ছবি-মণিকে

ছবি-মণিকে
( মায়া ও স্নেহ চৌধুরি )

দিল্লি শহরচারিণী—
দুই বিদুষী ফার্স্ট-ইয়ারিনী—
এই বুড়ো দাদাকে কেন টানাটানি?
আমি বচন রচনার কিবা জানি।
এখানে আছেন অনেক আমির ওমরা
পলিটিশিয়ান হোমরা চোমরা
নাচিয়ে গাইয়ে বলিয়ে কইয়ে লিখিয়ে—
তাঁদের ধর না গিয়ে॥
তবে যদি নিতান্ত নতুন কিছু চাও
দিনকতক কলেজী বিদ্যা ভুলে যাও,
পড় টাইমটেবল আর রামায়ণ,
লঙ্কায় কর গমন॥
যেখানে আছেন দশমুণ্ড বিশহস্ত
লঙ্কেশ্বর জবরদস্ত।
তাঁর বিশ হাতের দশটা ডান আর দশটা বাঁ,
কিন্তু বাঁ হাতে তিনি লিখতে পারেন না।
অতএব নিও দশখানা অটোগ্রাফ বই,
আর দশটা ফাউন্টেন পেন চলনসই,
কারণ, রাবণের সব মোটা মোটা বাঁশের পেন,
তাও ভেঙে ফেলেছেন॥

রাবণকে এত্তেলা পাঠিও লঙ্কায় গিয়ে,
কালনেমি মামাকে একটা টাকা দিয়ে।
তিনি হচ্ছেন রাবণের সেক্রেটারি,
আহম্মক আর ঘুষখোর ভারী।
রাবণ ডেকে বলবেন—‘কে তোমরা কন্যে,
এখানে এসেছ কি জন্যে?
তোমরা কি সীতার সখী না রামচন্দ্রের দূতী?
তোমাদের ঐ শাড়ি রেশমী না সুতী?
পায়ে মল নেই কেন, কান কেন ঢাকা?
ভুরু দুটো আসল না কালি দিয়ে আঁকা?’
তোমরা বলবে—‘হুজুর আমরা দিল্লি-প্রবাসিনী
তরুণী বাঙালিনী অটোগ্রাফ -প্রত্যাশিনী॥’
রাবণ বলবেন—‘আরে দিল্লিওয়ালী,
তোমরা তো ভারি বদখেয়ালী!
অটোগ্রাফ লেখা কি সহজ কথা?
আমার দশটা মাথায় এখন বড্ড ব্যথা।
দুটো টিপটিপ, তিনটে কনকন, পাঁচটা কটকট—
ওঃ, রাজকার্য কি ভজকট!’

তোমরা বলবে—‘মশায় রেখে দিন ওসব চালাকি,
মনে করলে আপনি পারেন না কী?
এক মিনিটে করতে পারেন ইন্দ্রলোক জয়,
খাতায় লেখা তো কিছুই নয়।
যদি নিতান্তই লেখাপড়া না থাকে জানা
তবে দিন শ্রীহনুমানের ঠিকানা।
শুনেছি তিনি যেমন লড়িয়ে তেমনি লিখিয়ে
আপনাকেও অনেক কিছু দিতে পারেন শিখিয়ে।’

রাবণ বলবেন—‘সব মিছে কথা,
তার ভারী তো ক্ষমতা।
টিকটিকির মতন ছিনে ছিনে হাত
তাতে হাজারটা মাদুলি আর গাঁটে গাঁটে বাত।
আহা কিবা লড়িয়ে, কিবা লিখিয়ে! রোগা নাদাপেট,
ব্যাটা ইল্লিটারেট!
দাও তোমাদের কলম আর খাতা দশখানি,
এক্ষুনি লিখে দিচ্ছি আমার বাণী।’

এই ব’লে রাবণ লিখবেন এক সঙ্গে দশ হাতে
দশটা খাতার দশ পাতে—
সেকেলে আস্ত আর আধুনিক ভাঙা কবিতা,
আর অত্যাধুনিক গদ্য কবিতা, যাকে বলে গবিতা।
তোমরা মোটেই বুঝবে না সেই প্রচণ্ড বাণী,
কিন্তু না-বোঝার যে আনন্দ তা পাবে অনেকখানি॥

রাবণ বলবেন—‘আর নয়, আমার এখন বিস্তর কাজ।’
‘ধন্য হলুম মহারাজ।’
ব’লেই তোমরা চ’লে আসবে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম ক’রে।
খবরদার, যেন ঢুকো না পাশের ঘরে।
সেখানে কুম্ভকর্ণ ঘুমুচ্ছেন, নাক ঘড়ঘড়,
নিশ্বাস প্রশ্বাসে ঘরে বইছে তুমুল ঝড়।
যদি কাছে গিয়ে পড় তবে নাকের ভেতরে
শুষে নেবেন চোঁৎ ক’রে॥

—।২।৪০