জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন ও চার্লস ডিকেনসন
জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন ছিলেন যেমন শক্তসমর্থ, তেমনি তার কথাবার্তাও ছিল চোখা চোখা। রেখে-ঢেকে কথা বলতে তিনি জানতেন না, প্রয়োজনে উচিত কথা শুনিয়ে দিতে তিনি ইতস্তত করতেন না কখনোই, এবং তার ফলে যেকোনো বিপজ্জনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে তাঁর আপত্তি ছিল না কিছুমাত্র। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে চার্লস ডিকেনসন নামে একটি কুখ্যাত জুয়াড়ির সঙ্গে তার ঝগড়া বেধে গেল। আগেই বলেছি জেনারেল ছিলেন স্পষ্টবক্তা। তার শানিত বাক্যবাণে বিপর্যস্ত জুয়াড়ি খেপে গিয়ে তাকে পিস্তলের দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান জানাল।
জুয়াড়ি ডিকেনসন ছিল পাকা পিস্তলবাজ। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ পনেরো বার পা ফেলে যতটা দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে, সেই দূরত্ব থেকে পিস্তলের গুলি চালিয়ে একটা দোদুল্যমান সুতোকে ছিঁড়ে ফেলতে পারত ডিকেনসন। জুয়াড়ি চার্লস ডিকেনসনের লক্ষ্য ভেদ করার সাংঘাতিক ক্ষমতা সম্বন্ধে সমগ্র দক্ষিণ আমেরিকার মানুষ ছিল অতিশয় অবহিত। জেনারেল অ্যান্ড্রও তার প্রতিদ্বন্দ্বীর নির্ভুল নিশানার কথা জানতেন, কিন্তু তবুও এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে বিলম্ব হয়নি এক মুহূর্তও। দ্বন্দ্বযুদ্ধের জন্য তার নির্বাচিত স্থানটির নাম টেনেসি।
পিস্তলধারী দুই যোদ্ধার মধ্যবর্তী দূরত্ব ছিল মাত্র আট পা। পরস্পরকে লক্ষ করে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পিস্তল উদ্যত করলেন। প্রথমেই গুলি ছুড়ল ডিকেনসন। মধ্যস্থরা আশ্চর্য হয়ে দেখলেন অটল হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন জেনারেল। প্রতিদ্বন্দ্বীর গুলি নিশ্চয়ই ব্যর্থ হয়েছে? পরক্ষণেই অগ্নি উদগিরণ করে গর্জে উঠল জেনারেল জ্যাকসনের পিস্তল এবং ডিকেনসনের মৃতদেহ লুটিয়ে পড়ল মাটির ওপর। বিবর্ণ রক্তহীন মুখে জেনারেল তার জন্য অপেক্ষমাণ গাড়ির দিকে অগ্রসর হলেন স্খলিত চরণে। জেনারেলের অবস্থা দেখে জনৈক মধ্যস্থ সন্দেহ করলেন ডিকেনসনের লক্ষ্য বোধ হয় ব্যর্থ হয়নি। সন্দেহ সত্য। জেনারেলের পাঁজরে বিদ্ধ হয়েছিল প্রতিদ্বন্দ্বীর গুলি। দাঁতে দাঁত চেপে সেই আঘাত সহ্য করে জেনারেল যখন তার নিশানা স্থির করছিলেন, তখনও শত্রুর নিক্ষিপ্ত বুলেট তার দেহের ভিতরেই ছিল! আহত জেনারেল পরে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি হয়েছিলেন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।