কুয়াশার রাত – ১

ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এসে যেখানে পার্ক স্ট্রিটে মিশেছে, ঘটনাটা ঘটল সেইখানেই।

চৌরঙ্গির মোড়ে গোল্ড ফ্লেকের ঘড়িতে তখন দুটো কাঁটাই বারোটার ঘরে। শীতের রাত। শহরের এদিকটা ফাঁকা বলে ধোঁয়ার উৎপাত নেই। শুধু হিমে ভেজা কুয়াশার পার্ক স্ট্রিটের ছবিটা ঝাপসা ফোটোগ্রাফের মতো অস্পষ্ট। লোক নেই পথে। থাকবার কথাও নয়, হোটেল—’বার’ আজকাল বন্ধ হয় দশটায়। জনহীন রাস্তায় শুধু ফিরিঙ্গি পাড়ার এক আধটা মুসলমান দালাল পথভোলা মাতাল শিকারের জন্যে ওত পেতে জেগে আছে। আর জেগে আছে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের মোড়ের কাছাকাছি একটা গাড়ি—বারান্দার থামে হেলান দিয়ে কালো ওভারকোট ঢাকা বিটের পুলিশ। জেগে আছে বলাটা অবশ্য ঠিক হবে না, গাড়ি—বারান্দার থামে ঠেস দিয়ে ঝিমুচ্ছে।

ঘটনাটা ঘটল ঠিক তখনই। চৌরঙ্গির মোড়ে গোল্ড ফ্লেকের ঘড়িতে কাঁটা দুটো যখন বারোটার ঘরে। চমকে উঠে বিটের পুলিশ তাকাল। না, ভুল শোনেনি সে। পার্ক স্ট্রিটের নিশুতি নির্জনতা চিরে দিয়ে একটা মেয়ে—গলার চিৎকার উঠেই থেমে গেল হঠাৎ। অমানুষিক ভয় আর যন্ত্রণার আওয়াজ। কিন্তু থেমে গেল কেন? চমকে উঠে তাকাল বিটের পুলিশ। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মুখ তুলল ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের মোড়ে চারতলা ম্যানসনটার দিকে। আর সঙ্গে সঙ্গে চারতলার একটা খোলা জানলা—পথে টুক করে আলো নিভে গেল।

হুইসল বের করে বিটের পুলিশ তাতে ফুঁ দিলে। চৌরঙ্গির মোড় থেকে তার জবাব শোনা গেল। আর, শোনা গেল পিচের রাস্তায় আর একজোড়া ভারী বুটের আওয়াজ। জুড়িদার কনস্টেবল ছুটে আসছে।

ফট ফট করে খুলে গেল আশপাশের বাড়ির জানালা দরজাগুলো। ঘরে ঘরে জ্বলে উঠল বাতি। আর খোলা জানলা—দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল ত্রস্ত উদ্বিগ্ন কতকগুলো মুখ।

কি, কি হয়েছে? কি হল?

কার চিৎকার?

পুলিশের বাঁশি বাজে কেন?

কি হয়েছে সেপাই?

খোলা দরজা—জানলাপথে মুখগুলো পরস্পরকে টুকরো টুকরো প্রশ্ন ছুড়ে মারে। কৌতূহল সামলাতে না পেরে কেউ কেউ শীতের রাতের আরামকে অগ্রাহ্য করে নেমে আসে ফুটপাথের ওপর। জনতার শোরগোল ওঠে রাস্তায়। চৌরঙ্গি থেকে জুড়িদার পুলিশ ততক্ষণে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের মোড়ে এসে পড়েছে। ম্যানসন বাড়িটা লক্ষ্য করে দুই পুলিশ ছুটল। পেছনে জনতা।

ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের উল্টো দিকের ফুটপাথ ঘেঁষে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়েছিল কালো রঙের একখানা ট্যাক্সি। সামনের সিটে গুটিসুটি মেরে আরামে ঘুম দিচ্ছিল ড্রাইভার। পুলিশের বাঁশি আর জনতার শোরগোলে সেও জেগে উঠল ধড়মড় করে’। স্টার্ট দিয়ে বসল ইঞ্জিনে। কে জানে কি হয়েছে! ঝামেলার জায়গা থেকে সরে পড়াই ভাল।

কিন্তু ইঞ্জিনে স্টার্ট দিয়েও সে যায় না কেন? দু’চোখে সজাগ দৃষ্টি নিয়ে কেন তাকিয়ে থাকে ম্যানসন—বাড়িটার দিকে?

ম্যানসনের চারতলায় দুটো ফ্ল্যাট। সিঁড়ির বাঁ দিকের ফ্ল্যাটের একটা ঘরে যমুনা লালা তখন তাড়াতাড়ি গরম কোটটা গায়ে চাপাচ্ছে। আওয়াজটা সেও শুনেছে। অমানুষিক ভয় আর যন্ত্রণার চিৎকার। সিঁড়ির ডান দিক থেকে, শোভা ইম্যানুয়েলের ঘর থেকেই আওয়াজটা আসছে মনে হল। আধো ঘুমন্ত আধো জাগা চেতনার মাঝে চিৎকারটা শুনে যমুনা কিছুক্ষণ কাঠ হয়ে পড়েছিল বিছানায়। তারপর স্প্রিংয়ের মতো লাফিয়ে উঠে কাঁপা হাতে গরম কোটটা গায়ে চাপিয়ে দরজা খুলে বারান্দার বেরিয়ে এল সে। কি হল শোভা ইম্যানুয়েলের? মাঝরাতে এমন চিৎকার করে উঠে হঠাৎ থেমেই বা গেল কেন?

বারান্দায় বেরিয়ে এক সেকেন্ডের জন্যে থতিয়ে গেল যমুনা। সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ। খুট করে টিপে দিলে সিঁড়ির বাতির সুইচ। তারপর দ্রুত পায়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল যমুনা। জুতোর আওয়াজটা ততক্ষণে চারতলা আর তিনতলার মাঝামাঝি নেমে গেছে। সিঁড়ির মাথা থেকে মুখ বাড়িয়ে যমুনা শুধু দেখতে পেল সবুজ চেক টুইডের কোন পরা চওড়া পিঠ আর উড়ন্ত লাল টাই। মুখ নিচু করে লোকটা দ্রুতবেগে নিচে নেমে যাচ্ছে। দোতলা পর্যন্ত দেখা গেল লোকটাকে। সবুজ টুইডের কোট আর উড়ন্ত লাল টাই। তারপর একতলার অন্ধকারে চকিতে মিলিয়ে গেল লোকটা।

ওপরে দাঁড়িয়ে যমুনা যখন কি করবে ভাবছে, লোকটা তখন একতলায় নেমে এসেছে। মাত্র দশ গজ দূরে সদর—দরজা। হুড়মুড় করে খুলে গেল। ঢুকে এল দুজন কনস্টেবল, তার পেছনে কৌতূহলী জনতা। অন্ধকারে ছায়ার মতো সরে গেল লোকটা সিঁড়ির তলায়। তারই মাথার ওপর দিয়ে অনেকগুলো ব্যস্ত পায়ের শব্দ ক্রমশ উঠে গেল ওপরে।

আস্তে আস্তে মুখ বাড়াল লোকটা। তারপর খোলা সদরপথে সাঁ করে বেরিয়ে গেল রাস্তায়। সেই চওড়া পিঠ, সবুজ চেক টুইডের কোট আর লাল টাই। ফাঁকা রাস্তা। কালো রঙের ট্যাক্সিখানা ও—ফুটপাথে তখনও দাঁড়িয়ে। মৃদু হৃদকম্পনের মতো ধকধক শব্দে ইঞ্জিন চলছে তখনও।

পেছনের দরজা খুলে উঠে বসল সবুজ টুইডের কোট, লাল টাই। আওয়াজ হল গিয়ার টানার। ঝাপসা ফোটোগ্রাফের মতো কুয়াশায় অস্পষ্ট পার্ক স্ট্রিটের বুকে আরও অস্পষ্ট হয়ে মিলিয়ে গেল কালো রঙের ট্যাক্সি।

.

অনেকগুলো ব্যস্ত পায়ের শব্দ উঠে এল ওপরে, চারতলায়। সিঁড়ির মাথায় যমুনা তখনও দাঁড়িয়ে। রুদ্ধশ্বাসে বললে, ওই দিকে। বলে, ডান দিকে আঙুল দেখালে: শিগগির চলুন।

যমুনা নিজেই এগোল। সিঁড়ির ওপাশেও দু’কামরার আর একটা ফ্ল্যাট। প্রথম ঘরখানা বাদ দিয়ে দ্বিতীয় ঘরখানার সামনে এসে থমকে দাঁড়াল যমুনা। ঘরখানা একেবারে রাস্তার ওপরে। শোভা ইম্যানুয়েলের শোবার ঘরও বটে, ড্রয়িংরুমও বটে। অন্ধকার। দরজার কপাট দুটো হাটখোলা। ঘরের মধ্যে সমমাত্রিক ছন্দে একটা চাপা আওয়াজ ক্রমাগত উঠছে—ঘস— ঘস—ঘস—

ওই অন্ধকারের ভেতর গুহাবাসী শ্বাপদের মতো কি ভয়ঙ্কর রহস্য অপেক্ষা করছে কে জানে! ঘস ঘস চাপা আওয়াজটা কি তারই থাবা আস্ফালন?

মুখ ফিরিয়ে যমুনা একবার তাকাল কনস্টেবলদের মুখের দিকে। তারপর খানিক সাহস সঞ্চয় করে ঢুকে গেল তারা ঘরে। স্তম্ভিত জনতা দাঁড়িয়ে রইল দোরগোড়ায়। দরজার পাশেই সুইচ বোর্ড। আন্দাজে হাত বাড়ালে যমুনা। জ্বলে উঠল জোরালো বাতি। আর সঙ্গে সঙ্গে তীক্ষ্ন শিসের মতো একটা চিৎকার দিয়ে বুড়ো হ্যারি সাহেবের গায়ের ওপর এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল যমুনা।

খাটের ওপর চিৎ হয়ে পড়ে আছে একটি মেয়ের দেহ। মাথাটা ঝুলে পড়েছে খাটের বাইরে। হ্যাঁ—করা মুখের কষ বেয়ে সরু একটু রক্তের ধারা। খোলা চোখে আতঙ্ক আর বিভীষিকা। ঠোঁটের লাল রঙ আর বাঁ দিকের আঁকা ভ্রূর খানিকটার মুছে গেছে। মেয়েটির বয়েস পঁচিশ থেকে তিরিশের মধ্যে। শরীরের বাঁকাচোরা রেখায় রেখায় বন্য যৌবনের প্রকাশ।

কিন্তু ঘস ঘস আওয়াজটা সত্যিই কোনো গুহাবাসী শ্বাপদের নয়।

ঘরের কোণে একটা গ্রামোফোন মেশিন থেকে তখনও সেই আওয়াজটা উঠছে। বিলিতি অর্কেস্ট্রার একখানা রেকর্ড চাপানো হয়েছিল। বাজনা ফুরিয়ে গেছে, কিন্তু মেশিনের দম ফুরোয়নি তখনও। সাউন্ড বক্সের নিডলটা লেবেলের কাছে সরে এসে একঘেয়ে একটানা আওয়াজ তুলছে।

খবর গেল পার্ক স্ট্রিট থানায়। আধ ঘণ্টার ভেতরেই এল পুলিশ অফিসার। দেখা গেল মেয়েটির গলা ঘিরে সরু কালশিটে দাগ। আর, পাওয়া গেল একটা সোফার পায়ের কাছে গোল্ড ফ্লেকের খালি প্যাকেট আর গোল করে ফাঁস বাঁধা তার সোনালি রিবনটা।

মেয়েটি কে? পুলিশ অফিসার প্রশ্ন করলেন।

দোতলার বাসিন্দা বুড়ো হ্যারি সাহেব বললেন, শোভা ইম্যানুয়েল।

পেশা।

নাচওয়ালী। শোভা ইম্যানুয়েল কি—

ঠান্ডা গলায় ইন্সপেক্টর বললেন, হ্যাঁ, মারা গেছেন।

গ্রামোফোন মেশিন থেকে ঘস ঘস আওয়াজটা আর শোনা যাচ্ছে না। দম ফুরিয়ে গেছে মেশিনটার।

পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করল প্রতিবেশী জনতা। বুড়ো হ্যারি সাহেবের বুকে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে উঠল যমুনা। মারা গেছে, শোভা ইম্যানুয়েল মারা গেছে। খুন হয়েছে সে। এ ধরনের মেয়েদের শেষ অবধি যা হয়।

ইন্সপেক্টর এগিয়ে এলেন জনতার সামনে : এ ঘরে কাউকে দেখেছেন আপনারা? আসতে বা বেরিয়ে যেতে?

নিজেকে তখন অনেকটা সামলেছে যমুনা। মুখ তুলে বললে, আমি দেখেছি।

আপনি কে?

যমুনা লালা। বাঁ দিকের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা।

পেশা?

ইন্ডিয়া ব্যাঙ্কের স্টেনো।

কি দেখেছেন?

চারতলা থেকে একজনকে নেমে যেতে দেখেছি।

কখন?

আধঘণ্টা আগে। গরম কোটের আস্তিন দিয়ে চোখের জলটা মুছে নিলে যমুনা। তারপর বললে, শোভার ঘর থেকে একটা চিৎকার শুনে আচমকা আমার তন্দ্রা ভেঙে যায়। গরম কোটটা গায়ে চাপিয়ে তাড়াতাড়ি বারান্দায় বেরিয়ে পড়ি। শোভার ঘরের দিকে এগোতে গিয়ে সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ পাই। আলো জ্বেলে দেখলাম একটা লোক সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে।

চেনা লোক?

না, আমার চেনা নয়। যদিও শোভার অনেক বন্ধুকেই আমি দেখেছি।

চেহারা কেমন?

তাও বলতে পারি না। মুখখানা দেখতেই পাইনি। পেছন ফিরে দ্রুত পায়ে নেমে যাচ্ছিল সে। চোখে পড়ল শুধু একখানা চওড়া পিঠ, সবুজ চেক টুইডের কোট আর উড়ন্ত লাল টাই…দরজাটা ভেজিয়ে দেবেন ইন্সপেক্টর?

দরজার কপাট দুটো টেনে দিল ইন্সপেক্টর। চোখের আড়াল হয়ে গেল শোভা ইম্যানুয়েলের মৃতদেহ।

গোল্ড ফ্লেকের ঘড়িতে তখন রাত দেড়টা।

.

ঠিক রাত দেড়টায় একখানা ট্যক্সি ঢুকল টালিগঞ্জের রূপালি স্টুডিয়োর ফটকের মধ্যে। থামল এসে দু—নম্বর স্টেজের সামনে। ভাল করে থামবার আগেই দরজা খুলে নেমে পড়ল প্যাসেঞ্জার। গায়ে সবুজরঙ টুইডের কোট আর লাল টাই।

ক্যাপস্টানের টিন হাতে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এল এক ছোকরা।

কি ব্যাপার কুন্তলদা? এত দেরি যে?

ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে দিতে দিতে লোকটি জবাব দেয়, হয়ে গেল একটু দেরি। সাউন্ড রেডি?

রেডি। ক্যাপস্টানের টিন খুলে লোকটার সামনে ধরল ছোকরাটি। একটা তুলে নিয়ে লোকটি বললে, দু’ প্যাকেট গোল্ড ফ্লেক আনিয়ে দাও বিপিন।

ফ্লোরের মধ্যে ঢুকে গেল লোকটি। বাইরে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়েছিল সাউন্ড ভ্যান। ব্যবস্থাপক বিপিন হন্তদন্ত হয়ে সেখানে গিয়ে দেখে রেকর্ডিস্ট আলোয়ান মুড়ি দিয়ে আরামে নিদ্রামগ্ন।

উঠুন সত্যেনদা, কুন্তলদা এসে গেছেন। উঠুন।

আড়ামোড়া ভেঙে রেকর্ডিস্ট প্রশ্ন করেন, কে এসেছেন?

কুন্তল চ্যাটার্জি। মিউজিক ডাইরেক্টর।

রেকর্ডিস্ট সত্যেনের মুখে বিরক্তি দেখা দিল : এসেছেন? রাতটা কাবার করে এলেই তো পারতেন!

তাই বটে। রাত কাবার হতে ক’ঘণ্টাই বা বাকি? কুন্তল চ্যাটার্জি আজ ভীষণ লেট করে ফেলেছে। অথচ লেট তার কখনও হয় না। ঠিক সময়ের আগে পৌঁছনোই তার অভ্যাস। রাত এগারোটায় ছিল আজকের প্রোগ্রাম। কে জানত দু’ঘণ্টারও বেশি দেরি হয়ে যাবে।

ফ্লোরের মধ্যে ঢুকল কুন্তল চ্যাটার্জি। ঝলমল আলোয় ভেতরটা দিন হয়ে গেছে। মাইক্রোফোনের সামনে অর্ধচন্দ্রাকারে বাজিয়ের দল বসে আছে। একধারে এই শীতের রাতেও সঙ্গীত পরিচালক কুন্তল চ্যাটার্জির অনুরাগিণী আর অনুরাগীদের ভিড়। অনেক স্যুট আর শাড়ির রঙের ছটায়, অনেক অলঙ্কারের ঘটায় আর প্রসাধনের চটকে সে জায়গাটা মরশুমি ফুলের প্রকাণ্ড একটা স্তবকের মতো দেখাচ্ছে।

মৌচাকের মতো সারা ফ্লোরটা গুঞ্জরিত হচ্ছিল। কুন্তল ঢুকতেই চুপচাপ। নড়েচড়ে বসল বাজিয়েরা। মাইক্রোফোনের ওপাশে অল্প উঁচু একটা ফ্ল্যাটফর্ম। দৃঢ় পা ফেলে ফেলে কুন্তল সোজা এসে দাঁড়াল তার ওপর। কে একটু হাসল, কে বিনীত অভিবাদন জানাল, অন্তরঙ্গতার ভঙ্গিতে কে একটু এগিয়ে এল, আজ আর লক্ষ করল না। আজ সে কেমন যেন অন্যমনস্ক। হয়তো বা ডুবে আছে নিজের মধ্যে। নিজের কম্পোজিশনে, নিজের সুর—বিন্যাসের মাদকতায় বিভোর হয়ে আছে মনে মনে। তাই বোধ করি খেয়াল নেই কোনো দিকে।

অল্প উঁচু প্ল্যাটফর্মের ওপর সোজা হয়ে দাঁড়াল কুন্তল। বাজিয়েদের মুখোমুখি। আশপাশের আলোগুলো এক এক করে নিভে এল। জ্বালা রইল শুধু দু’পাশে এক কিলো ওয়াটের দুটো ল্যাম্প। বাজিয়েরা যাতে নিজের নিজের নোটেশন খাতা দেখতে পায়। আর রইল কুন্তলের ওপর পাঁচশো পাওয়ারের একটা বাতি। অনেকটা থিয়েটারের স্টেজের ওপর আলোর ফোকাশের মতন।

নাটকের কোনো চরিত্রের মতোই দেখাচ্ছে কুন্তলকে। দীর্ঘ সরল দেহ। নামকরা দর্জির তৈরি কোটের গুণে কাঁধ দুটোকে দেখাচ্ছে পুষ্ট আর চওড়া। রঙ ফর্সা নয় কুন্তলের, তবে মাজাঘষার দরুন কালো বলাও চলে না। তীক্ষ্ন নাক আর চাপা ঠোঁটে এমন একটা বৈশিষ্ট্যের ছাপ যা পথে—ঘাটে সচরাচর। নজরে পড়ে না। চোখ দুটো একটু ছোটই বলতে হবে, কিন্তু মিশমিশে কালো আর উজ্জ্বল। বুদ্ধির দীপ্তি মাখানো। কুন্তলকে যারা প্রায়ই দেখে তারা জানে, সর্বদাই সে টিপটপ থাকে। আজ কিন্তু মুখের অন্যমনস্কভাবে, লালরঙের টাই—এর শিথিল ফাঁসে আর তার মাথার পিছনে ঠেলে দেওয়া এলোমেলো চুলে কেমন একটা ঝোড়ো—ঝোড়ো ভাব।

আধপোড়া সিগারেটটা প্ল্যাটফর্মের ওপর ফেলে দিয়ে জুতোর আগা দিয়ে পিষে ফেলল কুন্তল। তারপর স্বভাব—গম্ভীরস্বরে হাঁকলে, রেডি এভরিবডি?

যন্ত্রীদের কাছ থেকে জবাব এল, ইয়েস স্যার।

মনিটার!

বাইরে সাউন্ড ট্র্যাকে ফেডারে হাত রেখে সত্যেনবাবু ধড়মড় করে বলে উঠলেন, ইয়েস! সঙ্গে সঙ্গে অ্যামপ্লিফায়ার থেকে শোনা গেল সুন্দর একটা অর্কেস্ট্রা। সত্যেনবাবুর রোগাটে মুখে বিরক্তির চিহ্নটুকু মুছে যেতে লাগল। হাসি—হাসি মুখে তাঁর অ্যাসিসটান্টকে লক্ষ করে বলে উঠলেন, দেরি করে এলে কি হবে, কুন্তল চ্যাটার্জি মিউজিক যা কম্পোজ করেছে—জবাব নেই।

ফ্লোরের ভেতরে সেই অল্প উঁচু প্ল্যাটফর্মের ওপর দাঁড়িয়ে দুই বাহু আন্দোলিত করে কুন্তল তখন মিউজিক কনডাক্ট করছে। চারপাশের আবছা অন্ধকারের মধ্যে পাঁচশো পাওয়ার ল্যাম্পের একঝলক আলোয় জ্বলজ্বল করছে সবুজ রঙের চেক টুইডের একটা কোট আর লাল টাই।

.

অনেক বেলায় ঘুম ভাঙল কুন্তলের।

অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেলা বলতে হবে বইকি! সাধারণত সে ঘুম থেকে ওঠে ছ’টা থেকে সাড়ে ছ’টার মধ্যে। আজ ঘড়ির কাঁটা ন’টার ঘর পার হয়ে গেছে। দোষ নেই কুন্তলের। গতকাল স্টুডিয়ো থেকে রেকর্ডিং সেরে ফিরতে ভোরই হয়ে গিয়েছিল। একটা ছবির সাত হাজার ফিট ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। নেহাত কুন্তল চ্যাটার্জি বলেই চার ঘণ্টায় সাত হাজার ফিট মিউজিক দিতে পেরেছে।

তোয়ালে হাতে কুন্তল বাথরুম থেকে বেরিয়ে যখন এল, দুধের ফেনার মতো সাদা রোদে বারান্দা ভরে গেছে। রোদ উজ্জ্বল অথচ নরম। সিগারেটের প্যাকেট আর দেশলাই হাতে নিয়ে কুন্তল বারান্দায় বেরিয়ে এসে একটা বেতের চেয়ার দখল করলে, তারপর সিগারেট ধরালে একটা। এটা কুন্তলের সাম্প্রতিক অভ্যাস। কিন্তু ভালো করে একটা টান দেবার আগেই সিগারেটটার যেন পাখা গজাল হঠাৎ। এক নিমিষে উধাও হয়ে গেল মুখ থেকে।

কুন্তল মুখ ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখে মিতালি। তার ডান হাতে চা, বাঁ হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। কুন্তল হাসিমুখে বলল, হাতের কাছে ক্যামেরা থাকলে তোমার একটা স্ন্যাপ নিয়ে নিতাম। গোল্ড ফ্লেক সিগারেটের খুব চমৎকার একটা বিজ্ঞাপন হত। ‘সঙ্গীত পরিচালক কুন্তল চ্যাটার্জির স্ত্রী শ্রীমতী মিতালি দেবী গোল্ড ফ্লেকই পান করেন।’

অল্প হাসিতে মিতালির পাতলা ঠোঁট দুটো কুঁড়ির দুটি পাপড়ির মতো খুলে গেল। বললে, আমি তো সিনেমার হিরোইন নই যে আমার নামে বিজ্ঞাপন বেরোবে। তারপরই ভুরু দুটো জোড়া ধনুকের মতো করে বললে, ঘুম ভাঙতে না ভাঙতেই মুখে সিগারেট। ভয়ানক বাড়াবাড়ি শুরু করেছ তুমি!

জ্বলন্ত সিগারেটটা মিতালি অ্যাসট্রের মধ্যে গুঁজে দিল।

দু’চোখে একটি ইঙ্গিত নিয়ে গম্ভীর মুখে কুন্তল জবাব দিল, মুখে দেবার মতো আর কিছু তো হাতের কাছে পাই না, অগত্যা সিগারেটই মুখে দিই।

তেমনি ভুরু কুটিল করে মিতালি বলে উঠল, মিথ্যুক! বদনাম দেওয়া পুরুষের স্বভাব। তারপর বেতের টেবিলটার ওপর চায়ের পেয়ালা রাখতে রাখতে বললে, সত্যিই, গত কয়েক মাস ধরে সিগারেট খাওয়া তুমি ভীষণ রকম বাড়িয়েছ কিন্তু।

চায়ের পেয়ালাটা তুলে নিয়ে কুন্তল সহজভাবে বললে একসঙ্গে অনেকগুলো ছবির কাজ পড়েছে কিনা, তাই নেশাটাও বেড়েছে। আবার কমিয়ে দেব, ভেব না। হ্যাঁ, আমার কোটের ভেতর পকেটে একখানা খাম আছে। বাণী চিত্রমের বাকি আড়াই হাজার টাকা। বের করে নাওগে।

মিতালি বললে, বের করে আর কি হবে। তুমি বরং দীপুর নামে ওই আড়াই হাজার টাকার সেভিং সার্টিফিকেট কিনে রাখো।

বেশ, তাই হবে। আমি তাহলে স্নানটা সেরে বেরিয়ে পড়ি।

চায়ের পেয়ালাটা শেষ করে আর একটা সিগারেট ধরিয়ে কুন্তল বাথরুমে ঢুকল। ঢোকবার আগে নতুন সিগারেটটা স্ত্রীকে দেখিয়ে বলে গেল, রাগ কোরো না, এটা নেশা নয়, পারগেটিভ।

পুরো চল্লিশ মিনিট বাদে বাথরুম থেকে বেরোল কুন্তল, একেবারে দাড়ি কামানো, স্নান সেরে। বারান্দায় বেতের টেবিলে দু’জনের মতো ব্রেকফাস্ট সাজানো। সেদিকে তাকিয়ে কুন্তল বললে, একি! তুমিও এখন খাওনি?

রুটিতে মাখন লাগাতে লাগাতে মিতালি তরলস্বরে বললে, আজ্ঞে না। মশাই খেতে না বসলে—

দু’মিনিটে আসছি। বলে কুন্তল ঘরে ঢুকে গেল।

ঠিক দু’মিনিট না হলেও কুন্তল তাড়াতাড়িই ফিরে এল বারান্দায় ব্রেকফাস্টের টেবিলে। তার দিকে একঝলক তাকিয়ে মিতালি বলে উঠল, এ রাম! এটা আবার পরলে কেন? এই সবুজ টুইডের কোট ছাড়া কি আর কোনো জামা নেই তোমার?

একটুকরো অমলেট মুখে ফেলে কুন্তল বললে, ঠিক আছে। এ বেলাটা এতেই কেটে যাবে। ক’দিন ধরে স্টুডিয়োর ধুলো খেয়েছে কোটটা। ও—বেলা কাচতে পাঠাব।

মিতালি বললে, ও—বেলা তুমি কিন্তু কোথাও বেরোতে পাবে না।

কেন বল দিকি? কোথায় যাবে? সিনেমা?

না।

দক্ষিণেশ্বর?

উঁহু!

তাহলে গীতাঞ্জলিদের বাড়ি নিশ্চয়ই?

তাও নয়।

কুন্তল একটু অবাক হয়ে বললে, তাও নয়? তবে?

অত্যন্ত নিরীহের মতো শান্ত গলায় মিতালি বললে, কোথাও যাব না তো!

হরি বল! তবে আমাকে থাকতে বলছ কেন?

তোমার সঙ্গে আমার একটু দরকার আছে, তাই থাকতে বলছি।

হেসে কুন্তল বললে, যথা আজ্ঞা দেবী।

কখন ফিরবে তুমি?

পাঁচটার মধ্যেই আশা করছি।

আসবার পথে একটা জিনিস আনবে কিন্তু।

কি?

দুষ্টু—দুষ্টু মুখ করে মিতালি বললে, বলো তো কি?

ঘাড় নেড়ে কুন্তল বললে, আর ঠকতে রাজি নই। তুমি বলো।

চোখ নামিয়ে মিতালি বললে, বিশেষ কিছু নয়, ডজন দুয়েক গোলাপ ফুল।

গোলাপ ফুল? কেন, কি হবে?

মুখ নিচু করে কফির পেয়ালায় মিতালি তখন চিনি গুলছে। জবাব দিল না—মুখে মিটি মিটি হাসি।

হঠাৎ কুন্তলের চোখ—মুখ যেন রোদ লেগে ঝলমল করে উঠল : আজকে সাতাশে মাঘ, না মিতা?

মিতালি আস্তে আস্তে চোখ তুলল স্বামীর মুখের দিকে। চোখের তারায় আর ঠোঁটের কোণায় মিটিমিটি হাসি নিয়ে ঘাড় নাড়ল শুধু।

সাতাশে মাঘ কুন্তল—মিতালির বিয়ের তারিখ। মনে মনে হিসেব করলে কুন্তল, এই বছরেই সাত বছর পূর্ণ হবে তাদের বিবাহোৎসব। প্রতি বছর এই তারিখে তারা তিথি উদযাপন করে। এই উৎসব তাদের দুজনের, শুধু কুন্তল আর মিতালির। এই দিনটিতে তাদের দুজনের পৃথিবীতে আর কারও নিমন্ত্রণ নেই। নানান কাজের ঝামেলায় কুন্তলের মনে ছিল না, কিন্তু মিতালি ঠিক মনে রাখে। সারা বছর ধরে একটি একটি করে দিন গোনে বোধ হয় সাতাশে মাঘের জন্যে। উৎসবে কোনো বাহুল্য থাকে না। কুন্তলের প্রিয় দু—একটা রান্না আর মিতালির প্রিয় একগোছা গোলাপ ফুল। এই নিয়েই দুজনের উৎসব। আর তার সঙ্গে প্রথম বাসর রাত্রির কিছু পুরনো স্মৃতিকথা। সাতাশে মাঘ দুজনে অনেক রাত অবধি জেগে থাকে। তারপর পাশাপাশি এক বালিশে মাথা দিয়ে ফিস ফিস তন্দ্রাজড়ানো সুরে কথা বলতে বলতে এক সময় কথা যায় হারিয়ে। সাতাশে মাঘের রাত ভোর হয়ে যায়। ভোর হয়ে যায় নতুন বছরের আলোয়, যুগল—জীবনের সুখের মধ্যে।

সেই প্রথম বিয়ের রাত কুন্তলের মনে পড়ে বইকি! একুশ বছরের মিতালির কনে—চন্দন পরা সেই অপরূপ রূপসজ্জা। চোখে—মুখে সেই দুষ্টু হাসি আর লজ্জা। পরিচিত বরের কাছে সপ্রতিভ হবার চেষ্টা, অথচ কাছে এসেই চোখ বুজে ফেলা। কুন্তলের সব মনে পড়ে। মনে পড়ে আর হাসে সেদিনকার মিতালির কথা ভেবে। গোলাপ বরাবরই মিতালির প্রিয় ফুল। প্রিয় হবার কারণও আছে। ফুলশয্যার দিনে মিতালির মাসতুতো ভগ্নিপতি পাঠিয়েছিলেন একঝুড়ি গোলাপ। বাজার থেকে তাই আর কোনও ফুল কিনতেই হয়নি। সেই এক ঝুড়ি গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছিল যুগলশয্যা। রাতে শুতে এসে কুন্তল বলেছিল, তুমি কোথায় মিতা।

পাঁচ পাওয়ারের মৃদু নীল বাতিটা ঘরে জ্বলছিল। মিতালি একটু অবাক হয়ে বলেছিল, এই তো আমি, খাটের ওপরে। দেখতে পাচ্ছ না?

কুন্তল বলেছিল, ও, হ্যাঁ, তুমিই বটে! ঘরে ঢুকেই কি দেখলাম জানো? অনেক গোলাপের মাঝখানে আর একটা মস্তবড় গোলাপ। ভাবলাম এও বুঝি মধুপুর থেকে এসেছে।

লজ্জায়—সুখে—আনন্দে মুখ রাঙা করে মিতালি বললে, এ গোলাপ শুধু তোমার বাগানেই ফুটেছে।

সেই থেকে মিতালীর প্রিয় ফুল হলো গোলাপ। বছরে শুধু একবার, একটা দিনই কুন্তলকে সে ফরমাস করে গোলাপ আনতে। সে তারিখটা হল সাতাশে মাঘ।

পরিপূর্ণ চোখে তাকাল কুন্তল মিতালি দিকে। শীতের রোদ পড়েছে মিতালির কমলা রঙের শাড়ির ওপর। তারই আভায় চিকচিক করছে মুখের বাঁ—দিকটা। আর বাঁ—চোখের বড় বড় পালকগুলি ছায়া ফেলেছে সুগৌর গালের ওপর। ধবধবে ছোট কপালে ছোট্ট একটি সিঁদুরের টিপ আর ফুরফুরে কয়েকগাছি রুখখু চুল। বিয়ের সাত বছর কেটে গেছে। একুশ বছরের মিতালি আজ আটাশ বছরের বধূ! মা হয়েছে মিতালি, কোলে এসেছে দীপু। তবু তেমনিই আছে সে। লম্বাটে সুগৌর মুখে তেমনি সুষমা, ছিপছিপে দেহলতায় তেমনি লাবণ্য। কুন্তলের বুক ভরে উঠল, মিতালি তেমনিই আছে। না ভুল হল। মিতালি আর আগের মতো নেই, আগের চেয়েও সুন্দর, আগের চেয়েও মধুর হয়েছে।

কিন্তু চোখ দিয়ে দেখেছে কুন্তল, মন দিয়ে দেখেনি। মনের ভেতরটা খুঁজে দেখলে ও বুঝতে পারত, আসলে সুন্দরতর হয়েছে মধুরতর হয়েছে মিতালির প্রতি ওর ভালোবাসা।

ব্রেকফাস্ট শেষ করে কুন্তল উঠে পড়তেই মিতালি বললে, কোটের পকেটে টাকার খামটা রইল সাবধানে যেও কিন্তু। আর সকাল সকাল ফিরে এসো।

ঘাড় নেড়ে সায় দিয়ে কুন্তল বললে, তাই হবে। আমিও মনে করিয়ে দিয়ে যাই, বিকেলে আলতা পরো।

বারান্দার শেষে ফ্ল্যাটের প্রধান দরজা। কুন্তল সেদিকে এগোতেই ঘর থেকে ছুটে এল ছ’ বছরের দীপু। এসে হাঁটু দুটো জড়িয়ে ধরল বাপের। কুন্তল নিচু হয়ে তার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললে, দাও।

বাপের গালে কচি কচি ঠোঁট দু’খানা ঠেকিয়ে দীপু প্রশ্ন করলে, কোথায় যাচ্ছ বাবু?

কুন্তল তার মাথার কোঁকড়া চুলগুলো আস্তে করে নেড়ে দিয়ে হালকা গলায় বললে, বড় হয়ে তুমি যাতে ইচ্ছেমতো টাকা ওড়াতে পার, সেই ব্যবস্থাই করতে যাচ্ছি বাবা।

কুন্তল আর দাঁড়াল না, আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেল। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে একবার ফিরে দেখলে, বারান্দার দরজার গোড়ায় দীপুর হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে মিতালি। অন্যদিন মিতালি একাই দাঁড়িয়ে থাকে। দীপু যায় ক্রিশ্চান স্কুলে বাসে চেপে। স্কুলের ছুটি বলে আজ দাঁড়িয়ে আছে মা—ছেলেতে একসঙ্গে। দেখতে ভারি সুন্দর লাগল কুন্তলের।

ছবিটা মনে মনে এঁকে নিয়ে সে নেমে গেল।

.