নিম্নোক্ত কাব্যগ্রন্থগুলি সাজানো হয়নি

গল্পটি আমার প্রিয়

(বদরুদ্দীন উত্তম বন্ধুবরেষু)

গল্পটি আমার প্রিয়, আপনার কেউ
সে-গল্প জানেন কিনা জানি না, যদিও দীর্ঘকাল
আগেই শুনেছি আমি,
শুনেছি অনেকবার। প্রকৃত প্রস্তাবে, বলা যায়,
গল্পটি পুরানো খুব, লোক মুখে প্রকাশিত, ভিন্ন ভিন্ন দেশে
ভিন্ন ভিন্ন এর রূপ, সারবস্তু অভিন্ন যদিও।

গল্পটি রাজার বটে, তবু
সেটাই আসল কথা নয়। রাজার জায়গায় অন্য
কোনো প্রভু, ধ’রে নিলে
ক্ষতি নেই, হেরফের হবে না কিছুই।
গল্প বলবার কলাকৌশল আমার
অনায়ত্ত, তাই
যদি হয় ভুলচুক, যদি বাদ পড়ে যায় কোনো
গূঢ় কথা কিংবা খুঁটিনাটি,
তাহলে মিনতি করি, আমাকে মার্জনা
করবেন।

শুনুন তাহলে বলি, একদা কোথাও কোনো দেশে-
দেশটির নাম পেটে আছে, মুখে নেই-
ছিলেন সুকান্ত এক রাজা, মস্ত বড় রাজ্যপাটে
তাঁর ছিল শান্তি মৃত পায়রার মতো। রাজদণ্ড
ধরতে ছিলেন তিনি দড়, যদি কেউ
বলতো সে দণ্ড
ঈষৎ রয়েছে ঝুঁকে ডানে, তা হলেই
দ্বিধাহীন তিনি পাঠাতেন তাকে কারাগারে হাওয়া
খেতে, বিবেচনা ছিল তাঁর;
না হলে শূলেই চড়াতেন হেসে খেলে। সে-দেশের
কারাগার ছিল বড়োসড়ো,
কানায় কানায় ভরা বানডাকা নদীর মতন।

প্রজারা একান্ত বশম্বদ, বিশেষত
আমাত্য প্রবর যারা এ-ব্যাপারে তারা
তুলনা-রহিত আর কবিরা দাক্ষিণ্যে তাঁর, সকলেই নয়,
পুষ্ট, অতি তুষ্ট; ধনী মহিলার কোলাশ্রয়ী সুশ্রী
কুকুরের মতো ওরা। কলাবিৎদের
ছলাকলা দেখে তাঁর
কাটতো সময় বেশ, দিতেন বাহবা প্রায়শই,
কখনো হতেন হেসে কুটি কুটি, যেন কৌতূহলে
দেখছেন মঞ্চে সুসজ্জিত রঙচঙে
ভাঁড়ের মিছিল।

আবার মার্জনা চাই, গল্পটি মূল
বিষয়ের থেকে আমি এসেছি কিঞ্চিৎ দূরে সরে।
আসলে সে মহারাজ দানখয়রাতে
ছিলেন উৎসাহী বড়ো, দয়ার শরীর তাঁর, দীন
দুঃখীদের কষ্টে অতিশয়
বিচলিত হয়ে নিয়মিত গণভিক্ষা
দিবস পালন ক’রে মনোভাব কমাতেন কিছু। মহারাজ
অকাতরে বিলোতন ধন
প্রজাদের মাঝে, ধনী কি নির্ধন সকলেই খুব
হন্তদন্ত হয়ে
জুটতো বিশাল দানসত্রে যথারীতি। কাড়াকাড়ি
শুরু হতো প্রসাদলোভীর সে দঙ্গলে।

একদিন
একটি বালক ছিল সেই সম্মিলনে, তার চোখে
দুপুরের রৌদ্র-ঝলসিত
নদীর পানির মতো দৃষ্টি ছিল, সমস্ত শরীরে
আরণ্যক রহস্যের স্পর্শ ছিল। কেউ তাকে

আমলে আনে নি,
উটকো বালক ভেবে দিয়েছে সরিয়ে দূরে তবু
সে বালক ঘোরে আশেপাশে,
দ্যাখে জমকালো দৃশ্যাবলি। কখনো-বা
বাজায় সে ভেঁপু,
নদীর ঢেউয়ের মতো আসে আর যায়,
যেনবা মজার খেলা পেয়ে গেছে ভিক্ষার উৎসবে।