গিলস বোথাম ও টম ব্রাস
১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ঠিক ক্রিসমাসের আগে লন্ডনের একটি ক্লাবে গিলস বোথাম ও টম ব্রাস নামক দুই ভদ্রলোকের মধ্যে ভীষণ তর্ক শুরু হল। তর্কের বিষয়বস্তু খুবই তুচ্ছ, কিন্তু শ্লেষসিক্ত কণ্ঠের বাদানুবাদের ফল হল অতিশয় মারাত্মক। বোথামের ক্রুদ্ধ কণ্ঠের চ্যালেঞ্জ তর্কযুদ্ধকে টেনে আনল পিস্তল-ডুয়েল নামক ভয়াবহ দ্বৈরথের প্রাণঘাতী সম্ভাবনার মধ্যে। সাধারণত দিনের আলোতেই দ্বন্দ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়ে থাকে। কিন্তু উত্তেজিত ভদ্রলোক দুটি আসন্ন সন্ধ্যার অন্ধকারকে উপেক্ষা করেই তৎক্ষণাৎ ফয়সালা করার জন্য উগ্রীব হয়ে উঠলেন। ক্লাবের মধ্যে ডুয়েল লড়া সম্ভব নয়, অতএব নিকটস্থ একটি মাঠের দিকে দুজনে রওনা হলেন। মধ্যস্থ হিসাবে দুটি সঙ্গী জোগাড় করতেও তাদের দেরি হয়নি। তখন তুষারপাত হচ্ছে। পিস্তলের নিশানা অস্পষ্ট করে তুলেছে সন্ধ্যার ছায়া–দুই প্রতিযোগী অন্ধকারকে অগ্রাহ্য করে পিস্তল তুললেন। মধ্যস্থের নির্দেশ পাওয়ামাত্র গুলি ছুড়লেন বোথাম। তাঁর লক্ষ্য ব্যর্থ হল। এবার পিস্তল তুললেন টম ব্রাস এবং ধীরে ধীরে প্রতিদ্বন্দ্বীর ওপর নিশানা স্থির করতে লাগলেন। মধ্যস্থ দুজন ও বোথাম বুঝলেন আজ আর রক্ষা নেই। কারণ, টম ব্রাস হলেন ক্র্যাক-শট–তাঁর হাতের গুলি কখনো লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হলেন বোথাম। পিস্তলের লক্ষ্য স্থির করে গুলি চালাতে উদ্যত হলেন টম ব্রাস আর ঠিক সেই মুহূর্তে নীরবতা ভঙ্গ করে সন্ধ্যার বাতাসে ভেসে এল ক্রিসমাসের সংগীত-ধ্বনি। টম শুনলেন সুরের জাল বুনতে বুনতে গায়করা সমগ্র মানবজাতিকে পরস্পরের প্রতি প্রীতি ও স্নেহপরায়ণ হতে অনুরোধ করছে অদ্ভুতভাবে সেই সংগীত টমের হৃদয়কে পরিবর্তিত করল। উদ্যত পিস্তল নামিয়ে নিলেন টম ব্রাস…
যে ক্লাবঘরের ভিতর পূর্বোক্ত দ্বন্দ্বযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল, আবার সেইখানে দুই যুযুধানকে দেখা গেল, অবশ্যই তাদের হাতে পিস্তল ছিল না ছিল কাঁচের পানপাত্র। তারা হাসিমুখে পরস্পরের স্বাস্থ্য পান করছেন এবং তাঁদের পানপাত্রে স্থান পেয়েছে দুটি বিভিন্ন জাতের সুরা যাদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে দুজনের মধ্যে প্রথমে বাগযুদ্ধ ও পরে দ্বন্দ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়।