৬
অপরাহ্ণে আমরা মহীধরবাবুর বাড়িতে যাইবার জন্য প্রস্তুত হইলাম। সত্যবতী বলিল, ‘ঠাকুরপো, টর্চ নিয়ে যেও। ফিরতে রাত করবে নিশ্চয়।’
আমি টর্চ পকেটে লইয়া বলিলাম, ‘তুমি এবেলাও তাহলে বেরুচ্ছ না?’
সত্যবতী বলিল, ‘না। ওপরতলায় একটা মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে, কথা কইবার লোক নেই। তার কাছে দু’দণ্ড বসে দুটো কথা কইলেও তার মনটা ভাল থাকবে।’
বলিলাম, ‘মালতী দেবীর প্রতি তোমার সহানুভূতি যে ক্রমে বেড়েই যাচ্ছে।’
‘কেন বাড়বে না? নিশ্চয় বাড়বে।’
‘আর রজনীর প্রতি সহানুভূতি বোধ করি সেই অনুপাতে কমে যাচ্ছে?’
‘মোটেই না, একটুও কমেনি। রজনীর দোষ কি? যত নষ্টের গোড়া এই পুরুষ জাতটা।’
তর্জন করিয়া বলিলাম, ‘দেখ, জাত তুলে কথা বললে ভাল হবে না বলছি।’
সত্যবতী নাক সিটকাইয়া রান্নাঘরের দিকে প্রস্থান করিল।
মহীধরবাবুর বাড়িতে যখন পৌঁছিলাম তখন সূর্যাস্ত হয় নাই বটে, কিন্তু বাগানের মধ্যে ঘোর-ঘোর হইয়া আসিয়াছে। খোলা ফটকে লোক নাই। রাত্রেও বোধ হয় ফটক খোলা থাকে, কিংবা গরু ছাগলের গতিরোধ করিবার জন্য আগড় লাগানো থাকে। মানুষের যাতায়াতে বাধা নাই।
বাড়ির সদর দরজা খোলা; কিন্তু বাড়িতে কেহ আছে বলিয়া মনে হইল না। দুই-তিন বার হ্রেষা-ধ্বনিবৎ গলা খাঁকারি দিবার পর একটি বৃদ্ধগোছের চাকর বাহির হইয়া আসিল। বলিল, ‘কর্তাবাবু ওপরে শুয়ে আছেন। দিদিমণি বাগানে বেড়াচ্ছেন। আপনারা বসুন, আমি ডেকে আনছি।’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘দরকার নেই। আমরাই দেখছি।’ বাগানে নামিয়া ব্যোমকেশ বাগানের একটা কোণ লক্ষ্য করিয়া চলিল। গাছপালা ঝোপঝাড়ে বেশিদুর পর্যন্ত দেখা যায় না, কিন্তু ঘাসে ঢাকা সঙ্কীর্ণ পথগুলি মাকড়সার জালের মত চারিদিকে বিস্তৃত হইয়া গিয়াছে। বুঝিলাম ব্যোমকেশ ফাল্গুনী পালের আস্তানার সন্ধানে চলিয়াছে।
বাগানের কোণে আসিয়া পৌঁছিলাম। একটা মাটির ঘর, মাথায় টালির ছাউনি; সম্ভবত মালীদের যন্ত্রপাতি রাখিবার স্থান। পাশেই একটা প্রকাণ্ড ইঁদারা।
ঘরের দ্বার খোলা রহিয়াছে, কিন্তু ভিতরে অন্ধকার। আমি টর্চের আলো ভিতরে ফেলিলাম। অন্ধকারে খড়ের বিছানার উপর কেহ শুইয়াছিল, আলো পড়িতেই উঠিয়া বাহিরে আসিল। দেখিলাম ফাল্গুনী পাল।
আজ ফাল্গুনীর মন ভাল নয়, কণ্ঠস্বরে ঔদাসীন্য-ভরা অভিমান। আমাদের দেখিয়া বলিল, ‘আপনারাও কি পুলিসের লোক, আমার ঘর খানাতল্লাস করতে এসেছেন? আসুন—দেখুন, প্রাণ ভরে খানাতল্লাস করুন। কিছু পাবেন না। আমি গরীব বটে, কিন্তু চোর নই।’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘আমরা খানাতল্লাস করতে আসিনি। আপনাকে শুধু একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। কাল রাত্রে আপনি ঊষানাথবাবুর বাড়িতে কেন গিয়েছিলেন?’
ফাল্গুনী তিক্তস্বরে বলিল, ‘তাঁর একটা ছবি এঁকেছিলাম, তাই দেখাতে গিয়েছিলাম। দারোয়ান দেখা করতে দিলে না, তাড়িয়ে দিলে। বেশ কথা, ভাল কথা। কিন্তু সেজন্য পুলিস লেলিয়ে দেবার কি দরকার?’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘ভারি অন্যায়। আমি পুলিসকে বলে দেব, তারা আপনাকে আর বিরক্ত করবে না।’
‘ধন্যবাদ’ বলিয়া ফাল্গুনী আবার কোটরে প্রবেশ করিল। আমরা ফিরিয়া আসিলাম।
দিনের আলো প্রায় নিঃশেষ হইয়া আসিয়াছে। আমরা বাগানে ইতস্তত ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিলাম, কিন্তু রজনীকে দেখিতে পাইলাম না।
বাগানের অন্য প্রান্তে বড় বড় পাথরের চ্যাঙড় দিয়া একটা উচ্চ ক্রীড়াশৈল রচিত হইয়াছিল। তাহাকে ঘিরিয়া সবুজ শ্যাওলার বন্ধনী। ক্রীড়াশৈলটি আকারে চারকোণা, দেখিতে অনেকটা পিরামিডের মত। আমরা তাহার পাশ দিয়া যাইতে যাইতে থমকিয়া দাঁড়াইয়া পড়িলাম। পিরামিডের অপর পার হইতে আবেগোদ্ধত কণ্ঠস্বর কানে আসিল, ‘ছবি ছবি ছবি। কি হবে ছবি! চাই না ছবি!’
‘আস্তে! কেউ শুনতে পাবে।’
কণ্ঠস্বর দুইটি পরিচিত; প্রথমটি ডাক্তার ঘটকের, দ্বিতীয়টি রজনীর। ডাক্তার ঘটককে আমরা শান্ত সংযতবাক্ মানুষ বলিয়াই জানি; তাহার কণ্ঠ হইতে যে এমন আর্ত উগ্রতা বাহির হইতে পারে তাহা কল্পনা করাও দুষ্কর। রজনীর কণ্ঠস্বরেও একটা শীৎকার আছে, কিন্তু তাহা অস্বাভাবিক নয়।
ডাক্তার ঘটক আবার যখন কথা কহিল তখন তাহার স্বর অপেক্ষাকৃত হ্রস্ব হইয়াছে বটে, কিন্তু আবেগের উন্মাদনা কিছুমাত্র কমে নাই। সে বলিল, ‘আমি তোমাকে চাই—তোমাকে। দুধের বদলে জল খেয়ে মানুষ বাঁচতে পারে না।’
রজনী বলিল, ‘আর আমি! আমি কি চাই না? কিন্তু উপায় যে নেই।’
ডাক্তার বলিল, ‘উপায় আছে, তোমাকে বলছি।’
রজনী বলিল, ‘কিন্তু বাবা—’
ডাক্তার বলিল, ‘তুমি নাবালিকা নও। তোমার বাবা তোমাকে আটকাতে পারেন না।’
রজনী বলিল, ‘তা জানি। কিন্তু। —শোন লক্ষ্মীটি শোন, বাবার শরীর খারাপ যাচ্ছে, তিনি সেরে উঠুন—তারপর—’
ডাক্তার বলিল, ‘না। আজই আমি জানতে চাই তুমি রাজী আছ কি না।’
একটু নীরবতা। তারপর রজনী বলিল, ‘আচ্ছা, আজই বলব, কিন্তু এখন নয়। আমাকে একটু সময় দাও। আজ রাত্রি সাড়ে দশটার সময় তুমি এস, আমি এখানে থাকবো; তখন কথা হবে। এখন হয়তো বাড়িতে কেউ এসেছে, আমাকে না দেখলে—’
ব্যোমকেশ নিঃশব্দে আমার হাত ধরিয়া টানিয়া লইল।
দু’জনে পা টিপিয়া ফিরিয়া আসিতেছি, হঠাৎ চোখে পড়িল পিরামিডের অন্য পাশ হইতে আর একটা লোক আমাদেরই মত সন্তর্পণে দূরে চলিয়া যাইতেছে। একবার মনে হইল বুঝি ডাক্তার ঘটক; কিন্তু ভাল করিয়া চিনিবার আগেই লোকটি অন্ধকারে অদৃশ্য হইয়া গেল।
পিরামিড হইতে অনেকখানি ঘুরিয়া দূরে আসিয়া ব্যোমকেশ বলিল, ‘চল, বাড়ি ফেরা যাক। আজ আর দেখা করে কাজ নেই।’
রাস্তায় বাহির হইলাম। অন্ধকার হইয়া গিয়াছে, আকাশে চন্দ্র নাই, পথের পাশে কেরোসিনের আলোগুলি দূরে দূরে মিটমিট করিয়া জ্বলিতেছে। আমি মাঝে মাঝে টর্চ জ্বালিয়া পথ নির্ণয় করিতে করিতে চলিলাম।
ব্যোমকেশ চিন্তায় মগ্ন হইয়া আছে। বিদ্রোহোন্মুখ যুবক-যুবতীর নিয়তি কোন্ কুটিল পথে চলিয়াছে—বোধ করি তাহাই নির্ধারণের চেষ্টা করিতেছে। আমি তাহার ধ্যানভঙ্গ করিলাম না।
বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছিয়া ব্যোমকেশ হঠাৎ প্রশ্ন করিল, ‘অন্য লোকটিকে চিনতে পারলে?’
বলিলাম, ‘না। কে তিনি?’
ব্যোমকেশ বলিল, ‘তিনি হচ্ছেন আমাদের গৃহস্বামী অধ্যাপক আদিনাথ সোম।’
‘তাই নাকি! ব্যোমকেশ, ব্যাপারটা আমার পক্ষে কিছু জটিল হয়ে উঠেছে। ছবি চরি, পরী চুরি, নেশাখোর চিত্রকর, কানা হাকিম, অবৈধ প্রণয়, অধ্যাপকের আড়িপাতা—কিছু বুঝতে পারছি না।’
‘না পারবারই কথা। রবীন্দ্রনাথের গান মনে আছে—‘জড়িয়ে গেছে সরু মোটা দুটো তারে, জীবন-বীণা ঠিক সুরে তাই বাজে না রে?’—আমিও সরু-মোটা তারের জট ছাড়াতে পারছি না।’
‘আচ্ছা, এই যে ডাক্তার আর রজনীর ব্যাপার, এতে আমাদের কিছু করা উচিত নয় কি?’
ব্যোমকেশ দৃঢ়স্বরে বলিল, ‘কিছু নয়। আমরা ক্রিকেট খেলার দর্শক, হাততালি দিতে পারি, দুয়ো দিতে পারি, কিন্তু খেলার মাঠে নেমে খেলায় বাগড়া দেওয়া আমাদের পক্ষে ঘোর বেয়াদপি।’
বাড়ি ফিরিয়া দেখিলাম সত্যবতী একাকিনী পশমের গেঞ্জি বুনিতেছে। বলিলাম, ‘তোমার রুগীর খবর কি?’
সত্যবতী উত্তর দিল না, সেলাইয়ের উপর ঝুঁকিয়া দ্রুত কাঁটা চালাইতে লাগিল। জিজ্ঞাসা করিলাম, ‘কি, মুখে কথা নেই যে! মালতী দেবীকে দেখতে গিয়েছিলে তো?’
‘গিয়েছিলাম’—সত্যবতী মুখ তুলিল না, কিন্তু তাহার মুখ ধীরে ধীরে লাল হইয়া উঠিতে লাগিল।
ব্যোমকেশ অদূরে দাঁড়াইয়া লক্ষ্য করিতেছিল, হঠাৎ হো হো করিয়া হাসিয়া নিজের শয়নকক্ষে প্রবেশ করিল। সত্যবতী সূচীবিদ্ধবৎ চমকিয়া উঠিল, শয়নকক্ষের দ্বারের দিকে একটা ক্রুদ্ধ কটাক্ষপাত করিল, তারপর আবার সম্মুখে ঝুঁকিয়া দ্রুত কাঁটা চালাইতে লাগিল।
আমি তাহার পাশে বসিয়া বলিলাম, ‘কি ব্যাপার খুলে বল দেখি।’
‘কিছু না। চা খাবে তো? জল চড়াতে বলে এসেছি। দেখি—’ বলিয়া সে উঠিবার উপক্রম করিল।
আমি বাধা দিয়া বলিলাম, ‘আহা, কি হয়েছে আগে বল না! চা পরে হবে।’
সত্যবতী তখন আবেগভরে বলিয়া উঠিল, ‘কি আবার হবে, ঐ লক্ষ্মীছাড়া মেয়েমানুষটার কাছে আমার যাওয়াই ভুল হয়েছিল। এমন পচা নোংরা মন—আমাকে বলে কিনা—কিন্তু সে আমি বলতে পারব না। যার অমন মন তার মুখে নুড়ো জ্বেলে দিতে হয়।’
শয়নকক্ষ হইতে আর এক ধমক হাসির আওয়াজ আসিল। সত্যবতী চলিয়া গেল। ব্যাপার বুঝিতে বাকি রহিল না। রাগে আমার মুখও উত্তপ্ত হইয়া উঠিল। সন্দিগ্ধমনা স্ত্রীলোকের সন্দেহ পাত্রপাত্রী বিচার করে না জানি, কিন্তু সত্যবতীকে যে স্ত্রীলোক এরূপ পঙ্কিল দোষারোপ করিতে পারে, তাকে গুলি করিয়া মারা উচিত। ব্যোমকেশ হাসুক, আমার গা রি রি করিয়া জ্বলিতে লাগিল।
রাত্রে শয়ন করিতে গিয়া ঘুম আসিল না; সারাদিনের নানা ঘটনায় মাথা গরম হইয়া উঠিয়াছে। ঘড়িতে দেখিলাম দশটা; ডিসেম্বর মাসে রাত্রি দশটা এখানে গভীর রাত্রি। ব্যোমকেশ ও সত্যবতী অনেকক্ষণ শুইয়া পড়িয়াছে।
বিছানায় শুইয়া ঘুম না আসিলে আমার সিগারেটের পিপাসা জাগিয়া ওঠে, সুতরাং শয্যাত্যাগ করিয়া উঠিতে হইল। গায়ে আলোয়ান দিয়া সিগারেট ধরাইলাম। কিন্তু বদ্ধ ঘরে ধূমপান করিলে ঘরের বাতাস ধোঁয়ায় দূষিত হইয়া উঠিবে; আমি একটা জানলা ঈষৎ খুলিয়া তাহার সামনে দাঁড়াইয়া সিগারেট টানিতে লাগিলাম।
জানালাটা সদরের দিকে। সামনে ফটক, তাহার পরপারে রাস্তা, রাস্তার ধারে মিউনিসিপ্যালিটির আলোকস্তম্ভ; আলোকস্তম্ভ না বলিয়া ধূমস্তম্ভ বলিলেই ভাল হয়। প্রদীপের তৈল শেষ হইয়া আসিতেছে।
মিনিট দুই তিন জানালার কাছে দাঁড়াইয়া আছি, বাহিরে একটা অস্পষ্ট খস্ খস্ শব্দে চকিত হইয়া উঠিলাম। কে যেন বারান্দা হইতে নামিতেছে। জানালার ফাঁক দিয়া দেখিলাম একটি ছায়ামূর্তি ফটক পার হইয়া বাহিরে চলিয়া গেল। আলোকস্তম্ভের পাশ দিয়া যাইবার সময় তাহাকে চিনিতে পারিলাম—কালো কোট-প্যান্ট-পরা অধ্যাপক সোম।
বিদ্যুৎ চমকের মত বুঝিতে পারিলাম এত রাত্রে তিনি কোথায় যাইতেছেন। আজ রাত্রি সাড়ে দশটার সময় মহীধরবাবুর বাগানে ডাক্তার ঘটক এবং রজনীর মিলিত হইবার কথা; সঙ্কেত-স্থলে সোম অনাহূত উপস্থিত থাকিবেন। কিন্তু কেন? কি তাঁহার অভিপ্রায়?
বিস্ময়াবিষ্ট হইয়া মনে মনে এই কথা ভাবিতেছি, সহসা অধিক বিস্ময়ের কারণ ঘটিল। আবার খস্ খস্ শব্দ শুনিতে পাইলাম। এবার বাহির হইয়া আসিল মালতী দেবী। তাঁহাকে চিনিতে কষ্ট হইল না। একটা চাপা কাশির শব্দ; তারপর সোম যে পথে গিয়াছিলেন তিনিও সেই পথে অদৃশ্য হইয়া গেলেন।
পরিস্থিতি স্পষ্টই বোঝা গেল। স্বামী অভিসারে যাইতেছেন, আর স্ত্রী অসুস্থ শরীর লইয়া এই শীতজৰ্জর রাত্রে তাঁহার পশ্চাদ্ধাবন করিয়াছেন। বোধ হয় স্বামীকে হাতে হাতে ধরিতে চান। উঃ, কি দুর্বহ ইহাদের জীবন! প্রেমহীন স্বামী এবং বিশ্বাসহীন পত্নীর দাম্পত্য জীবন কি ভয়ঙ্কর! এর চেয়ে ডাইভোর্স ভাল।
বর্তমান ক্ষেত্রে আমার কিছু করা উচিত কিনা ভাবিতে লাগিলাম। ব্যোমকেশকে জাগাইয়া সংবাদটা দিব? না, কাজ নাই, সে ঘুমাইতেছে ঘুমাক। বরং আমার ঘুম যেরূপ চটিয়া গিয়াছে, দু’ঘণ্টার মধ্যে আসিবে বলিয়া মনে হয় না। সুতরাং আমি জানালার কাছে বসিয়া পাহারা দিব। দেখা যাক কোথাকার জল কোথায় গড়ায়।
আবার সিগারেট ধরাইলাম।
পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট। দীপস্তম্ভের আলো ধোঁয়ায় দম বন্ধ হইয়া মরিয়া গেল।
একটি মূর্তি ফটক দিয়া প্রবেশ করিল। নক্ষত্রের আলোয় মালতী দেবীর ভারী মোটা চেহারা চিনিতে পারিলাম। তিনি পদশব্দ গোপনের চেষ্টা করিলেন না। তাঁহার কণ্ঠ হইতে একটা অবরুদ্ধ আওয়াজ বাহির হইল, তাহা চাপা কাশি কিংবা চাপা কান্না বুঝিতে পারিলাম না। তিনি উপরে চলিয়া গেলেন।
এত শীঘ্র শ্রীমতী ফিরিয়া আসিলেন, কিন্তু শ্রীমানের দেখা নাই। অনুমান করিলাম শ্ৰীমতী বেশি দূর স্বামীকে অনুসরণ করিতে পারেন নাই, অন্ধকারে হারাইয়া ফেলিয়াছেন। তারপর এদিক ওদিক নিষ্ফল অন্বেষণ করিয়া গৃহে ফিরিয়াছেন।
সোম ফিরিলেন সাড়ে এগারটার সময়। বাদুড়ের মত নিঃশব্দ সঞ্চারে বাড়ির মধ্যে মিলাইয়া গেলেন।