২
নসিগঞ্জে আজ হটবার। সরস্বতী নদীর ধারে বিশাল মাঠ জুড়ে হাটখোলা ভোরবেলা থেকে ভ্যানগাড়ি, গো-গাড়ি, ম্যাটাডোর, নৌকোয় চেপে মাল আর ব্যাপারিরা এসে জড়ো হয়। হইহই ব্যাপার। নসিগঞ্জের হাট খুব বিখ্যাত। পাওয়া যায় না হেন জিনিস নেই। ভালমন্দ কিছু কিনতে হলে এই হাটবারের জন্য বসে থাকতে হয়।
হাটবারে ভারী আনন্দ হয় প্ৰাণগোবিন্দর। প্রথম কথা ভাল-মন্দ জিনিস কিনতে পারেন। গাঁয়ের পাঁচজনের সঙ্গে দেখা হয়। আর শনিবার অর্থাৎ হাটের দিনই বিশমাইল দুরের মহকুমা শহর থেকে তাঁর খুদে দু’টো নাতি-নাতনি দাদু-ঠাকুরমার কাছে দু’দিনের জন্য বেড়াতে আসে। নাতনি পিউয়ের বয়স আট বছর, নাতি পিয়ালের পাঁচ। তাদের মা আর বাবা, অর্থাৎ প্ৰাণগোবিন্দর বউমা এবং ছেলে দু’জনেই সেখানকার হাসপাতালের ব্যস্ত ডাক্তার। বাচ্চা দু’টো তাই মা-বাবার সঙ্গ পায় না, আয়ার কাছে মানুষ হয়। কাজেই সপ্তাহের এই দুটি ছুটির দিনে দাদু-ঠাকুরমার কাছে আসার জন্য তারা ছটফট করে। প্রাণগোবিন্দ আর সুরবালাও তাদের জন্য সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করে থাকেন।
অন্য শনিবারের মতোই আজও প্ৰাণগোবিন্দ হাটে বেরিয়েছেন। সঙ্গে ধামা আর ব্যাগট্যাগ নিয়ে হলধর। কিন্তু আজ প্ৰাণগোবিন্দর প্রাণে কোনও আনন্দ নেই। থাকার কথাও নয়। সকালবেলার অত্যাশ্চর্য ঘটনাটা এখনও তিনি পরিষ্কার বুঝে উঠতে পারছেন না। প্রভঞ্জন সূত্রধর, গোকুল বিশ্বাস, গৌরী এইসব ব্যাপারগুলো ভারী তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে মাথার মধ্যে। আরও দুশ্চিন্তা হল, পঞ্চাশ হাজার টাকার বান্ডিলটা নিয়ে! প্রভঞ্জনকে যাওয়ার সময় তিনি টাকাটা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। প্রভঞ্জন হাতজোড় করে বললেন, ওটি পারব না। গোকুল বিশ্বাস একবার যাকে যা দেন, তা কস্মিনকালেও ফেরত নেন না। খুব নীতিবাগীশ মানুষ।
প্রভঞ্জন চলে যাওয়ার পরও অনেকক্ষণ চোখ বুজে ঘােড় এলিয়ে চেয়ারে বসেছিলেন সুরবালা। একটাও কথা কননি প্ৰাণগোবিন্দর সঙ্গে। সুরবালা মূর্ছা গিয়েছেন কিনা তাও বুঝতে পারছিলেন না প্রাণগোবিন্দ। নিজেই যে কেন মূৰ্ছা যাননি তাও অবাক হয়ে ভাবছিলেন। হঠাৎ সুরবালা চোখ খুলে তাঁর দিকে চেয়ে খুব শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, কোন পাপে আমার একজন গোরু-চোরের সঙ্গে বিয়ে হল, তা বলতে পার?
প্ৰাণগোবিন্দর কানটান অপমানে লাল হয়ে উঠল। কিন্তু মুখ দিয়ে কথা বরোল না।
সুরবালা গলা আরও এক পরদা নামিয়ে বললেন, ‘মানুষকে চেনা যে কী কঠিন, তা আজ ভাল করে বুঝলাম।’ বলে শান্তভাবেই উঠে ভিতরে চলে গেলেন।
মরমে মরে গিয়ে প্ৰাণগোবিন্দ উঠে ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে রইলেন। শরীরটা বড় কাহিল লাগছে। বিছানার পাশেই জানালা। জানালার ওপাশে বারান্দায় বসে ঠিকে কাজের মেয়ে লক্ষ্মী বাটনা বাটছিল। মোক্ষদা এসে তাকে চাপা গলায় বলল, ওলো লক্ষ্মী, কর্তবাবুর কীর্তির কথা শুনেছিস তো!
লক্ষ্মী আহ্বাদের গলায় বলল, ও মা, তা আর শুনিনি! বড় ঘরের বড় কেচ্ছ কাকের মুখে রটে যায়। তবে ভাই, এ কথাও বলি, কর্তবাবুর যে এত ক্ষমতা তা কখনও বুঝতে পারিনি। দেখে তো মনে হয়, ভাজা মাছটি উলটে খেতে জানেন না। কিন্তু কী কোরদানিটাই না দেখালেন। ঘরে বসে লাখ টাকা কামাই! আমার কর্তাটি তো সারা রাত সিঁদকাঠি নিয়ে ঘুরে দশ-বিশ টাকার বেশি রোজগার করতে পারে না।
আর বলিসনি। আমার বাড়ির মানুষটি তো দু’ বছর ধরে জেলে ঘানি ঘোরাচ্ছে। আর কর্তবাবুকে দ্যাখ, এত বড় কাজটা করলেন, গায়ে আঁচড়টি পর্যন্ত লাগল না।
প্ৰাণগোবিন্দ রায় কানো হাত চাপা দিয়ে উঠে পড়লেন। এ তো আর সহ্য করা যাচ্ছে না! এসব হচ্ছেটা কী? তিনি জীবনেও কারও সাতেপাঁচে থাকেননি। চিরকাল বইয়ে মুখ গুঁজে কাটিয়ে দিলেন। অথচ এই বেশ পরিণত বয়সে কোথাকার কে এক প্রভঞ্জন সূত্রধর এসে তাঁকে একেবারে গোরুচোর বানিয়ে ছাড়ল! ঘটনাটা রটে গেলে যে কী বিষম কাণ্ড হবে, তা ভেবে তার হাত-পা হিম হয়ে আসছিল। উত্তেজিতভাবে কিছুক্ষণ ঘরে পায়চারি করলেন। হাত-পা নিশপিশ করছে।
এমন সময় হলধর এসে ভারী বিনীতভাবে বলল, কত্তাবাবু, গিন্নিমা তাড়াতাড়ি হাটে যেতে বললেন। এই যে ফর্দ।
প্ৰাণগোবিন্দ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। যাক, হাটে গেলে হয়তো পাঁচটা মানুষ দেখে একটু ভাল লাগবে। তাই দেরি না করে বেরিয়ে পড়লেন। কিন্তু হাটে ঢুকতে যেতেই বিপত্তি। বটতলায় হরককার সঙ্গে দেখা। বললেন, “কী হে প্ৰাণগোবিন্দ, মুখখানা আজ এত ব্যাজার কেন?
প্ৰাণগোবিন্দ দুঃখের সঙ্গে বললেন, মনটা ভাল নেই কাকা।
দ্যাখো কাণ্ড! মন ভাল নেই কোন হে! আজি তো তোমারই দিন! ওরে বাপু, ট্যাকে টাকা থাকলে মন ভাল না থেকে পারে? যাও তো, বেশ ভাল করে বাজার করো, ভাল-ভাল জিনিস কিনতে থাকো, দেখবে মন ভাল হয়ে যাবে। ফেরার সময় স্যা করার দোকানে বরং বউমার জন্য একটা গয়নার বায়না করে যেও।
প্ৰাণগোবিন্দ সিঁটিয়ে গেলেন। সর্বনাশ! হীরকাকাও শুনেছেন নাকি? ব্যাপারটা আরও ঘোরালো হয়ে উঠল। যখন মাছওয়ালা হরিপদ বলল, কৰ্তা, পাঁচশো টাকা কিলোর দেড় কিলো বাগদা চিংড়ি আজ আপনার জন্যই আলাদা করে রেখে দিয়েছি! আর কার ট্যাঁকের এত জোর আছে যে, ওই কুলীন মাছ কিনবে?
প্ৰাণগোবিন্দর হাত-পা শিথিল হতে লাগল। মাথা ঝিমঝিম! অপমানে, গ্লানিতে তাঁর ভিতরটা খাক হয়ে যাচ্ছে। চোখে জল আসছে, ঘনঘন দীর্ঘশ্বাস পড়ছে, গলা ধরে গিয়েছে। এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়!
যাই হোক, কোনওক্রমে বাজারটা করলেন। তারপর হলধরাকে দিয়ে বাজারের জিনিস রওনা করে দিয়ে বলে দিলেন, “আমার ফিরতে একটু দেরি হবে, বুঝলি! মিষ্টির দোকানটা ঘুরে যাচ্ছি।
হলধর চলে যাওয়ার পর তিনি একটা দোকানে গিয়ে মজবুত দেখে নাইলনের দড়ি কিনলেন। দোকানদার অবশ্য বেশ হাসিমুখেই গদগদ হয়ে বলল, একটু বেশি করেই নিয়ে যান না! অনেক গোরু বাঁধতে হবে তো?
প্রাণগোবিন্দ কথাটায় তেমন কান দিলেন না। দড়ির গুছি র্যাপারের তলায় আড়াল করে নিয়ে তিনি হাট থেকে বেরিয়ে পড়লেন।
ময়নার জঙ্গল মাইলদুই তফাতে। একটা জলাজমি পেরিয়ে তারপর জঙ্গল। সেখানে চিতাবাঘ এবং অজগর সাপ আছে বলে শুনেছেন প্রাণগোবিন্দ। জঙ্গলটার আরও কিছু বদনাম আছে। কিন্তু প্রাণগোবিন্দ মনস্থির করে ফেলেছেন, লোকালয় থেকে দূরে, সকলের চোখের আড়ালে আজ তিনি গলায় দড়ি দেবেন। এই বয়সে এই কলঙ্কের বোঝা বয়ে বেঁচে থাকার মানেই হয় না। তার নিজের স্ত্রীই যখন তাকে বিশ্বাস করে না, তখন এই অসাড় জীবন রাখার কোনও মানেই হয় না।
শীতকাল বলে হাঁটাহাঁটিতে তেমন কষ্টও হল না। দু’ মাইল রাস্তা পেরোতে মিনিটচল্লিশ লাগল। জলাটা শীতকালে শুকিয়ে যায় বলে সেটাও অনায়াসে পেরিয়ে তিনি জঙ্গলে ঢুকে পড়লেন।
ময়নার জঙ্গল বেশ নিবিড় এবং নির্জন। অপদেবতার বাস আছে বলে লোকজন বিশেষ এই জঙ্গলে ঢোকে না। ফলে শুভকাজে বাধা দেওয়ারও কেউ নেই। একটা সুইসাইড নোিট লিখে পকেটে রেখে দিলে ভাল হত। কিন্তু এখন কাগজ-কলম জোগাড় করতে গিয়ে সময় নষ্ট করলে মরার ঝোঁকটা ঘুরে যেতে পারে।
জঙ্গলটা প্ৰাণগোবিন্দর বেশ পছন্দ হয়ে গেল। শীতকালে গাছপালা একটু শুকিয়ে যায়। কিন্তু এই জঙ্গলটায় তেমন হয়নি। কাছে জলাজমি থাকাতেই বোধ হয় মাটি বেশ সরস। প্ৰাণগোবিন্দ জঙ্গলের ভিতরবাগে এগিয়ে যেতে লাগলেন। আগাছা, কঁটাঝোপ, লতানে গাছ ইত্যাদিতে একটু বাধা পেলেও তিনি দমলেন না। পছন্দমতো একটা গাছ। খুঁজে পেলেই হয়। আসলে প্ৰাণগোবিন্দ জীবনে কখনও গাছেটাছে চড়েননি। কাজেই এমন গাছ চাই যেটাতে অনেক ডালপালা আছে আর সহজেই চড়া যায়। খুব বেশি উঁচু ডালে তিনি উঠতে পারবেন না। ঝুলে পড়ার পক্ষে যতটা দরকার ততটাই উঠবেন। তাই খুব সতর্ক চোখে তিনি তেমন একটা গাছ খুঁজতে লাগলেন।
প্ৰাণগোবিন্দর কপালটা ভালই। খুব বেশি খুঁজতেও হল না। জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে মিনিটদশেক এদিক-ওদিক হাঁটার পরই তিনি একেবারে মনের মতো গাছ পেয়ে গেলেন। গাছটার একেবারে নিচু থেকেই শাখা-প্ৰশাখা ছড়িয়ে আছে। হাতের নাগালেই। প্ৰাণগোবিন্দ র্যাপারটা খুলে কোমরে জড়িয়ে নিলেন। দড়ির গুছিটাও ভাল করে কোমরে বেঁধে চটিজোড়া গাছতলায় ছেড়ে গাছটার একটা নিচু ডালে বেশ কৃতিত্বের সঙ্গেই উঠে পড়লেন। ঘোড়সওয়ারের মতো দুদিকে ঠ্যাং ছড়িয়ে বসে উর্ধ্বপানে চেয়ে দেখলেন, ডালপালার ফাঁক দিয়ে গাছটা অনেক উঁচুতে উঠে গিয়েছে। দ্বিতীয় ধাপটি উঠতে তাঁর একটু মেহনত হল। হাত এবং পা দু’টোই হড়কে যাওয়ায় পড়েই যাচ্ছিলেন প্রায়। অতি কষ্টে সামলে নিলেন।
দ্বিতীয় ধাপটায় বসে ঠান্ডা মাথায় একটু চিন্তা করলেন তিনি। এখন খুব তাড়াহুড়ো করার কি দরকার আছে? বরং ধীরে-সুস্থে সাবধানে উঠবার চেষ্টা করাই উচিত। সুতরাং একটু জিরিয়ে নিয়ে তিনি সাবধানে উঠতে লাগলেন। জীবনে এই প্রথম গাছে উঠছেন বলে প্ৰাণগোবিন্দ বেশ উত্তেজনা বোধ করছেন। মনটায়, এত দুঃখের মধ্যেও, একটা ফুর্তির ভাব হচ্ছে। জীবনে কত অভিজ্ঞতাই বাকি রয়ে গিয়েছে। কেবল বইয়ে মুখ গুঁজেই এতকাল বেঁচে ছিলেন তিনি। জীবনে কোনও অ্যাডভেঞ্চারই করা হয়নি।
উৎসাহের চোটে বেশ অনেকটাই উপরে উঠে পড়লেন প্ৰাণগোবিন্দ। কতটা উঠেছেন, এতক্ষণ খেয়াল করেননি। হঠাৎ নীচের দিকে চেয়ে মাথাটা বোঁ করে চক্কর দিল তাঁর। বাপ রে! তা প্ৰায় তিন-চার তলার সমান উঁচুতে উঠে পড়েছেন যে! মাথা ঘুরে ফের হাত ফসকে যাচ্ছিল। তাড়াতাড়ি দু’ হাতে একটা মোটা ডাল জাপটে ধরে সামলে নিলেন। এখান থেকে পড়লেও হয়তো মৃত্যু হবে, তবে ফিফুটি-ফিফটি চান্স। হয়তো মরলেন না, কিন্তু হাত-পা ভেঙে খানিক যন্ত্রনা পেলেন।
আর উপরে না উঠে প্ৰাণগোবিন্দ কোমরে গোঁজা দড়িটা একটা মোটা ডালে বেশ ভাল করে বাঁধলেন। অন্য প্ৰান্তে একটা ফাঁসিও তৈরি করে ফেললেন বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায়। আসলে এসব কাজের তো অভ্যোস নেই। জীবনে কখনও দড়ি নিয়ে কসরত করতে হয়নি। ফাঁসিটা তৈরি করে যখন টেনেটুনে দেখছেন, তখন কাছেপিঠে হঠাৎ খুকধুক করে যেন একটা চাপা হাসির শব্দ হল।
চমকে উঠে প্ৰাণগোবিন্দ চারদিকে চাইলেন!। এই গহন বনে, গাছের উপরে হাসে কে?
হঠাৎ কে যেন বলে উঠল, হয়নি হে, হয়নি। ও কি একটা ফাঁস হল বাপু? ঝুলতে গেলেই যে ফসকো গেরো আলগা হয়ে যাবে।
প্ৰাণগোবিন্দ শিউরে উঠে চারদিকে তাকাতে লাগলেন। দর্শনশাস্ত্ৰে ভূত বা ভগবানের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয় না। তিনিও মানেন না; কিন্তু না মানলেও ভয় করেন। শব্দটা উপর দিক থেকেই আসছে মনে হলঃ প্ৰাণগোবিন্দ খুব ঠাহর করে দেখলেন। ডালপালার ফাঁক দিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় দেখতে পেলেন, আরও আট-দশ ফুট উপরে গাছের ডালে একজন বুড়ো মানুষ বসে-বসে তাঁকে জুলজুল করে দেখছে। প্রাণগোবিন্দ ভয়ে মূৰ্ছাই যাচ্ছিলেন, কিন্তু পড়ে যাবেন বলে ভয়ে সেটা সামলে নিলেন। তবে শরীরে রীতিমতো হিমশীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে, হাত-পা ঠকঠক করে কাঁপছে।
কোনওক্রমে কাঁপা গলায় তিনি বললেন, আ-আপনি কে? ভূ-ভূত নাকি?
লোকটা বলল, তা ভূতও বলতে পাের। এক হিসেবে ভূত ছাড়া আর কী? ভূতপূর্ব তো বটেই। তবে এখনও মরিনি, এটুকুই যা তফাত।
মারেননি! তা হলে কি আপনি জ্যান্ত মানুষ?
লোকটা মাথা নেড়ে বলল, জ্যান্তই কি আর বলা যায়! তবে আধমরা বলতে পার!
ঘাবড়ে গেলেও প্ৰাণগোবিন্দর মনে হচ্ছিল, লোকটা পাগলটাগল হলেও ভূতটুত নয় বোধ হয়। গলাটা এখনও কাঁপছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এখানে কী করছেন?
বসে-বসে তোমার কীর্তি দেখছি। তুমি তো নিতান্তই আনাড়ি দেখছি হে। একটা সোজা গাছে উঠতে তিনবার হাত-পা হড়কে পড়ে যাচ্ছিলো! তারপর ফাঁসের দড়িটা যা বাঁধলে, দেখে হেসে বাঁচি না। ওই ফাঁস গলায় দিয়ে ঝুলবে তো! ঝুললেই গেরো খুলে সোজা নীচে গিয়ে পড়বে ধপাস করে। তাতে অক্কা পেতেও পার, আবার না-ও পেতে পার।
প্ৰাণগোবিন্দ এবার একটু ধাতস্থ হলেন। নাঃ, লোকটা আর যাই হােক, প্ৰেতাত্মাটাত্মা নয়। তিনি গালাখাকারি দিয়ে বললেন, আহা, এসব কি আর কখনও করেছি নাকি মশাই? অভ্যোস করতে-করতে শিখে যাব।
লোকটা একটু খিঁচিয়ে উঠে বলল, আর শিখেছ! শিখে-পড়ে আটঘাট বেঁধে তবে এসব কাজে নামতে হয়। হুট বললেই কি মরা যায় নাকি? দিনক্ষণ দেখতে হয়। তারপর নিজের শ্ৰাদ্ধশান্তি সব আগাম সেরে নিতে হয়। তারপর শুভদিন দেখে স্নানটান করে ভাল-মন্দ বেশ পেটপুরে খেয়ে পান চিবোতে-চিঝেতে পট্টবস্ত্ৰ পরে এসে শািন্তমনে হাসতে-হাসতে তবে মরে সুখ। বুঝলে?
প্রাণগোবিন্দর মনে পড়ল, সকাল থেকে তিনি কিছুই খাননি। পেট চুঁই চুঁই করছে। তেষ্টায় বুক পর্যন্ত শুকিয়ে আছে। মরার উত্তেজনায় এসব শারীরিক বোধ লোপাট হয়েছিল। এবার একটু ভাবিত হয়ে বললেন, বোধ হয় আপনি ঠিকই বলেছেন। আপনি তো বেশ জ্ঞানী লোক।
আরে, সেই জন্যই তো সারাদিন গাছে উঠে বসে থাকি। গাছে উঠলে জ্ঞান বাড়ে, বুঝেছ?
প্ৰাণগোবিন্দ অবাক হয়ে বললেন, গাছে উঠলে জ্ঞান বাড়ে? কই, একথা তো কোনও পুঁথি-পুস্তকে পড়িনি!
ওরে বাপু, পুঁথি-পুস্তক তো সব মুখস্থ বিদ্যে। ওসব ছাইভস্ম কি জ্ঞান? জ্ঞান অন্য জিনিস বাপু। এই তোমার মতোই একদিন বারো বছর আগে গলায় দড়ি দিতে এই গাছে এসে উঠে বসেছিলুম। আটঘাট বেঁধেই এসেছিলুম। দিনক্ষণ দেখে, গয়ায় গিয়ে নিজের শ্ৰাদ্ধ-পিণ্ডদান সব সেরে এসে, একদিন স্নান করে ইলিশ মাছ আর কচ্ছপের মাংস দিয়ে পেট ভরে ভাত খেয়ে, পান মুখে দিয়ে, নতুন ধুতি আর গেঞ্জি পরে, দুর্গানাম স্মরণ করতে-করতে এসে গাছে উঠে মজবুত করে দড়ি বেঁধে মহেন্দ্রক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছিলুম। ঠিক তখনই, কী বলব রে ভাই, আকাশ থেকে যেন আমার মাথায় জ্ঞানের বৃষ্টি পড়তে লাগল। কত নতুন-নতুন ভাবনা-চিন্তা আসতে লাগল। তার লেখাজোখা নেই। মনটা যেন উড়ে-উড়ে বেড়াতে লাগল। ভারী ফুর্তির ভাব। পরিষ্কার বাতাসে শ্বাস নিয়ে বুকটাও যেন পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে নিজেই বোঝালুম, তুই তো নিজেকে সৃষ্টি করিসনি। এখন যদি গলায় দড়ি দিস, তা হলে যে তোকে সৃষ্টি করেছে, তার সঙ্গে বেইমানি করা হবে না? বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে না? তাকে কি ব্যথা দেওয়া হবে না? আর তাকেই যদি ব্যথা দিস, তা হলে মরেই রেহাই পাবি ভেবেছিস? যখন তোকে শিয়াল-শকুন ছিঁড়ে খাবে, তখন হাড়ে-হাড়ে টের পাবি রে পাপিষ্ঠ!
প্ৰাণগোবিন্দ মুগ্ধ হয়ে মাথা নোড়ে-নেড়ে বললেন, বাঃ, বাঃ, এ তো খুব ভাল কথা। তা তোমার পুঁথি-পুস্তকে আছে এসব কথা?
আজ্ঞে না, নেই। তারপর কী হ’ল?
কী বলব রে ভাই, সারাজীবন যেসব কথা একবারের জন্যও মাথায় আসেনি, সেসব কথা দিব্যি আকাশ-বাতাস থেকে এসে শাঁ-শাঁ করে নাক, কান, মুখ দিয়ে ঢুকে মগজে সেঁধোতে লাগল। কিছুক্ষণ পর মাথাটা যেন জ্ঞানে একেবারে টুইটম্বর হয়ে উঠল। মরা তো হলই না, বরং মাথাভর্তি জ্ঞান নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলুম! সেই থেকে ঠিক করলুম, সারাদিন গাছে উঠে বসে থাকব। যতদিন বাঁচি, রোজ যত পারি জ্ঞান আহরণ করে যাব।
আপনি কি গাছেই থাকেন?
তা একরকম তাই বলতে পার। সকালে চাট্টি পান্তা খেয়ে সোজা এসে গাছে উঠে পড়ি। সঙ্গে চিড়ে, মুড়ি, জল সব নিয়ে আসি। এখানে একখানা মাচানের মতো করে নিয়েছি। দিব্যি থাকি। এখানেই দিবানিদ্রা সেরে নিই।
ও বাবাঃ, ঘুমের ঘোরে পড়ে যাবেন যে!
না হে বাপু, তত আহাম্মক নই। এই যে দড়িখানা দেখছ, এটা দিয়েই বারো বছর আগে ফাঁসিতে ঝুলবার মতলব ছিল। তা সেই দড়িখানাই এখন আমার প্রাণরক্ষা করে। ঘুম পেলে দড়িটা দিয়ে নিজেকে গাছের ডালের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে নিয়ে তারপর দিব্যি ঘুমোই।
নাঃ, আপনি সত্যিই জ্ঞানী লোক।
ওই যে বললুম, গাছে উঠলে জ্ঞান বাড়ে।
প্ৰাণগোবিন্দ কিছুক্ষণ মাথা চুলকোতে-চুলকোতে ভাবলেন। তারপর মাথা নেড়ে বললেন, কিন্তু আমার যে মারা ছাড়া উপায় নেই। চারদিকে আমার বড় কলঙ্ক রটেছে মশাই, কারও কাছেই মুখ দেখাতে পারছি না। বউ পর্যন্ত আমাকে অবিশ্বাস করে! সেও ধরে নিল যে, গোকুল বিশ্বাসের গোরু আমিই চুরি করে এনে গোয়ালে বেঁধে রেখেছি! না মশাই, এর পর আর বেঁচে থাকার মানেই হয় না।
কী নাম বললে? গোকুল বিশ্বাস না কী যেন শুনলাম!
যে আজ্ঞে। চরণডাঙার গোকুল বিশ্বাস। তার গোরু গৌরীকে নিয়েই তো যত বাখেরা। কয়েকদিন আগে গোকুল বিশ্বাসের আদরের গোরু গৌরী চুরি যায়। রাতের বেলা কে যেন গিয়ে গোকুল বিশ্বাসকে খবর দেয় যে, নসিগঞ্জের প্রাণগোবিন্দ রায়ের বাড়িতে পঞ্চাশ হাজার টাকা পৌঁছে দিলে গৌরীকে ফেরত দেওয়া হবে। সেই মোতাবেক আজ সকালে গোকুল বিশ্বাসের উকিল প্রভঞ্জন সূত্ৰধর পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে আমার কাছে হাজির।
তুমিই কি বাপু নসিগঞ্জের প্রাণগোবিন্দ রায়?
যে আজ্ঞে। আমি মশাই সাতেপাঁচে নেই। গোকুল বিশ্বাসকে কস্মিনকালেও চিনি না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, গোরুটাকে আমার গোয়ালেই পাওয়া যায়! আর তাতেই সবাই দুইয়ে-দুইয়ে চার ধরে নিয়ে আমাকে চোর ঠাউরে বসল! তাই ঠিক করেছি, বেঁচে থাকার আর কোনও মানেই হয় না।
লোকটা তরতার করে নেমে এসে প্ৰাণগোবিন্দর পাশাপাশি আরএকটা ডালে জুত করে বসে বলল, তাই বলো!
লোকটার নেমে আসা দেখে প্ৰাণগোবিন্দ মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তাঁর হিসেবে লোকটার বয়স না হােক আশির কাছাকাছি তো হবেই। তবু হাতে-পায়ে যেন টারজানের ভেলকি। তিনি গদগদ হয়ে বললেন, আপনি অতি চমৎকার গাছ বাইতে পারেন তো!
লোকটা বলল, ওরে বাপু, বারো বছর ধরে রোজ প্র্যাকটিস করে যাচ্ছি যে! এ বনে বানর আর হনুমান বড় কম নেই। এখন তারাও আমাকে সমঝে চলে। একবার আমার একছড়া কলা নিয়ে একটা হনুমান পালাচ্ছিল, আমি তেড়ে গিয়ে তার লেজ ধরে মুচড়ে একখানা থাপ্পড় কসিয়ে কলা কেড়ে নিয়ে আসি। তারপর থেকে বেশি ঘাঁটায় না। তা সেকথা যাক, বরং গোকুল বিশ্বাসের কথাটাই শুনি।
আর শোনার কিছু নেই। গাঁয়ে আমার বড় বদনাম রটে গিয়েছে মশাই। মানসম্মান নিয়ে থাকার জো নেই।
লোকটা গভীর হয়ে বলল, হুঁ! গোকুল বিশ্বাসের গোরু যদি চুরি করে থাকে, আর সেই বাবদে যদি গোকুল বিশ্বাস তোমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে থাকে, তা হলে তো তোমার গরায় দড়ি দিয়ে মরার দরকারই নেই হে! বরং নিশ্চিন্তে বাড়ি গিয়ে নেয়ে-খেয়ে ঘুমোও। গোকুল বিশ্বাসের ঠ্যাঙাড়েরাই এসে তোমাকে মেরে রেখে যাবে।
প্ৰাণগোবিন্দ হাঁ করে চেয়ে থেকে বললেন, অ্যাঁ! আপনি কি গোকুল বিশ্বাসকে চেনেন?
চিনি মানে! আগাপাশিতলা চিনি। চরণডাঙার গোকুল বিশ্বাসের নামে গোটা পরগনা কাঁপে। এক সময় দিনে দুপুরে মানুষের গলা নামিয়ে দিত। রামদা চালাত বনবন করে। লাঠি, সড়কি, তলোয়ারে পাকা হাত। বন্দুকের টিপ ছিল অব্যৰ্থ। গোকুল ডাকাতের মাথার দাম এক সময় লাখ টাকায় উঠেছিল। তবে সেসব এখন ছেড়েছুড়ে দিয়ে কাজকারবারে মন দিয়েছে। ধান-চালের কল, গুড়ের কারখানা, তেলকল কত কী ফেঁদে বসেছে। তার ডাকাতির স্যাঙাতরাই এখন তার কর্মচারী। গোকুলকে যদি চটিয়ে থাকে, তা হলে আর তোমার মারার ভাবনা নেই। কষ্ট করে গাছ বেয়ে, দড়ি খাটিয়ে, ফাঁস লটকে মরতে যাবে কোন দুঃখে? হাসতে-হাসতে বাড়ি চলে যাও। গোকুল বিশ্বাসই তোমার সব ব্যবস্থা করে দেবে। ভাল করে কিছু টের পাওয়ার আগেই দেখবে দাঁত ছিরকুটে মরে পড়ে আছে। তাতে একটা সুবিধেও হবে হে। আত্মঘাতী হলে নাকি খুব পাপ হয়। খুন হলে সেই পাপের হাত থেকেও বেঁচে যাবে।
প্ৰাণগোবিন্দের গলা আগে থেকেই শুকিয়ে ছিল। এখন যেন শিরিষ, কাগজের মতো খরখর করছে। তিনি বললেন, মশাই, বড় তেষ্টা পেয়েছে, একটু জল খাওয়াবেন?
আহা, শুধু জলই বা কেন? সেই সঙ্গে এক ডেলা গুড় দিয়ে চাট্টি মুড়িও খাও। আমার সব ব্যবস্থা আছে। শত হলেও তুমি তো অতিথি হে৷
প্ৰাণগোবিন্দ মুড়ি, গুড় আর জল খেয়ে একটু ধাতস্থ হলেন। তারপর বললেন, প্রভঞ্জন সূত্রধরের কথা শুনে মনে হয়েছিল, গোকুল বিশ্বাস লোকটার বোধ হয় বড় নরম মন। গোরুর উপর যার অত মায়াদয়া।
কথাটা মিথ্যে নয় বাপু গোকুল একেবারে গৌরী-অন্তু প্ৰাণ।
আচ্ছ, সে যদি ঠ্যাঙাড়ে দিয়ে আমাকে খুনই করাবে, তা হলে পঞ্চাশ হাজার টাকা মুক্তিপণ পাঠানোর কী দরকার ছিল বলুন তো?
এক কথা, টাকা না পেলে তুমি গৌরীর কোনও ক্ষতিও তো করতে পার। তাই সে টাকা পাঠিয়ে সেটা বন্ধ করল। গৌরী-উদ্ধারের পর এখন তার অন্য চেহারা। ওই পঞ্চাশ হাজার তো তোমার যাবেই, সেই সঙ্গে তোমার ঘরের যা আছে তাও চেঁচেপুছে নিয়ে যাবে, এ তুমি ধরেই রাখতে পার।
সর্বনাশ! তা হলে উপায়?
একেবারে বুড়ো লোকটা বিরক্ত হয়ে বলল, আচ্ছা, তোমার আক্কেলাখানা কী বলো তো!
কেন, কোনও দোষ করলুম নাকি?
করলে না? যে লোক গলায় দড়ি দিতে এসেছে তার কেনই বা এত পিছুটান, আর কেনই বা এত বিষয়ের চিস্তা, আর কেনই বা এত সর্বনাশের ভয়! তাই তো বলছিলুম রে বাপু, আটঘাঁট বেঁধে মরতে হয়। আধাখেচড়া ভাব নিয়ে মরলে কি সুখ হয়? ওরে বাপু, তুমি তো মরার জন্য পা বাড়িয়েই আছ। এখন গোকুল বিশ্বাস যদি তোমার বাড়িতে চড়াও হয়, তাতে তোমার কোন লবডঙ্কা? না হে, তোমার বৈরাগ্যটাই আসেনি, তা হলে মরে হবেটা কী?
প্রাণগোবিন্দকে ব্যাপারটা স্বীকার করতে হল। তিনি সায় দিয়ে বললেন, হ্যাঁ, তা বটে। তবে মনটা বড় খচখচ করছে যে!
ও খচখচানিটাই তো মায়া হে। দড়িদাড়া না খুললে কি নৌকো পাড়ি দিতে পারে? ওই দড়িদড়াই হল মায়া, বুঝলে? বন্ধন না খুললে নীেকো ঘাট ছেড়ে এগোবে কী করে?
বাঃ, আপনি সত্যিই জ্ঞানী লোক!
আচ্ছা, আজ রাতেই কি গোকুল বিশ্বাস আমার বাড়িতে চড়াও হবে বলে মনে হয়?
ওরে বাপু, আমি তো তার পাশের গাঁ হব্বিপুরেই থাকি। গত চল্লিশ বছর ধরে তার কাজকারবার দেখে আসছি। এতক্ষণে তার চরেরা তোমার বাড়ির চারপাশে মোতায়েন হয়ে গিয়েছে কড়া নজর রাখছে চারদিকে, যাতে টাকাটা পাচার না হতে পারে। রাত একটু নিশুতি হলেই তার গুন্ডারা এসে হাজির হয়ে যাবে। বিনা মেহনতে যদি মরতে চাও, তবে বাড়িতে গিয়ে বসে থাকো।
প্রাণগোবিন্দ আর-একটু ভাবলেন। মুড়ি আর গুড় পেটে যাওয়ার পর তাঁর মাথাটা বেশ ভাল কাজ করছে তা ছাড়া গাছে উঠলে জ্ঞান বাড়ে, এ-কথাটাও বোধ হয় খুব মিথ্যে নয়। তিনি চিন্তা করে দেখলেন, এতক্ষণে তাঁর দুটি নাতি-নাতনি, পিউ আর পিয়াল এসে গিয়েছে। গোকুল বিশ্বাসের গুন্ডারা যদি হামলা করে, তা হলে নিষ্পাপ দুটি শিশুর বিপদ হতে কতক্ষণ? তিনি হঠাৎ গলাখ্যাকারি দিয়ে বললেন, দেখুন মশাই, মরতে আমার তেমন ভয় হচ্ছে না। তবে, আমার বিরুদ্ধে এরকম একটা ষড়যন্ত্র কে করল, সেটা না জেনে মরাটা বোধ হয় ঠিক হবে না। তা ছাড়া আমার দুটি নাতি-নাতনিও আছে। তাদেরও রক্ষা করা দরকার।
দাড়ি-গোঁফের ফাঁক দিয়ে একটু বিচক্ষণ হাসি হেসে লোকটা বলল, মরা যে তোমার বরাতে নেই, তা তোমার রকম দেখেই আঁচ করেছিলুম। আমি বলি কী, মরার আগে একটু ভাল করে বেঁচে উঠলে তবে মরার একটা মানে হয়। আধমরাদের তো বাঁচা-মরার মধ্যে বিশেষ তফাত নেই। কী বলো হে?
অতি যথাৰ্থ কথা। আপনি জ্ঞানী লোক।
গাছে ওঠার অভ্যেস করো, তুমিও জ্ঞানী হবে। তা যা বলছিলাম, যথার্থ মরতে হলে আগে যথার্থ বেঁচে ওঠা চাই। আধমরা ভাবটা ঝেড়ে ফেলে এবার একটু বেঁচে ওঠে তো বাপু!
যে আজ্ঞে। কিন্তু তার জন্য কী করতে হবে বলুন তো! ব্যায়াম নাকি?
না হে৷
তবে কি ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাব, নাকি কোবরেজের কাছে যাব? নাকি হোমিওপ্যাথি ধরব?
ওতে কাজ হবে না হে। অন্য নিদান দেখতে হবে।