কৃষ্ণা বাড়ি ফেরেনি – ৯

পিউ ননীকে বলেছিল, বাড়ি এত নোংরা করে রেখেছ কেন গো নোনেদা? ননী বলেছিল, হুঁ’। বড্ড নোংরা। কিন্তু আমি ওসব পারিনে রে। পোষায় না। তারপর পিউ এক বুড়িকে পাঠিয়ে দিয়েছে। ননী বারান্দার চেয়ারটাতে পা দুটো তুলে বসে আছে। বুড়ি খুব মেহনত করছে দেখছে। টিউবওয়েল থেকে বালতি বালতি জল তুলে বারান্দা থেকে উঠোন—অব্দি ধুয়ে ফেলল সে। তারপর বলল, এবারে ঘরগুলো ধুই বাবা।

পিউ চুপিচুপি বলে গেছে, ঝাঁটুর মা বড্ড চোর। নজর রাখবে কিন্তু। ননী বলল, ধোয়ার আগে রান্নাঘরটা।

ঝাঁটুর মা কিচেনে ঢুকলে ননী একটু ভাবল। তারপর উঠে গিয়ে বলল, শোনো বুড়িমা। কীসব চালডাল তেলনুন আছে, জানি না। থাকলে সবটা তুমি নিয়ে যেয়ো, কেমন?

ঝাঁটুর মা খুশি চেপে মুখটা করুণ করে বলল, ছেরাদ্দর আর ক’দিন বাকি বাবা?

দেরি আছে ক’দিন। তুমি এসো। …বলে ননী তার চেয়ারে ফিরে এল।

ঝাটুর মা ভেতর থেকে একটার পর একটা টিনের ছোটবড় কৌটো, একটা ছোট ড্রাম, তেলের শিশি বের করে ডাইনিং টেবিলে জড়ো করছিল। ননী দেখছিল কৃষ্ণার কত বছরের গড়ে ওঠা সংসার তাসের ঘরের মতো ছত্রখান হয়ে ভাঙছে। ভাঙুক। কী হবে সব নিয়ে? বাকি জীবন ননী হোটেলে খেয়ে কাটাবে। আজকাল তার মতো একলা লোকেরা নাকি তাই করে। ননী ঠোঁটের কোনায় সরল একটুকরো হাসি রেখে তাকিয়ে রইল।

একটু পরে ঝাঁটুর মা ডাকল, বাবাকে একটা কথা বলছি।

বলো না?

বুড়ি ভেজা ঝাঁটা হাতে নিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে কাছে এসে চাপা গলায় বলল, গুন্ডো ব্যাটারা ধরা পড়েছে?

ননী নিষ্পলক তাকিয়ে মাথা দোলাল। কেন বুড়ি মা?

বুড়ি রাস্তার দিকটা কেমন দেখে নিয়ে ফিসফিস করে বলল, গাবু। গাবুর কাজ। ওই যে গোমো কায়েত আছে—তেনারই ছেলে। যেন কাকেও বলবেন না বাবা, আপনার পায়ে ধরে বলছি। টাউনে টিকতে দেবে না তাহলে। ঘ্যাঁচ করে ছুরি ঢুকিয়ে দেবে পেটে।

ওর চোখে প্রাণের ভয়। ধরাপড়া একটা পোকা যেন চোখের তারায় ছটফট করছে। বলিরেখাসংকুল মুখের শিরায় খেচুনির ভাব। ননী একটু হাসল। গাবু?

হ্যাঁ, হ্যাঁ। চেনেন না? ভটভটে চেপে ঘুরে বেড়ায়। সেদিনকে রঘুবাবুর মেয়ের হাত চেপে ধরেছিল। বড়লোকের ছেলে বলে মনের দুঃখে কেলেঙ্কারিটা চেপে গেল। খুব খারাপ স্বভাব আছে গাবুর।

ননীর চোয়াল আঁটো হয়ে গেল। গাবু! হুঁ গাবুর একটা মোটর সাইকেল আছে। তার অনেক বদনাম। ধাঙড়পাড়ায় ঘোরাঘুরি করে। রেলইয়ার্ডে হামলা করে কতবার পুলিশের পাল্লায় পড়েছে। তার বাবার নাম গৌতম ঘোষ। পয়সাওয়ালা লোক। সিনেমা হল আর পেট্রোল পাম্পের মালিক। গাবুকে আঁচ থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এখনও। লোকে ওঁকে বলে গোমো কায়েত। গৌতমবাবুর বাবা নাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিলিটারি ব্যারাকে মেয়ে সাপ্লাই করে পয়সা করেছিলেন।

ননী গাবুর মূলসুদ্ধ দেখতে পেল কয়েক মুহূর্তেই। শূন্য খুলির মধ্যে সারাক্ষণ চেতন—অবচেতনে যে কালোরঙের মোটরসাইকেলটা চক্কর খাচ্ছে, কখনও বিশাল একটা বিষাক্ত ভোমরার মতো যাকে ঘুরে ঘুরে উড়তেও দেখছে, সেটা আবার আওয়াজ তুলে তার মাথার হাড়ে ঠান্ডা স্পন্দন জাগাল। মুখের শিরা ফুলে উঠল ননীর।

বুড়ি তাকে তাতিয়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে ভুরু কুঁচকে মুখটা আরও ভয়ংকর করে ফিসফিসিয়ে উঠল ফের, নন্দীবাবুর কানে তুললেই কাজ হবে। লাট—বেলাটের খাতির করে না। হুঁ। দেখবেন, গোমো কায়েতেরও হাতে হাতকড়া ঝুলিয়ে ছাড়বে।

অরুণ নন্দী টাউন পুলিশে এসে যে নাম করেছেন, ননী ক্রমশ টের পাচ্ছে এমনি করে। এ শহরের সব অপরাধদলনে যেন নন্দীবাবুর আবির্ভাব। ভগবান বিষ্ণুর অবতারের মতো। দুষ্টুদের বিনাশে শিষ্টের পালনে নাকি যুগে যুগে এমন হবার কথা। ননীর চোয়ালের আঁটোভাবটা তক্ষুনি চলে গেল। ঠোঁটের কোনায় সূক্ষ্ম বাঁকা একটু হাসি ফুটল। সে শুধু বলল, আচ্ছা। তা বুড়িমা, একটু হাত চালাও। আমাকে বেরুতে হবে শীগগির এক জায়গায়।

আগে থানা। বলে ঝাঁটুর মা ফের কাজে মন দিল।

ননী ফের আনমনা হয়ে গেল। কিছু চালডাল নুনতেল পাওয়ার কৃতজ্ঞতা ছাড়া আর কী হতে পারে? মানুষ তো এরকমই। এতকাল ধরে খেয়ে—পরে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে কত ঠেকে ননী মানুষ চিনেছে। তাছাড়া তার ভেতর তো এক চিরকেলে অভিজ্ঞ পাকামাথার বুড়ো বসে আছেই, যার দরুন মা তাকে বুড়ো বলে ডাকতেন।

কিন্তু ননীর খুলির মধ্যে চেতনে—অচেতনে চক্কর মেরে বেড়ানো কালো মোটরসাইকেলের আরোহীর মুখটা এই ঝাঁটুর মা স্পষ্ট করে দিয়েছে যেন। ননী দেখছে গাবু বসে আছে মোটরসাইকেলে নামটা কী বলবে নন্দীর কাছে? যাবে থানায়?

ননী জীবনে সেই প্রথম থানায় গিয়েছিল। এতকাল সে পুলিশ সম্পর্কে কোনো মোহ রাখেনি। আজও নেই। সত্যি বলতে কী, পুলিশ যখন চোরের কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে—দেখে তার হাসি পেয়েছে। কে কাকে নিয়ে যাচ্ছে বেঁধে? অরুণ নন্দীর শক্ত কথাবার্তা, ‘হিয়ার ইজ অরুণ নন্দী’, কিংবা প্রতিশ্রুতি—সে আমল দেয়নি। তার মনে হয়েছে, সব পুলিশই নানারকম মুখোশ পরে থাকে। নন্দীর ওই মুখোশ কৃষ্ণার কিলারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পকেটে চলে যাবে যত্নে ভাঁজ হয়ে এবং বেরিয়ে আসবে অন্য এক মুখোশ।

ননীর মুখে তেতো ভাবটা ফুটে উঠল। সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকল।

ঝাঁটুর মা বলল, বাবা! ঘরটা খুলুন।

ননী বলল, ওঘরটা থাক। তুমি এঘরে এসো বুড়িমা।

কৃষ্ণার ঘর তেমনি তালাবন্ধ আছে। হঠাৎ টের পেল, ভেতরের আলোটা ক্রমাগত জ্বলছে সেই রাত থেকে। অনেক টাকার বিল উঠবে যে!

ননী উঠল ব্যস্তভাবে। তালা খুলে ভেতরে ঢুকে আলোটা নেভাল। ঘরে ভ্যাপসা গরম আর অন্ধকার। আর বাসি প্রসাধনের চাপা গন্ধের সঙ্গে কয়েক মুহূর্তের জন্যে সেই সেন্টের উগ্র গন্ধ হঠাৎ তার স্নায়ুকে জ্বালিয়ে দিয়ে গেল। দ্রুত বেরিয়ে এল। শিরদাঁড়া শিরশির করে উঠেছিল। গায়ে কাঁটা দিয়েছিল। বারান্দায় এসে বড়ো করে একটা নিশ্বাস ফেলল সে। উঠোনে ঝাঁটুর মা টিউবওয়েলের হাতল নাড়ার শব্দ না থাকলে ননী হয়তো কৃষ্ণার আত্মার ফিসফিস করে কথা বলে ওঠাটা শুনতে পেত। দুঃখে অসহায়তায় ননী যেন জানল, এক অলীক ত্রাসের হাত থেকে আমৃত্যু তার রেহাই নেই।

একটু পরে পিউ কলেজ যাবার পথে দেখতে এল ঝাঁটুর মা কেমন কাজ করেছে। সে উঠোনে দাঁড়িয়ে বুড়িকে তম্বি করার পর বারান্দায় এল। ননী ভেতরে পোশাক বদলাচ্ছে। বলল, আয় রে!

পিউ দরজার ভেতর পা বাড়িয়ে বলল, নজর রেখেছ তো? ভীষণ ছিঁচকে কিন্তু। আর শোন, মা বলে দিয়েছে, দু’ টাকার এক পয়সা বেশি দিয়ো না। লোভ বেড়ে যাবে। তখন আমরা বিপদে পড়ব।

ননী হাসল। চুলে চিরুনি চালাতে গিয়ে বলল, আচ্ছা পিউ?

উঁ?

গাবুকে চিনিস তুই?

পিউয়ের চোখে বিস্ময় ফুটল একটু। বড়ো চোখে তাকিয়ে বলল, খুব চিনি। কেন গো নোনেদা?

ছেলেটা কেমন রে জানিস? ননী নিজেই বুঝল না, হঠাৎ, এ প্রশ্ন কেন পিউকে করছে।

পিউ বলল, হঠাৎ গাবুদার কথা কেন জিগ্যেস করছ, আগে বলো?

এমনি।

পিউ কেমন হেসে একটু গলা চেপে বলল, এমনি নয়। ইউ হ্যাভ এ সার্টেন মোটিভ। বলো না?

ননী একটু বিব্রত বোধ করল। গাবু ওদের কাছাকাছি বাড়ির ছেলে। পিউয়ের সঙ্গে কি কোনো সম্পর্ক আছে? হঠাৎ ননীর মনে পড়ে গেল, একদিন—প্রায় মাসখানেক আগে নেতাজীর স্ট্যাচুর কাছে গাবুর মোটর সাইকেলের ব্যাকে পিউকে দেখেছিল। আর কৃষ্ণা বলত, পিউয়ের অনেক ছেলেবন্ধু আছে। জানিস দাদা? তবে তাই বলে ওকে খারাপ মেয়ে ভাবিসনে। পড়াশোনায় স্ট্যান্ড করা মেয়ে। দারুণ স্প্যানিশ গিটার বাজায়।

ননী শুকনো হাসল। না, মোটিভ কী থাকবে? হঠাৎ মনে হল ওর কথা। কারণ…

পিউয়ের মুখে উদ্বেগের আবছায়া ফুটে উঠেছে। বলল, কারণ?

এবার ননী দুম করে বলে দিল, ওর মোটরসাইকেলের ব্যাকে তোকে দেখেছিলাম যেন। আমার চোখের ভুল হতেও পারে। তাই বলছি, কৃষ্ণার অবস্থা দেখলি তো? ওধরনের ছেলেদের অ্যাভয়েড করে চলিস।

পিউ মুখ নামিয়ে গাব্দা জুতোর ডগায় কপাটে একটু আঘাত করল। তারপর মুখ তুলে ফিক করে হাসল। হাসিটা পরিষ্কার। এজন্যেই তোমাকে কৃষ্ণা বুড়ো বলত। বলত, বুড়ো, বড্ড গার্জেনগিরি ফলায় রে! তবে শোনো নোনেদা, তুমি তো জানো, আমি সব ব্যাপারে ফ্র্যাংক। ইভন মা বাবার কাছেও। বাই দা বাই, গাবুদার অনেক বদনাম আছে জানি। কিন্তু মেয়েদের ব্যাপারে ও কেমন, তুমি জানো না। তোমার জানার কথাও না। জানি আমি। এবং … কৃষ্ণাও জানত।

ননী তাকাল।

কৃষ্ণাকে একদিন লিফট দিয়েছিল গাবুদা, তুমি জানো?

ননী শুধু বলল, তাই বুঝি?

অবশ্যি কৃষ্ণার সাহস হত না—মানে মোটরসাইকেলের ব্যাকে বসার সাহস। আমিও ছিলুম। কৃষ্ণা গাবুদার পেছনে বসল, কৃষ্ণার পেছনে আমি। কলেজের গেটে দেখা হয়েছিল।

ননী দৃশ্যটা দেখতে পেল। কৃষ্ণা গাবুর কোমর বেড় দিয়ে ধরে আছে। তার পেছনে পিউ খুব অস্পষ্ট কিন্তু গাবুর মুখটা কৃষ্ণার চেয়ে স্পষ্ট। তারপর বাইরের সত্যিকার রাস্তা থেকে ক্রমশ গাবুর মোটরসাইকেল কৃষ্ণাকে নিয়ে ননীর খুলির ভেতর ঢুকে চক্কর দিতে শুরু করলে ননী নড়ে উঠল। তোকে দেরি করিয়ে দিলুম পিউ। অলরাইট। কিছু মনে করিসনে কেমন? প্লীজ ডোন্ট টেক সিরিয়াসলি।

পিউ দু’কাঁধ ঝাঁকি দিয়ে বলল, সার্টেনলি নট। তারপর বেরিয়ে গেল।

পিউয়ের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বললে পিউ খুশি হয় ননী জানে। কিন্তু ইংরেজিতে কথা তত আসে না ননীর।

তাহলে কৃষ্ণা গাবুর মোটরসাইকেলের ব্যাকে চেপেছিল! বলেনি ননীকে! আর কোনোদিন কি গাবুর মোটরসাইকেলের ব্যাকে চাপেনি কৃষ্ণা? প্রথমদিন সঙ্গে পিউ ছিল। এভাবেই তো সাহস বাড়ে এবং অভ্যাস হয়। ননীর মনে হল, পিউ জানতেও পারে কিংবা না জানতেও পারে কৃষ্ণা তারপর আর গাবুর ব্যাকে চেপেছিল কি না। কতদিন তো কলেজ থেকে ফিরতে দেরি করেছে কৃষ্ণা। বন্ধুর বাড়িতে বইখাতা আনতে গিয়েছিল বলেছে। এখন মনে হচ্ছে, গাবুর মোটরসাইকেলের ব্যাকে বসে হাইওয়েতে কিছুদূর ঘোরাঘুরি করে যে আসেনি, কে বলতে পারে?

দেখা যাচ্ছে, কৃষ্ণার জীবনের যেন কিছু কিছু ব্যাপার আছে, যা কৃষ্ণা দাদাকে বলেনি। হয়তো এমন কিছুও আছে, যা দাদাকে বলা যায় না। এই সে ননী মানুর কপালে চুমু খেয়েছে, কৃষ্ণা বেঁচে থাকলে তাকে কি বলতে পারত কোনোদিন। প্রত্যেকের এমন কিছু গোপনীর ব্যাপার থাকে, যা কাকেও বলা যায় না। আমৃত্যু লুকিয়ে রাখতে হয়। কৃষ্ণারও তেমন কিছু লুকিয়ে রাখার মতো ব্যাপার থাকা স্বাভাবিক।

ননী সেবেলা আর বেরুল না। ঝাঁটুর মা বোঁচকা বেঁধে চালডাল তেলনুন নিয়ে যাওয়ার পরই সে সদর দরজা বন্ধ করে এসে কৃষ্ণার ঘর খুলল। জানলাগুলো খুলে দিল। তারপর গোয়েন্দার মতো খোঁজাখুঁজি শুরু করল। সে—রাতে ব্যস্তভাবে ওপর—ওপর হাতড়েছিল। আজ সে তন্নতন্ন খুঁজছিল। প্রতিটি বইয়ের পাতা, খাতার পাতা। ড্রয়ার, কাপড়ের ঢাকনার তলা। তাকের জিনিসপত্র। কাপড়—চোপড়ের আলমারি। বাকসো—প্যাটরা। তারপর সে বিছানার চাদর তুলল। তোশক তুলে খুঁজল। তারপর ঠোঁট কামড়ে ধরে তাকিয়ে রইল।

এই তো সেন্টের শিশিভর্তি প্যাকেটটা এখানে রয়েছে। অজস্র চিঠিপত্রের সঙ্গে। ডাকে আসা খাম, ইনল্যান্ড পোস্টকার্ড। আর একটা বড়ো ডাইরি বই। গতবছর স্কুলে পেয়েছিল ননী। কলকাতার প্রকাশকরা প্রতিবছর শীতের সময় একগাদা করে ডাইরি ক্যালেন্ডার পাঠায়। ননী কৃষ্ণাকে দিয়েছিল ডাইরিটা।

কিন্তু সেন্টের শিশি তোশকের তলায় রেখে গেল কেন কৃষ্ণা? এই সেন্ট মেখে সে কলেজে গেছে। আর বাড়ি ফেরেনি। ফিরবে না কোনোদিনও। অথচ সেন্টের প্যাকেটটা এখানে লুকিয়ে রেখে গেল। কেন?

যে কৃষ্ণাকে ননী আগাপাশতলা জানে ও বোঝে বলে ভাবত, যে কৃষ্ণার সব আচরণের মানে করতে পারত ননী—সেই কৃষ্ণার এই আচরণের মানে করতে পারছে না। ফলে সে দেখছে, বস্তুত কৃষ্ণার যেন কিছুই সে বোঝেনি এতকাল! সব আচরণের ভুল মানেই করেছে হয়তো।

ননী টের পেল, তার ভেতরটা অক্ষমতায় রাগে ক্ষোভে গরগর করছে। ভেবেছিল, এই তো এতটুকু সেদিনকার মেয়ে—যাকে ন্যাংটো দেখেছে, এবং বেঁচে থাকা অব্দি যার কত নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতায় ননী হেসেছে, তার এই অস্পষ্টতা আর দুর্বোধ্যতা ননীকে জ্বালাতে থাকল।

সে কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠিগুলো একটার পর একটা তুলে দ্রুত চোখ বোলাতে থাকল। সবই আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের চিঠি—যারা বাইরে আছে, এবং কিছু এই শহরেরও। কোনো চিঠিই সন্দেহযোগ্য নয় দেখে তার জ্বালাটা একটু কমল। কোনো গোপন প্রেমপত্র নেই কৃষ্ণার। অন্তত রেখে যায়নি।

ননী ডাইরিটা তুলে নিয়ে পাতা ওলটাল। কৃষ্ণা ডাইরি লিখত। ননীকে বলেনি আর কবিতাও লিখত। ঝকঝকে গোটাগোটা হরফে লেখা কবিতাগুলো আগে সে মন দিয়ে পড়ল। তারপর টের পেল, চোখ ফেটে জল আসছে। আটকানো যাচ্ছে না। হরফগুলো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।

তার বোনের একটা হৃদয় ছিল—নারীর হৃদয়। কমনীয় এবং আবেগময়। ননী অতটা তলিয়ে বোঝেনি কোনোদিন। পৃথিবীর ঘাস গাছ পাখি প্রজাপতি আর বৃষ্টি—রোদ—জ্যোৎস্নার জন্যে মুঠো মুঠো আবেগময় ভালোবাসা ছিল তার বোনের। তার একজন ‘তুমি’ ছিল। ননী স্কুলমাস্টারের দক্ষতায় বুঝল, সে—’তুমি’ এক বিমূর্ত ‘তুমি’। প্রেমিকও হতে পারে, ঈশ্বরও হতে পারে—রবীন্দ্রনাথের কবিতায় যেমন। কিন্তু প্রেমিক হলেও সে রক্তমাংসের নয়, ননী এতে সুনিশ্চিত। না, গাবুটাবু নয়। এরপর ননী দেখল, কৃষ্ণা গানও রচনা করেছে। নিজেরই রচনা। কারণ তার গানের খাতা আলাদা। ননী ডাইরিবইটা বুকে চেপে হেলান দিল খাটের বাজুতে। চোখ বুজে কান্নাটা দমন করল।

একটু পরে সিগারেট ধরিয়ে সে ডাইরি পড়া শুরু করল। প্রায় এক বছরের মধ্যে মাত্র পনেরোটা দিনের স্মৃতি লিখেছে কৃষ্ণা। খুব—সংক্ষিপ্ত কাটাকাটা বাক্য। একখানে একটু থামল ননী। ‘…আজ খেতে বসে দাদা বলল, দাঁড়া। তোর জন্যেই দেখছি আমাকে একটা বউটউ আনতে হবে।’ …হুঁ বঁটিতে হাত কেটেছিল কৃষ্ণা। ননী মাছটা বাজার থেকে অন্যদিনের মতো কেটে—বেছে আনেনি। দিনটা ননীর মনে আছে।

হঠাৎ আবার এক জায়গায় চোখ আটকে গেল ননীর। নিষ্পলক তাকাল। আবার খুলির ভেতর ঝাঁপিয়ে পড়ল গাবুর মোটরসাইকেল। চক্কর দিয়ে ঘুরতে থাকল।

‘….আজও গাবুদা গেটের সামনে আমাকে খুব পীড়াপীড়ি করছিল। আমার খুব ভয় করে মোটরসাইকেল চাপতে। যদি ছিটকে পড়ে যাই, কী হবে? দাদার মুখটা মনে পড়ে। দাদা খুব বকবে। আমি দাদাকে কথাটা বলিনি। উলটে আমাকেই দোষী করবে। বলবে, আমিই প্রশ্রয় দিয়েছি গাবুদাকে। কিন্তু প্রশ্রয় যা দেবার, দিয়েছে তো পিউ। পিউয়ের সঙ্গে আমার খুব ঝগড়া হয়ে যাবে একদিন’…

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কৃষ্ণা খুন হল। এ পাতার তারিখ তার আগের শুক্রবারের। ননীর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। ডাইরিটা বুজিয়ে সে হিংস্র—হাতে ধরে বসে রইল কিছুক্ষণ। তারপর আস্তে আস্তে খাট থেকে নামল।

একটু পরে ননী থানার দিকে সাইকেলের হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে দিল। পেটা ঘড়িতে ঘন্টিদার তখন ঢং ঢং করে চারটের ঘণ্টা বাজাচ্ছে।….

‘শি রেসিস্টেড উইথ অল হার স্ট্রেংথ” হাতের তালুতে ‘চেরা ক্ষতচিহ্ন’ ছিল। কজড ‘বাই এ মেটাল স্ট্রিং—সামথিং লাইক এ চেন।’ গাবুর সঙ্গে ইদানীং দেখা হয়নি ননীর। কিন্তু তার গলায় মিহি চেন দেখেছে ননী, এটা ঠিকই। হ্যাঁ গাবু ছাড়া কেউ নয়।

মানু কান খাড়া শুনছিল। শোনার পর একটু হাসল। বিষণ্ণ হাসি।

ননী বলল, হাসছ যে?

মানু চমকাল সঙ্গে সঙ্গে। হাসিটা নিভিয়ে বলল, না। এমনি। তোমার কি ধারণা, পুলিশ সেই…গাবু না কী বললে যেন?

গাবু। আমাদের পাড়ার গৌতম ঘোষের ছেলে।

জানি। তুমি কি ভাবছ, পুলিশ ওকে অ্যারেস্ট করবে। গৌতম ঘোষ—কী যেন একটা নাম আছে ভদ্রলোকের….

গোমো কায়েত।

হ্যাঁ, গোমো কায়েত একজন বিরাট লোক! পুলিশ কিছু করবে না দেখে নিয়ো।

ননী আস্তে আস্তে বলল, দেখা যাক।

মানু আনমনে বলল, আমার ধারণা, তোমার ওপর ওরা হামলা করতে পারে। তোমার সেফটির কথা ভাবছি। তুমি পুলিশকে একথা বলোনি বুঝি?

ননী নিষ্পলক চোখে তাকাল। কী কথা?

তোমার সেফটির কথা।

আমার বডিগার্ড আমি চাইনি। চাইলেই বা দেবে কেন। কে আমি?

মানু দ্রুত বলল, তুমি রেগে যাচ্ছ কেন? ওরা কী ধরনের মস্তান, তা তো তুমি জানো না? তাছাড়া তুমি পাড়ায় একা থাকো। আমার সত্যি বড় ভয় করছে, জানো?

ননী বলল, তাহলে কি তুমি বলতে চাইছ, সব চেপে যাব? মুখ বুজে খাব—দাব চাকরি করব, ফূর্তি ওড়াব?

মানু ছটফট করে বলল, না, না! আমি তা বলতে চাইনি। আমি খালি ভাবছি তোমার—সেফটির কথা।

ননী ভুরু কুঁচকে উঠোনের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি জেনে গেছি, সেফটি একটা অবান্তর শব্দ। মিনিংলেস। প্রতিমুহূর্তে একটা কিছু ঘটতে পারে প্রত্যেকের জীবনে। কোনো গ্যারান্টি নেই।

মানু নিজেদের আঙুল খুঁটতে খুঁটতে বলল, তবু তো সবাইকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে, ননী। হচ্ছে না? মানুষ যখন রাস্তায় হাঁটে, সামনে পিছনে দেখেই হাঁটে। পা বাড়াতে গিয়ে দেখে নেয়, গর্ত আছে নাকি।

ননী একটু হাসল। তুমি বড্ড হিসেবি বরাবর। কী সাবজেক্ট ছিল কলেজে? অর্থনীতি না? কাজেই তুমি….

মোটেও না। মানু মাথাটা দোলাল। অনেক ঠকে শিখে তবে বলছি। একটু প্রাকটিক্যাল না হয়ে উপায় নেই। রফা করে চলতেই হচ্ছে সবাইকে। যা দিনকাল পড়েছে।

কিছু পড়েনি। বরাবর এরকম। ননী শক্ত গলায় বলল। বদমাশরা ছিল, আছে, থাকবে। ম্যান ইজ অ্যানিম্যাল। তাকে শায়েস্তা করতে অ্যানিম্যাল দরকার। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার ব্যাপার। এমনি নিয়ম আছে বলেই মানুষ অ্যাদ্দিন বেঁচে আছে। দাঁতের বদলে দাঁত। চোখের বদলে চোখ।

ননীর মুখটা বিকৃত দেখাচ্ছে। মানুর বুকের তলায় বিদ্যুতের ঝিলিকের মতো একটা অতি—ঠান্ডা শিহরণ ছড়িয়ে গেল। সে আস্তে বলল, তোমাকে আমি ঠিক বোঝাতে পারছি না, জানো! আমার খালি ভয় হচেছ, গৌতম ঘোষ পয়সাওয়ালা লোক। ওর ছেলের কথা যা বললে, শুনে বুঝলাম ভীষণ গুন্ডাটাইপ। দলবল তো আছেই বললে। নিশ্চয় পুলিশ ওকে পরে ছেড়ে দেবে—বলবে, সাক্ষী প্রমাণ পাচ্ছে না—তখন…

তখন কী?

যদি তোমার ক্ষতি করে ওরা?

ননী উত্তেজনায় উঠে দাঁড়াল। মানু তুমি কী বলছ বুঝতে পারছি না। কৃষ্ণার কিলার ও!

মানু তার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকার পর হঠাৎ বলল, তুমি এত নিশ্চিন্ত হচ্ছ কীভাবে?

কীভাবে মানে?

তুমি কেমন করে কনভিন্সড হলে যে কৃষ্ণার কিলার ও?

তোমাকে তো বললুম সব।

মানু মাথা দুলিয়ে বলল, না। শুধু ওটুকু দিয়ে কনভিন্সড হওয়া যায় না। কে বলতে পারে, তুমি ছায়ার পেছনে দৌড়াচ্ছ না? তোমার ভুল হতেও তো পারে? সবটাই কো—ইনসিডেন্ট হতেও তো পারে?

ননী তার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর শান্তভাবে বলল, গাবুর একটা অভ্যাস আছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি। ভীষণ জোরে মরিয়া হয়ে মোটরসাইকেল চালায়। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ ঢালুতে নেমে সার্কাসের কসরত দেখাতে চেষ্টা করে। আমার মনে পড়ছে, গত শ্রাবণে ঝুলনপূর্ণিমায় নদীর ধারে মেলা বসে দেখেছ। সেই মেলায় গাবু মোটর সাইকেল নিয়ে ভিড়ের মধ্যে যেভাবে ছুটে বেড়াচ্ছিল, রাগে আমার রি রি করে গা জ্বলছিল। আমি কৃষ্ণাকে টেনে নিয়ে চলে এলুম। আমাদের ঘোরাটা মাটি হয়ে গিয়েছিল। আর গাবু এভাবে কতবার অ্যাকসিডেন্টও করেছে শুনলুম। ইচ্ছে করেই যেখানে সেখানে মোটরসাইকেলের বাহাদুরি দেখানোর অভ্যাস ওর আছে। পুরনো প্যারেড গ্রাউন্ডে সেদিন ঝড়ের সময় গেটম্যানের বউ তাকেই দেখেছিল।

মানু বলল, দেখেছিল? গাবুকে সে চেনে বলেছে?

তা বলেনি। একটু দূর থেকে দেখেছিল। তাছাড়া তখন ঝড়ে সব আবছা। আকাশও কালো।

মানু একটু চুপ করে থাকার পর বলল, কে জানে! আমার খালি মনে হচ্ছে, তুমি ভুল লোকের পেছনে ছুটতে যাচ্ছ।

ননী মেঝে দেখতে থাকল, ভুল লোক? পিউও যেন ঠিক একথাটাই বলতে চাইছিল সকালে। গাবু ইজ দা রং ম্যান। আর অরুণ নন্দী বলছেন, ‘ভেরি ইমপরট্যান্ট ক্লু ননীবাবু। কিন্তু এবার দেখতে হবে, গাবুর ব্যাকে কে ছিল। গাবুর সঙ্গে তার কোন ইয়ারের মাখামাখি বেশি। আমাদের ইনফরমেশন—গাবুর সঙ্গে ধাঙড়বস্তির একটা ছেলের যোগাযোগ খুব বেশি। লটকনিয়াকে চেনেন না? ননী অল্পস্বল্প চেনে। লটকনিয়া একটু—আধটু লেখাপড়াও জানে। দেখলে মনে হয় খ্রিস্টানপাড়ার ছেলে। হুঁ, তার গলাতেও চেন আছে। ছোট্ট ক্রুশ আটকানো। লাল বর্ডার দেওয়া কালো হাতকাটা গেঞ্জি আর বেলবটস পরে ঘুরে বেড়ায়। হাতে বেঢপ আকারের ঘড়ি আছে। ননী দেখেছে। ননীকে সে চেনে। স্যার বলে ডেকেছিল যেন কবে।

কিন্তু অরুণ নন্দীর ধারণা, ব্যাকে তাকে নিয়ে গাবুর ঘোরাটা কল্পনা করা যায় না। সোস্যাল ডিফারেন্স বড্ড বেশি। তাছাড়া গাবুর চালচলনে সেকেলে বাবু—আভিজাত্যের অহমিকা বেশ উগ্র। ফ্যাশান—দুরস্ত ছেলে গাবু। ফিল্মের ভিলেনের টাইপ অথচ—মানসম্মানবোধ ভারি টনটনে। ট্রাফিক আইন ভাঙার জন্যে তাকে দু’চারবার থানায় আনা হয়েছে। নন্দী ওকে আঁচ করে নিয়েছেন। ‘গাবুর অ্যাপিয়ারেন্সে কী একটা আছে, যাকে আপনি এ স্ট্রং পার্সোনালিটি বলে ভুল করবেন।’ নন্দী একটু হেসে ফের বলছেন, ‘অফ কোর্স এ ভেরি মিসগাইডিং পার্সোনালিটি। আর দেখা হলেই কী বলে জানেন? কী স্যার, কবে খাওয়াটা পাচ্ছি?’ ননী বলছে, কীসের? নন্দী আরও হেসে বললেন, ‘আমার বিয়ের। আবার কীসের!’

ননী একটা ভারি নিশ্বাস ফেলে মুখ তুলল। মানুর দিকে তাকাল। তার চোখে লেখা : ভুল লোক বলছ?

মানু বলল, কৃষ্ণার শ্রাদ্ধশান্তিটা হয়ে যাক। তারপর কয়েকটা দিন কোথাও ঘুরে এসো। আর…

চুপ করতে দেখে ননী বলল, আর?

তুমি ডাকলে আমিও তোমার সঙ্গে যেতে পারি। আমারও বড্ড খারাপ লাগছে। অসহ্য লাগছে ওখানে থাকতে। মানু নিজের আঙুল দেখতে থাকল।

ননী এবার সরলমনে হাসবার চেষ্টা করল। তুমি আমার সঙ্গে যেতে পারবে?

না পারার কী আছে?

একসঙ্গে থাকবে?

মানুর কানের লতি ও চোয়ালের ওপরটা রাঙা হয়ে গেল। সে মুখ ফিরিয়ে বলল, অসভ্যতা কোরো না।

ননী জেদির মতো একটু ঝুঁকে বলল, কে অসভ্যতা করছে? আমি বলছি, কী পরিচয়ে তুমি আমার সঙ্গে যাবে? দেশটা তো ওয়েস্ট নয়। লোকেরা স্বভাবত কৌতূহলী হবে।

মানু রূঢ় কণ্ঠস্বরে বলল, কৃষ্ণাকে নিয়ে তুমি একবার কোথায় যেন গিয়েছিলে। কেউ কৌতূহলী হয়নি।

ননী কথাটা সহ্য করল। ঢোক গিলে বলল, কে বোন কে কী, তা বোঝা যায় না। লোকেদের ইনটুইশান বলে দেয়।

আমি কী তোমার? মানু শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে কথাটা ছুঁড়ে মারল ননীর মুখে।

ননী চোখে চোখ রেখে, কৃষ্ণার লাশ দেখতে—থাকা সেই দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠান্ডা স্বরে বলল, তুমি যেই হও, তুমি কৃষ্ণা নও।

মানু কোনো কথা না বলে উঠে দাঁড়াল। তারপর বারান্দা থেকে সিঁড়ির ধাপগুলো একটার পর একটা দেখে পা ফেলে নেমে গেল। উঠোন থেকে সদরদরজা অব্দি সে ধীরে হাঁটল। ননী ঘুরে বসেছিল। একবার ডাকবে ভাবল। কিন্তু ডাকল না। মানু ভেজানো দরজা নিঃশব্দে ফাঁক করে বেরিয়ে গেল। তারপর বাইরে থেকে কপাটদুটো বেশ জোরে টেনে ভেজিয়ে দিল। খুব শব্দ হল। বজ্রপাতের মতো শব্দ।

ননী আবার ভাবল, উঠে গিয়ে ডাকবে তাকে। কিন্তু ডাকল না। উঠোনে ছায়ার রঙ ঘন হয়েছে। গাছপালার মাথায় সুরকিগুঁড়োর মতো রোদ্দুর। পাখির ডিমের মতো চৈত্রের আকাশ। দিনশেষের এই বিষণ্ণতায় মানু থাকলে ননীর মনটা ভালো হত। জোর পেত। ওকে তার এত দরকার। অথচ মানু থাকল না। হঠাৎ যেমন এসেছিল, হঠাৎ তেমনি চলে গেল।

ননী উঠে গিয়ে তার ঘর ও বারান্দার আলোটা জ্বেলে দিল।