চিরহরিৎ বৃক্ষ
শ্মশানে পিতৃপুরুষের কঙ্কাল, তার ফাঁকে ফাঁকে শিরশির
করে বয়ে যাচ্ছে বাতাস ।
আমার সাধ ছিল সেই বাতাসের ভাষা শুনি ।
একদিন তাই অন্ধকার নদীর কিনারায় নিভে আসা
চিতাকুণ্ডের পাশে শুয়েছিলাম আমি, জীবন্ত ।
কোথা থেকে পাখার শনশন শব্দ করে একটা বিশাল
বাজ পাখি উড়ে এসে বসলে আমার শরীরে ।
যে মেয়েটিকে কাল আমি স্বামীগৃহে যেতে দিয়ে এসেছি তার
দৃষ্টির মতো তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে সারারাত সেই ভয়ঙ্কর পাখি
ছিন্নভিন্ন করে খেলো আমার শরীর, আমার চোখে মুখে বাহুতে
ক্ষত, আমার রক্তে মিশলো রাত্রির শিশির।
আমার প্ৰাণটাকে বার করে এনে কি ভেবে অবহেলায়
আবার মৃতদেহের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল সে ;
নিজের মৃতদেহে ভর করে আবার আমি জেগে উঠলাম ।
তাই প্রথম সন্তানের জন্ম দিতে পিতৃগৃহে আসা রমণীটি
আমাকে আর চিনবে না। আমি ঘুরবো ফিরবো গোপন
করে আমার শরীর থেকে শবের গন্ধ । আর মাঝে মাঝে
স্বপ্ন দেখবো সেই শ্মশানের পাশে এক আশ্চর্য
চিরহরিৎ বৃক্ষ–তার পাতা ঝরে না, তার মৃত্যু হয় না,
বাতাসের ভ্ৰান্তিহীন শব্দে ডাক দেয়, এসো, এসো, পাখির মতো
বাসা বাঁধো আমার আশ্রয়ে । সে আমার জন্মের
আগেও বেঁচে ছিল-আমার মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকবে।