‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যারে পাবি তারে ছোঁ’-বলেই ওরা
যে যার ধরনে ঘোরে চারদিকে, কখনও রঙিন বল নিয়ে
দে-দৌড় খেলার মাঠে হই হই।
দু’দিকে দাঁড়ায় দু’টি দল;
পায়ে পায়ে ছোটে বল, শূন্যে ওঠে কখনও বা, কেউ
চকিতে ফাউল করে, বাধে খিটিমিটি। ফের ক্ষিপ্র খেলোয়াড়
থর থর হাত রেখে প্রতিপক্ষের গলায় সহজেই
মেটায় বিবাদ ক্ষণিকের। কখনও বা বালকেরা
ওড়ায় বলুন ঝাঁক ঝাঁক, গলা ছেঁড়ে দেয় ডাক
হরেক রকম।
এখন বাগানে গেলে কোনো দৈত্য, ক্ষ্যাপা, স্বার্থপর, করবে না
পথরোধ। কেউ চকোলেট খায়, খোঁজে কেউ পরীর সমাজ
আশেপাশে, চোখ মেলে দেখে নিতে চায় দু’চারটে দেবদূত
খেলাচ্ছলে দোলে কিনা টেলিগ্রাফ-তারে বারবার।
গোধূলি রঞ্জিত চোখে দেখি দূরে থাকে ভোরবেলার মতন
বয়স ওদের, খুঁজি কচি ঠোঁটে আমার নিজের ডাক নাম।
এই দৃশ্য নিভে গেলে চোখ বুজে টাইরেসিয়াসি
চৈতন্যে সুস্পষ্ট দেখি, যেন-বা টেলিভিশনে ফিল্ম
প্রাচীন, ধ্রুপদী, দেখি এইসব প্রফুল্ল বালক-কেউ বেঁটে,
কেউ দীর্ঘকায়,-ঘোরে বয়স্ক রোদ্দুরে ক্লান্ত পায়,
খরায় পোহাতে চায় ছায়া, ছায়া শুধু দ্রুত দূরে সরে যায়।
(কানামাছি ভোঁ ভোঁ…)
একজন ভূলুণ্ঠিত পথপ্রান্তে, ভগ্ন ঊরু, তার দীপ্র মোটর বাইক
আহত পশুর মতো পড়ে আছে পাশে।
(কানামাছি ভোঁ ভোঁ…)
অন্যজন মুখে ক্রুর রেখাবলি নিয়ে জুয়ার টেবিলে বসে
সৌভাগ্যের আনুগত্য চায় প্রতিবার দান ফেলে, কেউ
কাটায় সকল বেলা পাগলা গারদে, আঁকে দুঃস্বপ্ন নিয়ত
আতঙ্কিত মগজের দেয়ালে দেয়ালে। একজন প্রেমিকাকে
গোলাপের তোড়া দিয়ে বনে যায় রাতারাতি সুদক্ষ ঘাতক।
(কানামাছি ভোঁ ভোঁ…)
কেউ হন্তদন্ত হয়ে অলিতে-গলিতে খোঁজে বেবি-ফুড, যেমন সুদূর
মধ্যযুগে অশ্বরূঢ় নাইট খুঁজতো হোলি গ্রেল কী দুর্গম
পাথুরে প্রান্তরে, বনে উপবনে, পাহাড়ে পাহাড়ে।
(কানামাছি ভোঁ ভোঁ…)
ভেসে ওঠে একজন যুবা, ক্ষয়রোগীর মতন সমাজের
স্বাস্থ্যেদ্ধারে নিবেদিত, সর্বদা ভূতলবাসী।
ব্যক্তিগত টানেলে কেউ-বা
অতিশয় স্বপ্নলিপ্সু, পলায়নই অর্থ তার সোল্লাসে রটায়
শক্রপক্ষ। একজন নিজ ঘরে দ্যাখে চোরাবালি সর্বক্ষণ,
দ্যাখে বাগানের পথে বীভৎস কঙ্কালময় রুক্ষ মরুভূমি।
(কানামাছি ভোঁ ভোঁ…)
অন্যজন, ছন্নছাড়া, রাত্রির শহরে অন্ধকার পথে হাঁটে,
তার চুল থেকে এক অলৌকিক পথরেখা ছায়াপথে মেশে,
বুকে জোনাকির মতো শব্দ জ্বলে নেভে, বুকে ব্যস্ত
জটিল বীজাণু।
(কানামাছি ভোঁ ভোঁ…)