টাইম ট্রাভেল – পরিচ্ছেদ ১৭

১৭.

 আর শোনার অপেক্ষা করল না মুসা। চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরে দাঁড়াল ওরা। খোলা দরজা দিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল। ওর ভয়টা সংক্রমিত হলো রবিন আর কিশোরের মাঝেও।

দুড়দাড় করে সামনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে বেড়ার দিকে দৌড় দিল তিনজনে।

পেছন পেছন চিৎকার করতে করতে ছুটল ডন, আরে দাঁড়াও দাঁড়াও। মুসাভাই, তোমার ফ্রিসবিটা নেবে না?

ফিরেও তাকাল না ওরা। ছুটতেই থাকল। পাতাবাহারের বেড়ার একটা ফোকরে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে মুচড়ে মুচড়ে বেরিয়ে চলে এল অন্যপাশে। থামল না। দৌড়াতেই থাকল।

পড়শীদের বাড়ি পেরোল। মোড় নিয়ে ছুটল আরেক দিকে। পেছনে জুতোর শব্দ। ডাকতে ডাকতে আসছে সেই দুজন লোক। সামনে আরেকটা বাড়ি। পাতাবাহারের পুরু বেড়ার ওপাশে ঘন ঝোপ। সোজা তার মধ্যে গিয়ে ডাইভ দিয়ে পড়ল মুসা। রবিন আর কিশোরও ঢুকল ওর পেছন পেছন।

কিন্তু এখানেও নিরাপদ নয় বুঝতে পেরে লাফিয়ে উঠে আবার দিল দৌড়। বাড়ির আঙিনা পার হয়ে বেরিয়ে এল একটা সরু গলিতে। ছুটল সেটা ধরে। মেইন রোডের দিকে।

মেইন রোডে ওঠার আগে আবার মোড় নিল। গোটা ছয়েক ব্লক পেরোনোর পর দম নেয়ার জন্যে থামল। ফোঁস ফোঁস করে হাঁপাচ্ছে। হাপরের মত ওঠানামা করছে বুক। হাটুতে ভর দিয়ে বাঁকা হয়ে হাপাতে লাগল কিশোর। বসে পড়ল রবিন। মুসা কোমরে হাত দিয়ে হাঁপাচ্ছে।

ব্যাটারা আসছে নাকি?  হাঁপানোর ফাঁকে কোনমতে বলল রবিন।

ফিরে তাকাল মুসা। না। দেখতে তো পাচ্ছি না। সামনের দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল পরিচিত একটা বাড়ি। আরে, রয়দের বাড়ির কাছে চলে এসেছি।

কোন রকম দ্বিধা না করে বাড়িটার দিকে দৌড় দিল ওরা। একছুটে ঢুকে পড়ল পেছনের আঙিনায়। পেছনের একটা জানালায় এসে থাবা দিতে দিতে চিৎকার করে ডাকল মুসা, এই, বাড়ি আছো? রয়?

কয়েক সেকেন্ড পর দরজা খুলে দিল রয়। তিন গোয়েন্দাকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেল। তোমরা?

হ্যাঁ, রয়, হাঁপানো বন্ধ হচ্ছে না মুসার। না জিরালে আর হবে কি করে। ভেতরে আসতে পারি? তাড়া খেয়ে পালিয়ে এসেছি আমরা।

আঁ! হ্যাঁ, এসো না, এসো। সরে ঢোকার জায়গা করে দিল রয়। রান্নাঘরে নিয়ে এলো কিশোরদেরকে। সেখানে শারিয়া আর ইমাকে বসে থাকতে দেখা গেল। টেবিলে বইখাতা ছড়ানো। তিন গোয়েন্দাকে দেখে ওরাও অবাক।

দরজাটা লাগিয়ে দাও, রয়কে অনুরোধ করল কিশোর।

ঘটনাটা কি? রয় জিজ্ঞেস করল।

শ্রাগ করল কিশোর। শার্টের বোতাম খুলে দিল। ঘেমে নেয়ে গেছে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে।

আমরা পালিয়ে এসেছি, কিশোর বলল। আর কোন উপায় না দেখে শেষে তোমাদের বাড়িটায় ঢুকে পড়েছি।

টেবিলের কাছে এগিয়ে গেল সে। বইখাতাগুলোর দিকে তাকাল। কি করছ? স্কুলের পড়া?

একটা মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে রইল শারিয়া। তারপর জবাব দিল, ইতিহাস পড়ছি। ভীষণ কঠিন। মনে হচ্ছে সারা সেমিস্টার, ধরে পড়েও শেষ করতে পারব না।  

মুখ থেকে বের করে গোলাপী রঙের একটা বাবলগামের বেলুন বানাল ইমা। এক মুহূর্ত ঠোঁটে আটকে রেখে আবার ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলল। তোমরা কি স্কুলে ফেরত যাচ্ছ?

যেতে পারি, কিশোর বলল। জানি না এখনও।

আবার এক মুহূর্তের নীরবতা। কিশোরদেরকে তার বাড়িতে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা

এগোতে যাবে, হঠাৎ পাশের একটা ঝোপ থেকে বেরিয়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়াল মাজুল আর গাজুল।