সংগীত সাধক, কবি; চিত্রকর অথবা ভাস্কর, কাউকেই
খুব বেশি ভালো থাকতে নেই।
খুব বেশি ভালো থাকা মানে
মোহের নাছোড় লতাগুল্মসমেত স্নোতের টানে
সেখানেই অনিবার্য খর ভেসে-যাওয়া,
যেখানে কস্মিনকালে বয় না শিল্পের জলহাওয়া।
যদি শিল্পী প্রতিদিন ঝলমলে মদির, ফেনিল
পার্টিতে বেড়ায় ফুলবাবু সেজে, ক্রমশ আবিল
হয়ে ওঠে যদি আত্মা সোনাদানা হীরকের বশে,
যদি দ্রুত খসে
একে একে গোপন পালক সব তার, নুয়ে আসে
দেহমন কুর্নিশের ভারে আর সারাক্ষণ রমণীবিলাসে
মজে থাকে, তবে খাতা শুধু
অত্যন্ত বিরান মরুভূমি বুকে নিয়ে করবে ধুধু
আর চির প্রতীক্ষা-কাতর
পাথর থাকবে হায়, কেবলি পাথর।
অসুয়া, অবজ্ঞা, হেলা মাথা
পেতে নিয়ে, জলকষ্টে ভুগে কুড়িয়ে কাঁঠাল পাতা
গোধূলির মতো বস্ত্র গায়ে বাউলের সঙ্গে গলা
মিলিয়ে উদাস হেঁটে চলা
ছিলো ভালো, কখনো কখনো কোনো নারীকে জড়ানো
উষ্ণ বুকে অবিবাহে, পথপার্শ্বে উনুন ধরানো,
নৌকো বাঁধা ঘাটে ঘাটে, পাটাতনে শুয়ে
তুচ্ছতার বুদ্ধুদ উড়িয়ে দিয়ে ফুঁয়ে
ভোরবেলাকার কচি আলো,
খঞ্জনার নাচ, জেলে-বৌয়ের ভাসানো ঘড়া দেখা ছিলো ভালো।
আজো কায়মনোবাক্যে চাই
শিল্পীর সত্তায় থাক লেগে ত্যাগময় কিছু ছাই।
সামাজিক সকল ভড়ং
আমূল খারিজ ক’রে তীব্র সে বরং
সহজে করুক মনে পেলিক্যান কালি শহীদের
রক্তের চেয়েও ঢের
বেশি পূত পবিত্র এবং হাতুড়ি ও বাটালির
ঘায়ে ওড়া শাদা পাথরের হাঁট-টুকরোর ঘ্রাণ পৃথিবীর
সবচে’ সুরভিময় ফুলের চেয়েও
অধিক সুগন্ধী, ওর মনের নানান স্তরে ছেয়ে
থাক সর্বক্ষণ
সত্তাক্ষয়ী অমোঘ দহন।
রঙিন পালকে নিয়ে ভোর
নেচে নেচে বলে যায় দূরাগত একটি চন্দনা-
‘ওরে, পড়ে না কি মনে তোর
নক্ষত্রপল্লীতে একা জেগে থাকা মাইকেল এঞ্জেলোর অগাধ যন্ত্রণা?