আমার তিন বন্ধু অমিতাভ, হরদয়াল আর পরমেশের সঙ্গে
আজকাল একটু
ঘনঘনই আমার দেখা হয়ে যাচ্ছে।
কখনও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বাগানে
কখনও বালিগঞ্জের লেকে,
কখনও বা
উত্তর কলকাতার দেশবন্ধু পার্কের সেই
দেহাতি চা’ওয়ালার দোকানে,
গরম জলে চায়ের বদলে যে রোজ
হোগলা আর শালপাতার সঙ্গে এক-টুকরো
আদাও ফুটিয়ে নেয়।
ভিক্টোরিয়ার বাগানে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের
গল্প হয়।
বালিগঞ্জের লেকের ধারে ছন্নমতি
বালক-বালিকাদের কাণ্ডকারখানা দেখতে-দেখতে আমাদের গল্প হয়।
দেশবন্ধু পার্কের ঘাসের উপরে উবু হয়ে বসে
ভাঁড়ের চা খেতে-খেতে আমাদের
গল্প হয়।
তবে যে-সব বিষয়বস্তু নিয়ে আমাদের গল্প হয়,
তার তাৎপর্য এখনকার মানুষরা ঠিক
বুঝবে না।
আমাদের গল্প হয়
মধ্য-কলকাতার সেই গলিটাকে নিয়ে,
গ্যাসের বাতির সবুজ আলোর মধ্যে
সাঁতার কাটতে-কাটতে
রাত বারোটায় যে হরেক রকম স্বপ্ন দেখত।
আমাদের গল্প হয়
এই শহরের অঘ্রাণের সেই ঘোলাটে আকাশটাকে নিয়ে,
শীলেদের বাড়ির মেঝো-তরফের বড় ছেলের
বিয়ের রাত্তিরে
চিনে কারিগর ডাকিয়ে যাবে
মস্ত-মস্ত আলোর নেকলেস পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আমাদের গল্প হয়
কাঞ্চন থিয়েটারের প্রম্টারের সেই মেয়েটিকে নিয়েও,
আমরা প্রত্যেকেই যাকে একদিন
একটি করে গোড়ের মালা উপহার দিয়েছিলুম।
শেষের এই গল্পটা চলবার সময়ে আমরা
কেউই যে কিছুমাত্র
ঈর্ষার জ্বালায় জলিনা, বরং চারজনেই চার
উজবুকের মতো
হ্যা হ্যা করে হাসতে থাকি,
তার কারণ আর কিছুই নয়, আমরা প্রত্যেকেই খুব
বুড়িয়ে গেছে।