গড় হেকিমপুরের রাজবাড়ি – ৭

সকাল সাড়ে আটটা। যদু ঘোষ আর গজপতি মুখোমুখি বসে।

“বুঝলে যদু, ভাবছিলাম এখন থেকে রাজবাড়ির জন্য রোজ একটা করে সিধে পাঠানোর ব্যবস্থা করলে কেমন হয়? ধরো, চাল,

ডাল, কিছু আনাজ, একটু মাছ, এইসব আর কী। রাজামশাই আর রানিমা উপোস থাকলে তো আমাদের সম্মান বাড়বে না! কী বলো?”

“তোমার ভাবনাটা বড়ই ভাল। এইসব অস্তিবাচক আর স্বস্তিবাচক চিন্তা করো বলেই তোমাকে আমার ভাল লাগে। কিন্তু ভায়া, একটু দেরি করে ফেলেছ। গত পরশু থেকেই বাজারের ব্যাপারীরা রাজবাড়িতে সিধে পাঠাতে শুরু করে দিয়েছে। তাদের দুঃখ হল, গড় হেকিমপুরের যে একজন রাজা আছেন সেটা তারা ভুলেই গিয়েছিল। আর রাজবাড়ির দুর্দশার কথাও এতকাল কেউ তাদের বলেনি।”

গজপতি ভারী অসন্তুষ্ট হয়ে বলে, “এটা তো ওদের ভারী অন্যায়। আমরা যা করতে যাই ওরা সেটা আগেই করে ফেলছে!এই অরাজকতা তো সহ্য হচ্ছে না। এর একটা বিহিত করা দরকার।”

“আহা, ওরা তো একটা ভাল কাজই করছে। তুমি খুঁচিয়ে তা থেকে অন্যায় বের করছ কেন?”

“আহা, তা বলে আমাদের কি কর্তব্য নেই?”

“তা থাকবে না কেন? সেটাই বরং ভেবে বের করো। আর শুনেছি তুমি নাকি রোজ এক সের করে দুধ রাজবাড়িতে পাঠাচ্ছ। আর কী করতে চাও?

“আহা, সেটা ভাবতে সময় লাগবে তো! বাজারের ব্যাপারীরা সবসময় আমাদের টেক্কা দিলে তো হবে না।”

“রানিমা’র গয়নাগাটি বোধ হয় নগেন কর্মকারের কাছে বাঁধা আছে। সেগুলো ছাড়ানোর বন্দোবস্ত করতে পার।” “সেটা কত টাকার ব্যাপার?”

“বেশি নয়। রানিমা’র গয়নাও তো বেশি অবশিষ্ট ছিল না। নগেন আমার বাড়ির পাশেই থাকে। তার মুখে শুনেছি পঞ্চাশ-ষাট হাজার টাকার মতো।”

“ঠিক আছে। আর কী করা যায় বলো তো!”

“করার জন্য হামলে পোড়ো না। বরং মাঝে-মাঝে গিয়ে একটু খোঁজখবর কোরো, যখন যা লাগবে তা দিলেই হবে।”

গজপতি একটু গুম হয়ে রইল, তারপর একটা শ্বাস ফেলে বলল, “তুমি বোধ হয় ঠিকই বলেছ।”

আজ বীণাপাণিদেবী হিংয়ের কচুরি আর আলুর দম নিয়ে এলেন। যদু ঘোষ আর গজপতির চোখ চকচক করতে লাগল।

যদু ঘোষ খেয়েদেয়ে তৃপ্ত হয়ে আরামে চায়ে চুমুক দিল, “আহা, কী ভাল চা?”

চা শেষ করে উঠে পড়ল যদু ঘোষ। তারপর যথারীতি দরজা বরাবর হেঁটে গেল। দরজাটা খুলে বাইরে পা বাড়িয়েও ফিরে দাঁড়িয়ে খুব নরম করেই বলল, “ভাই গজপতি, তোমার হয়তো স্মরণে নেই যে, তোমার কাছে আমার এখনও সেই পঁচাত্তর টাকা পাওনা আছে!”

গজপতি শশব্যস্ত হয়ে বলে, “ইস ছিঃ ছিঃ! সত্যিই তো, সেই পঁচাত্তর টাকা তো এখনও শোধ হয়নি! কী কাণ্ড বলো তো! না-না, আর দেরি করাটা কাজের কথা নয়। ঠাকুরমশাইকে কালই খবর পাঠাচ্ছি একটা শুভ দিন দেখে দিতে। আর দেরি করা ঠিক হবে না।”

-সমাপ্ত-