কুকুর

কুকুর

কুকুরের মুখ বন্ধ করার একটি প্রাচীন পদ্ধতি হলো— তার মুখে এক টুকরো হাড্ডি গুঁজে দেওয়া। প্রভুভক্তিতে কুকুরদের একসময় খুব সুনাম থাকলেও, সম্প্রতি মানুষেরা তাদের এ সুনাম কেড়ে নিয়েছে। কুকুরেরা লক্ষ করেছে, পৃথিবীর কিছু কিছু এলাকায়, মানুষ প্রভুভক্তিতে কুকুরদেরও ছাড়িয়ে গেছে।

মার্ক টোয়াইন ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন— তাকে স্বর্গে নিলে যেন কুকুরদের স্বর্গে নেওয়া হয়। কারণ মানুষের স্বর্গে তিনি যেতে চান না। তার এ ইচ্ছা অমূলক নয়। মানুষ পৃথিবীতে যা যা দেখিয়েছে, তাতে পরকালে তাকে আর বিশ্বাস করা চলে না।

কিছুদিন আগে ঢাকায়, পুলিশ একজন প্রতিবাদকারীকে যখন গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছিলো, তখন একটি কুকুর লোকটিকে ছাড়াতে তার কাপড় কামড়ে ধরে টানাটানি করছিলো। মানুষ পাশে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য উপভোগ করেছে, কিন্তু কুকুরটির মতো এগিয়ে আসার প্রয়োজন বোধ করেনি।

কুকুরদের ধর্ম পালন করতে হয় না। ফলে ধর্মে নিয়ে তাদের মাঝে কোনো গণ্ডগোল নেই। কুকুরদের প্রতি ঈশ্বরের এ এক বিরাট অনুগ্রহ। তারা কাটাচ্ছে পাপ-পুণ্যহীন চমৎকার উপাসনামুক্ত জীবন। রাম মন্দির ও বাবরি মসজিদ নিয়ে তাদের কোনো উদ্বেগ আছে বলে মনে হয় না।

কুকুরদের কোনো পীর নেই। এটা-ওটা চেয়ে তারা পীরের দরবারে গিয়ে পড়ে থাকে না। ভবিষ্যৎ নিয়েও তাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। ঘুমের আশায় বিছানায় শুয়ে তারা মানুষের মতো ছটফট করে না। এ জন্য কবি হুইটম্যান কুকুরদের খুব ঈর্ষা করতেন।

কুকুর সমাজ মাননীয়মুক্ত। কুকুরদের কাউকে মাননীয় বলতে হয় না। মর্যাদায় সকল কুকুর সমান, এটিই তাদের প্রতিষ্ঠিত নীতি। তাদের কোনো স্যার, স্যালুট, ও হরিলুট নেই।

কুকুর প্রয়োজনের অতিরিক্ত আহার করে না। তার শরীর মেদমুক্ত। সে বারবার আয়নার সামনে গিয়ে আক্ষেপ করে না— আহা রে! চুল পেকে গেলো! রূপ নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথাই নেই। সে যখন বিয়ে করে, তখন তার কোনো কাজী লাগে না।

কুকুরের বংশ পরিচয় আছে। তার পূর্বপুরুষ নেকড়ে ছিলো। সে- হিশেবে তাদের হিংস্র হওয়ারই কথা। কিন্তু মানুষের হিংস্রতা দেখে তারা

থমকে গেছে। তারা দেখেছে যে, এক বছরে মানুষ যতো মানুষকে খুন করে, ততো মানুষ তারা একশো বছরেও খুন করতে পারবে না। এ জন্য হিংস্রতাকে তারা বহু আগেই বিদায় জানিয়েছে।

আধুনিক নগরগুলো আদমশুমারির মতো কুকুরশুমারিও করে থাকে। কিন্তু এতে কুকুরদের প্রকৃত সংখ্যা উঠে আসে না। তারা শুধু রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো সুস্থ কুকুরদেরই গণনা করে; প্রাসাদের ভেতরে থাকা পাগলা কুকুরদের কথা তারা হিসেবে আনে না।

কুকুর গাছের ওপর প্রস্রাব করতে পছন্দ করে, এবং কুকুরদের এ চরিত্র সম্প্রতি মানুষও রপ্ত করেছে। তবে গাছের বদলে মানুষ এ কাজের জন্য বেছে নিয়েছে মানুষেরই মাথা। মানুষ এখন রাত-দিন প্রস্রাব করছে একে অন্যের মাথার ওপর।

‘কুত্তার মতো পেটাবো’- এ বাক্যটি থেকে কুকুরদের প্রতি আমাদের ভালোবাসার প্রমাণ পাওয়া যায়। কোনো সমাজে মানুষ মানুষের সাথে কেমন আচরণ করে, তা আমি টের পাই ওই সমাজে কুকুরদের প্রতি মানুষের আচরণ দেখে। কোনো নতুন দেশে গেলে, দেশটি নিরাপদ কি না তা বুঝতে কিছুক্ষণ রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকি। যদি দেখি, রাস্তায় কুকুরদের নির্বিঘ্ন আনাগোনা আছে, মানুষ ও কুকুর পাশাপাশি বন্ধুর মতো হাঁটছে, তাহলে ধরে নিই— দেশটি নিরাপদ।