কিশোর ও সন্ন্যাসিনী
ফকির সাহেবের প্রাচীন মাজারের কাছাকাছি আস্তানা গেড়েছিলেন সন্ন্যাসিনী
একটি কিশোর তার অল্প দূরে এসে দাঁড়াতো
আগরতলার ইজের ও চেন লাগানো হলুদ গেঞ্জি
পা দুটো ফাঁক করা, চুলে সর্ষের তেলের বাস
দ্যাখো, চিনতে পারো সেই কিশোরকে
না, তার মুখ দেখা যায় না। কিংবা অতিরিক্ত বিস্ময়ে তার
মুখচ্ছবি অস্পষ্ট।
একদিন সে গুটি গুটি এগিয়ে এসেছিল, কাছে, উবু হয়ে বসে
সন্ন্যাসিনীকে জিজ্ঞেস করেছিল, তোমার ভয় করে না?
সন্ন্যাসিনী তাঁর পুরু ওষ্ঠধর সামান্য ফাঁক করে হেসে বলেছিলেন…
মনে আছে কী উত্তর দিয়েছিলেন?
না, সন্ন্যাসিনীর গলায় রুদ্রাক্ষের মালা দুলছিল একটু একটু
করতলে রাখা ছিল আমলকী
ধুনীর আগুনে তাঁর চোখ পাকা করমচার মতন রক্তিম
তাঁর জম্বুরার মতন দুটি বুক গেরুয়া ভেদ করে আসতে চায়
না, সন্ন্যাসিনী কী বলেছিলেন মনে নেই!
সন্ন্যাসিনী বাঁ হাতের তর্জনী তুলেছিলেন শুক্লা দ্বাদশীর
আকাশের দিকে—
কিশোর দেখলো, কোমরবন্ধে তলোয়ার এঁকে দাঁড়িয়ে আছেন কালপুরুষ
একটা প্যাঁচা উড়ে গেল চাঁদ আড়াল করে।
মনে আছে?
না, শুধু মনে পড়ে সন্ন্যাসিনীর কপালের ফোঁটায়
চটচতে মেটে সিঁদুর খেতে এসেছিল কয়েকটা পিঁপড়ে
ফকির সাহেবের মাজার থেকে ভেসে এসেছিল গুগগুলের গন্ধ
রাতচরা চোখ-গোলীর সঙ্গে ডেকে উঠেছিল শকুনের ছানা
তখন অনেক রাত;
আধপোড়া কাঠে ফু দিয়ে ছাই উড়িয়ে সন্ন্যাসিনী হঠাৎ বলেছিলেন ক্লান্ত গলায়—
আমি আর বেশীদিন থাকবো না রে! আমি বুকের মধ্যে
সব সময় চিলের ডাক শুনতে পাই।
সেই কিশোর তখন সন্ন্যাসিনীর কপাল থেকে পিঁপড়ে খুঁটে
তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করেছিল,
ভয় করে? তুমি কিছু পাওনি, তোমারও এখনো ভয় করে বুঝি?