উপন্যাস
বড় গল্প
সংকলন
রচনা

ছয় । গৌরবের তুঙ্গশিখরে

ছয় । গৌরবের তুঙ্গশিখরে

ইংরেজ রণতরিকে হারিয়ে দেওয়ার পর কালোদেড়ের খাতিরের সীমা রইল না। তার নাম শুনলেই দেহপিঞ্জর ছেড়ে ভয়ে উড়ে যেতে চায় লোকের প্রাণপাখি! বিশেষত মালবাহী জাহাজি কাপ্তেনদের দুর্ভাবনার অন্ত নেই। যার দেখা পেলে যুদ্ধে নিরস্ত হয়ে পিটটান দেয় ইংল্যান্ডরাজের সশস্ত্র ও সসজ্জ রণতরি, তার সঙ্গে মুখোমুখি হলে নিরস্ত্র ও নির্বল সওদাগরি জাহাজ কতটুকু বাধা দিতে পারে?

না, বাধা দিতে পারেনি সত্যসত্যই। আর এই সত্য বোঝা গেল কিছুদিন যেতে-না-যেতেই। কারণ উপরি-উপরি কয়েকখানা জাহাজ বন্দি করে কালোদেড়ে হয়ে দাঁড়াল রীতিমতো এক নৌবহরের অধিকারী। যেসব জাহাজ উল্লেখযোগ্য মনে হল না, সেগুলোকে সে বিনাবাক্যব্যয়ে ডুবিয়ে দিলে মহাসাগরের অতল পাতালে! সফল হল কালোদেড়ের বহুদিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা—তার তাঁবে এখন এসেছে সত্যসত্যই নৌবহর! কোনও সওদাগরি জাহাজ আজ অস্ত্রবলে বলীয়ান হলেও তার সঙ্গে আর পাল্লা দিতে পারবে না!

বন্দি বা ধৃত জাহাজের অসংখ্য লোক প্রাণ দিলে বোম্বেটেদের বন্দুক বা অন্যান্য অস্ত্রের মুখে। তুলনায় তাদের ভাগ্য ভালোই বলতে হবে। কিন্তু যারা মরল না এবং যারা জখম হয়েও বেঁচে রইল তাদের পরিণাম হল মর্মবিদারক। কালোদেড়ের নিদারুণ নির্দেশে সাগরে ঝাঁপ খেতে বাধ্য হয়ে তাদের প্রত্যেকেই লাভ করলে সজ্ঞানে সলিলসমাধি! ভালোয় ভালোয় আত্মসমর্পণ করেও বাঁচোয়া নেই, কেঁদে-কেটে হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়াও ব্যর্থ—কালোদেড়ের পাষাণ হৃদয়ে কেউ দেখেনি দয়া-মায়ার ছিটেফোঁটাও! তার মুখে শোনা যায় একই ধরনের উক্তি, ‘ওদের জোর করে ছুড়ে ফেলে দে সমুদ্রে! হোক ওরা মাছেদের খোরাক—করুক ওরা হাঙরদের উদরপূরণ!’

সে সময় অসীম সাগরের আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে কত হাজার মানুষের তীব্র ক্রন্দনধ্বনি শুনে চমকিত হয়ে উঠেছিল প্রতিধ্বনির পর প্রতিধ্বনি, কোথাও তার কোনও হিসাব লেখা নেই!

তার দুষ্কর্মের সাক্ষ্য হতে পারে এমন কোনও মানুষ বা জাহাজের অস্তিত্ব রক্ষা করা কালোদেড়ের কাছে ছিল তাস্তুরমতো নির্বুদ্ধির কাজ।