গ্রীষ্ম
(১)
ওই এল বৈশাখ, ওই নামে গ্রীষ্ম,
খাই খাই রবে যেন ভয়ে কাঁপে বিশ্ব!
চোখে যেন দেখি তার ধলিমাখা অঙ্গ,
বিকট কুটিলজটে ভ্রূকুটির ভঙ্গ,
রোদে রাঙা দুই আঁখি শুকায়েছে কোটরে,
ক্ষুধার আগুন যেন জ্বলে তার জঠরে!
মনে হয় বুঝি তার নিঃশ্বাসমাত্রে
তেড়ে আসে পালাজ্বর পৃথিবীর গাত্রে!
ভয় লাগে, হয় বুঝি ত্রিভুবন ভস্ম—
ওরে ভাই, ভয় নাই, পাকে ফলশস্য!
তপ্ত ভীষণ চুলা জ্বালি নিজ বক্ষে
পৃথিবী বসেছে পাকে, চেয়ে দেখ চক্ষে,
আম পাকে, জাম পাকে, ফল পাকে কত যে,
বুদ্ধি যে পাকে কত ছেলেদের মগজে!
সন্দেশ-১৩২৩
(২)
সর্বনেশে গ্রীষ্ম এসে বর্ষশেষে রুদ্রবেশে
আপন ঝোঁকে বিষম রোখে আগুন ফোঁকে ধরার চোখে।
তাপিয়ে গগন, কাঁপিয়ে ভুবন মাতলো তপন নাচলো পবন,
রৌদ্র ঝলে আকাশতলে অগ্নি জ্বলে জলেস্থলে।
ফেলছে আকাশ তপ্ত নিশাস, ছুটছে বাতাস ঝলসিয়ে ঘাস,
ফুলের বিতান শুখনো শ্মশান, যায় বুঝি প্রাণ, হায় ভগবান!
দারুণ তৃষায় ফিরছে সবায় জল নাহি পায়, হায় কি উপায়,
তাপের চোটে কথা না ফোটে, হাঁপিয়ে ওঠে, ঘর্ম ছোটে।
বৈশাখী ঝড় বাধায় রগড়, করে ধড়ফড় ধরার পাঁজর,
দশ দিক হয় ঘোর ধূলিময়, জাগে মহাভয় হেরি সে প্রলয়,
করি তোলপাড় বাগান বাদাড় ওঠে বার বার ঘন হুংকার,
শুনি নিয়তই, থাকি থাকি ওই হাঁকে হৈ হৈ, মাভৈ মাভৈ॥
সন্দেশ-১৩৩০