লোক বলেই তাঁর নাম অনেকে এখনও জানে । অনেক কাল আগে সেই ব্রিটিশ আমলে তিব্বতে যাবার নতুন একটা পথ, যাকে বলে গিরিবর্ত্ম, খুঁজে বার করবার জন্যে বেরিয়ে থিয়াং বোচি মঠে সেবার তিনি ক দিনের জন্যে বিশ্রাম করছিলেন। নেপালের উত্তরে নামচে। সেখান থেকে থিয়াং বোচি আসতে হলে প্রথমে দুধকোশি নদীর ওপরকার খাড়া পাহাড়ের গায়ে দু হাজার ফুট উঁচু দুর্গম পথ পার হতে হয়। সে-পথ কিছুদূর গিয়ে আবার দুধকোশিতে নেমে সেখানে কাঠের একটা নড়বড়ে পোল পার হলে— সামনের একটি দুহাজার ফুট উঁচু চূড়ার মাথায় থিয়াং বোচি মঠ দেখা যায়।

ভারতবর্ষের দিকে এর চেয়ে উঁচু বৌদ্ধ মঠ আর নেই। তিব্বতে যাওয়া-আসার সে । মঠের বৌদ্ধ মোহান্তদের সঙ্গে তানাকার বেশ আলাপ হয়ে গেছল। এবারে অভ্যর্থনাটা তাই ভালই হল। মোহান্তদের অনুরোধে দুদিনের জায়গায় প্রায় পাঁচ দিন কাটিয়ে দেবার পর হঠাৎ একদিন সকালবেলা একজন ছোট মোহান্তকে দেখে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। এ লোকটির সঙ্গে এ ক-দিন তাঁর বিশেষ দেখাশোনাই হয়নি৷ শুনলেন—তিব্বতের পাঞ্চেন লামার চিঠি নিয়ে তিনি থিয়াং বোচি মঠের প্রাচীন তিব্বতি ধর্মগ্রন্থগুলির তালিকা করতে এসেছেন। লোকটির যা পরিচয় পাওয়া গেল, তাতে তাঁর সঙ্গে তানাকার কোনওদিন দেখাশোনা হওয়া অসম্ভব। তবু মনের খটক তাঁর গেল না। কেন জানি না তাঁর মনে হল তাঁর অত্যন্ত চেনা কোনও একজনের সঙ্গে এই মোহান্তর তাত্যন্ত মিল আছে। সঠিক পরিচয়টা তবু কিছুতেই মনে আনতে পারলেন না।

তানাকার সন্দেহ যে অমূলক নয়, তার পরের দিন সকালেই তার প্রমাণ পাওয়া গেল। খোদ মোহান্ত ঘুম ভাঙতে না ভাঙতেই তাঁর ঘরে এসে হাজির। তাঁদের মঠের নাকি সর্বনাশ হয়ে গেছে। পাঞ্চেন লামার চিঠি নিয়ে যে লোকটি এসেছিল, সে নাকি জাল। গত রাত্রে থিয়াং বোচি মঠের অত্যন্ত মূল্যবান ক-টি পুরনো তিব্বতি পুঁথি নিয়ে সে নাকি সরে পড়েছে।

খোদ মোহার কথা শুনে তানাকা বুঝলেন, তিনি ঠিক না চিনলেও জাল মোহান্ত তাঁকে ঠিক চিনেছিল এবং সেই জন্যই ধরা পড়বার ভয়ে সে নিজে থেকেই আগে পালিয়েছে।

কিন্তু পালিয়ে সে যাবে কোথায়? এখান থেকে নেপালের দিকে যাবার একটিমাত্র সংকীর্ণ পথ। সে পথে এখনকার যে-কোনও শেরপা জোয়ান একদিনে তাকে ধরে ফেলবে। আর—উত্তরে নুপসে ও লোৎসে এই দুই চূড়ার মাঝখানে বিরাট পঁচিশ হাজার ফুট পাহাড়ের দেওয়াল সেখানে যেন মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে। সেদিকে যাওয়া মানে আত্মহত্যা ছাড়া আর কিছু নয়।

খোদ মোহান্তকে সেই আশ্বাসই দিয়ে তানাকা বললেন যে, দক্ষিণে নামচে যাবার দিকে দুজন শেরপা জোয়ান তিনি যেন পাঠিয়ে দেন। উত্তর দিকে তিনি নিজেই যাচ্ছেন নতুন পথের সন্ধানে। সেদিকে যাওয়ার দুর্বুদ্ধি যদি তার হয়ে থাকে, জীবন্ত বা মত, যে-কোনও অবস্থায় তার কাছ থেকে সমস্ত পুঁথি তিনি উদ্ধার করবেনই।

খোদ মোহান্ত তানাকার কথায় কিছু আশ্বস্ত হলেন। ধর্মচক্র ঘুরিয়ে তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে সেই দিনই দুপুরের আগে চারজন শেরপা কুলি নিয়ে তানাকা বেরিয়ে পড়লেন।

থিয়াং বোচি থেকে উত্তরে যাবার একটিমাত্র পথ দেবদারু, সরল ও ভুর্জ গাছের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে প্রথমে ইমজাখোলা নদীর ধারে নেমে গিয়েছে। ইমজাখোলা যেখানে ভুর্জ আর জুনিপার গাছের ঝোপের ওপর দিয়ে পাগলাঝোরা হয়ে নীচে অতল গহ্বরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তার একটু আগে দড়ির পোল দিয়ে তানাকা এই দুরন্ত নদী পার হলেন। সেখান থেকে পাং বোচি পর্যন্ত ওঠবার পরই বড় গাছপালা শেষ হয়ে শুধু মোটা পাহাড়ি ঘাসের প্রান্তর শুরু। সে প্রান্তরেও মানুষের সীমানাফারিচে গাঁয়ে এসে শেষ। তারপর চিরতুষারের দেশ, লোৎসে ও নুপৎসের মতো বিরাট সব গিরিচূড়া মাউন্ট এভারেস্টকে ঘিরে সেখানে অলঙ্ঘ্য নিষেধের প্রাচীর তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে মানুষের পদচিহ্ন কালেভদ্রে যদি বা কখনও পড়ে, তাও বেশিদূর পর্যন্ত পৌঁছোয় না।

যে-ফারিচে গাঁয়ের কথা আগে বলেছি, তাকে গাঁ ঠিক বলা উচিত নয়। ও অঞ্চলের চমরী গাই যারা চরায়, সেই রাখালদের এটা একটা অস্থায়ী আস্তানা। শরৎকালে চমরী গাই চরিয়ে শীতের আগেই তারা এখান থেকে নেমে যায়। তারপর পাথরকাঠ দিয়ে তৈরি ক-টা পরিত্যক্ত কুঁড়ে শুধু পড়ে থাকে।

তানাকা ফারিচে গাঁয়ে যখন এসে পৌঁছোলেন তখন সেখানে জনমানব নেই। শীত এবার একটু তাড়াতাড়ি পড়েছে। রাখালরা তাই তাদের চমরী গোরু বলদ নিয়ে আগেই নেমে গেছে।

ফারিচে গাঁয়ে এসে মনে হল পুঁথিচোর জাল মোহান্তকে ধরা বোধ হয় খুব শক্ত হবে না। এখান থেকে উত্তরে ছাড়া আর কোনওদিকে তার যাওয়া অসম্ভব। অথচ উত্তরে যাওয়া মারাত্মক পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়। সেখান থেকে তিব্বতের দিকে যাওয়ার কোনও পাস বা গিরিপথ যদি থাকেও, তা অত্যন্ত দুর্গম হতে বাধ্য। তা ছাড়া এদেশের সবচেয়ে সাহসী ও ঝানু শেরপা জোয়ানদের পক্ষেও একলা সে-পথ খুঁজে বার করা সম্ভব নয়।

ফারিচে গ্রাম ছাড়িয়ে পরের দিন তানাকা লবুজ্যা খোলায় গিয়ে পড়লেন। এই উপত্যকা দিয়েই খুম্বু গ্লেসিয়ার বা হিমবাহ নেমে এসেছে। লবুজ্যা খোলা উপত্যকার একটু ওপরে উঠতেই পুমোরি, লোলা, লিঙট্রেন প্রভৃতি মাঝারি চূড়ার সঙ্গে মাউন্ট এভারেস্টের পশ্চিম ঢাল দেখা গেল। ওদিকে নুপৎসে-লোৎসে আর এদিকে এই সব চূড়া যেন পারিষদবর্গের মতো মহামহিম সম্রাট এভারেস্টকে ঘিরে আছে। পারিষদেরাও কেউকেটা নয়। বিশ থেকে আটাশ হাজার ফুট তাদের উচ্চতা।

সবুজ্যা খোলায় এসেও জাল মোহান্তের খোঁজ না পেয়ে তানাকা একটু অবাক হলেন। তাঁর সমস্ত অনুমানই কি তাহলে ভুল? সন্ধের দিকে সেদিন দারুণ তুষারঝড় উঠল। চারজন শেরপা কুলি একটি তাঁবুতে আর একটিতে তানাকা একলা। সমস্ত রাত প্রায় জেগেই কাটালেন। ঝড়ে তাঁবু উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার ভয় যথেষ্ট, কিন্তু তখন তাঁর মনে আর এক ভাবনা তার চেয়ে বেশি প্রবল।

মাঝরাত্রে তুষারঝড় থেমে গেল। সামান্য ঘণ্টা দুয়েক ঘুমিয়ে ভোর হতে না হতেই সাজগোজ করে বন্দুক আর দূরবিন হাতে তানাকা বেরিয়ে পড়লেন।

শেরপা কুলিরা তখনও বোধ হয় অঘোরে ঘুমোচ্ছ। তাদের তাঁবুর চারিধারে নরম তুষারের ওপর একটা তুষার-চিতার পায়ের দাগ তাঁর চোখে পড়ল। তুষার-চিতাটা অচেনা জিনিস দেখে একটু শোঁকাকি করে নীচের দিকে নেমে গেছে।

শেরপাদের তাঁবু থেকে আধ মাইলটাক এগিয়ে যাবার পর তিনি তুষারের ওপর আবার এক ধরনের পায়ের দাগ দেখে কিন্তু একেবারে অবাক হয়ে গেলেন। উপত্যকার একদিকের পাহাড়ের ধার থেকে বেরিয়ে সে পদচিহ্ন তুষার-নদী পেরিয়ে আর একদিকে চলে গেছে।

কোনও চতুষ্পদ প্রাণীর পায়ের দাগ তা কিন্তু নয়, মানুষের মতোই দু-পায়ে হাঁটা কোনও জীবের। কিন্তু পায়ের অতবড় প্রকাণ্ড মাপ কোনও মানুষের হওয়া তো অসম্ভব! তা ছাড়া এই আকাশ-ছোঁয়া চিরতুষারের দেশে, খালি পায়ে হাঁটবার মতো মানুষ কে থাকতে পারে!

হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ায় তানাকা উত্তেজনার আনন্দে অধীর হয়ে উঠলেন। সব কিছু ভুলে সেই পায়ের দাগ অনুসরণ করলেন এবার। তুষার-নদীর ওপর দিকে হাঁটা খুব সহজ ও নিরাপদ নয়। কোথাও কোমর পর্যন্ত নরম তুষারে ড়ুবে যায়, কোথাও বিরাট তুষারের খাদ হাঁ করে আছে, অতি সাবধানে তার ধার দিয়ে পার হতে হয়। পায়ের দাগ অনুসরণ করতে গিয়ে কিন্তু বুঝলেন, যাকে অনুসরণ করছেন, এ তুষার-রাজ্যের কায়দাকানুন তাঁর চেয়েও তার অনেক বেশি জানা। অনায়াসে দুর্গম বিপজ্জনক সমস্ত জায়গা কখনও লাফ দিয়ে, কখনও পাশ কাটিয়ে সে পার হয়ে গেছে।

কিছুদূর গিয়ে সে-পদচিহ্ন আর কিন্তু অনুসরণ করতে পারা গেল না। তুষার নদীতে এক জায়গায় প্রায় মাইলখানেক লম্বা ও প্রায় ত্রিশ ফুট চওড়া একটি গভীর খাদ তৈরি হয়েছে। সে-খাদের ওপারের পদচিহ্ন বেশ স্পষ্ট দেখতে পেলেও তাঁর পক্ষে শীতের পোশাক পরে তা লাফ দিয়ে পার হওয়া অসম্ভব। মাইলখানেক ঘুরে আবার তা অনুসরণ করারও তখন সময় নেই।

এমনিতেই আগ্রহে উত্তেজনায় অনেক দূর এসে পড়েছিলেন। তাঁবুতে যখন ফিরে গেলেন, তখন বেশ বেলা হয়ে গেছে। পায়ের নীচে ঠাণ্ডা বরফ আর আকাশে জ্বলন্ত সূর্যের এমন তেজ যে, মুখ যেন পুড়িয়ে দিচ্ছে। সেই অবস্থায় তাঁবুতে এসে তানাকা একেবারে অবাক হয়ে গেলেন। শেরপা কুলিরা সব গেল কোথায়? এতক্ষণে তো তাদের খাওয়া-দাওয়া সেরে তাঁবু তোলবার জন্যে প্রস্তুত হওয়ার কথা।

বাইরে থেকে শেরপাদের সর্দার দাওয়া আণুপকে ডাক দিলেন। কোনও সাড়া না পেয়ে এবার তাদের তাঁবুর ভেতরেই গিয়ে ঢুকলেন। চারজনের মধ্যে একটিমাত্র শেরপা কুলি সেখানে বসে তার জিনিসপত্র বাঁধছে। আর কোনও শেরপা কুলির চুলের টিকি দূরে থাক, জিনিসপত্র পর্যন্ত সেখানে নেই।

যে জিনিসপত্র বাঁধছিল, বাইরের আলো থেকে তাঁবুর ভেতরে এসে তানাকা প্রথমটা তাকে চিনতে পারলেন না। তবু অত্যন্ত কড়া গলায় অন্য শেরপারা কোথায় গেছে জিজ্ঞাসা করলেন।

মুখ না তুলেই লোকটা বললে, তারা পালিয়েছে।

পালিয়েছে! হঠাৎ এরকম পালাবার মানে?

জানি না!

তার উত্তরে নয়, তার কথা বলবার ধরনে হঠাৎ চমকে উঠে সজোরে দুহাতে তার গলাটা ধরে তানাকা তাকে তাঁবুর বাইরে নিয়ে এলেন।

আরে, ছাড়ো, ছাড়ো, বন্ধু! গায়ের জোরটা ইয়েতিদের জন্যই মজুদ রাখো। শেরপা কুলির মুখে বিশুদ্ধ জাপানি ভাষা শুনে তানাকা একেবারে হতভম্ব।

অবাক হয়ে, তার গলা ছেড়ে দিয়ে বললেন, একি! মি. দাস।

গলায় হাত বুলোত বুলোতে এবার হেসে বললাম, যেরকম হাতের জোর দেখিয়েছ, আর একটু হলেই দাস হয়ে যেতাম।

রসিকতার মতো মনের অবস্থা তানাকার তখন নয়। বললেন, তুমিই তাহলে জাল মোহান্ত সেজে পুঁথি চুরি করেছ–!

অম্লান বদনে বললাম, তা করেছি, তবে চালুনি হয়ে ছুঁচের ছিদ্র ধরা তোমার কি উচিত? সিনকিয়াং-এর সেই মঠের কথা মনে পড়ে? এ-বিদ্যে তোমার কাছেই তখন শিখি।

সিনকিয়াং-এর এক প্রাচীন গোস্ফা বা বৌদ্ধ মঠের পুরনো পুঁথি সরানোর ব্যাপারে ড. তানাকাকে আমায় সাহায্য করতে হয়েছিল।

সেকথা এখন গায়ে না মেখে তানাকা রাগের সঙ্গে বললেন, কিন্তু আমার কুলিদের তুমি তাড়িয়েছ কেন?

এখানকার ঠাণ্ডায় তোমার বুদ্ধিটা একটু জমে গেছে মনে হচ্ছে! হেসে বললাম, নইলে ইয়েতি নামটা যখনই উচ্চারণ করেছিলাম তখনই ব্যাপারটা বুঝতে!

এক মুহূর্তে শেরপাদের পালাবার কারণটা তানাকার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠল। উদ্বিগ্ন ভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, ওরাও কি ইয়েতির পায়ের চিহ্ন তাহলে দেখেছে?

হ্যাঁ, বন্ধু হ্যাঁ। ইংরেজি ভাষায় ভুল ব্যাখ্যা করে যার নাম দেওয়া হয়েছে, জঘন্য তুষার-মানব! তোমার ফিরতে দেরি দেখে খুঁজতে গিয়ে সেই ইয়েতির পদচিহ্নই তাদের চোখে পড়ে। তারপর তল্পিতল্পা গুটিয়ে তারা হাওয়া।

তানাকা হতাশ ভাবে এবার বললেন, কিন্তু এখন আমার সমস্ত প্ল্যানই যে মাটি হয়ে যাবে।

কিছু হবে না, বন্ধু। বরং তোমার উদ্দেশ্যসিদ্ধির সুবিধেই হয়ে গেল!

তানাকা সন্দিগ্ধ ভাবে আমার দিকে চেয়ে বললেন, আমার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তুমি কী জানো?

জানি বই কি বন্ধু, নইলে শেরপা কুলি সেজে নামচে থেকে তোমার সঙ্গ নিই?

তুমি শেরপা কুলি সেজে আমার সঙ্গে এসেছ?

এবারে তাকে সমস্ত ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলাম। যেখান থেকে শেরপা কুলি সে সংগ্রহ করে, সেই নামচে গাঁয়ে কী করে তার আগেই আমি উপস্থিত হয়ে শেরপা মোড়লকে আগে ঘুষ দিয়ে হাত করে রাখি। তারপর শেরপা কুলি সেজে তার সঙ্গে থিয়াং বোচিতে এসে কী করে আবার ভোল বদলে জাল চিঠি দেখিয়ে মোহান্তদের পুঁথিঘরে ঢোকবার সুবিধে করে নিই। তারপর সকলে যখন জাল মোহান্ত কোন দিকে গেছে ভেবে আকুল, তখন কেমন করে আবার শেরপা কুলি সেজে তানাকার সঙ্গেই সকলের চোখের ওপর দিয়ে চলে আসি। শেরপা কুলিদের সাহায্য না পেলে অবশ্য এসব সম্ভব হত না। এখান থেকে পালাবার সময় তাই তাদের মোটা বকশিশও দিয়েছি। ইয়েতিদের ভয়ে ততটা নয়, আমার কথাতেই তারা যে তল্পিতল্পা নিয়ে চলে গেছে, এ-কথাটাও তানাকাকে জানিয়ে দিলাম।

এ সব শুনে তানাকা একেবারে খাপ্পা। রেগে উঠে বললে, কী সর্বনাশ যে তুমি করেছ তা জানো না! আমার উদ্দেশ্য তুমি যদি সত্যি জানতে তাহলে শেরপা কুলিদের অন্তত তাড়াতে না।

তোমার উদ্দেশ্য জানি বলেই শেরপাদের তাড়িয়েছি।

তানাকা এ কথায় আরও রেগে উঠল তোমার হেঁয়ালি রসিকতা আমার এখন ভাল লাগছে না।

হেঁয়ালি নয় বন্ধু, সহজ কথা! শোনো, তুমি যে তিব্বতে যাবার নতুন রাস্তা খুঁজতে এদিকে আসোনি সে আমি আগেই বুঝেছিলাম, তোমার আসল উদ্দেশ্য হিমালয়ের যে-চূড়া কেউ জয় করতে পারেনি তারই আটঘাট জেনে যাওয়া। পরে যাতে দলবল নিয়ে এ-চূড়া জয়ের চেষ্টা করতে পারো। পাছে সেকথা বললে ব্রিটিশ সরকার তোমায় নেপালের ভেতর দিয়ে যাবার অনুমতি না দেয়, তাই তুমি ওই মিথ্যে অজুহাত দিয়েছ!

আমার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে তানাকা বললে, আশ্চর্য! আমার এ মনের কথা আমি জাপানেও কাউকে বলিনি! কিন্তু তুমি শেরপা কুলি সেজে আমার সঙ্গ নিয়েছ কেন?

হেসে বললাম, এখনও এ দেশে ব্রিটিশদেরই রাজত্ব ধলে। স্বাধীন দেশের লোক বলে তোমায় যেটুকু অনুমতি দিয়েছে, কালা ভারতবাসী হিসেবে আমায় তা-ও দিত তাই তোমার পাসপোর্ট দিয়েই আমি কাজ চালিয়ে নেবার ব্যবস্থা করেছি। তবে আমার উদ্দেশ্য শুধু এভারেস্টের সুলুকসন্ধান জানা নয়, বিজ্ঞানের জগতের যা সবচেয়ে বড় হেঁয়ালি, সেই ইয়েতিদের সঠিক পরিচয় নেওয়াও বটে। এখনও পর্যন্ত পায়ের দাগ ছাড়া কোনও সভ্য মানুষ তাদের চোখেও দেখেনি।

তানাকার রাগ এতক্ষণে ঠাণ্ডা হয়েছে, তবু সে হতাশভাবে বললে, কিন্তু শেরপা কুলিদের তাড়িয়ে আমাদের কী লাভটা হল?

লাভ হল এই যে, আমরা কী করছি না করছি তার সাক্ষী কেউ রইল না। শেরপারা সঙ্গে থাকলে পরে তোমার আসল উদ্দেশ্য জানাজানি হয়ে যেতই। আমার দিক দিয়ে শেরপাদের তাড়ানো দরকার ছিল এই জন্যে যে, দলবল নিয়ে ইয়েতিদের সন্ধান পাওয়া অসম্ভব। তারা যেমন চালাক তেমনই সতর্ক। দলবল দেখলেই তারা

সে-তল্লাট ছেড়ে পালায়। একা-একা তাদের খোঁজ পাওয়ার বরং আশা আছে।

তানাকাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ঠাণ্ডা করলাম, কিন্তু তারপর এক হপ্তা পর্যন্ত চারিদিকে খোঁজ করেও ইয়েতিদের কোনও চিহ্ন না পেয়ে নিজেই ভেতরে ভেতরে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলাম। আমাদের খাবার রসদ ক্রমশই ফুরিয়ে আসছে। আর কদিন এভাবে গেলে ফেরবার উপায়ও থাকবে না।

সেদিন রাত্রে খুম্বু হিমবাহ দিয়ে উঠে আমরা পাহাড়ের ধারের একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছি। গুহা না বলে পাহাড়ের একটা সংকীর্ণ ফাটলই তাকে বলা উচিত। এমনিতে সে ফাটলে রাত কাটালে শীতে জমে যাবার কথা। আমরা কিন্তু এসকিমোদের মতো বরফ দিয়েই শীত নিবারণের ব্যবস্থা করেছি। বরফের চাঁই দিয়ে এমনভাবে ফাটলের বেরুবার দিকটা ঢেকে দিয়েছি যে, হাওয়া বেরুবার সামান্য একটু ফুটো ছাড়া আর কিছু সেখানে নেই।

যাই করি না কেন, সেই রক্ত-জমানো শীতে আরামে ঘুমোনো অসম্ভব। সামান্য যেটুকু তন্দ্রা এসেছিল শেষরাত্রে হঠাৎ কীসের শব্দে তা ভেঙে গেল। তানাকাও তখন জেগে উঠেছে। দুজনে কান পেতে শুনলাম—যেসব বরফের চাঁই দিয়ে আমাদের ফাটল আমরা বন্ধ করেছিলাম, সেগুলো কে যেন সরাবার চেষ্টা করছে। ফাটলের ওপর দিকে হাওয়া যাবার যে ফুটো রেখেছিলাম তার ভেতর দিয়ে সামান্য ভোরের আলো গুহার ভেতর তখন এসে পড়েছে। ঘুমোবার থলে থেকে দুজনেই ধীরে ধীরে বেরিয়ে সেখানে গিয়ে দাঁড়ালাম। বাইরের শব্দটা সেই সময়েই থেমে গেল। মিনিটখানেক কোনও শব্দ আর না পেয়ে ফাটলের একটা পাথরের খাঁজে পা দিয়ে উঠে হাওয়ার ফুটোয় চোখ লাগিয়ে যা দেখলাম, অনেক বড় বৈজ্ঞানিক তা দেখবার জন্য নিজের ডান হাতটা কেটে দিতে পারত। আমাদের সামনে তুষার-প্রান্তরে তিন-তিনটি ইয়েতি হামাগুড়ি দিয়ে বরফের ওপর ঘুরে বেড়াচ্ছে ও মাঝে মাঝে যেন পাগলের মতো দুহাতে সেই বরফ খুঁড়ছে।

আর একটি ফুটোয় চোখ লাগিয়ে তানাকাও তখন ব্যাপারটা দেখেছে। দেখে উত্তেজনায় সে আর চুপ করে থাকতে পারল না।

ইয়েতি! ইয়েতি! দুনিয়ায় কেউ যা কখনও দেখেনি, সেই ইয়েতি!

রেগে আগুন হয়ে আমি তাকে চুপ করতে বললাম। কিন্তু ক্ষতি যা হবার, তখন হয়ে গেছে। সামান্য যে শব্দ ফুটোর ভেতর দিয়ে বাইরে পৌঁছেছে, ইয়েতিরা তাই শুনেই সবাই একসঙ্গে উধাও। সব চেয়ে ছোট ইয়েতিকে মাঝখানে রেখে তারা যেভাবে ছুটে পালিয়ে গেল, তাতে বাপ, মা ও বাচ্চা নিয়ে তারা একটি পরিবার বলেই মনে হল।

নিজের বোকামির জন্য লজ্জিত হওয়া দূরে থাক, তানাকা তখনও উত্তেজিত ভাবে বলছে, ভাল করে লক্ষ করেছ, দাস? সমস্ত বৈজ্ঞানিক জগৎকে আমরা স্তম্ভিত করে দেব! কে বলে ইয়েতি একরকম বাঁদর বা হনুমান। ওরা দস্তুরমত নতুন এক শ্রেণীর বনমানুষ—গোরিলা বা শিম্পাঞ্জির চেয়ে অনেক উঁচু স্তরের। ওদের পরনে চিতার চামড়া আর ঈগলের পালক লক্ষ করেছ?

তাকে থামিয়ে বিরক্ত হয়ে বললাম, সবই করেছি। কিন্তু তুমি আহাম্মকের মতো চেঁচালে ওরা এত তাড়াতাড়ি পালাত না—সে খেয়াল আছে?

এবার তানাকা সত্যিই অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে পড়ল। ছি ছি, উত্তেজনায় আমার আর কিছু হুঁশই ছিল না!

কিন্তু লজ্জা তার বেশিক্ষণের নয়। পরমুহূর্তেই সে আবার জিজ্ঞাসা করলে উত্তেজিতভাবে, আচ্ছা, ওদের বরফ খোঁড়ার ধরনটা ভারি অদ্ভুত, না?

হ্যাঁ, ওই বরফ খোঁড়া দেখেই বুঝেছি, প্রাচীন তিব্বতি পুঁথির কথা মিথ্যে নয়।

প্রাচীন তিব্বতি পুঁথির কথা! তানাকা প্রথমটা হতভম্ব হয়ে গেল। তারপর সবিস্ময়ে বলল, তোমার সেই চুরি-করা তিব্বতি পুঁথি—তাতে এসব কথা কিছু আছে নাকি?

আছে বইকী! বলে সঙ্গের ছোট তুষার-গাঁইতি দিয়ে ফাটলের মুখের বরফের চাঁই কেটে সরিয়ে বাইরে এলাম। তারপর ঝুলির ভেতর থেকে আসল পুঁথিটি বার করে তার হাতে দিয়ে বললাম, এই জায়গাটা পড়ো দেখি।

বাইরে তখন বেশ আলো হয়ে গেছে। তানাকা দুবার জায়গাটা পড়ে বিমূঢ় হয়ে আমার দিকে তাকাল!

হেসে বললাম, পড়েও হেঁয়ালি মনে হচ্ছে বুঝি? ওতে লিখেছে-বরফের মধ্যে থেকেও যা আগুনের চেয়ে গরম, সেই রুন-এর শেকড় যারা চেনে, দেবতা না হয়েও দেবতাদের দেশে ইয়েতিদের মতো তারা থাকতে পায়। রুন-এর শেকড় যে পায়, চো মো হিয়ান মি অর্থাৎ বিশ্বজননীর পূত সলিল সেই আনতে পারে।

তানাকা তখনও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে বললাম, ইয়েতিরা এই রুন-এর শেকড়ই খুঁজছিল বুঝলে? ইয়েতিদের দেখা দূরে থাক, তারা এই চির-তুষারের দেশে কী খেয়ে থাকে, তা-ও বৈজ্ঞানিক পর্যটকেরা এখনও বুঝতে পারেননি। আমরাই বোধহয় প্রথম সে জিনিস দেখব। চলো।

ইয়েতিরা যেখানে ভোরের বেলা বরফ খুঁড়ছিল সেখানেই গিয়ে কিছুক্ষণ সন্ধান করবার পর সত্যি কয়েকটি আশ্চর্য জিনিস পেলাম। নেহাত আগে থাকতে জেনে খোঁজ করছিলাম তাই, নইলে সে জিনিস যে বরফেরই লম্বা টুকরো নয়, কে বলবে ওপর থেকে দেখে কোনও তফাতই বোঝা যায় না। জিনিসটা সাধারণ কোনও মূল নয়, ছাতা-জাতীয় কোনও উদ্ভিদ বলেই মনে হল, বরফের মধ্যেও যা বেঁচে থাকে।

কৌতূহলী হয়ে সেই রুন-এর মূল একটু মুখে দিলাম। স্বাদগন্ধহীন কাগজ চিবোচ্ছি বলেই মনে হল। প্রধানত এই জিনিস খেয়ে ইয়েতিরা ওই বিরাট দানবের মতো শরীর নিয়ে কী করে বেঁচে থাকে বুঝতে পারলাম না।

বুঝলাম সেই দিনই সন্ধের দিকে। তানাকাও আমার সঙ্গে রুন-এর মূল কিছু খেয়েছিল। সন্ধের সময় আমাদের ফাটলে ঢুকে সে বললে, হঠাৎ ঠাণ্ডা কীরকম কমে গিয়েছে দেখেছ, দাস?

আমারও তাই মনে হয়ে একটু অবাক লাগছিল। এ সময়ে হিমালয়ের এ-জায়গায় ঠাণ্ডা তত দিন দিন বাড়বারই কথা, বিশেষ করে সন্ধের সময়ে। সঙ্গে করে-আনা তাপমান-যন্ত্রটা তাই দেখলাম।

কী ব্যাপার! ঠাণ্ডা কমেছে কোথায়! তাপমান যন্ত্রের পারা তো আরও দু-ডিগ্রি নেমে গিয়েছে!

পরের মুহূর্তেই রহস্যটা পরিষ্কার হয়ে গেল। প্রাচীন তিব্বতি পুঁথির কথা তো দেখছি অক্ষরে অক্ষরে সত্যি!

তানাকাকে সে কথা জানিয়ে বললাম, শুধু শেষ কথাগুলো বাজে কবিত্ব বলে মনে হচ্ছে।

আমাদের অনুমান যে কতখানি ভুল, দুদিন বাদেই তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাব কে জানত!

একদল ইয়েতি ভয় পেয়ে পালালেও, রুন-এর শেকড়ের খোঁজে অন্য ইয়েতিরা এখানে পরে আসতে পারে—এই আশায় আমরা দুদিন ধরে সেই পাহাড়ের ফাটলেই তখন আছি। ফাটলের মুখে তেমনই বরফের চাঁই আটকানো। তার দুটি ফুটোয় চোখ রেখে সারারাত আমরা পালা করে পাহারা দিই।

তিন দিনের দিন ভোরে সত্যিই আমাদের আশা পূর্ণ হল। ভোর হবার আগেই যে ইয়েতিকে সেখানে দেখা গেল, ইয়েতিদের মধ্যেও তাকে দানব বলা চলে। লম্বায়। সাড়ে পাঁচ ফুটের সামান্য কিছু ওপরে হলেও তার লোমশ চওড়া দেহ যেন হিমালয়ের একটা প্রকাণ্ড পাথর। তার পরনেও চিতাবাঘের ছাল, কিন্তু ঈগলের পালক কোথাও নেই।

ফাটলের মুখে বরফের চাঁই এমন ভাবে এবার আমরা সাজিয়েছিলাম যে, এক ধাক্কায় তা সরিয়ে ফেলা যায়।

তানাকাকে নিঃশব্দে নজর রাখতে ইঙ্গিত করে আমি আমার ঝুলি থেকে একটা লম্বা দড়ি বার করলাম।

সাবধান করা সত্ত্বেও তানাকা ফিসফিস করে বললে, ও-দড়ি কেন! পিস্তল কোথায়।

পিস্তল দিয়ে জ্যান্ত প্রাণী ধরা যায় না।

তুমি জ্যান্ত ইয়েতি ধরতে চাও! প্রথমটা অবাক হলেও তানাকা তারপর ঠাট্টা করে বললে, ইয়েতি তো আর তোমার ও-দড়িতে আপনি বাঁধা পড়বে না!

না, তা পড়বে না, তবে আর্জেনটাইনের পাম্পাস-এ বৃথাই যদি গাউচোদের সঙ্গে মিশে থাকি, তাহলে এই দড়িতেই তাকে ধরতে ও বাঁধতে পারব। বলে বরফের ফুটোয় চোখ লাগিয়ে দেখলাম ইয়েতি-দানব বেশ নিঃসন্দিগ্ধ ভাবেই রুন-এর শেকড় তখনও খুঁজছে।

তানাকাকে পেছনে তৈরি থাকতে বলে এক ধাক্কায় বরফের দরজা ঠেলে দিয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালাম।

চক্ষের নিমেষে পিছু ফিরে তাকিয়ে ইয়েতিটা তৎক্ষণাৎ ঝড়ের বেগে দৌড় মেরেছে।

কিন্তু ঝড়ের চেয়ে বেশি বেগ আমার লাসোর। বিদ্যুৎগতিতে লাসোর দড়ির ফাঁস গিয়ে ইয়েতির কোমরে আটকে গেল।

এক সেকেন্ডের মধ্যে হকচকিয়ে সে থেমে গেল, প্রাণপণে সেই বাঁধন খোলার চেষ্টাও করল একবার। তারপর বিফল হয়ে সে যা করে বসল, তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।

হঠাৎ দেখি ঝড়ের বেগে আমি সামনে ছুটে চলেছি। বাঁধন খুলতে না পেরে ইয়েতি আমায় সুদ্ধই সামনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে জাহাজের পেছনের ল্যাং-বোটের মতো৷ বিপদ দেখে তানাকাও পেছন থেকে এসে আমার সঙ্গে দড়িটা টেনে ধরবার চেষ্টা করল। কিন্তু ইয়েতির তাতে ভ্রুক্ষেপও নেই। সে সমানে আমাদের দুজনকে টেনে উড়িয়ে নিয়ে তখন ছুটছে।

ইয়েতিও থামবে না, আমাদের জেদ আমরাও দড়ি ছাড়ব না। পাছে হাত ফসকে যায় বলে দড়িটা আমরা তখন নিজেদের কোমরে জড়িয়ে নিয়েছি।

কিন্তু ইয়েতি ক্লান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত ধরা দেবে বলে আমরা যা ভেবেছিলাম, তার কোনও লক্ষণই দেখা গেল না। যদি বা সে একবার একটু থামে, আমি দড়ির আর এক ফাঁস বাগিয়ে লাগাবার আগেই আবার দৌড় দেয়। তুষার-প্রান্তরে বিপদের অন্ত নেই। কোথাও বিরাট ফাটল, কোথাও নরম তুষার, যার মধ্যে চোরাবালির মতো ড়ুবে যাওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু যেন মুখস্থ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে এমনই অনায়াসে সে সমস্ত বিপদ এড়িয়ে যেতে লাগল।

ঠোকাঠুকি আঁচড় ইত্যাদি একটু লাগলেও অত বেগে যাওয়া সত্ত্বেও তার বাহাদুরিতেই আমাদেরও কোনও বিপদে পড়তে হল না।

কিন্তু ইয়েতি চলেছে কোথায়! পুমোরি চূড়া বাঁয়ে রেখে লো-লো চূড়ার দিকে উঠতে উঠতে হঠাৎ লো-লোও বাঁয়ে ফেলে সে উঠতে লাগল। এরপর যেখানে এসে সে প্রথম থামল, সেখানে ডানদিকে নুপৎসে ও লোৎসের চূড়া, আর সামনে একটু বাঁদিক ঘেঁষে স্বয়ং মাউন্ট এভারেস্ট। পাহাড়ের দেওয়াল-ঘেরা মাঝখানের জায়গাটা এত উঁচুতে না হলে তুষার-প্রান্তরের বদলে হ্রদ হতে পারত। এখানে একটু থেমেই সে সোজা সেই তুষার-প্রান্তরেই নেমে গেল আমাদের নিয়ে।

তারপর তুষার-প্রান্তর ছেড়ে সে আবার যেই উঁচুতে উঠতে শুরু করল, তখনই আমাদের দুর্দশা চরম হয়ে উঠল। দড়ি দিয়ে নিজেদের ভাল করে বেঁধে নিয়েছিলাম তাই, নইলে কখন শিথিল হাত খুলে গিয়ে একেবারে অতলে আছড়ে পড়তাম। এই অবস্থাতেও তানাকা খানিক বাদে চিৎকার করে উঠল, আমার সমস্ত শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে, দাস! নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।

পশমি আলখাল্লার ঝোলা পকেটেই অল্টিমিটার অর্থাৎ উচ্চতা মাপবার যন্ত্রটা ছিল। বার করে দেখি ছাব্বিশ হাজার সাতশো ত্রিশ ফিট! বুঝলাম—এত উঁচু জায়গার পাতলা হাওয়ায় অসিজেনের স্বল্পতার দরুনই এমন হচ্ছে। এসব জায়গায় প্রথমটা শরীর বেশ হালকা লাগে, তারপর শরীর অবশ হয়ে মৃত্যু ঘনিয়ে আসে।

কিন্তু এখন উপায়? হঠাৎ তিব্বতি পুঁথির শ্লোকটার শেষ অংশ মনে পড়ে গেল। দুজনেরই পকেটে খানিকটা করে রুন-এর শেকড় ছিল।

নিজেরও তখন মাথাটা ঘুরতে শুরু করেছে। তাড়াতাড়ি রুন-এর শেকড়টা বার করে এক কামড় দিয়ে তানাকাকে তৎক্ষণাৎ তাই করতে বললাম।

হাঁফাতে আরম্ভ করলেও ইয়েতি তখনও সমানে উঠছে। যেখান দিয়ে যেভাবে সে উঠছে, তা মানুষের কল্পনার অতীত। আমরা দুজন তখন তার কোমরের দড়ি থেকে একরকম ঝুলছি বললেই হয়।

ছাব্বিশ থেকে অল্টিমিটারে সাতাশ হাজার দেখা দিল। তারপর সাড়ে সাতাশ। আটাশের কাছে চোখ প্রায় ঝাপসা হয়ে গেছে, কানে যেন ভেতর থেকে ঢাক পিটছে। জ্ঞান হারাতে আর বেশি দেরি নেই! রুন-এর শেকড় তাহলে পুরোনো পুঁথির গালগল্প?

হঠাৎ অল্টিমিটারে সাড়ে আটাশ স্পষ্ট হয়ে উঠল। না, এই তত মাথা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে! নিঃশ্বাসের কোনও কষ্ট আর নেই। আশ্চর্য! রুন-এর শেকড়ে তাহলে ডাক্তারি শাস্ত্রের অজানা এমন কিছু আছে, যা ফুসফুসের অসিজেন নেবার ক্ষমতা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এ ওষুধ তো চিকিৎসার রাজ্যে যুগান্তর আনবে।

কিন্তু এ কী! এ যে ঊনত্রিশ হাজার ফিট! একেবারে পৃথিবীর ওপরের চূড়োর ওপর দিয়ে ইয়েতি-দানব আমাদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যেতে যেতে সেই চূড়োর ওপরও দুফুট আন্দাজ একটা ঢিবি দেখে মাথার টুপিটা খুলে তাতে লাগিয়ে দিলাম।

তারপর শুরু হল একেবারে উলটো দিকে নামা।

ঘনাদা একটু থামতে শিবু জিজ্ঞাসা করলে, ইয়েতিকে শেষ পর্যন্ত ধরলেন তাহলে!

নাঃ, ধরতে আর পারলাম কই! ঘনাদা একটু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। পাহাড়ে পাহাড়ে ঘষে ঘষে দড়িটা অত জখম হয়ে গেল বুঝতে পারিনি! তিব্বতের দিকে রং ব্যাক গ্লেসিয়ারে নামবার পরই সেটা ছিড়ে গিয়ে ইয়েতি পালিয়ে গেল।

আচ্ছা, সেই রুন-এর শেকড় তো আপনার পকেটেই ছিল? জিজ্ঞাসা করলে গৌর, তা একটু এনেছেন নিশ্চয়!

ঘনাদা এবার যেন একটু বিরক্তই হয়ে উঠলেন, কী করে আনব শুনি! রং ব্যাক গ্লেসিয়ার থেকে তিব্বতের লোকালয়ে যাবার পথে তাই খেয়েই তো কাটিয়েছি।

আচ্ছা, এভারেস্টের মাথায় যা পরিয়ে দিলেন, সেটা কী টুপি ছিল? জিজ্ঞাসা করলে শিশির।

টপ হ্যাট বোধহয়? ঘনাদার বদলে গৌরই উত্তর দিলে এবং ঘনাদা আমাদের দিকে ক্রুকুটি হেনে শিশিরের একটা সিগারেট তুলে নিয়ে উঠে গেলেন।