৪
ফেলু গোঁসাই মানুর দূরসম্পর্কের পিসেমশাই। পৈতৃক ঠিকানা একটা ছিল। সেটা জিয়াগঞ্জে। ওখানে রাজবাড়ির রবরবার সময় অনেক বাঙালি—অবাঙালি কালোয়াতের আখড়া ছিল। ফেলুবাবু তাঁদের কাছেই ন্যাড়া বেঁধে ছিলেন প্রথম যৌবনে। নাম—টাম হলে খুঁটি উপড়ে ছিলেন। তারপর থেকে এখানে—সেখানে ঘুরে বেড়ান। গাঁগেরামেও গান শেখাতে যেতেন। ওস্তাদ গাইয়ে বলে নাম ছোটার পর ইচ্ছে করেই একটু—আধটু খেয়ালিপনা দেখাতেন। ছাত্র—ছাত্রীরা বরদাস্ত করলে সেটা বাড়াতে—বাড়াতে ক্রমে স্বভাবগত করে ফেলেছিলেন। তারপর চুল পাকল, গলাও কিছুটা মরে এল—কিন্তু অনেক বছর ধরে গড়ে তোলা ওই স্বভাব সঙ্গ ছাড়ল না। রাতারাতি ছাত্রের সঙ্গে ঝগড়া করে বেরিয়ে পড়েন। কষ্ট পান। শেষ অবধি অনেক ঠেকে ঠিক করেছিলেন, শহরে এসে পাকাপাকিভাবে স্কুল করে থাকবেন। মানুদের বাড়ি এসে হাজির হয়েছেন সেই মতলবেই। মানুর নানা জায়গায় জানাশোনা। কম ভাড়ায় একটা ঘর আর ছাত্রছাত্রী জুটিয়ে দেবে বলেছিল।
ফেলুবাবুর আরেক স্বভাব টোটো করে ঘুরে বেড়ানোর। দিন তিনেক এসেছেন। তার মধ্যে এ শহরের অন্ধিসন্ধি ঘুরে বেড়িয়েছেন উদ্দেশ্যহীনভাবে। অনেক ভোরে বেরিয়ে যান। ফেরেন সকাল গড়িয়ে। মানু যখন ফিরল, তখন ফেলু গোঁসাইও সবে ফিরেছেন। বাইরের ঘরে তক্তাপোশে বসে তানপুরোর খাঁজগুলো পিন দিয়ে খুঁচিয়ে ময়লা সাফ করেছিলেন। মানু রিকশো থেকে নেমে বাইরের বারান্দায় উঠলে বললেন, মামনসা নাকি রে?
মানুর আসল নাম মানসী। গোঁসাই ঠাট্টা করে বলেন মামনসা। শব্দ দুটো একসঙ্গে জড়িয়ে মামনসা করে বলেন। মানুর বয়স আরও কম ছিল যখন, তখন রেগে গিয়ে বলত, তার ছিঁড়ে দেব। গোঁসাই জিভ কেটে বলতেন, ওই তো! ফোঁস করা দেখতেই তো চেয়েছিলুম। ফোঁস করেছিস, করেছিস। কিন্তু তাই বলে ছোবল মারিসনি বেটি।
মুসলিম কালোয়াতদের সঙ্গে থেকে গোঁসাই মাঝে মাঝে উর্দু বা মুসলমানি শব্দ ব্যবহার করেন। ছাত্র—ছাত্রীদের বেটা বা বেটি ছাড়া বলেন না। মানু তাঁর ছাত্রী নয়। গানের ধার ধারে না। তবু মানুকে বেটি বলেন। আর মানুর ভাই আদিত্য ওরফে জনকে সম্ভাষণ করেন বেটা বলে। জন তুখোড় ছেলে। স্বভাবে হাড়েহারামজাদা। বোম্বে ছবির ভিলেনের চালে কথাবার্তা বলে। বেটা শুনে সে পালটা একটা প্রখ্যাত ফিল্মি ডায়ালগ শুনিয়ে দেয়। যা গুরুজনের প্রতি আদৌ প্রয়োগ করা যায় না।
মানু ঘরে ঢুকে হনহন করে চলে যাচ্ছিল ভেতরে। গোঁসাই বললেন, শোন বেটি। বহুৎ উমদা খবর আছে। আয় বোস…বলে তক্তাপোশে বাঁ হাতে থাপ্পড় দিলেন তোশকের ধুলোময়লা চাদর ফুঁড়ে উড়ে গেল। আচায্যিপাড়া গিয়েছিলুম। সেই পুরনো দোস্ত বেজার বাড়ি। বুঝলি? বলল ওখানে একটা আস্ত বাড়ি খালি পড়ে আছে। পুরনো জমিদারবাড়ি। শরিকদের মধ্যে হাইকোর্ট হয়ে এক শরিক দখল পেয়েছে। ওপরে তিনটে ঘর। একেকটা ময়দান। আশেপাশে গেরস্থবাড়ি নেই যে আপত্তি তুলবে।
মানু বলল, অতগুলো ঘরের ভাড়া কীভাবে দেবেন? সে তো অনেক টাকা চাইবে।
গোঁসাই সোনা বাধানো দাঁতটা বের করে হাসলেন। হাসালি মামনসা! ফেলু গোঁসাইয়ের টাকার অভাব? যে খায় চিনি, জোগান চিন্তামণি। দেখবি, ম্যানেজ হয়ে যাবে গুরুজী কী কিরপাসে।
বেশ তো। বলে মানু পা বাড়াল।
গোঁসাই বললেন, আরে শোন, শোন। তারপর কোথায় ঘুরলুম, কী সব দেখলুম, বলি শোন।
মানু অগত্যা একটু হেসে আসছি বলে ভেতরে ঢুকল। আগে মাকে ননীর খাওয়ার কথাটা বলা জরুরি। তাছাড়া, মানুর মা সুপ্রভাও ননীর বোনের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ভোরবেলা মানুকে ডাকাডাকি করে উঠিয়েছিলেন সুপ্রভা। গিয়ে একবার খোঁজখবর নিতে বলেছিলেন। মানু বোঝে, মায়ের আসল টান ননীর বোনের দিকে নয়, ননীর দিকেই বরাবর বেশি।
মানু বলল, মা! রাঁধা—বাড়া নিশ্চয় শেষ করোনি?
সুপ্রভা বারান্দায় এসে বললেন, না রে! কৃষ্ণা ফিরেছে দেখলি?
মানু গম্ভীর মুখে মাথা দোলাল।
সুপ্রভা দু’পা এগিয়ে চাপা গলায় বললেন, সে কী? এখনও ফেরেনি? তাহলে তো বড় সর্বনেশে কথা! হ্যাঁ রে, ননী ঘরটর খুঁজেছে ভালো করে? কিছু লিখেটিখে রেখে যায়নি তো?
মানু বিরক্ত হয়ে বলল, কী বলছ? কৃষ্ণা কতবার এসেছে। ওকে কি তেমন মেয়ে মনে হয়েছে তোমার? শোনো মা, ননীদা এসে খাবে। রাতে কিছু খায়—টায়নি। কী করছ এ বেলা?
সুপ্রভা বেজার মুখে জবাব দিলেন, কী করব আর? তুই বেরিয়ে গেলি। আর জন তো নটার আগে ওঠে না। আজ বাবু এখনও শুয়ে আছে দ্যাখ গে। বলছে শরীর খারাপ, তার মধ্যে দু’বার চা খাওয়াও হয়েছে শুয়ে—শুয়ে। ওদিকে গোঁসাইদাও নেই যে, থলেটা ধরিয়ে দেব হাতে। শেষে আমিই গেলুম। যা পেলুম, আনলুম। এদিকে হাবলের মাও আজ আসেনি।
মানু চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আনমনা চাহনি। কিছু ভাবছে আর নাক খুঁটছে।
সুপ্রভা কিচেনের দিকে পা বাড়িয়ে বললেন, ননী খাবে—আগে জানলে পোনাটোনা আনতুম। খালের ধারে একবার ঘুরে আয় না মানু। এখনও বড় মাছ পেতে পারিস। আমি দুশো খয়রা এনেছি।… বলে ঘুরে হাতের তালু দেখিয়ে দিলেন। এত বড়ো বড়ো। টাটকা খয়রা।
মানু বলল, দেখছি।
মানু মায়ের সঙ্গে এক বিছানায় শোয়। এটা মাঝের ঘর। পুরনো বিশাল খাট আছে। টুলে পা দিয়ে উঠতে হবে, এমন উঁচু। পরের ঘরটায় এক সময় মানু আর জন থাকত। এখন পুরনো জিনিস, আলমারি, বাকসো পেঁটরায় ঠাসা। চওড়া একটা তক্তাপোশে ছেলেবেলায় পাশাপাশি ভাইবোন ঘুমোত। পড়াশোনা করত। তখন মানুর বাবা বেঁচে ছিলেন। শহরের মধ্যিখানে ফোটো—স্টুডিয়োর কারবার ছিল অক্ষয়বাবুর। মৃত্যুর পর পার্টনার ভদ্রলোক কিনে নিয়েছিলেন। অক্ষয়বাবু সঞ্চয়ী মানুষ ছিলেন। এই বাড়িটা আর ভালো টাকাকড়ি রেখে গিয়েছিলেন। দশ বছর ধরে খেতে খেতে এখন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। মানু আর জন এক বছরের ছোট—বড়ো। দু’জনের চেহারার মিলটা দেখার মতো—যেন যমজ। মানু বি এ পাশ করে চাকরি—বাকরি খুঁজেছে। বাইরে চান্স পেয়েছিল। কিন্তু যেতে চায় না। এ শহরেই সে থাকতে চায়। আর জন বার দুই হায়ার সেকেন্ডারিতে ফেল করে আর ওপথে পা বাড়ায়নি। তার চালচলন মা—দিদির অপছন্দ হলেও সে তোয়াক্কা করে না। ইয়ারবন্ধু নিয়ে আড্ডা মেরে বেড়ায়। কখন বাড়ি ঢোকে, কখন খায়, কিছু ঠিক নেই। তাই সে বাইরের ঘরটার দখল নিয়েছিল। ফেলু গোঁসাই আসার ফলে আবার তাকে পুরনো ঘরে ফিরতে হয়েছে। গোঁসাইয়ের ওপর মহা খাপ্পা তাই। সেই রাগ দেখাতেই সে এত বেলা অবধি শুয়ে আছে।
মানু ঘরে ঢুকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিকঠাক করে নিল। তারপর কিচেনের দিকে পা বাড়িয়ে বলল, মা! থলে কই?
যাচ্ছিস? বলে সুপ্রভা বাজারের থলে নিয়ে বেরুলেন। তারপর আঁচলের গেরো খুলে একটা পাঁচ টাকার নোট এগিয়ে দিলেন।…কাটা পোনা দেখিস। না পেলে গোটাই আনিস বরং দেড়শোটাক আনলেই হবে। গোঁসাইদাও এক পিস খাবেন। আলু কেটে রাখছি। পটল এনেছি। দোলমা করব বরং। ননীর যা খাওয়া দেখেছি! কাকের আহার।
থলে ও টাকা নিয়ে ঘুরে মানু একবার জনের ঘরের দিকে তাকাল। বাবুর কেতা আছে। এ দরজায় পর্দা ছিল না। কখন বাইরের ঘরের পর্দাটা এনে টাঙিয়েছে, মানু লক্ষ্য করেনি। তাই কাল থেকে ও—ঘরের এদিকের দরজাটা কেমন ফাঁকা—ফাঁকা ঠেকছিল।
মানু পর্দা একটু ফাঁক করে জনকে শুয়ে থাকার জন্য কড়া কথা বলতে গেল। এই বাঁদর! আর কতক্ষণ নবাবি করবি? এগারোটা বাজতে চলল জানিস?
জন উপুড় হয়ে বুকে বালিশ রেখে শুয়েছিল। মুখ ফেরাল না। বলল, শরীর খারাপ।
কী শরীর খারাপ? রোজ শরীর খারাপ? না উঠলে জল ঢেলে দেব বলছি!
ভাগ! দালালি মেরে এসে এখন ভ্যাজর—ভ্যাজর করা হচ্ছে। যেখানে যাচ্ছিস যা।
উঠবিনে তুই?
জন পা দুটো নাচাতে নাচতে বলল, মাছ আন গে, মাছ! ইয়া মোটা মোটা পিস আনবি! জোর খাওয়াবি।
দু’চোখ জ্বলে উঠল মানুর….কী বললি? বলে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ল।
জন ঘুরে চিত হল। বাইরে সুপ্রভা চড়া গলায় বলে উঠলেন, মানু। আবার পেছনে লাগতে গেলি? যেখানে যাচ্ছিস, যাবি—তা নয়, ওকে ঘাঁটাতে গেলি কেন বলতো?
পিঠোপিঠি ভাই—বোনের যা নিয়ম। বনিবনা বরাবর হয় না বিশেষ। এখন দুটিতেই বড় হয়েছে; তবু মাঝে মাঝে পরস্পর পরস্পরকে হাত তুলে মারতে যায়। তবে মানুর সঙ্গে এঁটে উঠতে পারে না জন। শেষ অবধি হার মেনে গুম হয়ে বেরিয়ে যায়। সেবেলার মতো আর ফেরে না। তখন সুপ্রভা খুঁজতে বেরোন, সাধাসাধি করে নিয়ে আসেন।
জন ঘুরেছিল, মানু তাকে বেমক্কা মেরে বসবে বলেই। কিন্তু সে ঘুরে চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানু থমকে দাঁড়িয়েছে। জনের গালে, ঠোঁটের পাশে দু’জায়গায় দু’ ফালি প্লাস্টার আঁটা। খালি গা, পরনে ডোরাকাটা আন্ডারওয়ার। একটা খোলা জানলার পাশেই বিছানা। বাকি দুটো জানলা বন্ধ। কিন্তু ওই আলোতেই দেখা যাচ্ছে, জনের গলা ও বুকের ওপর রুপোলি চেনের আশেপাশে কয়েকটা আঁচড়ের কালো দাগে লাল অ্যান্টিসেপটিক ওষুধের ছোপ।
জন হঠাৎ ফিক করে হাসল। তারপর উপুড় হল আগের মতো। যেখানে যাচ্ছিস যা। মাকে জ্বালাস নে। বললুম না, শরীর খারাপ।
মানু ঠোঁট কামড়ে ধরে বেরিয়ে এল। বাঁদর নিশ্চয় কোথাও মারামারি করেছে কাল। বেরিয়েছিল কখন, লক্ষ্য করেনি মানু। ফিরেছিল অনেক রাতে। পাঁচিল ডিঙিয়ে বাড়ি ফেরার অভ্যাস আছে। তবে সুপ্রভার কান সজাগ থাকে। দরজা খুলে বলেছিলেন, জন এলি?
মানসী তখন শুয়ে পড়েছে। মাথায় কৃষ্ণার ভাবনা। বাইরে জনের গলা শুনেছিল। কিছু খাব না। খেয়ে এসেছি এক জায়গায়। তারপর তার ঘরের দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দও শুনেছিল মানু।
তবে এ কিছু নতুন নয় জনের। কতবার মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে ফিরেছে। বার দুই পুলিশও এসেছে ওর খোঁজে। কিন্তু কোনোবারই অ্যারেস্ট করেনি জনকে। তাই এসব গা—সওয়া মানুর।
অথচ শরীরটা কেমন ভারী হয়ে উঠেছে টের পেল সে। বাইরের ঘরে গোঁসাই পিড়িং পিড়িং করে এবার সুর বাঁধছেন। মানুকে দেখে বললেন, আয় বেটি। বৈঠ যা।
আসছি এক্ষুনি।…বলে মানু বাইরের দরজার দিকে দ্রুত এগোল।
গোঁসাই তানপুরা রেখে লম্বা মেয়েলি চুলের স্প্রিংগুলোকে আদর করতে করতে বললেন, মলো ছাই! শুনবি তো? বেজার ওখান থেকে সোজা স্টেশনে গিয়েছিলুম জানিস? আমার এক ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে এ এস—এম—ওর সঙ্গে। ঠিকানা দিয়েছিল। দেখে তো খুব খাতিরের ঘটা করে ছাড়ল। তারপর শোন না! ওরে বেটি, শোন।
গলায় এক ধরনের ছেলেমানুষী মিনতি আছে গোঁসাইয়ের, এড়ানো কঠিন। মানু ঘুরে বলল, আমার কী? আপনিই খেতে পাবেন না। বাজার হয়নি জানেন না?
পলা ও মুক্তো যথেচ্ছ বসানো অনেকগুলো আংটিপরা বাঁ হাত তুলে গোঁসাই বসলেন, মারব এক থাপ্পড়। দেখিনি বুঝি? সুপু খয়রা এনেছে। পুঁইডাটা এনেছে। তোমার গে’ কচি পটল এনেছে। আর কী যেন…
মানু হাসল।….আরেকজন খাবে যে! আপনার সেই হবু ছাত্রীর দাদা!
গোঁসাই নড়ে বললেন। হ্যাঁ রে, সকালে সুপু বলছিল, কাল বিকেলে সেই যে গেল—আর নাকি বাড়িই ফেরেনি?
মানু শুধু মাথা দোলাল। তার তাড়া লেগেছে। হু হু করে সময় চলে যাচ্ছে।
হঠাৎ গোঁসাই ডান হাতে চট করে একটা তুড়ি বাজিয়ে বলে উঠলেন, এই মানু! মানু! শোন, শোন!
কী পিসেমশাই? মানু অবাক হয়ে তাকাল।
গোঁসাই চাপা গলায় বললেন, শোন! আমি স্টেশন কোয়ার্টারে রেবার কাছ থেকে বেরিয়ে ওদিকে ভানীর কাঠগোলায় গিয়েছিলুম। সেই যে হাইওয়ের ধারে। পেছনে ঝিলমতো আছে। তা…
গোঁসাই হাঁ করে আছেন। সোনা বাঁধানো দাঁতটা চিকচিক করছে। মানু বলল, কী? বলুন?
মানু! এই দ্যাখ বেটি, আমার গা কাঁপছে।
মানু দ্রুত কপাটে হাত রেখে কাঁপা গলায় ফের বলল, কী?
হয়তো—ভগবান না করেন, আমার ভুল হতেও পারে…একবার মাত্র দেখছি কাল বিকেলে! কিন্তু এখন হঠাৎ মনে হল, আমি সেই মেয়েটিকেই দেখে এলুম রে! তখন অতটা খেয়াল করিনি।
মানু থর থর করে কেঁপে উঠল। কোথায় দেখলেন কৃষ্ণাকে?
জিভ চুক চুক করে মাথা নেড়ে গোঁসাই ধরা গলায় বললেন, ঝিলের ধারে ধোপারা কাপড় কাচে। তারাই কেউ দেখতে পেয়েছিল। কাঠগোলায় খবর দিল—তখন আমি ভানুর সঙ্গে কথা বলছি। তারপর তো সবাই হন্তদন্ত হয়ে গেলুম। ঝোপের মধ্যিখানে পড়ে আছে ডেডবডিটা। কাপড়—চোপড় ফালাফালা। চোখের তারা ঠেলে বেরিয়ে আছে। ওঃ! সে বড় ভয়ংকর দৃশ্য!
গোঁসাই চোখ বুজলেন। কাঁধ ঝাঁকি মেরে ফের বললেন, কিন্তু দেখামাত্র চেনা মনে হল, জানিস? কিছুতেই মনে করতে পারলুম না। এখন মনে হচ্ছে, যেন সেই মেয়েটাই। এমন কী শাড়িটাও।
ফেলু গোঁসাই যখন চোখ খুললেন, দেখলেন দরজার কাছে থলেটা পড়ে আছে। মানু নেই।…