জনগণ
জনগণ হলো মানুষের পাল। পশুর পালের সাথে মানুষের পালের পার্থক্য হলো— পশু যখন পালবদ্ধ হয়, তখন তাদের চোখ খোলা থাকে; আর মানুষ যখন পালবদ্ধ হয়, তখন তাদের চোখ বন্ধ থাকে।
জনগণের প্রধান কাজ — রাজার কাঁঠাল ভাঙার পাত্র হিশেবে ব্যবহৃত হওয়া। জনগণ না থাকলে রাজা তার কাঁঠাল নিয়ে বনে বনে ঘুরতেন, এবং একসময় ক্লান্ত হয়ে নিজেই জনগণ হয়ে উঠতেন। কিন্তু পালবদ্ধ মানুষের দয়ায় রাজা সবসময় রাজাই থাকেন।
একবার আমাদের ইশকুলের মাঠে এক রাজা এসে ভাষণ শুরু করলেন— ‘প্রিয় জনগণ!’ অমনি সবার চোখ অন্ধ হয়ে উঠলো। তারা একে অন্যের মাথায় রাজার দেয়া কাঁঠাল ভাঙতে শুরু করলো। কিন্তু কাঁঠালের কোনো কোষ তাদের ভাগ্যে জুটলো না।
এ দৃশ্য একটি কাক দূর থেকে দেখছিলো। হঠাৎ উড়ে এসে কাকটি ঠোকর দিয়ে একজনের চোখ খুলে দিলো। পুরো জনসভায় ওই একজনই কাঁঠালের কিছু কোষ খেতে পেরেছিলো। কোষ খাওয়ার সময় তার মনে হচ্ছিলো— এ কাঁঠাল তার নিজের গাছেরই কাঁঠাল। রাজা বেঁচে আছেন প্রজার গাছের কাঁঠাল খেয়ে।
পরদিন লোকটির জানাজায়, কাকটি এসে খুব কান্নাকাটি করতে লাগলো। সে ঠোকর না দিলে লোকটি বেঁচে যেতো, এমন একটি আক্ষেপ বাতাসে ছড়িয়ে পড়লো। এমন সময় কাফনের ভেতর থেকে লোকটি বলে উঠলো— হে কাক! তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি ঠোকর না দিলে আমি বুঝতেই পারতাম না যে রাজা এতো বছর ধরে আমার গাছের কাঁঠাল খাচ্ছেন। চোখ খোলার অপরাধে আমার মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, এতে আমি ব্যথিত নই। আমি ব্যথিত এ কারণে যে— যিনি আমার ফাঁসির রায় লিখলেন, তিনি নিজেও একজন অন্ধ মানুষ।
লোকটির কথা শুনে কাকটি খপ করে আমার ভেতরে ঢুকে পড়লো। সেই থেকে প্রতিদিন আমি আপনাদের ঠোকর দিয়ে চলছি।