বিকেলে চলার পথে অকস্মাৎ আকাশের দিকে
চোখ রাখতেই উদ্বেগের কালো ডানা
ঝাপটাতে থাকে মনে। ভাসমান মেঘমালা ভীষণ রক্তিম
হয়ে চোখ রাঙাচ্ছে প্রবল। পর মুহূর্তেই নামে
তপ্ত লাল জলধারা; এই জ্বালা-ধরানো বর্ষণে
পুড়ে, হায়, ভস্মমূর্তি হয়ে যাব নাকি?
জ্বলে পুড়ে যেন আমি আলাদা পথিক, কৃপাপ্রার্থী
জানি না কাদের কাছে, কার কাছে! কেমন অচেনা
মনে হয় চেনা পথ, ঘনিষ্ঠ এলাকা, গাছপালা
কোথায় আমার বাড়ি? কারা বলে দেবে
আমার ঠিকানা আজ? পথ জুড়ে বিছানো বিষাক্ত কাঁটা আর
বিপদের ফণা উত্তোলিত ঠিক ডানে বামে, সম্মুখে পেছনে।
এই পোড়া শরীরের বোঝা বয়ে হেঁটে যাব আর কত পথ
অবেলায় লাল বৃষ্টিধারা বিপন্ন সত্তায় নিয়ে? দিশাহারা
আমি শুনি চতুর্দিক থেকে আর্তনাদ ভেসে এসে
আমাকে বিপন্ন করে আরো বেশি। পোড়া গন্ধ চৌদিকে দাপট
দেখাচ্ছে মেজাজি মোড়লের মতো। পথের দু’ধারে সারি সারি
বাড়ির কঙ্কাল আর গাছের ধূসর লাশ শাসাচ্ছে আমাকে।
কোথায় আশ্রয় পাব? জন-মানবের সাড়া নেই, অকস্মাৎ
মাটি ফুঁড়ে কয়েকটি শীর্ণকায় হাত নড়ে ওঠে,
যেমন গাছের পাতাহারা বেঁটে ডাল কম্পমান
ঝোড়ো বাতাসের চড়ে। হাতগুলো ভীষণ আক্রোশে
আমার পা ধরে দ্রুত পাতালে নামাতে চায়; ভীত
সন্ত্রস্ত এবং মূক আমি মুক্তি পেতে চেয়ে বন্দি থেকে যাই!
জানি না কী ক’রে যেন হাতগুলো নুয়ে পড়ে মুক্ত আমি দ্রুত
ছুটে যাই সামনের দিকে। লাল বৃষ্টি থামেনি তখনও,
এক হাঁটু পানি ভেঙে বিরানায় পড়ি-মরি ক্রমশ এগোই-
জানি না কোথায় কোন আস্তানার দিকে। আস্তানা আছে কি কোনও?
থাক বা না থাক, এই ছদ্মবেশী তাণ্ডবের জাল
ছিঁড়ে যত দ্রুত পারা যায় যেতে হবে, গন্তব্য থাকুক আর
নাই-বা থাকুক;
কণ্টকিত পথ,
ফাঁদ পাতা পথ,
যত ক্রূর হোক…
০৮-০৮-২০০২