চতুর্থ খণ্ড – ভীষণ ষড়যন্ত্র!
“I could a tale unfold. whose lightest word.
Would harrow up thy soul; freeze thy young blood;
Make thy two eyes, like stars, start from their spheres;
Thy knotted and combined locks to part,
And each particular hair to stand on end
Like quills upon the fretful porcupine.”
Shakespeare — ‘Hamlet:
প্রথম পরিচ্ছেদ
সঞ্জীববাবু পরিমলকে সঙ্গে লইয়া একটী অপ্রশস্ত গলি পথ দিয়া চণ্ডীতলার বনে সেই ভাঙাবাড়ীর নিকটে উপস্থিত হইলেন। একটী স্থান স্থির করিয়া কহিলেন, “পরিমল এখানে এখন তুমি অল্পক্ষণের জন্য একলা থাকতে পারবে?”
“পারবো।”
“এই গাছটার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে হবে—নতুবা বিপদ ঘটতে বেশী বিলম্ব হবে না।”
“আচ্ছা। আপনি কোথায় যাবেন?”
“আমি যা তোমাকে দেখাব বলেছি—এই বাড়ীর মধ্যে তারই সন্ধানে যাব।”
“আমি আপনার সঙ্গে যাই না কেন?”
“না—আমি এই বাঁশীর শব্দ করলে তুমি বরাবর বাড়ীর মধ্যে যেও। আগে আমি ভাল করে না দেখে তোমায় একেবারে নিয়ে গিয়ে বিপদের মুখে ফেলতে পারি না।”
“তবে আপনি শীঘ্র যান।”
সঞ্জীববাবু সতর্কতার সহিত বাটীর মধ্যে প্রবেশ করিলেন। কবাট উন্মুক্ত ছিল। কাহারও কোন সাড়াশব্দ শুনিতে পাইলেন না। চণ্ডীমণ্ডপে দেখিলেন, কেহই নাই—সকলি নিস্তব্ধ; বাটীমধ্যেও কেহ আছে এরূপ বোধ হইল না। সকল গৃহ তন্ন তন্ন করিয়া দেখিলেন—পাপিষ্ঠরা সকলে পলায়ন করিয়াছে। মনে মনে সুখী হইয়া নিকটস্থ বংশীর শব্দ করিলেন। কিছুক্ষণ গত হইল—পরিমল আসিল না। পুনরপি বাজাইলেন—পরিমল আসিল না।
সঞ্জীববাবু বড় ভীত হইলেন। তবে কি পরিমল দস্যুদ্বারা অপহৃত হইল? এক ঘটিতে আর এক ঘটিল? পাপিষ্ঠরা বোধহয়—এ বাটী ছাড়িয়া বনেই অবস্থান করিতেছিল—কি সর্ব্বনাশ! সঞ্জীববাবু অধীর হইয়া এইরূপ ভাবিতে ভাবিতে পরিমলের উদ্দেশে ছুটিলেন। যথায় তাহাকে তিনি রাখিয়া আসিয়াছিলেন—তথায় আসিয়া দেখিলেন, কেহই নাই। আশঙ্কা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। পশ্চিমদিক হইতে জলের ঝপাস্ ঝপাস্ শব্দ আসিতেছে—শুনিতে পাইলেন; তাহাই লক্ষ্য করিয়া চলিলেন। কিয়দ্দূর গিয়া দেখিলেন, বড় বড় ঘাসগুলি কাহার পদদলিত হইয়াছে; তাহাই লক্ষ্য করিয়া চলিলেন। অবশেষে একটী পুষ্করিণী দেখিতে পাইলেন। তাহার জল লতা-পাতা- পচিয়া মলিন—দুর্গন্ধযুক্ত; সেই জলের মধ্যে—পুষ্করিণীর মাঝখানে পরিমল একবার ডুবিতেছে— আবার হাতাড়িয়া উঠিতেছে। সঞ্জীববাবু তখনই ছুটিয়া জলে পড়িলেন। পরিমলের উন্মুক্ত কেশরাশি ধরিয়া তাহাকে তটে উঠাইয়া আনিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে কহিলেন, “একি—তুমি আত্মহত্যা করছিলে?”
প। আমার মরণই মঙ্গল—কেন আমাকে আপনি উপরে তুলে আনলেন? হিত করতে বিপরীত করলেন।
স। এ কথা বলছো কেন?
প। সে কথা আপনাকে কি বলবো—বলতে চাইনা।
স। তবে কি তুমি আমায় কেবল মিথ্যা কথা বলে বুঝিয়েছ? দোষী তুমি? বিমলার মৃত্যুতে তোমার কোন অপরাধ আছে?
প। না না—কিছু না। আমার অদৃষ্ট বড় মন্দ—এমন পোড়া কপাল করে এসেছিলেম। ছেলেবেলায় মা বাপকে হারালেম; আমার দুর্ভাগ্যেই তারা মরেছেন—বিমলাও ছেড়ে গেল। রৈল কে? তার মৃত্যু—সেই মৃত্যুতে আমার উপর অবিশ্বাস—এমনি কপাল আমার! আর প্রাণে কত সয়? একে ত বিমলার জন্য আমার প্রাণ বার হচ্ছে—তার উপর বারবার এত যন্ত্রণা—এত অবিশ্বাস—এত অনর্থ—বিপদ, সব সহার চেয়ে মরা ভাল।
“যদি তোমার ভগ্নী বিমলা জীবিত থাকে?”
“আপনি কি বল্ছেন? এই আপনি তার মৃতদেহ আনতে গেছলেন, আবার বলছেন—বিমলা জীবিত আছে।”
“তোমায় ত আমি বলি নাই যে বিমলা মরেছে।”
“আপনি কি মনে করেন; স্থির জানেন, বেঁচে আছে?”
“হাঁ—আমি ত বরাবর বলে আসছি যে, তাকে যেমন করে পারি উদ্ধার করবোই করবো,; বিমলার উদ্ধার সাধন আমার মূলমন্ত্র।”
পরিমলের বিষন্ন মুখ প্রফুল্ল হইয়া উঠিল। ধীরে ধীরে উঠিয়া সঞ্জীববাবুর হস্ত ধরিয়া পরিমল বলিল, “ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি আপনার মনষ্কামনা পূর্ণ হোক্—আপনি আমার প্রাণদান করলেন—আপনার কথায়, আবার আমার অনেক আশা হচ্ছে।”
‘এখন তুমি গৃহে ফিরে যাও।”
“না—আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই।”
ভিজা কাপড়ে থাকলে—অসুখ করতে পারে। (কিঞ্চিচ্চিন্তার পর) “আচ্ছা এস।”
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – কিছুই নাই
সঞ্জীববাবু যে গৃহে দর্পণ-মধ্যে পরিমলের প্রতিচ্ছায়া দেখিয়াছিলেন সেই গৃহ, আর্দ্রবসনা পরিমলকে দেখাইয়া কহিলেন, “এই ঘরে গিয়ে তুমি কাপড় ছেড়ে এস—দুই একখানা কাপড় ওদিককার কোণে পড়ে আছে।”
পরিমল গৃহমধ্যে প্রবেশ করিল। সঞ্জীববাবু গৃহদ্বারে তাহার অপেক্ষায় দণ্ডায়মান রহিলেন। সহসা গৃহমধ্য হইতে পরিমল উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করিয়া উঠিল। সঞ্জীববাবু চমকিতচিত্তে গৃহ-মধ্যে প্রবেশ করিয়া দেখিলেন, পরিমল গৃহতলে পড়িয়া লুটাইয়া কাঁদিতেছে। ধরিয়া তুলিলেন- দেখিলেন, তাহার বুকে সে একটা রক্তাক্ত জামা দুইহস্তে চাপিয়া ধরিয়াছে। বলিলেন, “থাম, চুপ কর, কি হয়েছে?”
প। এই দেখ—বিমলার জামা। বিয়ের জামা—বিমলাকে কেটে ফেলেছে।
স। কে বল্লে তোমায়, বিমলাকে কেটে ফেলেছে? আমি এ জামা তোমার অনেক পূৰ্ব্বে দেখেছি; ঐ জামা বিমলার জীবনের বিশেষ প্ৰমাণ।
প। এ যে রক্তে মাখামাখি—কি সৰ্ব্বনাশ!
স। তা হোক্—আমার কথা শোন—স্থির হও।
প। ওগো—এই আবার দেখ গো—জামার বুকের দিকটায় ছুরি বসার দাগ রয়েছে। আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাই না-বিমলা আমাদের অপঘাতে মরেছে।
স। আমি যা বলছি তাতে কাণ দাও, এ সকলে আমি বেশ বুঝতে পারছি—বিমলা মরে নাই। পরিমল বৃহদ্বিস্ফারিতনেত্রে একবারে সঞ্জীববাবুর মুখপানে, আরবার শোণিতার্দ্র জামার দিকে তাকাইতে লাগিল। সঞ্জীববাবু কহিলেন; “ওঠ, কাপড় ছেড়ে নাও—প্রভাত হতে বড় বেশী বিলম্ব নাই—এর মধ্যে আমাদের অনেক কাজ শেষ করতে হবে। শীঘ্রই জানতে পারবে বিমলা বেঁচে আছে। ওঠ—আমার সঙ্গে এস।” বাহিরে আসিলেন—অল্পক্ষণ পরেই পরিমল শুষ্কবস্ত্র পরিধানে গৃহমধ্য হইতে বহির্গত হইল, যে গুপ্তগৃহে কোন বালিকার মৃতদেহ সঞ্জীববাবু দেখেছিলেন সেই গৃহাভিমুখে পরিমলকে সঙ্গে লইয়া চলিলেন।
সেই গুপ্তগৃহের দ্বার সম্মুখে আসিয়া সঞ্জীবাবু জিজ্ঞাসিলেন, “পরিমল—কাতর হয়ে চিৎকার করে উঠবে না ত? আমি তোমার দৃঢ়তার উপর নির্ভর করতে পারি?”
“পারেন।”
“তোমাকে এখনি আমি এক ভয়ানক জিনিস দেখাব—যা তোমার জীবনের প্রথম।”
“দেখান—আমি প্রস্তুত আছি। কি আমাকে আগে খুলে বলুন।”
“যে মৃতদেহ তোমাকে দেখাব বলেছিলেম – “
(বাধা দিয়ে) কার বিমলার?
“তুমি তার মীমাংসা করবে। আমি বিমলাকে কখন দেখি নাই।”
“না মহাশয়—আমি পারবো না—আমি তা দেখতে পারবো না।”
“তবে কি করতে তোমাকে আলেম? বৃথা কষ্টভোগ করালে।”
“আচ্ছা—আপনি—”
(বাধা দিয়া) “বল কি বলতে চাও?”
“আপনি কি মনে ভেবেছেন বলুন—যদি সে শব বিমলার বলে সম্ভব হয়—তবে আমাকে ক্ষমা করুন।”
“সে শব বিমলার বলে আমার আদৌ বিশ্বাস হয় না।”
“আচ্ছা আমাকে দেখান।”
“চিৎকার করে উঠবে না ত?”
“যদি বিমলার না হয়—তবে চিৎকার করে উঠবো না; আর যদি বিমলার মৃতদেহ হয়—তবে আমি দেখার সঙ্গেই মরে যাব—সে দেখে আমি কখনই বাঁচবো না।”
সেই গুপ্তগৃহের দ্বার উন্মুক্ত করিয়া সঞ্জীববাবু কহিলেন, “আমার সঙ্গে এস।”
পরিমল গৃহমধ্যস্থ কঙ্কালরাশি বেষ্টিত সেই কাষ্ঠ নির্ম্মিত সিন্দুর দেখিতে পাইয়া দুই পদ পশ্চাতে হটিয়া দাঁড়াইল। বলিল, “আমাকে ক্ষমা করুন—আমি কখনই চোখের সামনে তা দেখতে পারবো না।”
“তা হতে পারে না—এতদূর এলে কি করতে?” পরিমলকে টানিয়া লইয়া নীচে নামিলেন— দ্রুতহস্থে সিন্দুকের ডালা তুলিলেন—দেখিলেন, সিন্দুক শূন্য পড়িয়া রহিয়াছে, তন্মধ্যে কিছুই নাই!
তৃতীয় পরিচ্ছেদ – ছিন্ন পত্র
সঞ্জীববাবু সবিস্ময়ে বলিলেন, “একি!”
পরিমল জিজ্ঞাসিল, “কি হয়েছে?”
“যা হবার তাই হয়েছে—লাস সরিয়ে ফেলেছে।”
“কি করবেন এখন!”
“আবার আমাকে বাইশ হাত জলে পড়তে হল, কিন্তু আমার হাত থেকে কেউ এড়াতে পারবে না, জেন। তোমার ভগ্নীর হত্যাকারীদের ধরবার জন্য আমি প্রাণপণ করলেম্—দেখি কুচক্রীদের চক্র আরও কত ভীষণ।”
‘যে শব এই সিন্দুকে ছিল—এখন কি আপনি তা আমাদের বিমলার বলে অনুমান করছেন?”
“হাঁ—তাই এখন আমার বেশ মনে নিচ্ছে!”
“অ্যা–কি হবে তবে—বিমলা—অভাগি—”
“কিছু আশা আছে—অধীর হয়ো না। আমার সঙ্গে এস।” পূর্ব্বে যে উত্তর দিক্কার ঘর হইতে কোন রমণীর অস্ফুট রোদনধ্বনি আসিতে তিনি শুনিয়াছিলেন, সেই দিকে পরিমলকে সঙ্গে লইয়া চলিলেন। পরিমলকে বাহিরে দণ্ডায়মান থাকিতে বলিয়া—সেই গৃহাভ্যন্তরে প্রবেশ করিলেন। গৃহমধ্যে কেহই নাই। পরিমল নিৰ্দ্দেশমত বাহিরে অপেক্ষা করিতে লাগিল।
অল্পক্ষণ পরেই সঞ্জীববাবু হাস্যমুখে বাহির হইলেন। বলিলেন, “বিমলা জীবিত আছে— নিশ্চয় জীবিত আছে।”
“কি প্রকারে আপনি জান্লেন?”
“এই দেখ।” এক গুচ্ছ কেশ তাহার হস্তে দিলেন “কার?”
“এ যে বিমলার—নিশ্চয় বিমলার!”
“কিসে জান্লেন্ যে বিমলার?”
“আমি ঠিক চিনেছি—বিমলার চুল এত বড়—খুব কাল নয়—আমি যে রোজ তার চুল বেধে দিতেম।”
“তবে নিশ্চয় তুমি তোমার ভগ্নীকে ফিরে পাবে।”
“আপনি এ কোথায় পেলেন?”
“এই ঘরেই পড়েছিল।”
“আর আপনি যে মৃতদেহের কথা বলছিলেন— সে কার?”
“সে কথা ছেড়ে দাও—এখন প্রয়োজন করে না।”
“আপনি কি করে এমন স্থিরবিশ্বাস করছেন যে বিমলার মৃত্যু হয় নাই?”
“আমি তোমাকে নিশ্চয় বলতে পারি—যে এই চুল সেই মৃত বালিকার নয়। বিশেষতঃ যার এ চুল, সে অন্যুন চব্বিশ ঘণ্টা পূর্ব্বে জীবিত ছিল।”
“আপনি কি করে এতদূর অনুমান করছেন? আমি ত কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“এই দেখ।” একখণ্ড ছিন্ন পত্র পরিমলের হস্তে দিলেন।
“এ আবার কি!”
“তোমার ভগ্নি বেঁচে আছে তার বিশেষ নিদর্শন।”
পরিমল সেই ছিন্ন কাগজখানির দিকে তাকাইয়া বিস্ময়বিস্ফারিত নয়নে বলিল, “এ যে বিমলার হাতের লেখা।”
স। “আমি তা জানি। তোমার কাছে আমি প্রতিজ্ঞা করলেম কাল পারি—ভাল; নতুবা পরশ্ব তোমার ভগ্নীকে আমি উদ্ধার করে এনে দিবই। পড় দেখি, শুনি।”
পরিমল পত্রপাঠ করিলেন। পত্রের দু এক স্থান ছিঁড়িয়া গিয়াছে, তাহাতে এই প্রকার লেখা ছিল, –
“র্গা মাতা।
হায়।
সনিবার।
নীয় পিতা ঠাকুর মোহাশ
মি বর যঙ্কটে পরিয়াছি, এ
কয়েদ করে রেখেছে য়ামি যানি
বি করেছী মনে কত যে ভাব
থাকে, হঅ ত এরা য়ামাকে মেরে
কত শমঅ কত ভয় দেখায়, য়ামী
য়বো। য়ামাকে ছেড়ে য়াপনি না জানি
ত কষ্ট ভোগ করচো—আপনি হয়ত জা
না আমি কোতায় য়াচি তাই য়ামা
র করে নীয়ে জেতে পার নাই সুনে
জেখানে আমাকে এনে রেখেছ, চণ্ডীতলা
বন বলে, য়াপনি যদী কোন উপায়ে এ
করেন য়ামি বেসী দীন যার বাঁচবো না,
য়াপনি জত সীগ্র পারেন য়ামাকে উদ্ধার করে
একান থেকে নীয়ে জাবেন—য়াপনীযদী না
চেষ্টা করেণ তবে য়ার য়ামার রক্কার কোন
উপায় নাই য়ার য়ামি য়াপনাকে ককনে।
দেক্তে পাবো না য়াপনিও য়ামাকে দেক্তে
পাবে না। তোমার হতভাগীনী কন্না।
বিমলা”
পরিমল বারম্বার ছিন্নপত্র পাঠ করিতে লাগিল। সঞ্জীববাবু বলিলেন, “চল—আর না— তোমাকে রেখে আসি—এদিকে সকাল হয়ে এলো প্রায়। আমার হাতে এখন অনেক কাজ আছে।”
“এখন আপনি কি করবেন?”
“এখন দেখতে হবে—দুষ্ট পাষণ্ড ষড়যন্ত্রকারীরা কোথায় বিমলাকে নিয়ে গেছে—তারাই বা কোথায় আছে?”
“এতক্ষণে হয় ত তারা বিমলাকে মেরে ফেলেছে।”
“তারা জানে যে আমি তাদের পিছু নিয়েছি; এখন আর তত সাহস হবে না—প্রাণের ভয়টা সকলেরই আছে। এস—তোমায় রেখে আসি।”
উভয়ে তথা হইতে বাহিরে আসিয়া পশ্চিমদিকে চলিতে লাগিলেন।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ – প্রভাত
দিননাথ ছায়াদেবীকে সঙ্গে লইয়া সূৰ্য্যলোকে এক শয্যায় নিদ্রা যাইতেছিলেন। রজনীর অধিকাংশ সময় নানাবিধ কথোপকথনে বিগত হইয়াছে; উভয়ে এখন গাঢ় নিদ্রায় নিদ্রিত। নলিনীর দূতী—ঊষা—ধীরে ধীরে সেই কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিয়া দিননাথকে অস্ফুটস্বরে ডাকিয়া গা ঠেলিতে লাগিল। যাঁহাকে ডাকিল—তিনি উঠিলেন না—অগ্রে উঠিয়া পড়িলেন ছায়াদেবী—ঊষাদেবীকে দেখিয়া একেবারে ক্রোধে জ্বলিয়া বলিলেন, “পোড়ারমুখী—আবার ফুলাতে এসেছ—বের, এখনি–দূর হ; লজ্জা নেই। বেহায়া—ঢের ঢের দেখিছি—এমন কখন দেখিনি।”
ইত্যবসরে নিদ্রিত দিননাথের পৃষ্ঠে সজোরে এক ধাক্কা মারিয়া ঊষা শয়নকক্ষ হইতে ছুটিয়া বাহিরে আসিল।
ছায়াদেবীর ক্রোধানলে ঘৃতাহুতি পড়িল; ঊষাদেবীকে প্রহার করিতে তাহার পশ্চাতে ছুটিলেন। কিয়দ্দূর ছুটিয়া ছায়াদেবী ফিরিলেন। ঊষাকে ধরিতে পারিলেন না। ঊষা তাঁহাকে ফিরিতে দেখিয়া মৃদু হাসিয়া—অবনীর দিকে চলিল।
ঊষার সজোর ধাক্কায়—ও উভয়ের কলরবে—দিননাথের নিদ্রা ছুটিয়া গিয়াছিল; তিনি শয্যাত্যাগ করিয়া উঠিয়া নলিনীর নিকটে গমন করিবার জন্য বেশভূষা করিতে লাগিলেন, তাঁহার বেশভূষা সমাপন হইতে না হইতে—রোষে ফুলিতে ফুলিতে ছায়াদেবী কক্ষে প্রবেশ করিলেন। বলিলেন, “আজ আমি কখন তোমাকে যাইতে দিব না?”
দি। অপরাধ?
ছা। “আর বেশভূষা করিতে হবে না—এখনি ও সকল খুলিয়া ফেল—আজ যদি তুমি আমাকে ছেড়ে যাও, আমি নিশ্চয় আত্মঘাতিনী হইয়া মরিব। আজ আমি কখনই যাইতে দিব না।”
কথায় কথায় দিননাথ বেশভূষা সমাপ্ত করিয়া লইয়া কহিলেন, “এ যে তোমার অন্যায় কথা—আমি কি দিন রাত তোমার কাছেই থাকব, আমার কি আর অন্য কোন কাজ নাই?”
বর্দ্ধিতরোষা ছায়াদেবী বলিলেন,–”যত কাজ—সব তোমার নলিনীর কাছে। সৰ্ব্বক্ষণ ত তার কাছেই থাক—আমি কিসে আছি?”
দি। সকল দিকেই দেখতে হয়। নলিনী যে—আমি তোমার কাছে যখন আসি, কত কাঁদতে থাকে—তা বলে কি আমি তার কথা শুনি, না কানে করি?
ছা। সে কে—যে তুমি তার কথায় আমাকে ছেড়ে থাকবে? আজ তুমি কখনই যেতে পাবে না, আমি দিব না—কখনই যেতে দিব না। আজকাল নলিনীর উপর ভারি টান দেখছি; আগে বরং দেরি সইত—তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে। আজকাল রোজ সকাল সকাল যাওয়া হয়—আবার দেরী করে আসা হয়—কাল ত তুমি এর চেয়ে দেরিতে গেছলে—রোজই মাত্রা বাড়ছে। ব্যাপার কি, গুণ করেছে নাকি?
দি। গুণ করেছে না মাথা করেছে?
ছা। “তবে ‘হা নলিনী যো নলিনী’ করে খুন হয়ে যাও কেন? আজ ত আমি কখনই যেতে দিব না।”
এই বলিয়া নিজ অঞ্চলদ্বারা দিননাথের চরণ যুগল বাঁধিয়া দ্বারসম্মুখে বসিয়া পড়িলেন। দিননাথ দেখিলেন, গতিক বড় বেগতিক; অনেক করিয়া বুঝাইতে লাগিলেন; কত ছলবাক্য প্রয়োগ করিতে লাগিলেন; কখন বলিলেন, “আমি তোমাকে প্রাণাপেক্ষা ভালবাসি–” কখন বলিলেন— “নলিনী কি তোমার দাসী হবার উপযুক্ত।”
“আজ বেলাবেলি আসিব—” ছায়া কিছুতেই শুনিলেন না। তখন ঈষৎ ক্রোধে দিননাথ বলিলেন, “দেখ, এমন করলে ভাল হবে না। তুমি আপনার সর্ব্বনাশ আপনি করছো—যদিও আসি; এবার গিয়ে আর তোমার কাছে আসবো না—কখনই আসবো না।”
ছা। (ক্রোধে) এস না। কে আসতে বলে? কোথা যাবে তা আসবে? কোথায় যেও না— এসোও না—যেমন বসে আছ, অমনি বসে থাক।
দি। বটে, মন্দ কথা নয়।
ছা। মন্দ কথা নয় আবার কি।
ভাল করিয়া দ্বার আগুলিয়া বসিলেন।
দি। আরে ছিঃ, এমন বিপদে দেবতা পড়ে! ছেড়ে দাও বলছি।
অঞ্চলের ফাঁস খুলিয়া ফেলিলেন। ছায়াদেবী উঠিয়া আবার পদে অঞ্চলের ফাঁস পরাইতে প্রয়াস পাইলেন—পারিলেন না। দিননাথ—ক্রোধবশে তাহাকে ঠেলিয়া ফেলিয়া দিলেন। ছায়াদেবী কাঁদিতে কাঁদিতে—উঠিয়া দাঁড়াইল। দিননাথ কক্ষমধ্য হইতে বহির্গত হইলেন; ছায়া তাঁহার বেশভূষা দুই হস্তে ছিন্ন করিয়া দিতে দিতে বলিতে লাগিলেন, “যাও, যাও না, যাও না; কোথায় যাবে যাও না,—যাও না–যাও, যাও না—যাও না—যাও,—কোথা যাবে যাও না,—আমায় ছেড়ে যাও না।”
সাধের বেশভূষা ছিন্ন হওয়াতে দিননাথ ক্রোধে অগ্নি অবতার হইলেন; ক্রোধে চক্ষু লোহিত বর্ণ হইল—ছায়াকে নানাবিধ তিরস্কার করিতে করিতে নলিনীর দর্শনাভিপ্রায়ে ছুটিলেন। যেমন কেরাণী দল—কার্যালয়ে যাইতে বিলম্ব ঘটিলে ছুটেন; যেমন বালকগণ—গাজনতলায় বাজনা বাজিলে ছুটে, রমণী নবযৌবনগ্রস্তা হইলে তাহার রূপের প্রভা যেমন চারিদিকে ছুটে—কুসুমের সৌরভ যেমন প্রেমিক পবনকে পাইলে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হইয়া ছুটে—ঘাটে সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইলে কুলবধূরা অর্দ্ধাবগুণ্ঠনে চাঁদমুখ ঢাকিয়া—শাশুড়ী ননদীর তিরস্কারাশঙ্কায় দ্রুতপদে যেমন গৃহাভিমুখে ছুটে, মক্কেলের নিকট আশাতীত অর্থ পাইলে, বিচারালয়ে যেমন সন্তুষ্টচিত্ত উকীল মহাশয়ের মুখ ছুটে, নবপরিণীতা বনিতার জীবনসঙ্কট ব্যাধি শ্রবণে প্রবাসীপতি যেমন স্বদেশাভিমুখে ছুটে, কোন স্থানে কর্ম্মখালির সংবাদ শুনিলে বেকার বাঙ্গালীগণের দরখাস্তপত্র সকল যেমন মহাবেগে ছুটে, কোন বড়লোকের সুপুত্র সহসা কাপ্তেনবাবু হইলে—তাহার অর্থরাশি যেমন সুরাবিপনি ও বেশ্যাগার পানে ছুটে—কিম্বা তাহার দর্শনপ্রার্থী হইয়া মোসাহেবগণ যেমন ঊর্দ্ধশ্বাসে ছুটে, ফুল ফুটিলে মকরন্দলোভান্ধ ভ্রমর যেমন ভোঁ ভোঁ শব্দে ছুটে, মৌতাত ধরিলে গুলিখোর—মহাশয়েরা যেমন আড্ডাগৃহ পানে হাই তুলিতে তুলিতে ছুটে, নববিবাহিতার পতি যেমন শ্বশুরালয় পানে ছুটে, বড়বাজারের দালাল মহাশয়েরা খদ্দেরের পিছু পিছু যেমন বাক্যব্যয় করিতে করিতে ছুটে— কৰ্ত্তাসাহেব পার্শ্বস্থ হইলে কেরাণী মহাশয়গণের লেখনী সমূহ বর্ণোদ্গার করিতে করিতে যেমন ছুটে, কোন স্থানে ফলারের নাম শুনিলে কিম্বা শ্রাদ্ধ হইতেছে শুনিলে দ্বিজগণ যেমন ত্রস্তে ছুটে; লোকের কলঙ্ক কথা বাতাসের আগে যেমন লোকমুখে ছুটে—নবদম্পতির এলোমেলো কথোপকথন—মাথা-মুণ্ড-নাই—মসারি মধ্যে সারারাত ধরিয়াই ছুটে, হরিলোটের নাম শুনিলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালক বালিকাগণ যেমন তুলসী তলায় ছুটে, পথে মেঘমণ্ডলপরিব্যাপ্তগগন দেখিলে পান্থ যেমন আশ্রয়োদ্দেশে ছুটে, সহরের হুজুগে—মফঃস্বলবাসী ভদ্রগণের মণিঅর্ডারের অর্থ যেমন জুয়াচোরগণের অনর্থে ছুটে, যুবতী-সতীর মুখভারে পতির যেমন সমস্ত গাত্রে ঘাম ছুটে, খোল করতালের শব্দ শুনিলে হরিভক্তবৈষ্ণবগণ যেমন সেই দিকপানে ছুটে, ইলেক্সনের সময় ভোটার্থীগণ যেমন ভোর হইতে না হইতে ভোট লইবার জন্য—গ্রামবাসীদের সম্মুখদ্বারের কব্জা ঢিলে করিতে ঊর্দ্ধশ্বাসে ছুটে; টাইটেল–বা টেল টাই করিতে ধনীগণের অসংখ্য মুদ্রা যেমন একজায়ী হইয়া ভাণ্ডারশূন্য করিয়া ছুটে; আকাশে পূর্ণচন্দ্রকে হাসিতে দেখিলে—কোকিলের কুহু শুনিলে–দক্ষিণ, বসন্ত বায়ু দেহে প্রাবহিত হইলে—বিরহিণী মন প্রবাসী পতির পানে—কিম্বা বিরহীর মন দূরবর্ত্তিনী বিরহিণীর পানে যেমন আকুল হইয়া ছুটে। দীননাথ তেমনিই ছুটিলেন।
প্রভাত হইলে, কাহার আনন্দ—কাহার বিষাদ? আনন্দ কাহার? নববিবাহিত যুবকের, কেন না—আজ তাহার জীবিতেশ্বরী এক দিবসের বড় হইল। আর কাহার? উত্তমর্ণের কেন না— একদিবসের সুদ তাহার বাড়িল। আর কাহার? সপ্তাহান্তর সাক্ষাৎকারী প্রবাসী যুবকের যুবতীর; কেন না—স্বামীর আগমনের সময়ের এক দিন কমিল। আর কাহার? জননীর, কেন তাঁহার খোকা আর এক দিনের বড় হইল। আর কাহার? কয়েদী তস্করের; কেন না তাহার মেয়াদের এক দিন কমিল।
বিষাদ কাহার?—দীন দুঃখীগণের—কেন না—আজ আবার উদরে ক্ষুধার উদয় হইল। আর কাহার? অধমর্ণের, দিনের সঙ্গে ঋণের ভার বৃদ্ধি হইল। আর কাহার? দুষ্টমতি বালকের; কেন না আবার পিতৃমাত্রাদেশে বিদ্যালয়ে যাইতে হইবে। আর কাহার? রূপসী যুবতীর—কেন না—তাহার যৌবনের একদিন কমিল। এইরূপ কাহার সুখ দুঃখ বিবেচনা না করিয়া—প্রভাত অবনী আলোকিত করিল।
সকল প্রভাতই সমান ভাবে হয়। সেই সূৰ্য্য পূর্ব্বদিকে দৃষ্টিসীমার যবনিকা ভেদ করিয়া দেখা দেয়, ক্রমে পশ্চিম দিকে চলিয়া যায়। সেই প্রভাতের সঙ্গে ফুল ফুটে—হাসে; সেই বাতাস বহে, সেই রবি আলোক ঢালে। তবে একটার সহিত আর একটা মিলে না কেন? গত দিবসের প্রভাতে যাহাকে শত সহস্র দাসদাসী পরিবেষ্টিত—অতুলৈশ্বর্য্যের অধিপতি,—অসংখ্য যান বাহনের আরোহী,—মুক্তহস্তে দীন দুঃখীদিগকে দান করিতে দেখিয়েছি; অদ্য প্রভাতে—এ কি দেখিলাম— সেই ব্যক্তি অসহায়—নিরর্থ—ছিন্নবস্ত্র পরিহিত—শূন্যপদে ভ্রমণ নিমিত্ত পাদদ্বয় ক্ষতবিক্ষত— ধনীদিগের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করিতেছে। গত দিবসের প্রভাতে যাহাকে উচ্চশব্দে হাসিতে দেখিয়াছি—অদ্য তাহাকে কি দেখিলাম, উচ্চৈঃস্বরে গগন বিদীর্ণ করিয়া ক্রন্দন করিতেছে। গত দিবসের প্রভাতে যাহাকে—পরম সাধুব্যক্তি পরমহংস বিবেচনায় প্রণাম করিয়া আসিলাম, আজ তাহাকে দেখিলাম কি? যা দেখিয়াছিলাম, তাহা নহে—তিনি লম্পটশিরোমণি এবং বারাঙ্গনাকেলিসরোবরের পাতিহংস। গত দিবসে যাহাকে পরম হিন্দু–সনাতন হিন্দু ধর্ম্মের প্রবর্ত্তক দেখিলাম—আজকার প্রাতে দেখি—তাহার দ্বারে রহিম খানসামা–খানাহারের টাকার বিল লইয়া দণ্ডায়মান। গত দিবসের প্রভাতে যে ব্রাহ্মণকে নানাবিধ শাস্ত্ৰসঙ্গত কথোপকথন ও শাস্ত্রালোচনা করিতে দেখিয়াছি—আজ দেখি—তিনি মুসলমানের হোটেলে বসিয়া যত কদর্য্য আহার, ফাউল আউল—কাটলেট—কারি মদনচাপাদি অম্লানবদনে বদনে দিতেছেন।
সহৃদয় পাঠক পাঠিকাগণ আমার বাচালতায় যথোচিত রুষ্ট হইয়াছেন, সন্দেহ নাই। কিন্তু আপনাদিগের নিকট এই অনুরোধ—আমাকে বলিয়া দিন, এমন পরিবর্তনের কারণ কি?
পঞ্চম পরিচ্ছেদ – গুণ্ডাহস্তে
পরিমলকে সঙ্গে লইয়া সঞ্জীববাবু কিয়দ্দূর অগ্রসর হইয়াছেন মাত্র—শুনিতে পাইলেন, বনের পশ্চিমাংশে—কে ক্রন্দন করিতেছে। স্থির হইয়া কিছুক্ষণ দাঁড়াইলেন।
পরিমল জিজ্ঞাসিল, “কে কাঁদছে না?”
স। তুমিও শুনতে পেয়েছ? বোধ হয় অনেক দূর হতে শব্দটা আছে। যাইহোক, আমাকে একবার দেখতে হল। তুমি একাকী বাড়ী যাও। খুব সাবধান, – বিপদ এখন পদে পদে ফিরছে, (পথ নির্দ্দেশে) এই পথ ধরে যাও।
সঞ্জীববাবু পরিমলকে গৃহাভিমুখে প্রেরণ করিয়া সেই রোদনধ্বনি লক্ষ্য করিয়া একাকী চলিলেন। অনেক দূর গিয়াও কিছু দেখিতে পাইলেন না; আরও কিছুদূর অগ্রসর হইয়া সম্মুখে একটী অপ্রশস্ত পথ দেখিতে পাইলেন। এই পথ উত্তরদিক হইতে দক্ষিণাদিকে চলিয়া গিয়াছে। এই পথ ধরিয়া বেহালায় যাইতে হয়। পথের ধূলির উপর অনেক ব্যক্তির পদচিহ্ন অঙ্কিত রহিয়াছে। এক স্থানে খানিকটা রক্ত—জমিয়া আছে। তদ্দর্শনে সহজেই বোধ হইল যে, এই মাত্ৰ তাহা নিপতিত হইয়াছে; আরও রক্তের পার্শ্বস্থ পদচিহ্নগুলি সেই পথের উত্তরদিক হইতে ক্রমশঃ দক্ষিণ মুখে অঙ্কিত হইয়া আসিয়া এই স্থানে পশ্চিম মুখে অঙ্কিত হইয়াই শেষ হইয়াছে। সঞ্জীববাবু সেই পদের ও রক্তের চিহ্ন লক্ষ্য করিয়া পশ্চিম পার্শ্বস্থ বনমধ্যে প্রবেশ করিলেন। বনমধ্যেও স্থানে স্থানে রক্তের ছোট ছোট দাগ দেখিতে পাইলেন; বেগে ছুটিলেন। অনেক দূর অগ্রসর হইয়া জনকয়েক ব্যক্তির গোলমালের শব্দ শুনিতে পাইলেন। তখন ধীরে ধীরে নিকটেই একটা নিবিড় ঝোপের মধ্যে ঢুকিলেন। সেই ঝোপের ভিতর হইতে অন্যের অলক্ষিতে যাহা দেখিলেন, তাহাতে তাঁহাকে স্তম্ভিত হইতে হইল। দশজন ভীষণাকৃতি গুণ্ডা বাদ-প্রতিবাদে নিযুক্ত; হস্তে এক একটা স্থূল দীর্ঘ লগুড়। সকলেই জাতিতে মুসলমান। তাহাদিগের সান্নিধ্যে ধূল্যবলুণ্ঠিত—রক্তাক্ত—হস্তপদমুখবদ্ধ দেবিদাস বৃক্ষমূলে মৃতপ্ৰায় নিপতিত।
গুণ্ডাদিগের মধ্য হইতে একজন বলিল, “টাকা আগে চাই—তারপর কাজ শেষ করবো। কি বল রহিম?”
রহিম বলিল, “শালাদের বিশ্বাস কি? কাজ শেষ হ’লে কি আর টাকা দেবে—কম্ মেহনতের কাজ নাকি।”
তাহাদিগের মধ্যে হইতে আর একজন বলিল, “তার বাবা যে সে টাকা দেবে—নৈলে বেটার জান্ সেরে ফেলবো না। আমাদের ফাঁকি দেয়, এমন কোন শালা আছে? এ টুনুয়াকে সব শালা চেনে। একে এখন শেষ করে ফেল্; কাজটা শেষ হয়েই থাক্ না।”
পূর্ব্বোক্ত ব্যাক্তি বলিল;–”না বে, না বে,—তুই ত বুঝিস্ ভারি—আগে টাকা চাই—তারপর কাজ শেষ করতেই বা কতক্ষণ? পরের হাতে যাবার দরকার কি; না যদি দেয়—তুই তাদের কি কবি বল্ দেখি?”
টুনুয়া বলিল—”সব্ বেটাকে ফতেপুর পাঠিয়ে দেব।”
পূর্ব্বোক্ত ব্যক্তি বলিল—”তবেই আর কি বড় কেরামত হ’ল—টাকা ত আর এলো না। তোরা বরং সকলে মিলে যা—গিয়ে টাকাগুলো হাত করে আন্; তাদের একজনকে সঙ্গে ডেকে নিয়ে আয়—তার সম্মুখেই কাজ শেষ করবো; আমি আছি—যা তোরা যা দেখি; আবদুল যাত ভাই—আমি এখানে আছি—এটাকে ত এখন নিয়ে যাওয়া যায় না–ফরসা হয়ে এসেছে—রাস্তায় লোকজনও চলছে।”
পূর্ব্বোক্ত ব্যক্তির কথামত সকলে পূৰ্ব্বমুখে চলিয়া গেল। সে বসিয়া রহিল।
সঞ্জীববাবু বুঝিলেন, এখন দুইটী প্রাণ তাহার কার্য্যের উপর নির্ভর করছে—এক অপহৃতা বিমলার—আর এই হতভাগ্য নিরীহ দেবিদাসের। তিনি ধীরে ধীরে সেই ঝোপ্ হইতে বহির্গত হইয়া—পশ্চাদ্দিক হইতে—সেই গুণ্ডার গলদেশ সজোরে দুই হস্তে টিপিয়া ধরিলেন—সে গোঁ গোঁ শব্দ করিতে লাগিল। তৎপরে সঞ্জীববাবু তাহাকে তৃণশয্যায় শয়ন করাইয়া নিজ উত্তরীয় বসনের দ্বারা তাহার হস্ত পদ ও মুখ বন্ধন করিলেন—দুই একটী মিটে কড়া পদাঘাত করিলেন।
অনন্তর তিনি দেবিদাসের বন্ধন মোচন করিয়া দিলেন। দেবিদাস সঞ্জীববাবুকে সেই বিপদসময়ে তাহাকে রক্ষা করিতে দেখিয়া—তাঁহাকে শত শত ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাইতে লাগিলেন।
সঞ্জীববাবু বলিলেন, “এখন সম্পূর্ণ বিপদের সম্ভাবনা—আমার সঙ্গে এস।” উভয়ে দক্ষিণাভিমুখে চলিতে লাগিলেন। কিয়দ্দূর অগ্রসর হইয়া দেবিদাস বলিলেন, “ওদের ধরিবার উপায় কি?”
স। সে সময় এখন নয়।
দে। ওরা কি তবে নিষ্কৃতি পেয়ে যাবে?
স। হাঁ—এখন তাই বটে। এখন আমার হাতে অনেক গুরুতর কাজ রয়েছে। দেবিদাসবাবু, আপনার বিমলা জীবিতা আছে।
দে। (সবিস্ময়ে) বলেন কি?
স। হাঁ, আমি তার বিশেষ প্রমাণ পেয়েছি।
দে। মহাশয়—আমি আপনার কাছে অপরিশোধ্য ঋণে ঋণী হইলাম।
স। থাক্ ও কথা, আমার কর্ত্তব্য আমি করেছি।
দে। এ সকল গুণ্ডাদের ধরবার কি করবেন?
স। ওদের ধরবার তত আবশ্যক নাই—ওদের নিয়োগ কর্তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। এরা টাকার জন্য এ কার্য্যে প্রবৃত্ত হয়েছে। এখন বিমলার অনুসন্ধান করা বিশেষ প্রয়োজন।
দে। কি প্রমাণে আপনি নিশ্চয় জেনেছেন যে—বিমলা বেঁচে আছে?
স। আমি তার অনেক প্রমাণ পেয়েছি—সে কথা পরে বলবো। আপনি এ গুণ্ডাদের হাতে কি করে পড়লেন?
দে। কাল সন্ধ্যার পর এক ব্যক্তি আমার বাড়ীতে এসে আমাকে বল্লে—”যে শীঘ্র আসুন— আপনার এক বন্ধু মর মর। তিনি আপনার সঙ্গে এখনি একবার দেখা করতে চান।”
স। সে কে—তা জিজ্ঞাসা করেছিলেন? ওদেরই দলের মধ্যে আপনার কোন বন্ধু আছে না কি?
দে। না। সে কথা জিজ্ঞাসা করায় সে আপনার নামই বলিল।
স। (সবিস্ময়ে) আমার নাম?
দে। আজ্ঞা হাঁ।
স। তার পর–সেখানে গিয়ে আমাকে বাস্তবিক পীড়িত দেখেছিলেন নাকি?
দে। আমি তার কথার উপর নির্ভর করে বাহির হলেম। কতক পথ এসেছি, এমন সময় কোথা হতে একদল গুণ্ডা এসে আমায় আক্রমণ করলে। আপনি তাদের দেখে থাকবেন—সকলেই জাতে মুসলমান। আরও এদের মুখে একথা শুনলেম্, এরা আপনাকে—ফাঁদে ফেলার চেষ্টায় আছে। আপনাকে হত্যা করতে পারলে—আরও বসিস্ পাবে।
স। বেশ ত–পারে ত ভালই। কিন্তু—আমাকে ফাঁদে ফেলবার অনেক পূর্ব্বেই তারা যে ফাঁদে পড়বে, তা নিশ্চয়ই। আপনাকে যখন সকলে আক্রমণ করলে–আপনি তখন কি করলেন?
দে। কি করিব? আমি একা—হাতে কিছুই ছিল না; তারা দশ বার জন—হাতে আবার এক এক গাছা লাঠি—আমাকে অল্পক্ষণ মধ্যেই তাদের হাতে আত্মসমর্পণ করতে হল।
স। আপনার কপালটা কিসে কেটে গেল?
দে। বোধ হয় তখনই কেটে গিয়ে থাকবে; জাতে পারি নাই।
স। তারা কি আপনাকে খুন করতে মনস্থ করেছিল।
দে। আপনি যদি না আসতেন—আমাকে উদ্ধার না করতেন—তবে এতক্ষণে আমাকে জীবিত দেখতে পেতেন না।
এমন সময়ে উভয়ে প্রাগুক্ত গুণ্ডাদের কোলাহল শুনিতে পাইলেন। কোলাহল ক্ৰমে স্পষ্ট হইল। সঞ্জীববাবু বলিলেন, “দেবিদাসবাবু, আপনি এখন রামকুমারবাবুর বাড়ীতে যান্। আমার এখন যাওয়া হবে না; কিছু পরে আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো—অনেক কথা আছে।”
দে। এখন আপনি কি করবেন? আপনারই বা কি হবে! আমি আপনাকে এ বিপদে একা ফেলে যেতে পারবো না।
স। আমার বিপদ আমার নিকট-আপনি তার কি করবেন? আপনি নিশ্চয় জানবেন, যে অপরকে বিপদ হতে উদ্ধার করতে পারে, সে নিজের বিপদ থেকেও নিজেকে উদ্ধার করতে পারে।
দে। তা যাইহোক, মহাশয় আপনি আমার সঙ্গে আসুন।
স। না—তা’ হতে পারে না—এ গুণ্ডারা কারা এবং কে এদের নিয়োগ কর্তা—আমাকে এখন দেখতে হবে; এখন যা’ আমাকে করতে হবে, সব আমি মনে ঠিক্ করে নিয়েছি। কৌশলে এদের একজনকে এখন ধরতে হবে।
দে। আপনি একা—এরা দশ বার জন, আপনি এদের কিছুই করতে পারবেন না; কেবল নিজেকে বিপদে ফেলবেন মাত্র। আপনি একাকী—আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই।
স। আমার জন্য মহাশয়কে ভয় পেতে হবে না—আমি ওরকম শত গুণ্ডাকে তৃণাপেক্ষা তুচ্ছ জ্ঞান করি। আপনি এখন এ পথ দিয়া সত্বর চলে যান—যাতে আপনার আর পেছু না নিতে পারে—তাও আমি করবো।
দে। না মহাশয়, তা কখনই হবে না—আমি আপনাকে একা রেখে যেতে পারবো না- আমি আপনার সঙ্গে থাকবো।
স। আমার সঙ্গে থাকলে—আমার অপকার ভিন্ন উপকার করা হবে না; আমি একাই ভাল বিবেচনা করি।
দে। মহাশয়, আপনাকে একা রেখে যেতে আমার আদৌ মন নিচ্ছে না।
স। আমার কথা শুনুন—শীঘ্র আপনি এই পথ ধরে পলায়ন করুন; নতুবা মুহূর্তের মধ্যে আমরা উভয়ে এমন বিপদে পড়বো—যাতে উভয়েরই প্রাণনাশের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা। শীঘ্র যান, এখনও আমার কথা শুনুন। আমি আমার অভীষ্ট সিদ্ধ করে এখনি যাচ্ছি।”
দেবিদাসকে জোর করিয়া পাঠাইয়া দিলেন।
দেবিদাসের প্রস্থানের পূর্ব্বে তাহাকে সঞ্জীববাবু বলিলেন,–”তোমার জামাটা আমায় দাও দেখি।”
দে। এ যে রক্তমাখা—এ আপনার কি হবে? (গাত্র হইতে জামা খুলিয়া সঞ্জীববাবুকে প্রদান) স। কাজ আছে। (পরিধান)
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – এ কে চাতুরী
দেবিদাস চলিয়া গেলে—সঞ্জীববাবুর পূর্ব্বমুখে অগ্রসর হইতে লাগিলেন। অল্পক্ষণ পরেই দেখিতে পাইলেন, গুণ্ডারা (পূর্ব্বাপেক্ষা সংখ্যায় চারি জন কম) তাঁহার দিকে ধাবমান হইতেছে। যাহাকে তিনি আবদ্ধ করিয়া রাখিয়া আসিয়াছিলেন, সে ব্যক্তিও তাহাদের সঙ্গে আছে।
সঞ্জীববাবু চিৎকার করিতে করিতে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটিলেন। গুণ্ডাচতুষ্টয় তাহাদিগের শিকার দেবিদাস অনুভবে অধিকতর দ্রুতপদ সঞ্চালনে দৌড়িতে লাগিল। সঞ্জীববাবু বুঝিলেন, তাঁহার অভীষ্ট সিদ্ধি হইবার বিশেষ সম্ভাবনা। বিশেষতঃ তিনি এ পৰ্য্যন্ত যখন যাহা মনে করিয়াছেন, সে সকলেই কৃতকাৰ্য্য হইয়াছেন।
গুণ্ডাদের মধ্যে একজন সর্ব্বাপেক্ষা অধিক দৌড়াইতে পারে; সে তাহার সঙ্গীদিগকে পশ্চাতে ফেলিয়া ছুটিতেছিল। সঞ্জীববাবু তীরগতিতে দৌড়াইতে লাগিলেন। তিনি আপনার গতি পূর্ব্বাপেক্ষা দ্বিগুণ দ্রুত করিলেন। ক্রমে ছুটিতে ছুটিতে চণ্ডীতলার পূর্ব্ব পার্শ্বস্থ অরণ্যমধ্যে প্রবেশ করিলেন।
যে পুষ্করিণীতে একদিন পরিমল আত্মহত্যা করিতে ডুবিয়াছিল সেই পুষ্করিণীর চারিপার্শ্বে নিবিড় বৃক্ষশ্রেণী; তট দিয়া একজন লোক চলিয়া যাইতে পারে এমন স্থানটুকু উন্মুক্ত আছে। সঞ্জীববাবু সেই পুষ্করিণীর তট দিয়া ছুটিয়া চলিলেন। সেইখানে গুণ্ডাগণ, একসঙ্গে সকলে দৌড়াইতে না পারিয়া একের পশ্চাতে অপরকে পড়িতে হইল। সঞ্জীববাবু অধিক সুবিধা বুঝিলেন, তিনি গুণ্ডাদিগকে ক্লান্ত করিবার অভিপ্রায়ে ক্রমশঃ পূৰ্ব্বমুখে কেবল দৌড়াইতে লাগিলেন। তাঁহার দিকে অধিক অগ্রসর হইয়া ছুটিতেছিল টুনুয়া। সেই টুনুয়াকে ধৃত করিবার জন্য তিনি এই কৌশল অবলম্বন করিলেন।
পূর্ব্ব হইতে টুনুয়ার অনেক পশ্চাতে অন্যান্য গুণ্ডারা পড়িয়া ছিল। এখন তাহাদিগকে আর দৌড়াইতে দেখা গেল না। তাহারা পরিশ্রান্ত হইয়া—টুনুয়ার উপর নির্ভর করিয়া বসিয়া পড়িল। ক্রমে সঞ্জীববাবু ও টুনুয়া তাহাদিগের দৃষ্টির বহির্ভূত হইয়া পড়িল।
সঞ্জীববাবু কেবল টুনুয়াকে তাহার অনুসরণে ধাবমান হইতে দেখিয়া গতির দ্রুততা কিছু হ্রাস করিলেন। টুনুয়া তাহার দশ হাত ব্যবধানে ছুটিতে লাগিল। উদ্দেশ্য সফল ভাবিয়া, হো হো শব্দে হাসিয়া উঠিল। এমন সময়ে সঞ্জীববাবু যেন কত কাতর হইয়া পড়িয়াছেন—আর ছুটিতে পারেন না—অবসন্ন হইয়া পতনোন্মুখ হইতেছেন—এইরূপ ভাবসকল দেখাইতে লাগিলেন। আর উভয়ের মধ্যে দুইহস্ত ব্যবধান—টুনুয়া লাফাইয়া হস্ত বাড়াইয়া ধরিতে যাইল। সঞ্জীববাবু বসিয়া পড়িলেন। টুনুয়া সে বেগ সামলাইতে না পারিয়া সঞ্জীববাবুকে পশ্চাতে ফেলিয়া অগ্রে গিয়া পড়িল। যেমন তাঁহাকে ধরিবার জন্য পুনরায় পশ্চাদ্দিকে ফিরিতে যাইবে—সঞ্জীববাবু সহসা উঠিয়া তাহার ললাট পার্শ্বে এমন সজোরে মুষ্ট্যাঘাত করিলেন যে, সে তখনই জ্ঞানশূন্য হইয়া যন্ত্রণা-সূচক ধ্বনি করিয়া ‘পপাত ধরণী তলে’ হইল।
.
সংজ্ঞালাভে টুনুয়া দেখিল, হাতে হাত কড়ি পড়িয়াছে। যাহার অনুসরণে আসিয়াছিল সে ব্যক্তি দেবিদাস নহে। সবিস্ময়ে চাহিয়া রহিল। হাতকড়ি দেখিয়া বুঝিল, পুলিসের লোক।
সঞ্জীববাবু কহিলেন, “কর্তার কি ঘুম ভাঙলো?
টু। কে জানে তুমি পুলিসের লোক? তা হলে কোন শালা এত কষ্ট করে আসতো।
স। এখন ত জেনেছ? কি করবে বল দেখি—সমানে সমান আমার সঙ্গে যাবে, না তোমাকে এই খানে রেখে যাব?
টু। আমি আপনার কোন মন্দ করিনি—মশাই—আমাকে এইখানে ছেড়ে দিয়ে যান।
সঞ্জীববাবু তাঁহার পিস্তল বাহির করিয়া, তাহার মুখের নিকটবর্ত্তী করিয়া কহিলেন, “বেশ— তুমি যা বল তাই—তোমাকে এইখানেই রেখেই যাই—আমার সঙ্গে আর কষ্ট করে যেতে হবে না।”
টুনুয়া সকাতরে চিৎকার করিয়া বলিল, “না না—আমি আপনার সঙ্গে যাব।”
স। (সহাস্যে) তবে তুমি এখানে থাকতে চাও না—কেমন?
টু। না।
স। তবে আমার সঙ্গে বরাবর এস। যদি পলাতে চেষ্ট কর—তখন এইখানেই রেখে যাব।
টু। আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন—আমাকে আপনার কি হবে?
স। আমার পেছু নিয়ে কেন এত দৌড়েছিলে, সেইটে তোমার কাছ থেকে জাব্বার জন্য।
টু। কে দৌড়ে পলায়—তাই দেখবার জন্য–আপনার পেছু নিয়ে ছুট্ছিলেম।
স। আচ্ছা সে মীমাংসা—পরে হবে; এস এখন।
টু। আমাকে ছেড়ে দিন—আমি আপনার কোন মন্দ করিনি।
স। পার নি—তাই।
টু। আপনার পায়ে পড়ি—ছেড়ে দিন আমাকে, মশাই।
স। দিতে ত চাচ্চি-থাক এখানে।
টু। না না—আপনার পায়ে পড়ি।
স। চুপ্ শূকর,—চুপ্
টু। কি জন্যে আপনি আমাকে ধরে নিয়ে যাবেন? আমি চুরি করিনি—ডাকাতি করিনি—পেছু নিয়ে দৌড়লে কি পুলিসে ধরে সাজা দেয় নাকি?
স। সে আইন বাসায় গিয়ে দেখবে। ভাল চাস্ ত চলে আর্–নয় এই খানে থাক্। (পিস্তল বহিষ্করণ)
টু। না না—যাচ্ছি—যাচ্ছি।