চাঁপারঙের মুর্শিদাবাদী শাড়ির কাঁটা – ৬

ছয়

ঘরের বাইরে আসতেই দেখা হয়ে গেল দস্তুর-সাহেবের সঙ্গে। উনি বললেন, আপনাদের খবর দিতেই আসছিলাম। ইন্সপেক্টার দাশ এসেছেন, ও-পাশের উইং-এ অপেক্ষা করছেন। আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে চান।

বাসু বলেন, নিখিল একটু বসুক। তার আগে আপনার সঙ্গে দু-একটা জরুরি কথা সেরে নিই

—চলুন, তাহলে আবার ঘরে গিয়ে বসা যাক।

ওঁরা ফিরে এলেন সেই বৈঠকখানায়। দস্তুর বলেন, এবার বলুন?

—না, আমি বলব না, বলবেন তো আপনি!

—আমি! মানে? আমি কী বলব?

—সেই বিশেষ কথাটা, যা আপনি এখনো আর কাউকে বলেননি, বলতে পারছেন না – barring possibly Miss Pamela!

একটু রাগত স্বরে দস্তুর বলেন, হোয়াট ডু য়ু মিন? আমি আপনার কাছে কিছু লুকোচ্ছি? অফ অল পার্সেন্স : আমি! যে আমি আপনাকে ডেকে এনে এ কাজের দায়িত্ব দিচ্ছি?

বাসু জবাব দিলেন না। স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন দস্তুরের চোখের দিকে। দস্তুর বলেন, কী হল? কিছু একটা বলুন?

বাসু প্রতিটি শব্দ স্পষ্ট উচ্চারণ করে বললেন, অলরাইট, আমিই বলছি : আয়াম এক্সট্রিমলি সরি মিস্টার দস্তুর! আপনি যদি আপনার এই স্ট্যান্ড না বদলান—সেই গোপন কথাটা বলতে রাজি না থাকেন—তাহলে আই’ল ওয়াশ মাই হ্যান্ডস্ অফ্ দিস্ কেস। রাইট নাউ!

উঠে দাঁড়ালেন বাসু। দস্তুরও। তারপর তিনি দু-হাত কোমরের দুদিকে রেখে মাথা নিচু করে কয়েকটা মুহূর্ত চিন্তা করলেন। এবং তারপর পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা গোলাপী রঙের খাম বার করে বাসু-সাহেবের হাতে দিলেন। বললেন, আই হোপ দিস্ উইল স্যাটিসফাই য়ু।

বাসু ওই খাম থেকে একই রঙের কাগজে লেখা একটি চিঠি বার করলেন। একবার চোখ বুলিয়ে কৌশিকের দিকে বাড়িয়ে ধরেন। সুন্দর ঝক্‌ঝকে হস্তাক্ষরে ইংরেজিতে লেখা ছোট্ট চিঠি। বাঙলা করলে দাঁড়ায় :

কলি…আমার কলি!

ভাবতে খুব আনন্দ হচ্ছে যে, আমাদের সেই পুরনো দিনগুলো আবার ফিরে আসবে। আবার তোমাকে কাছে পাব, পাশে পাব। তোমার হাতে রাখব আমার হাত! তোমাকে কাল সকালেই চাঁদিপুর যেতে হবে শুনে ভীষণ খারাপ লাগছে। সহস্রাব্দের প্রথম সূর্যোদয় তাহলে আমরা দুজনে একসঙ্গে দেখব না? না! তা হবে না। হতে পারে না। তার আগেই তোমার-আমার দেখা হবে! কী ভাবে? বলব না। তবে জেনে রাখ, আমার অভিধানে ‘অসম্ভব’ বলে কোন শব্দ নেই।

·

তোমারই ‘অলি’

চিঠিটা পড়ে, ভাঁজ করে খামের মধ্যে ভরে বাসু-সাহেবের হাতে ধরিয়ে দিল কৌশিক। সুজাতাও ঝুঁকে পড়ে পাঠ করে নিয়েছে ইতিমধ্যে। খামটা ফেরত পেয়ে দস্তুর সেটা পকেটে রাখলেন। বললেন, এটার কথা এখনি পুলিসকে বা আর কাউকে জানাবেন না প্লিজ।

বাসু বললেন, কোথায় পেলেন এটা? আর কবে?

পেয়েছি কাল দুপুরে। কলির ড্রয়ার ঘাঁটতে বসে।

—ড্রয়ার কি চাবিবন্ধ ছিল না?

—ছিল। কিন্তু আমার কাছে এ বাড়ির সমস্ত চাবির ডুপ্লিকেট চাবি থাকে। ওর দেরাজের ডুপ্লিকেট চাবিটা কোনদিন ব্যবহার করার প্রয়াজন হয়নি। কালই প্রথম।

—আপনার সেক্রেটারি জানেন?

—হ্যাঁ। বর্তমানে আমরা পাঁচজন জানি।

—হাতের লেখাটা চেনা? এবার কি কিছু আন্দাজ করতে পারছেন?

—হস্তাক্ষর আমার অপরিচিত; কিন্তু এবার কিছুটা বোধহয় ‘গ্যেস্’ করতে পারছি।

–কুমার বিক্রমজিৎ?

—পামেলার তাই ধারণা। আমারও!

—কিন্তু কীভাবে চিঠিটা এ-বাড়িতে এল?

—আমার জানা নেই। কুরিয়ার সার্ভিসে সম্ভবত

—আপনার মেয়ে যে আবার ওই স্কাউন্ডেলটার খপ্পরে পড়েছে তা টের পাননি?

দস্তুর বললেন, দেখুন বাসু-সাহেব, আমার মেয়ে প্রাপ্তবয়স্কা। সে তার জীবন কী ভাবে কাটাবে তার ভিতর আমার এখন আর নাক গলানো ঠিক নয়! ইনফ্যাক্ট, হতভাগীটা খুন না হয়ে গেলে আমি কোনদিনই তার টেবিলের ড্রয়ার খুলে দেখতাম না। কী বলব আপনাকে—কলির মৃত্যুসংবাদের চেয়ে এই গোলাপী খামখানা আমাকে কিছু কম আঘাত, দেয়নি। কিন্তু আগেই বলেছি, আঘাত আমি সইতে প্রস্তুত, ‘ইনসাল্ট’ নয়। খুন যেই করে থাক আমার অনুরোধ আপনি খুঁজে বার করুন, আমাকে লুকিয়ে কে আমার বিবাহিতা কন্যার সঙ্গে অবৈধ প্রেম করছিল।

বাসু বললেন, চলুন এবার ওঘরে যাওয়া যাক।

.

ওপাশের উইংস-এ ঢুকতেই সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো নিখিল দাশ। পশ্চিমবঙ্গ আরক্ষা- বিভাগের হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের একজন হেভিওয়েট অফিসার। দীর্ঘদিনের পরিচয় এঁদের সঙ্গে এবং বাসুর স্নেহধন্য। বলে, আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছিল এ কেসে আপনার গাইডেন্স পাব। তাই আপনি নয়টার সময় আসছেন শুনে একঘণ্টার মার্জিন দিয়ে চলে এলাম।

বাসু বলেন, তা ওই একঘণ্টার মার্জিনটা কেন?

—আপনার প্রাথমিক তদন্তের জন্য একঘণ্টা সময়ই কি যথেষ্ট নয়?

ওঁরা চারজন চারটি সোফায় আসন গ্রহণ করেন।

বাসু-সাহেব জানতে চান, তা কেমন বুঝছ?

নিখিল বলে, প্রাইম সাসপেক্ট রূপেশ মালহোত্রা। ঘটনার দিন ও বাড়িতে ছিল না। আপনি এতক্ষণে নিশ্চয় জেনেছেন যে, ওরা সেপারেশনে ছিল। কমলকলি থাকতেন এখানে, আর মিস্টার মালহোত্রা তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে। গতকাল মিস্টার মালহোত্রা বাই রোড ভুবনেশ্বরে রওনা হয়ে যাবার পর আমরা গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি। আঠাশ তারিখে তিনি বাড়িতেই ছিলেন; কিন্তু ঘটনার দিন—উনত্রিশে, বুধবার, তিনি সকাল থেকেই অনুপস্থিত। মানে, তাঁর বেড-টিও অস্পর্শিত পড়ে ছিল। উনি শেষরাত্রে কখন উঠে, কোথায় বুঝি চলে গেছেন। বাড়ির লোক জানে না। ঘরটা খোলা ছিল। সাড়ে ছয়টায় ওঁর বেয়ারা টিপয়ে টি- কোজি দিয়ে ঢাকা চায়ের ট্রেটা রেখে যায়। তার ধারণা হয়েছে—সাহেব বুঝি বাথরুমে। ব্যস্! তারপর রাত এগারোটা পর্যন্ত তিনি কোথায় ছিলেন তা বাড়ির কেউ জানে না। ভেরি মিস্টিরিয়াস্!

বাসু বলেন, কিন্তু রাত আটটা নাগাদ ভুবনেশ্বর স্টেশনের এস. আর. পি. তো রূপেশকে এস. টি. ডি করে খবরটা জানায়।

—বাড়িতে নয়। মোবাইল নম্বরে। সে কোথা থেকে মেসেজটি পায় তা জানা যায় না।

বাসু বলেন, ডেডবডি ভুবনেশ্বর স্টেশনে এসেছে সাড়ে সাতটায়। আধঘণ্টার মধ্যে রেলওয়ে এস. পি রূপেশের মোবাইল নম্বর পেয়ে গেল কী করে? সেটা সম্ভব?

নিখিল মাথা নেড়ে বলল, আমি জানি না। খোঁজ নেব।

দস্তুর বলে ওঠেন, খোঁজ নিতে হবে না। আমি জানি। কলি –আই মিন কমলকলির হাত- ব্যাগে একটা ছোট্ট টেলিফোন রেডি-রেকয়নার থাকে। তাতে তার স্বামীর মোবাইল নম্বর নিশ্চয় ছিল। মৃতদেহের সঙ্গেই সেটা হস্তগত হয়েছে পুলিসের।

বাসু পাইপে তামাক ঠেশতে ঠেশতে বলেন, প্রাইম সাসপেক্ট ছাড়া আরও একজনের ‘অ্যালেবাইটা’ তোমাকে যাচাই করে দেখতে হবে, নিখিল। লোকটা ভবঘুরে। আজ এখানে, কাল সেখানে। কিন্তু বর্তমানে কলকাতায় আছে। থাকলে কোনো খানদানী হোটেলে।

নিখিল বললে, করেছি, স্যার! আপনি কুমার বিক্রমজিতের কথা বলছেন তো?

—হ্যাঁ, তাই বলছি, কিন্তু তুমি আন্দাজ করলে কী করে?

—সময়ের দিক থেকে আমি তো আপনার চেয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা লীড নিয়ে বসে আছি, স্যার। মিসেস মালহোত্রার সমস্ত অতীতটাই আমাদের খুঁটিয়ে দেখতে হয়েছে। ‘কঙ্কতিকা সম্মার্জনী’ চালিয়ে।

তারপর হঠাৎ মিস্টার দস্তুরের দিকে ফিরে বললে, আপনি কিছু মনে করবেন না স্যার। ইস্‌ আ কেস্ অব মার্ডার! তাই সব কথা খোলাখুলি আলোচনা করছি। আপনি যে বছর তিনেক আগে পুলিসের সাহায্যে ওই লোফারটাকে তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাও আমাদের জানা।

দস্তুর বললেন, লুক হিয়ার, ইন্সপেক্টার! কমলকলি বর্তমানে নিন্দা স্তুতির ওপারে। আপনারা যা করছেন, তাতে আমার পূর্ণ সমর্থন আছে। কারণটা আপনিই বলেছেন : আফটার অল্ ইস্‌ আ কেস অব মার্ডার! আমি চাই খুনী লোকটাকে ফাঁসির দড়ি থেকে ঝোলাতে। অ্যাট এনি কস্ট! কিন্তু কলির নামে কতকগুলো কুৎসা সংবাদপত্রে ছাপা হলে আমি ব্যথিত হব। এই যা!

নিখিল বললে, আই রেসপেক্ট য়োর সেন্টিমেন্ট, স্যার, অ্যান্ড অ্যাপ্রিশিয়েট য়োর পয়েন্ট। বাসু জানতে চাইলেন, আমার খবরটা কি ঠিক? মানে কুমার বিক্রম কি এখন কলকাতায়?

—আজ্ঞে হ্যাঁ, ছিলেন। প্রায় এক সপ্তাহ। হোটেল ‘রাতদিন’-এ। তারপর ঘটনার দিন, মানে ওই বুধবার সকাল নয়টায় তিনি হোটেল থেকে চেক-আউট করে বেরিয়ে যান। ট্যাক্সিতে। কোনো ফরওয়ার্ডিং অ্যাড্রেস না রেখে।

—তুমি কি খোঁজ নিয়ে দেখেছিলে–হোটেলের ট্রাভল এজেন্টের মাধ্যমে সে কোনো প্লেনের বা ট্রেনের টিকিট খরিদ করেছিল কি না।

—সেটা তো এলিমেন্টারি স্যার। দেখেছি। না, হোটেলের মাধ্যমে সে কোনো টিকিট কাটেনি। কিন্তু চেক-আউট টাইমটা খুব কন্সপিকুয়াস। ইস্ট-কোস্ট এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে ছাড়ে দশটা পনেরয়।

সুজাতা প্রশ্ন করে, এটা যদি বিক্রমজিতের কাজ হয়, তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে যে, মিসেস মালহোত্রার মাধ্যমেই সে জানতে পেরেছিল ও ফার্স্ট ক্লাস সি-কূপেতে বালাসোর যাচ্ছে। এবং একাই।

দস্তুর বলেন, কিন্তু আমি যে যাব না, এটা তো আমি কলিকে জানিয়েছিলাম একবারে শেষ মুহূর্তে। তখন কি চেষ্টা করলেও অন্য কেউ ফার্স্ট ক্লাস টিকিটের রিজার্ভেশান পাবে?

নিখিল বলে, আরিসার্ভড সেকেন্ড ক্লাসে গেলেই বা ক্ষতি কী? ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেস তো ভেস্টিব্যুল ট্রেন। চলতি গাড়িতেও এ কামরা ও কামরা করা যায়। হয়তো সে খড়গপুরে কামরা বদলে ফার্স্টক্লাস বগিটায় চলে আসে।

বাসু বললেন, আমার খটকা লাগছে দু-একটা কারণে। প্রথম কথা : মোটিভটা যদি ধরে নিই সেই আট দশ লাখ টাকার গহনা, তাহলে বলব, এ জাতীয় রাহাজানি যারা করে তারা একটা বিশেষ শ্রেণীর লোক। কুমার বিক্রমজিৎ—সে যতই লম্পট হোক—সে ক্লাসে পড়ে না। তার পক্ষে চোরাই মাল পাচার করা অত্যন্ত কঠিন। খুন করা আরও!

নিখিল বলে, কিন্তু তার বিজনেস্টা যে কী জাতের, তা তো আমরা জানি না, স্যার? সে দু- তিন মাস অন্তর ওদিকে দুবাই, বেরুট, কুয়েৎ যায়, এদিকে রেঙ্গুন সিঙ্গাপুর হংকং। তার ব্যবসাটা হীরে-জহরতের স্মাগ্‌লিং হলে আমি অন্তত আশ্চর্য হব না।

—না, আমিও না, বললেন বাসু। তারপর যোগ করলেন, কিন্তু ও জাতের অ্যান্টিসোশাল যদি পরিকল্পিত মার্ডার করে—হঠাৎ করে বসা হোমিসাইড নয়—তাহলে অস্ত্রটা রিভলভার হওয়ার সম্ভাবনা নাইন্টি-ফাইভ পার্সেন্ট। ছোরা যদি মারণাস্ত্র হয়—অত কাছাকাছি থেকে, তাহলে চলতি ট্রেনে আততায়ীকে রক্তের ধারাস্নানে হয়তো অবগাহন করতে হবে। তার ধরা পড়ে যাবার সম্ভাবনা হয়ে যাবে নাইন্টি নাইন পারসেন্ট।

—মানলাম! কিন্তু মিসেস মালহোত্রা যে ছোরার আঘাতে প্রাণ দিয়েছেন এটা প্ৰতিষ্ঠিত সত্য। বুলেট উন্ড নয়। অস্ত্রটা অবশ্য পাওয়া যায়নি; কিন্তু পোস্টমর্টাম না করেও যে ডাক্তারবাবু ওর ডেথ-সার্টিফিকেট দিয়েছেন তিনি স্পষ্ট করে লিখেছেন মৃত্যুর হেতু : স্ট্যাব উন্ড!—ছোরার আঘাতে।

কেউ কোন কথা বলল না প্রায় বিশ সেকেন্ড। তারপর বাসুই বলেন, চুরি যাওয়া গহনাগুলোর লিস্ট তোমার কাছে আছে তো?

—আজ্ঞে হ্যাঁ। ওঁর কম্পানিয়ান, সোমা দেবী লিস্ট মিলিয়ে সেগুলো বাক্সে তুলেছিল তাঁর কাছ থেকে সেটা আমি পেয়ে গেছি। অল দ্য আইটেমস্—তাদের ডেক্রিপশান, হীরে চুনি পান্নার সংখ্যা আর ডিটেইল্স। গহনা থেকে খুলে নিয়ে বিক্রি করতে গেলেও ধরা পড়ে যাবার যথেষ্ট সম্ভাবনা। চোরাবাজারের সমস্ত ঘাঁটিতে সেই লিস্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ মিস্টার রূপেশ মালহোত্রাকে অনারে এক্সেপসান হিসাবে ধরে নিলে হত্যার উদ্দেশ্য একটাই : জুয়েল থিফের কাজ। রেলের ছিঁচকে চোর চুরি করতে পারে; কিন্তু খুন?—নেভার।

বাসু জানতে চান, তুমি কি আজই ভুবনেশ্বর রওনা দেবে?

—দেবে মানে? দিয়ে বসে আছি। যাবার পথে দস্তুর সাহেবের বাড়িতে আপনার সঙ্গে দেখা করে যাচ্ছি। ওঁরাও আজই দুপুরে যাচ্ছেন। বাই রোড। কিন্তু ওঁদের উদ্দেশ্য শেষ কাজ পুরীতে। আমার ডেস্টিনেশন : ভুবনেশ্বর।

–প্রথমে কোথায় যাবে?

—খড়্গাপুর। বালেশ্বরেও দাঁড়াব, তারপর একে একে ভদ্রক, যাজপুর রোড, কটক। ফাইনালি ভুবনেশ্বর। আমি বালাসোরে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে বাকি পথটা ট্রেনে যেতে চাই। প্রতিটি স্টেশনেই আমাকে খোঁজ নিতে হবে। মিস্ হাজরা তাঁকে শেষবারের মতো জীবিত দেখেছেন বালাসোরে—বেলা পৌনে তিনটায়। আর মিস্টার পট্টনায়ক তাকে মৃতাবস্থায় দেখেন কটকে, সন্ধ্যা সওয়া ছয়টার। তার মানে হত্যাকাণ্ডটা অনিবার্যভাবে ঘটেছে—বালেশ্বর কটকের মাঝখানে। রেললাইন অনুসারে ভৌগোলিক দূরত্ব 177 কিলোমিটার; সময়ের ব্যবধান সাড়ে তিন ঘণ্টা। আগামীকাল রাত্রে অথবা পশু সকালে আমি কলকাতা ফিরব আর তৎক্ষণাৎ আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব।