কাগজের ফুল – ১

পাঠকদের বলছি। আসুন, একটা গল্প তৈরি করা যাক।

সামাজিক গল্প আমি লিখি না। কারণ গল্পের নামে অবান্তর এলোমেলো স্বগত চিন্তা দিয়ে পাতার পর পাতা ভরানো আমার ধাতে আসে না। আমি যা লেখার চেষ্টা করি, তা হচ্ছে নেহাত গল্প। তাও অপরাধ নিয়ে। তাই বোধ করি, এ—কালের লেখকদের কাছে অপরাধী হয়ে আছি। গল্পের চরিত্রগুলিকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিয়ে আমি তাদের পিছনে থাকি, তারা নিজেরাই যা করে, যা বলে, তাই লিপিবদ্ধ করি; তাদের আড়াল করে দাঁড়িয়ে, তাদেরই মুখ দিয়ে আমার নিজের কথা জাহির করি না। দু’—একবার চেষ্টা করে দেখেছি, পারিনি। চুল পাকলেও জীবনের পাঠশালায় আমি এখনো ছাত্র, লেকচারার হতে পারিনি। তাই আমার গল্প নিছক গল্প ছাড়া আর কিছুই হয় না।

কিন্তু নিছক গল্প আজকাল ব্যাক—ডেটেড। নেহাত সেকেলে। খবরের কাগজের ভাষায় যাকে বলে এ যুগের প্রতিফলন, জীবন—যন্ত্রণা ইত্যাদি, সে—সব না থাকলে নাকি আজকের গল্প হয় না, মানে আজকের পাঠকদের খুশি করা যায় না। অতএব আসুন, একটা আজকের গল্পই তৈরি করা যাক।

গল্পের একজন নায়ক থাকে, আর নায়কের নামও থাকে একটা। কিন্তু নামের কি দরকার? গল্প যখন আজকের, নায়কও তখন আজকের। আজকের সব গল্পের সব নায়কই এক। বয়সে চরিত্রে স্বভাবে প্রকৃতিতে তারা একই—আদর্শহীন শিক্ষার সঙ্গে যৌবনের অস্থিরতা আর উগ্র জীবন—তৃষ্ণা মিশিয়ে তারা একই ছাঁচে ঢালা। তারা সবাই ‘হাংরি জেনারেশন’। সুতরাং নামে কী আসে যায়? আজকের যে—কোনো যুবক নায়ক হতে পারে আমাদের গল্পের।

নায়ককে আমরা নায়ক বলেই ডাকব।

ভদ্র সৎ পরিবারের ছেলে সে। বয়স আটাশ। অবিবাহিত। দেখতে মোটামুটি ভালোই। লম্বায় ছ’ফুটের কাছাকাছি, স্বাস্থ্যবান চেহারা, রংটা কালো হলেও ঝকঝকে। বছর ছয়েক হল কমার্সে ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়েছে। বিজনেস অর্গানাইজেশনে উঁচু মার্কস পেয়েছিল, তাই চাকরি পেতে দেরি হয়নি। চাকরিটাও দামি। থাপার ট্রেডিং থেকে সব মিলিয়ে মাসে এখন সাড়ে পাঁচশো পায়, ভবিষ্যতে অঙ্কটা আড়াই হাজারে গিয়ে পৌঁছতে পারে।

বড় ভাই কানপুরে রেল—অফিসার, বিধবা মা থাকেন তারই সংসারে নাতি—নাতনিদের নিয়ে। সুতরাং নায়কের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। ঝাড়া হাত—পা। টাকা যা রোজগার করে, সবটাই সে নিজের জন্যে খরচ করতে পারে। বছরে এক—আধবার শিবরাত্রি বা অম্বুবাচী উপলক্ষে মায়ের জন্যে কিছু হাতখরচ পাঠিয়ে দেয়। কখনো টাকা পাঠায় ভাইপো—ভাইঝির জন্মদিনে।

নায়ক হিসেবে আমাদের নায়ককে প্রথম শ্রেণীর বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। পাত্রের বাজারে তাকে ‘আগ মার্কা’ পাত্র বলা হয়। তবু সে এখনো ব্যাচেলর। তার কারণ এই নয় যে, বিয়েতে তার রুচি নেই। তার কারণ যুগ পালটে গেছে।

এখন আর বয়সটা বাইশ পেরোলেই টোপর পরার রেওয়াজ নেই। আটাশ বছরটা আজকাল বিয়ের পক্ষে পরিণত বয়স নয়। প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর পর্যন্ত দেখে বেড়ানো এবং চেখে বেড়ানোর বয়স। অর্থাৎ জীবনের পার্টনার বাছাই করার পিরিয়ড।

কিন্তু আমাদের নায়ক বিয়ে করেনি বলে তার আটাশ বছরের জীবনে মেয়েদের আসা—যাওয়া নেই, এমন অবাস্তব ধারণা সঙ্গত নয়। যুদ্ধোত্তর দুনিয়ায় নয়া জমানার ঢেউ লেগেছে এবং সেই ঢেউ বঙ্গোপসাগরের কুলেও আছড়ে পড়েছে। নীতি বদলেছে। পুরোনো আমলের ইউনিভার্সিটি বিল্ডিংয়ের মতো পুরোনো সংস্কার ভেঙে—চুরে নয়া সমাজ—ব্যবস্থার বিশাল আমেরিকান বিল্ডিং উঠেছে। তার সব ক’টা দরজায় কোনো কপাটও নেই, পাহারাও নেই।

মেয়েরা এখন আর পুরুষের নর্মসঙ্গিনী নয়, কর্মসঙ্গিনী। ট্রামে—বাসে হাটে—বাজারে অফিসে—সিনেমায় একেবারে পার্শ্ববর্তিনী। প্রাচীন শিলালিপির মতো তারা আর রহস্যময়ী নয়, দৈনিক খবরের কাগজের মতো নিতান্ত স্পষ্ট। ছেলেতে—মেয়েতে অবাধ মেলামেশা এ যুগের সবচেয়ে স্বাভাবিক ব্যাপার। আজকের ছেলে—মেয়েদের হাতে হাতে রয়েছে নয়া জমানার একটি ছাড়পত্র। তার নাম কমরেডশিপ—বন্ধুতা।

এই ছাড়পত্র আমাদের নায়কেরও আছে। তারও যৌবনের দরজায় কয়েকটি বান্ধবীর আনাগোনা ঘটেছে, পায়ের ছাপ পড়েছে, আবার মুছেও গেছে।

তাই নিয়েই অমাদের গল্প।

নায়ক যেখানে একজন, সেখানে তার কোনো নাম না দিলেও চলে। কিন্তু নায়িকা যেখানে একাধিক, সেখানে তাদের গায়ে নামের চিহ্ন না দিলে তাদের চিনতে মুশকিল হবে। তারা সবাই একাকার হয়ে যাবে। অতএব নায়িকার নাম রাখা দরকার।

তিন বছর আগে আমাদের নায়কের যৌবনে প্রথম যে মেয়েটির পদক্ষেপ ঘটে, তার নাম—ধরুন, তার নাম মুক্তা বসু।

মুক্তা

বছর খানেক পিছিয়ে যাওয়া যাক।

আটষট্টি সালের এক এপ্রিল—সন্ধ্যা। নায়ক গিয়েছিল গড়িয়াহাটের মোড়ে শার্টের কাপড় খরিদ করতে। দোকানটা নতুন, সুন্দর করে সাজানো, নাম ‘প্রচ্ছদ’। ঢুকে পড়ল নায়ক। কাউন্টারের পাশ থেকে এগিয়ে এল একটি সেলস গার্ল, অভ্যস্ত গলায় মিষ্টি করে বললে, কি দেব বলুন? টেরিন টেরিকটন ইজিপ্সিয়ান সিল্ক পপলিন—সুটিং শার্টিং শাড়ি—

কিছু বলতে পারেনি নায়ক। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে শুধু শুনছিল।

দু—সেকেন্ড থেমে মেয়েটি আবার প্রশ্ন করলে, বলুন, কি দেব?

এবার নায়ক বললে, শার্টের কাপড়—টেরিকটন।

প্লেন, না চেক?

প্লেন।

এক মিনিট—প্লিজ!

মেয়েটি চলে গেল কাউন্টারের ওপাশে। র্যাক থেকে বেছে বেছে নানান রঙের টেরিকটন থান কাউন্টারের ওপর জড়ো করতে লাগল। আর, এপাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগল নায়ক। ঘষা—মাজা রঙ—ফর্সাই বলা চলে, সাধারণ বাঙালি মেয়ের তুলনায় একটু বেশি লম্বা। মেয়েটির সেই দীর্ঘছন্দ দেহের একটা আবেদন আছে। পুরন্ত সুঠাম দেহ। সেই দেহের দিকে তাকালে তার নাক—মুখ—চোখে খুঁত আছে কিনা সে—প্রশ্ন জাগে না। ছাপা ভয়েলের একখানা শাড়ি পাকে পাকে জড়িয়ে তার দেহের জ্যামিতিক নকশাগুলো আরো স্পষ্ট করে তুলেছে। সেখানে কোনো খুঁত নেই।

আমরা এই মেয়েটিরই নাম দিয়েছি মুক্তা বসু।

পাঁচ—সাত রঙের থান নামিয়ে মুক্তা ডাকলে, আসুন। চয়েস করুন।

কাউন্টারের সামনে এগিয়ে গেল নায়ক। নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল থানগুলো। না, যে রঙের শেড সে খুঁজছে, তা নেই। হাত সরিয়ে নিলে সে। অথচ শুধু দেখে—শুনে বিনা সওদায় চলে যেতে কেমন যেন ভদ্রতায় বাধে।

কি হল? পছন্দ হচ্ছে না?

নায়ক কাউন্টার থেকে মুখ তুলে দেখলে, হাসি মুখে চেয়ে আছে মেয়েটি। রঙ—মাখা হালকা গোলাপি পুরু ঠোঁট দুখানা অল্প খোলা। হাসিটাও গোলাপি আমেজে ভরা। তবু যেন ওজন—করা, মাপা।

মুক্তার প্রশ্নের কি অর্থ বুঝল নায়কই জানে, চোখে চোখ রেখে বলে ফেলল, না, না, পছন্দ হয়েছে বইকি—খুবই পছন্দ হয়েছে।

মুক্তা চোখ সরিয়ে নিল। ঠোঁটে গোলাপি হাসিটা রেখে দোকানদারি গলায় বললে, টেরিকটের মধ্যে বিনিই হল বেস্ট। কোন রঙটা দেব বলুন?

ঠিক বুঝতে পারছি না কোন রঙের শেডটা মানাবে।

আপনার নিজের জন্য?

ঘাড় নাড়লে নায়ক।

কিছু যদি মনে না করেন, আমি বেছে দিতে পারি। মুক্তা বললে।

নায়ক বললে, ধন্যবাদ। নিজের জন্য নিজের রুচিটাই ভালো নয় কি?

খদ্দেরকে সহজে ছাড়ল না মুক্তা। বললে, নিশ্চয়। তবে সেটা খাবার সময়। পোশাকের বেলায় কিন্তু পরের রুচি মেনে চলাই ভালো।

একটু হেসে নায়ক বললে, বেশ মানছি। বলুন, কোন শেডটা নেব?

এই অলিভ গ্রিনটা নিতে পারেন—আজকাল এই রঙটা খুব চলছে।

ঠিক আছে, তাই দিন।

সবুজ রঙটাই নায়কের দু—চোখের বিষ। তবু সেদিন সে অলিভ গ্রিন শার্টের কাপড় সওদা করে বসল। রঙটা এখন আর তেমন খারপ মনে হচ্ছে না। সেলস গার্ল হিসাবে মেয়েটি চমৎকার! কিন্তু শুধু মেয়ে হিসাবে আরো চমৎকার নয় কি?

সওদা করে চলে আসার সময় মুক্তা আবার হাসলে। গোলাপি আমেজ ভরা সেই মাপা হাসি। বললে, নমস্কার। দরকার হলে আবার আসবেন।

.

দরকার হয়নি, তবু নায়ক আবার গেল। গড়িয়াহাটের সেই দোকান ‘প্রচ্ছদ’—এ।

ঠোঁটে গোলাপি হাসি এনে মুক্তা এগিয়ে এল: কি দেব?

দেরাজে গোটা আষ্টেক ট্রাউজার ঠাসা, তবু সে প্যান্টের কাপড় চাইলে। বললে, অলিভ গ্রিনের সঙ্গে কোনো রঙ ম্যাচ করবে বলুন তো?

ঘরে বলে দেওয়ার লোক নেই বুঝি? হাসি মুখেমুক্তা বললে।

মানে?

মানে, মিসেসরাই তো মিস্টারদের জন্য রঙ পছন্দ করেন—

এবার নায়ক হাসলে। বললে, তেমন কেউ থাকলে আপনার সাহায্য চাইব কেন?

মুক্তা বললে, নিশ্চয় চাইবেন। কাস্টমারকে হেলপ করা আর খুশি করাই তো আমাদের কাজ।

মেয়েটা অদ্ভুত! সেলস গার্লের কাজ করে বলে গলায় কি অভ্যস্ত দোকানদারি ছাড়া অন্য সুর থাকতে নেই?

র্যাক থেকে কাপড়ের থান নামাতে লাগল মুক্তা। আর, ছাপা ভয়েলের শাড়ি জড়ানো দীর্ঘ সুঠাম দেহের প্রতিটি ভঙ্গিমা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগল নায়ক। তার প্রাচীন ভদ্র মন বললে, কোনো ভদ্র মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকাটা অশালীন আচরণ। তার আঠাশ বছরের যৌবন বললে, যা দেখতে ভালো লাগে, তা দেখতে দোষ নেই।

পরের সপ্তাহে নায়ক আবার গেল।

যাবার ঠিক ইচ্ছে ছিল না, রাসবিহারীতে সিগারেট কিনতে এসে ইচ্ছে হল যেতে।

গোলাপি রঙ—মাখা ঠোঁট এগিয়ে এসে বললে, আসুন, কি দেব?

টাই।

সরি, আজ দিতে পারছি না।

কেন?

দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। আমারও ছুটি।

নিজের হাতঘড়ি দেখে নায়ক বললে, এখনো তো আটটা বাজেনি!

আটটা বাজতে দশে সেল বন্ধ হয়ে যায়।

ও! ভালোই হল, কয়েকটা টাকা বেঁচে গেল। চলুন তাহলে, যাওয়া যাক।

কাউন্টারের ড্রয়ার থেকে ভ্যানিটি ব্যাগটা টেনে নিলে মুক্তা, তারপর বেরিয়ে পড়ল। রাসবিহারী ধরে হাঁটতে লাগল দুজনে বাস—স্টপেজের দিকে। পঞ্চাশ গজ যেতে না যেতেই চৈত্র—সন্ধ্যার খ্যাপা ঝোড়ো হাওয়া গুন্ডাপার্টির মতো হই হই করে এসে পড়ল তাদের সামনে। ধুলো—বালির ঝাপ্টা মেরে এক লহমায় নাস্তানাবুদ করে দিলে পথের মানুষদের। মুক্তার একখানা হাত ধরে টানতে টানতে নায়ক বললে, শিগগির ঢুকে পড়ুন ওই রেস্তোরাঁয়।

একটা কেবিন দখল করে নায়ক বললে, কি খাবেন বলুন?

শব্দ করে হেসে মুক্তা বললে, ধুলো—বালি খেয়েই পেট ভরে গেছে!

অভ্যস্ত দোকানদারির বদলে নায়ক এই প্রথম অন্য সুর শুনল মুক্তার গলায়। চেয়ে দেখলে, ‘প্রচ্ছদ’—এর বাইরে এসে তার হাসির চেহারাটাও বদলে গেছে। সেই গোলাপি রঙ—করা মাপা হাসি নয়, গোলাপজলের ফোয়ারার মতো আপনি—উছলে—পড়া মিষ্টি হাসি।

ঝড়ে এলেমেলো চুলগুলো গুছিয়ে নিতে নিতে মুক্তা বললে, এমন বিনা নোটিশে ঝড় আসাটা কিন্তু ভারি অন্যায়!

সমুখে একটু ঝুঁকে নায়ক বললে, আমার তো ঝড়কে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে।

কেন শুনি?

আপনার সঙ্গে ভালো করে আলাপ করার সুযোগ দিয়েছে বলে।

হালকা হেসে মুক্তা বললে, কী যে বলেন! একজন সেলস গার্লের সঙ্গে আলাপ করাটা কী আর এমন ব্যাপার?

নায়ক বললে, আপনার সবটুকুই তো সেলস গার্ল নয়।

মুক্তার উছলে—ওঠা হাসি হঠাৎ থেমে গেল। কেমন যেন শান্ত হয়ে গেল সে। না, তার সবটাই সেলস গার্ল নয়। শুধু মেয়ে হিসাবেও তার একটা অন্য পরিচয়—অন্য সত্তা আছে। কিন্তু কেউ তো এতদিন তা জানতে চায়নি!

সেদিন সেই এলোমেলো ঝড়ের সন্ধ্যায় আমাদের নায়ক নিজের নাম—ধাম জানিয়েছিল, আর জেনেছিল মুক্তা বসুর ব্যক্তিগত পরিচয়।

পূর্ব বাংলার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। জমিদারি না থাকলেও সংসারকে সচ্ছল রাখার মতো জমিজমা ছিল। বাবা ছিলেন হাইস্কুলের হেড মাস্টার। ছেচল্লিশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাতেও তাঁরা টিকে ছিলেন কোনোমতে। ভিটের মায়া ছাড়তে রাজি হননি তার বাবা। কিন্তু আরো কয়েক বছর বাদে আর থাকা গেল না। সর্বস্ব খুইয়ে চলে আসতে হল শহর কলকাতায়। সেটা তেরো বছর আগের ঘটনা—মুক্তার বয়স তখন দশ। কলকাতায় এসে উদ্বাস্তু হিসাবে তার বাবা পেলেন একটুকরো জমি আর পেলেন একটা স্কুলে সেকেন্ড টিচারের চাকরি। চাকরি আর টিউশনি মিলিয়ে সংসারের চাকা আবার ঘুরতে শুরু করল। মুক্তা আবার ভর্তি হল স্কুলে। স্কুল থেকে কলেজে। তারপর সংসারের চাকা আবার একদিন অচল হয়ে গেল। বাবা মারা গেলেন স্ট্রোকে। মুক্তা তখন বি. এ পড়ছে। পার্ট টু পরীক্ষাটা আর দেওয়া হল না, জীবনের লড়াইয়ে নেমে পড়তে হল। কপাল ভাল, ‘প্রচ্ছদ’—এ সেলস গার্লের চাকরিটা জুটে গেল। সকাল দশটা থেকে রাত আটটা অবধি ডিউটি। ভালো—মন্দ হাজার খানেক খদ্দেরকে খুশি করে জিনিস বিক্রি করা—হয়তো বা তার সঙ্গে নিজের কিছুটা সম্মানও বেচে দেওয়া! তা হোক, টাকার বড় দরকার। মাস গেলে দুশো পঁচিশ টাকা মন্দ কী? ছোট ভাইটাও লেদ মেশিনের কাজে ঢুকেছে। মুক্তার পড়াটা বন্ধ হল, হোক—সংসারের চাকা তো আবার ঘুরছে।

চুপ করে শুনল আমাদের নায়ক। অতটা গরিব না হলেও সেও মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। জীবনের বাস্তব চেহারাটা তারও খানিকটা দেখা আছে। সেলস গার্লের খোলস ছেড়ে যে মেয়েটি এখন তার সামনে বসে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে, তার প্রতি আমাদের নায়কের ভদ্র মন সহজাত প্রবৃত্তির বশে শ্রদ্ধা ও সহানুভূতিশীল হয়ে উঠল। তার ইচ্ছে হল—প্রবল ইচ্ছে হল, জীবনের লড়াইয়ে এই মেয়েটির পাশে থেকে সমস্ত অসম্মান থেকে তাকে বাঁচায়।

তখন কফি শেষ করে মুক্তা দু’হাত তুলে অগোছালো বেণী খোঁপা করে জড়াচ্ছিল। মুক্তা বসেছে নায়কের দিকে একটু আড় হয়ে। দু’বাহু তোলার দরুণ পাতলা ভয়েলের আড়ালে নীবি—বন্ধনীর ইশারা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আঠাশ বছরের যৌবন নায়কের কানে কানে বললে, ‘পৃথিবীর সমস্ত ফুলের মধু এক—এক ফোঁটা করে নিয়ে বিধাতা—পুরুষ যুবতীর দেহ গড়েছে! তুমি তার স্বাদ জানো কি?’

বাইরে ঝড় থেমেছে। বৃষ্টিও হয়ে গেছে এক পশলা। তবু কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠল নায়ক। যে তাকে অস্থির করেছে, সেই আঠাশ বছরের যৌবনকে ধমক দিয়ে সে উঠে পড়ল। বললে, চলুন, এবার যাওয়া যাক।

ব্যাগ খুলে মুক্তা কফির দাম মিটিয়ে দিতে যাচ্ছিল, নায়ক বললে, ওকি, আপনি খরচ করবেন কেন? কফি তো আমি খাওয়ালাম!

মুক্তার মুখে সেই রঙ—করা হাসি দেখা দিল। বললে, ধন্যবাদ। আপনি দয়ালু কাস্টমার, গরিব সেলস গার্লের দেড়টা টাকা বাঁচিয়ে দিলেন।

অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল আমাদের নায়ক। অজান্তে মেয়েটার সম্মানে ঘা দিয়ে বসল নাকি। তাড়াতাড়ি বললে, ছি, ছি, আপনি তা ভাবছেন কেন? কাস্টমার কি বন্ধু হতে পারে না?

লজ্জিত নায়কের গলায় এমন একটা আন্তরিকতার সুর বেজে উঠল যে, মুক্তা বসু তার মুখের পানে না তাকিয়ে পারল না। সুশ্রী একখানি পরিচ্ছন্ন মুখ উজ্জ্বল চোখে তার দিকে চেয়ে আছে। সে চোখের স্বচ্ছতায় বন্ধুতার আহ্বান ছাড়া কোনো অভিসন্ধি খুঁজে পেল না মুক্তা।

আবার সহজ হয়ে এল মুক্তা বসু। আস্তে আস্তে শুধু বললে, বেশ, দামটা আপনিই দিন।

দুজনে যখন রাস্তায় পা দিল, তখন রাত পৌনে ন’টা।

নায়ক জিজ্ঞেস করলে, যাবেন কোথায়?

টালিগঞ্জে। মুক্তা বললে।

টালিগঞ্জের কোন জায়গা?

বিধান কলোনি।

ও অঞ্চলে প্রায়ই গোলমাল হয় শুনেছি। আমারই জন্যে আজ আপনার রাত হয়ে গেল, আপনাকে বরং পৌঁছে দিয়ে আসি চলুন।

প্রস্তাবটা খুব সহজভাবে এড়িয়ে গেল মুক্তা। বললে, কেন কষ্ট করবেন? আমি তো একাই আসি—যাই। আচ্ছা, চলি।

একখানা বাস এসে স্টপেজে থামল। উঠে পড়ল মুক্তা। বাস ছাড়বার আগে বলে গেল, লেটেস্ট ফ্যাশানের টাই এসেছে। আসবেন দোকানে।

 * * *

দিন দুই বাদে আবার দেখা হল। তারপর আবার, তারপর বারবার। একনাগাড়ে বেশ কয়েক মাস। দোকানের ছুটির পর কোনোদিন কোনো রেস্তোরাঁয়, কখনো পার্কে, কখনো বা গঙ্গার ধারে। কথা হয়, গল্প হয়, স্পর্শ বিনিময় হয়।

পুরুষ—প্রকৃতির চিরাচরিত বিধানে এই ক’মাসে দুজনে অনেক কাছাকাছি এসে গেছে। ‘আপনি’ হয়েছে ‘তুমি’। নায়কের জীবনে মুক্তা প্রথম রমণী, মুক্তার জীবনে নায়ক প্রথম পুরুষ। তবু দেওয়া—নেওয়ার সম্পর্কটা এখনো তত গভীরে পৌঁছয়নি।

যেদিন বেশি রাত হয়ে যায়, নায়ক ট্যাক্সি করে মুক্তাকে পৌঁছে দিয়ে আসে। পাড়ার দাদাদের চোখ টাটাতে পারে, তাই একেবারে বাড়ি অবধি নয়, বিধান কলোনির আগের মোড় অবধি। নায়ক পৌঁছে দিতে চাইলে মুক্তা আর আপত্তি করে না। নায়কের কাঁধে মাথা হেলিয়ে চুপচাপ বসে থাকে ট্যাক্সির মধ্যে। কথা কয় না, চোখ দুটি বোজা, একটা স্বপ্নাচ্ছন্ন তন্দ্রার ঘোরে থাকে। নায়ক একদিন গিয়েছিল মুক্তাদের বাড়িতে। টালি—ছাওয়া ছোট ছোট খানতিনেক ঘর। লাউ—মাচা, গাঁদার চারা। মুক্তার মা তাকে আদর—যত্ন করেছিলেন, আর খাতির করেছিলেন সে পাঁচশো টাকা মাইনে পায় শুনে।

যে যার পথে যাবার সময় নায়ক জিজ্ঞেস করে, কাল দেখা হচ্ছে তো?

রোজই এক প্রশ্ন। উত্তরে মুক্তা শুধু ঘাড় নেড়ে জানায়, হবে।

এক রবিবারে ওরা গিয়েছিল সিনেমায়। ম্যাটিনিতে। সিনেমা থেকে যখন বেরোল, তখনও বেলা আছে। ওরা চৌরঙ্গির একটা দোকানে চা খেল। তারপর হাঁটতে হাঁটতে ময়দানে একটা গাছের ছায়ায় এসে বসল।

ছবির গল্প নিয়ে, সোফিয়া লোরেনের অভিনয় নিয়ে আলোচনা করতে লাগল নায়ক। মুক্তা শুধু শুনেই গেল, হাঁটুর ওপর চিবুক রেখে বসে রইল চুপচাপ। তারপর ফোর্ট উইলিয়ামের আড়ালে সূর্য ডুবল, পাতলা অন্ধকার নামল, ফাঁকা হয়ে এল ময়দান।

মুক্তা হঠাৎ বললে, আজ উঠি।

তার আঙুলে আঙুল জড়িয়ে বসেছিল নায়ক। বললে, এত সকাল সকাল?

নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে মুক্তা বললে, একটু সকাল সকালই ফিরব।

নায়ক সেই একই প্রশ্ন করলে, কাল দেখা হচ্ছে তো?

ছোট্ট করে জবাব দিলে মুক্তা, না।

পরশু?

না। দেখা আর না হওয়াই ভালো।

কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে বসেছিল নায়ক, সোজা হয়ে উঠে বসল। বললে, কেন? কি হল?

খুব সহজভাবে মুক্তা বললে, আমাদের মেলামেশা এই পর্যন্তই থাক। আর নাই বা এগোলাম।

এগোলে দোষ কি?

কোথায় গিয়ে পৌঁছব, সেটা না জেনে এগনো কি ভালো?

একটু অসহিষ্ণু গলায় নায়ক বললে, অত হিসেব করে জীবনে চলা যায় না মুক্তা।

মেয়েদের কিন্তু হিসেব করেই চলতে হয়। কেননা লোকসানের ভয় তাদেরই বেশি।

এক সেকেন্ড চুপ করে রইল নায়ক। তারপর বললে, আমার সঙ্গে মিশলে তোমার লোকসানের ভয় আছে?

নরম গলায় মুক্তা বললে, রাগ কোরো না। আমি তা বলিনি।

তবে কি বলতে চাইছ? তোমাকে আমি কতখানি ভালোবেসেছি, আজও তুমি বুঝতে পারোনি?

পেরেছি। কিন্তু তুমি কি বোঝো আমার মতো সাধারণ মেয়ে কী চায়, আর কী পেলে সুখী হয়?

কি?

অন্ধকারে মুক্তার একখানা হাত নায়কের হাতের মধ্যে এসে পড়ল। মুক্তা বললে, এমন একজন সঙ্গী—যার ওপর নির্ভর করলে জীবনের শেষ দিন অবধি সে আমার হাত ছাড়বে না।

একটা আবেগের ঢেউ নায়কের যুবক মনকে দুলিয়ে দিলে। তার মনে হল মুক্তার জন্য সব কিছুই সে করতে পারে। আর সেই আবেগ গলায় নিয়ে বললে, তোমাকে ছেড়ে থাকার কথা আমি আজ ভাবতেও পারি না মুক্তা। তোমাকে বাদ দিয়ে আমার জীবনটা—অসম্ভব, অসম্ভব! বিশ্বাস করো, সারাটা জীবন আমি তোমাকে ভালোবাসতে চাই—পাশে থেকে তোমায় সুখী করতে চাই!

বলতে বলতে মুক্তাকে বুকের কাছে টেনে নিল নায়ক। তারপর উষ্ণ নিশ্বাস, উষ্ণ স্পর্শ।

মুক্তা কোনো বাধা দিলে না। এমন করে নিঃশব্দে আত্মসমর্পণ সে আগে কখনো করেনি।

.

থাপার ট্রেডিংয়ের ছোট থাপার নিজের খাস কামরায় ডেকে পাঠাল নায়ককে।

কোম্পানির এক নম্বর সাহেব এখন ছোট থাপার। বড় থাপার প্রায় রিটায়ার করেছে। মাঝারি দৈর্ঘের অত্যন্ত বলিষ্ঠ চেহারা ছোট থাপারের, নাক—মুখ—চোখ একটু মঙ্গোলীয় ধাঁচের, টকটকে ফর্সা রঙে বেশ খানিকটা লাল মেশানো। কড়া ‘বস’ হিসাবে অফিসে অখ্যাতি আছে।

লাঞ্চের পর ঘরে বসে লেমন স্কোয়াশে চুমুক দিচ্ছিল ছোট থাপার। নায়ক এল।

আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন?

হ্যাঁ, বোসো।

একটু অবাক হল নায়ক। অধীনস্থ অফিসারদের বসতে বলা ছোট থাপারের অভ্যাসের বাইরে।

কোল্ড ড্রিঙ্কে আপত্তি নেই তো?

বোতাম টিপে বেয়ারাকে আরেক গ্লাস লেমন স্কোয়াশের অর্ডার দিলে। তারপর পাইপ ধরিয়ে বললে, জেরি অ্যান্ড বেরির অর্ডারটার কি হল?

মাল রেডি হয়েছে, কাল বাই এয়ার চলে যাবে।

গুড। আর সিন্ধিয়া কর্পোরেশনের অর্ডারটা?

ওরা পাঁচ পার্সেন্ট ডিসকাউন্টে ‘এ’ গ্রেড মাল চাইছে স্যার।

বেশ তো, দিয়ে দাও ডিসকাউন্ট।

কিন্তু স্যার, লোকসান হয়ে যাবে যে!

অত্যন্ত সহজ ভাবে ছোট থাপার বললে, হোক না। লোকসানটা ওদের, আমাদের লাভ। ‘এ’ গ্রেডের লেবেল দিয়ে ‘বি’ গ্রেডের মাল সাপ্লাই করে দাও।

থতিয়ে গেল নায়ক। বললে, কিন্তু আমাদের ফার্মের নীতি—

নীতি!—ছোট থাপারের ঠোঁটের কোনায় আর ছোট ছোট চোখের তারায় একটা কৌতুক চিকচিক করে উঠল। বললে, ওটা পুরানো বইয়ের কথা। আজকের দুনিয়ায় লাভটাই বড়, নীতি—টিতি কিছু নয়। এতবড় অর্ডার তো হাতছাড়া করা যায় না!

তাই হবে স্যার।

উঠতে যাচ্ছিল নায়ক; ছোট থাপার বললে, বোসো। আমাদের ফার্মে তোমার ক’ বছর হল?

তিন বছর।

আশ্চর্য, তিন বছরেও তোমার প্রমোশন হয়নি! তোমাকে তো বেশ ইন্টেলিজেন্ট বলেই মনে হয়।

চুপ করে রইল নায়ক। বলতে পারত, আপনার সুনজরে এতদিন পড়তে পারিনি বলে। কিন্তু সে কথা কি বলা যায়?

ছোট থাপার বললে, অফিস—সুপারভাইজার মিস্টার কাপুরের আরো একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট দরকার। ভাবছি তোমাকেই রেকমেন্ড করব।

কড়া ‘বস’ ছোট থাপারের সদাশয়তায় মুগ্ধ হয়ে গেল নায়ক। এখন সে পাচ্ছে পাঁচশো করে, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারভাইজারের মাইনে সাড়ে আটশো।

ধন্যবাদ স্যার।

কৃতজ্ঞ স্বরে বলে নায়ক উঠে পড়ল। সুইংডোরের কাছে পৌঁছবার আগেই ছোট থাপার পুনরায় ডাকলে, শোনো।

ফিরে দাঁড়াল নায়ক।

‘বস’ বললে, কাল তোমাকে নিউ এম্পায়ারে দেখলাম। সঙ্গে কে ছিলেন? তোমার ফিয়াঁসে?

প্রশ্নটার জন্যে তৈরি ছিল না নায়ক। কেমন একটু অস্বস্তি বোধ করে বললে, না—মানে—আমার একজন বান্ধবী।

আই সি!—নায়ক লক্ষ করলে ছোট থাপারের ঠোঁটের কোনায় আর ছোট ছোট চোখের তারায় সেই কৌতুক চিকচিক করছে। একটু থেমে ছোট থাপার বললে, সামনের রবিবার ‘গুলমার্গে’ আমি একটা ছোট পার্টি দিচ্ছি। জনকয়েক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আসবে। তোমরাও দুজনে এলে খুশি হব।—আচ্ছা, এসো।

খোলা ফাইলের ওপর ঝুঁকে পড়ল ছোট থাপার। আর, কয়েক সেকেন্ড আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে নায়ক ফিরে গেল নিজের টেবিলে।

.

এতক্ষণে বোঝা গেল। অধস্তন কর্মচারীকে বসতে বলার ভদ্রতা, লেমন স্কোয়াশ অফার করা, আর তার প্রমোশনের জন্য সহসা মনিবের মাথাব্যথার অর্থটা পরিষ্কার হয়ে উঠল।

ইঙ্গিতটা স্পষ্ট। ছোট থাপার মুক্তার সঙ্গে আলাপ করতে চায়। করুক না আলাপ, দোষ কি? সেলস গার্ল মুক্তার সঙ্গে কত লোকেই তো আলাপ করে। কিন্তু না, মেয়েদের সঙ্গে ছোট থাপারের আলাপ করার মানে নায়ক বোঝে। অফিসের অনেকেরই মতো সেও শুনেছে নারী—শৌখিন ছোট থাপারের প্রাইভেট লাইফ। শুনেছে প্রতি সপ্তাহে ‘গুলমার্গে’ কারা আসে, কি হয়। চল্লিশ পার হলেও অতি মাত্রায় মাংসাশী। তার ভোগের ডিশে নায়ক আর যাকেই হোক, অন্তত মুক্তাকে সাজিয়ে উপহার দিতে পারবে না। অসম্ভব! মুক্তাকে সে ভালোবাসে।

বেঁকে বসল নায়কের মন। মনে মনে সে স্থির করে নিলে, পরদিন অফিসে গিয়ে ছোট থাপারকে সে বলবে: ‘মাপ করবেন, পার্টিতে মুক্তাকে নিয়ে যাওয়া হবে না।’

কিন্তু বলতে পারল না। বলি—বলি করেও বলতে পারল না। এমনকি শনিবারে অফিস—ছুটির পর লিফটের কাছে যখন দেখা হল, আর ছোট থাপার হেসে জিজ্ঞেস করলে, ‘কাল তোমার বান্ধবীকে নিয়ে আসছ তো?’ তখনো বলতে পারল না।

আশ্চর্য, যতবার বলতে গেছে, ততবারই মনে হয়েছে এখন সে পায় মোটে পাঁচশো করে, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারভাইজার হলে পাবে সাড়ে আটশো! চাকরিতে প্রমোশনের সুযোগ বারবার আসে না।

আর, মনে পড়েছে ছোট থাপারেরই কথা: ‘দুনিয়ায় লাভটাই বড়, নীতি—টিতি কিছু নয়!’

.