জীবন-স্মৃতি

জীবন-স্মৃতি

—তোমার ছিল স্বপ্ন দেখার অসুখ, তুমি
আপন মনে কথা বলতে

–তোমার ছিল বিষম দুঃখ,
তুমি কখনো
নদীর পারে একলা যাওনি

—তোমার ছিল ছুরির মতন
ধারালো রাগ
হঠাৎ যেদিন হাতে তোমার কাঁটা ফুটলো
গোপাল গাছটা লণ্ডভণ্ড করেছিলে,
মনে পড়ে না?

—শুধু কি তাই, প্রজাপতির
ডানা ছিঁড়েছি
কত খেলনা কেড়ে নিয়েছি
অন্তত তিন ডজন কাচের
বাসন ভাঙা সব মিলিয়ে

–নিষ্ঠুরতায় এখনো তুমি কম যাও না
‘বিদায়’ শব্দ কঠিন ভাবে
বলতে পারো
রুমাল দিয়ে মুখ মুছলেই
মিলিয়ে যায় অনেক স্মৃতি

–তোমার ছিল দয়ার শরীর
সারা জীবন
ভালো না বেসে দয়া দেখালে
লাজুকতার আড়ালে এক অহঙ্কারী!

–ভালোবাসা তো পারস্পরিক
আমায় কেউ ভালোবাসেনি
ঘোর দুপুরে অভুক্ত এক
ক্লান্ত কিশোর
কেউ কি তাকে কাছে ডেকেছে?

—তুমি অনেক রাত্ৰিবেলায়
সিঁড়ির মধ্যে বসে থাকতে
নিচে কিংবা ওপর দিকে
কোথায় যাবে, ঠিক জানো না।
এটাই তোমার মূল সমস্যা
পূৰ্ণিমায় বা অমাবস্যায়
পথ খুঁজতে ভুল হয়ে যায়।
সেই নদীটা খুঁজতে খুঁজতে
মনের ভুল গভীর বনে ঢুকে পড়লে।

-গভীর এবং অন্ধকারও, সেই অরণ্য
শিবের বিশাল জটার মতন
নদীও তাতে
হারিয়ে যায়
নির্জনতার উদাসী রব জ্বালা ধরায়
বুকের মধ্যে
উচ্চাকাঙক্ষা নতজানু।

–একলা রাস্তা পাওনি বলেই
গিয়েছিল না
দলে-মিছিলে?

–আইসক্রিমের কাঠির মতন
আবার আমি
পরিত্যক্ত!

—এটাও একটা বিলাসিত নিজেও জানো
তুমিও বুঝি বিলাসী নও
যেমন, তোমার স্বপ্ন দেখা?

—সর্বনাশ ও স্মৃতির দুঃখ
স্বপ্ন এখন এসব দেখায়!
নারীর কাছে গিয়েছিলাম
আঁচড়ে কামড়ে রক্ত পাগল
ভালোবাসার দুঃখ ছাড়াও
সর্বনাশের গাঢ় মহিমা
এর থেকে কেউ দূরে যায় কি?

–এক এক সময় নেশার মতন
দূরের দিকে চোখ ঠেকে যায়
দূরত্বকে শান্তি বলে মানতে হঠাৎ ইচ্ছে করে

–যেমন দূর ছেলেবেলার
দুঃখগুলোও মধুর, যেমন
বাইরে এসে মনে হয় না, চমৎকার
এই বেঁচে থাকা?