৩
লাল মাটির কাকর-পাথর মেশানো পথ। তারই দু’পাশে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, লেবু, পেয়ারা আরও কত কী গাছ। একপাশে ফুলের, এক পাশে ফলের। একটা গাছের দিকে আঙুল দেখিয়ে চন্দন বলল, মামা, এটা কী গাছ গো?
এটা তো ইউক্যালিপ্টাস।
ও। আর ওই যে ফুলের গাছ ওগুলো? ওগুলোর নাম কি? একটার নাম অবশ্য আমি জানি, মাধবীলতা।
তার পাশে মালতী, কুঞ্জলতা, অ্যান্টিগোনান আরও কত আছে।
আর ওই যে ওই গাছগুলো?
ওগুলো অবশ্য ফুল গাছ নয়। তবে নাম জানি না।
অমনি পিছন থেকে কে যেন সুরেলা গলায় বলে উঠল, ওগুলো জলপাই গাছ। আর ওই হল পিচ, ফসলা, চালতা, আতা।
ওরা দু’জনেই চমকে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল সেই কিশোরী মালা সামান্য একটু দূরত্ব বজায় রেখে কেমন নিঃশব্দে ওদের অনুসরণ করেছে। ভাস্করমামা বলল, আরে মালা।
মালা হেসে বলল, হেন গাছ নেই যা আমাদের বাগানে নেই। সেইজন্যেই তো কত লোকের হিংসে। আগে দাদুর আমলে আরও কত গাছ ছিল। এই দিকটায় ছিল ইউক্যালিপ্টাসের সারি। বর্ষায় বৃষ্টি পড়লে ইউক্যালিপ্টাসের তীব্র গন্ধ যখন ছাপিয়ে উঠত চারদিকে, আর টুপটাপ করে ঝরে পড়ত ইউক্যালিপ্টাসের ফুল তখন আনন্দে ভরে উঠত মন।
চন্দন বিস্ময়ের সঙ্গে সবকিছু দেখতে লাগল। তবে মালার কথাগুলো শুনেও না-শোনার ভান করতে লাগল ও। এমনকী ওর দিকে ফিরেও তাকাল না। ভাবটা এই, ও যেন নেই।
ভাস্করমামা কথা বলতে বলতে আরও একটু এগিয়ে বলল, আচ্ছা ওগুলো কী গাছ বল তো?
ও গাছ চেনেন না? ওটা তো বকুল গাছ। ওই বকুল, কামিনী, গন্ধরাজ, রক্তকরবী, ডলচি, মটুকঝাড়, হ্যামিলটোনিয়া, ম্যাগনোলিয়া, চাঁপা আর গ্রান্ডিফ্লোরা। ওদিকের গাছগুলোর পরিচয় নিশ্চয়ই দিতে হবে না—জুঁই, চামেলি, বেলি, গোলাপ।
ভাস্করমামা বলল, থাক থাক। আর বলতে হবে না। মাথা এমনিতেই ঘুরে যাচ্ছে, আরও ঘুরবে। এত নাম মনে থাকে? কিন্তু এইসব গাছের যত্ন নেয় কে? আগে তো মালী ছিল। এখন বনমালীদাই দেখাশোনা করে। তা ছাড়া আমি যখন আসি তখন আমিও দেখি।
তুমি তো আসো ন’মাসে ছ’মাসে।
হ্যাঁ, তবু দেখি। আসলে বিশ্বাস করুন ধানবাদে আমার একটুও ভাল লাগে না। কী বাজে জায়গা। শুধু বাবা-মাকে ছেড়ে বেশিদিন কোথাও থাকতে পারি না-তাই থাকি। পুজো হয়ে গেছে। এবার কালীপুজোটা হয়ে গেলেই চলে যাব ভাইফোঁটার দিন।
ভাইফোঁটার দিন?
হ্যাঁ, আমার তো ভাই নেই। তাই থেকে আর কী করব! ওইদিনই চলে যাব। চন্দনের হঠাৎ অভিমানটা চাড়া দিয়ে উঠল। কেন না বাগান যখন এদের এবং এই মেয়েটি যখন ওকে ‘নেকু’ বলে অপমান করেছে তখন এইভাবে এদেরই বাগানে লোভীর মতো ঘুরে বেড়িয়ে লাভ কী? বরং মালা যখন থাকবে না-মানে দুপুরে ঘুমোবে তখন বরং চুপি চুপি ও একা এসে এই বাগানের সর্বত্র ঘুরে বেড়াবে এবং গাছপালার সঙ্গে মিতালি পাতাবে। তাই যেতে যেতে হঠাৎ বলল, আমার আর ভাল লাগছে না মামা, আমি যাই।
সে কীরে! তোর বাগানে বেড়াতে ভাল লাগছে না, এও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?
আসলে ট্রেন জার্নি করে না, ঘুমে আমার দু’চোখ জুড়ে আসছে।
মালা যেন কতকটা নিজের মনেই বলল, আহারে, দুধের বাছারে। ইচ্ছে করছে মুখে একটা পুপসি এনে ধরি।
চন্দন নীরবে আর একবার সহ্য করল এই মেয়েটির ঔদ্ধত্য। হাজার হলেও বাড়িটা এদের। তাই চোটপাট এখনি কিছু করা যাবে না। তবে আর একটা কোনওরকম বাজে কথা বললে, ও বাবাকে বলবে সোজা হোটেল উঠতে। বাবা ঠিকই বলেন, কোথাও বেড়াতে গিয়ে কারও বাড়িতে উঠতে নেই। তাতে স্বাধীনতা থাকে না।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর তেড়ে ঘুম। ঘুম যখন ভাঙল তখন সন্ধে হয়ে এসেছে। চন্দন আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলে উঠে বসল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে ঘর থেকে যেই বেরোতে যাবে অমনি বড় আয়নার নিজের মুখটা দেখে চমকে উঠল। এ কী! ওর কপালের ওপর এ কীসের ললাট লিখন। চন্দন কাছে গিয়ে ভাল করে লিখনটা পড়ে বুঝল এতে যা লেখা আছে তা হল ‘নেকু’। এ নিশ্চয়ই ওই দুর্বিনীত মেয়েটার কাজ।
চন্দন তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে ভাল করে সাবান দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলল। তারপর রান্নাঘরে ওর মা, রূপামাসি যেখানে বসে গল্প করছিল সেখানে এল।
মাসি বলল, বাবা! তুই খুব ঘুমিয়েছিস তো? গাড়িতে ঘুম ঠিকমতো হয়নি বুঝি?
দেবযানী বললেন, না না। গাড়িতে বেশ ঘুমিয়েছে ও।
চন্দন বলল, মা, বাবা কোথায়?
তোর মেসোর সঙ্গে বেরিয়েছে
ভাস্করমামা?
মাসি বলল, ওর কথা আর বলিস না। পাক্কা সিনেমাখোর একটা। ঠিক সিনেমায় গেছে।
এমন সময় দেবযানী বললেন, আচ্ছা, মালাকে দেখছি না তো?
ওর দেখা এখন পাবি। ও রকম ধিঙ্গি মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি। দিনরাত শুধু টো-টো করে ঘুরছে। আগে এ রকম ছিল না। এই বারেই এরকম করছে। বড় হচ্ছে। কিন্তু কোনও ভয় ডর নেই। যা দিনকাল পড়েছে তাতে একা একা অত বড় মেয়ের ঘোরা কি ঠিক?
কেন, কোথায় যায় ও?
সে ও-ই জানে। ভোর চারটেয় ঘুম থেকে উঠে মাকে একটু চা করে দেয়— তোর শাশুড়িকে?
হ্যাঁ। মা খুব ভোরে চা খান তো? তারপর সেই অন্ধকারেই ধিঙ্গি মেয়ে সাইকেলে চেপে মর্নিংওয়াক করতে যান। ফেরেন বেলা সাতটা-আটটা, কোনওদিন ন’টায়। সে কী!
তবে আর বলছি কী। তারপর খেয়েদেয়ে দুপুরে ছাদে বসে বই পড়ে, বিকেলে আবার বেরোয়। ফেরে সন্ধের পর। কোথায় যে যায় ভগবান জানে। বাবা নতুন সাইকেল কিনে দিয়েছে, তাই নিয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড চষে বেড়াচ্ছে। মা-ও কিছু বলেন না। আসলে বাপের এক মেয়ে তো, আদর পেয়ে মাথায় উঠেছে।
রূপামাসি একটা ডিশে করে দুটো নিমকি আর দুটো প্যাড়া খেতে দিলেন চন্দনকে। চন্দন তাই খেয়ে নিজের ঘরে চলে এল। মানে এখানে যে ঘরে ও আছে। ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে পেরেকে ঝোলানো ওর ব্যাগটা নিয়ে এসে
তক্তাপোশের বিছানায় গুছিয়ে বসল। ওর একমাত্র প্রিয় সঙ্গী বইগুলো খুলে ছুটির দিনগুলো কাটিয়ে দেবে ও। কিন্তু এ কী! ব্যাগের ভেতর থেকে এসব কী বেরোচ্ছে? কোথায় গেল পাণ্ডব গোয়েন্দা, কোথায় গেল ভূতের গল্প ভয়ংকর। নকুড়মামা, দুরন্ত তপাই, দিঘা সৈকতে আতঙ্ক, ভাঙা দেউলের ইতিকথা, কিশোর গল্প সংকলন একটা বই-ও নেই। তার জায়গায় বেরোতে লাগল পাতা ছেঁড়া ব্যাকরণ কৌমুদী, ইংলিশ গ্রামার অ্যান্ড কম্পোজিসন, ভূগোল ও বিজ্ঞানের বই। তার সঙ্গে বেরোল একটা চিঠি ‘প্রিয় নেকু, তোমার এখন লেখাপড়া করবার সময়। এই বয়সে এইসব বই না-পড়ে এই বইগুলো পড়ো। আখেরে কাজ দেবে। আপাতত বইগুলো আমার জিম্বায় রেখে দিলাম। বাড়ি যাবার আগে চেয়ে নিয়ো কেমন?’
চন্দন ‘ওফ’ করে একবার লাফিয়ে উঠল। নাঃ এক্ষুনি এর একটা প্রতিকারের দরকার হয়ে পড়েছে। একবার ভাবল ও ছোটমাসিকে গিয়ে সব কথা খুলে বলে, আবার ভাবল বলেই বা লাভ কী? ছোট মাসির কথায় তো বোঝাই গেছে বাপের আদুরে মেয়েটি আউট অব কন্ট্রোল। ওকে অন্য উপায়ে জব্দ করতে হবে। কেন না ও বড়ই দুর্বিনীত।
চন্দন আর না-দাঁড়িয়ে সোজা মালার ঘরের দিকে চলে গেল। ধিঙ্গি মেয়ে তো এখনও ফেরেনি। ও ব্যাকরণ, গ্রামার, ভূগোল ইত্যাদি বইগুলো ঘরের শিকল খুলে মালার বিছানায় রেখে একপাশে পড়ে থাকা একটি বাক্সর ডালা তুলে দেখল ওর বইগুলো সেখানে আছে কিনা। কিন্তু তুলেই দেখল সব ভোঁ ভোঁ। পাতা ছেঁড়া দু’–একটা পত্রপত্রিকা ছাড়া আর কিছু নেই। তবে একটা চিঠি ছিল। তাতে লেখা ছিল ‘হায় হায় নেকুরে, কী বুদ্ধু তুমিরে, কী দারুণ বোকারাম, তুমি একটি হাঁদারাম। আমি তোমার মতো অত বোকা নই যে বইগুলো তোমার হাতের কাছে রেখে যাব। যাও ঘরে যাও।’
চিঠি পড়ে চন্দন প্রায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। কী ফাজিল মেয়েরে বাবা। এমন মেয়ে তো দেখা যায় না। এ যেন ধানবাদের ধানি লঙ্কা। কিন্তু একবার রেগে উঠলেও পরক্ষণেই নরম হয়ে গেল চন্দন। কেন না ও বুঝল এর ওপর রাগ করে কোনও লাভ নেই। এই মেয়ের প্রকৃতিই এইরকম। তবে হ্যাঁ, পাণ্ডব গোয়েন্দার বাচ্চু-বিচ্ছুকেও এ মেয়ে ছাপিয়ে যায়।
চন্দন যখন কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না কীভাবে ও মালাকে জব্দ করবে, তেমন সময় ওর বাবার গলা শুনতে পেল। সঙ্গে মেসোরও।
চন্দন ঘর থেকে বেরিয়ে ওর মা-বাবার কাছে এল।
সুনন্দবাবু বললেন, আমরা একবার থানায় গিয়েছিলাম বুঝলে? রূপামাসি বলল, কী বলল ওরা?
পুলিশ বলল, দেখুন সুরাহা আমরা কিছুই করতে পারিনি। তবু এটুকু বলতে পারি আপনারা অযথা আমাদের যেন ভুল বুঝবেন না। আসলে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু এমন ভাব দেখাচ্ছি যেন হাল ছেড়ে দিয়ে বসে আছি আমরা। কেন না আমরা আশা করছি ওই মূর্তিটা এই অঞ্চলের আশেপাশেই কোথাও আছে। এই এলাকার বাইরে মূর্তি পাচার হবার সবরকম রাস্তা এমনিতেই বন্ধ। তাই ওত পেতে বসে আছি ওদের ধরবার জন্য। আমরা যদি তৎপর হই তা হলে ওরা সাবধান হয়ে যাবে। আর আমরা যদি অলসতার ভান দেখাই, তা হলে আমরা হাল ছেড়ে দিয়েছি ভেবে এক সময় নিশ্চিত্ত হয়ে ওরা মাল পাচার করতে যাবে এবং ধরা পড়বে। আমরা দেখেছি এই পরিকল্পনায় অনেক সময় ক্রিমিন্যাল ধরা পড়েছে।
নিরুপমবাবু বললেন, ওরা বলল আমরা শুনে গেলাম, তবে ওসব লালমাখানো কথায় কি চিড়ে ভিজবে? সব ব্যাটাদের বদমায়েশি। এদেরও ষড়যন্ত্র আছে।
সুনন্দবাবু বললেন, না না। আমার কিন্তু এদের কথা শুনে তা বলে মনে হল না। সব সময় সবাইকে সন্দেহ করা উচিত নয়।
রূপামাসি বলল, আসলে ব্যাপার কী জানেন জামাইবাবু, আমরা এখানে এই এতখানি সম্পত্তি ভোগ করছি তো, তাই এখানকার লোকেদের হিংসে খুব। এরা চাইছে আমাদের জ্বালাতন করে এখান থেকে তাড়াতে।
সুনন্দবাবু বললেন, সে তো তোমরা মনে করছ। আসলে তা না ও তো হতে পারে?
নিরুপমবাবু বললেন, তোমরা এখানকার লোককে চেনো না ভায়া, বড় স্বার্থপর এরা।
দেবযানী বললেন, সে কোন জায়গায় নয়?
এমন সময় দেওয়াল ঘড়িতে ঢং ঢং করে সাতটা বাজল।
রূপামাসির শাশুড়ি একটু দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে বললেন, তাই তো, মেয়েটা এখনও এল না, গেল কোথায়?
রূপামাসি বলল, মা, আপনি একটু শক্ত হন এবার। দিনকাল এখন খুব খারাপ পড়েছে। তার ওপর এইরকম একটা বিপর্যয় ঘটে গেল, এরপরেও কখনও রিস্ক নেয় কেউ? কী আছে কপালে তা কে জানে?
নিরুপমবাবু বললেন, না না এ তো ভাল কথা নয়, ওর মা-বাবা যখন থাকে তখন যা করে করুক। এখন কিছু হলে সব দোষ আমাদের ঘাড়ে চাপবে। ও ফিরে এলে বেশ কড়া কথায় বারণ করে দাও ওকে। এসব এখানে চলবে না।
বলতে বলতেই সাইকেল নিয়ে লম্বা বেণী দুলিয়ে ফ্রকপরা কিশোরী মালা গটগটিয়ে ঘরে ঢুকল।
নিরুপমবাবু বললেন, এত সন্ধে অব্দি রোজ রোজ বাইরে থাকিস কেন রে? বাড়িসুদ্ধু লোক ভেবে সারা হয়ে যাচ্ছি আমরা।
রূপামাসির শাশুড়ি বললেন, বড্ড বাড় বেড়েছ তুমি, দাঁড়াও। কী দস্যি মেয়েরে বাবা। এমন আমি বাপের কালে দেখিনি।
মালা কারও কথায় ভ্রূক্ষেপও না করে সোজা কলতলায় গিয়ে মুখহাত-পা ধুয়ে এসে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে এঘর ওঘর করল। তারপর এক সময় বলল, আচ্ছা কাকু! আপনি নিশ্চয়ই বলতে পারবেন কাকাহিগড় কোথায়?
নিরুপমবাবু বললেন, কাকাহিগড়? কী জানি নাম শুনিনি কখনও।
আছে আছে। একটা জায়গা আছে। কিন্তু কোনদিকে?
যেদিকেই হোক। তোকে অত খোঁজ নিতে হবে না। কাল থেকে একদম ঘর থেকে বেরোবি না। কী ভেবেছিস কী? কিছু একটা হয়ে গেলে তোর বাবাকে কী কৈফিয়ত দেব বল তো?
মালা সঙ্গে সঙ্গে রূপামাসির শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে বলল, ওঃ দিদা! তোমার ছোট ছেলেকে একটু চুপ করতে বলবে? কেবল শাসন আর শাসন। ভাল লাগে না বাবা। দু’দিন এলাম কোথায় বেড়াতে।
রূপামাসি বলল, অন্য কিছু নয় মা। দিনকাল কীরকম খারাপ পড়েছে দেখছিস তো। কেউ যদি ধরে নিয়ে চলে যায় তখন কী করবি? আর কি কচিখুকিটি আছিস?
মালা বলল, না গো না। দেওঘর এখনও অত খারাপ জায়গা হয়নি। এই বাড়িতে একবার একটা ডাকাতি হয়ে গেছে বলে তোমরা সব সময় আতঙ্কে আছ। না হলে এই দেওঘরে সারা বছর ধরে হাজার হাজার মানুষ তীর্থ করতে, বেড়াতে, হাওয়া বদল করতে আসছে। তা হলে সবার সব ছেলেমেয়েই চুরি হয়ে যেত।
নিরুপমবাবু বললেন, দিনমানে হলে তো ভয় কিছু ছিল না। তুই তো অসময়ে যাস। রাস্তায় যখন কোনও লোক থাকে না। হয় ভর সন্ধেবেলা, নয় তো ভোরের অন্ধকার এই তো তোর বেড়াবার সময়।
রূপামাসির শাশুড়ি বললেন, কাল থেকে একদম বাইরে বেরোবে না। ওই তো একটা ছেলে এসেছে বাড়িতে। ওর সঙ্গে গল্প কর, বাগানে ঘোর। এত বড় বাগান রয়েছে তা নয়, কেবল বাইরে ঘোরা। ছেলেটার সঙ্গে একবারও কথা বলেছিস তুই?
মালা সে কথার কোনও উত্তর না দিয়ে একটা হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে বলল, বড্ড খিদে পাচ্ছে। কাকিমা প্লিজ আমি ঘরে গিয়ে একটু শুচ্ছি, তুমি আমাকে একটু হালুয়া করে খাওয়াও। বলেই চলে গেল মালা। গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করল।
রূপামাসির শাশুড়ি বললেন, চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনি। কী মেয়েই হয়েছ মা।
চন্দনও মালার বকুনি শুনে ওর ঘরে ঢুকে দরজাটা আলতো করে ভেজিয়ে বিছানায় শুয়ে রইল চুপচাপ। ভাস্করমামা কখন আসবে কে জানে? যদি সত্যিই সিনেমায় গিয়ে থাকে তা হলে তো আসতে রাত হবে।
বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর হঠাৎ কী ভেবে যেন উঠে দাঁড়াল চন্দন। তারপর ধীরে ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সিঁড়ির পাশে কোণের ঘরের দরজাটা একটু ঠেলে ফাক করতেই দেখল এ বাড়ির চাকর বনমালী হেঁট হয়ে ঝুঁকে পড়ে কী যেন একটা ধর্মগ্রন্থ পাঠ করছে।
চন্দন ভেতরে ঢুকতেই বনমালী বলল, আরে চন্দনবাবু, এসো এসো। সারাদিন তো কাজ কাজ করে তোমার সঙ্গে আলাপই করা হয়নি। এসো, ভেতরে এসো। চন্দন বলল, এই তোমার ঘর? খুব ছোট্ট, কিন্তু বেশ পরিষ্কার তো।
বনমালী বলল, পরিষ্কার না হয়ে উপায় আছে? এতটুকু নোংরা দেখলে ঠাকুমা বকুনির চোটে ভুবন অন্ধকার করিয়ে দেবেন?
ঠাকুমা অর্থে রূপামাসির শাশুড়ি।
চন্দন বলল, উনি খুব বকেন বুঝি?
না না। শুধু শুধু বকেন না। তবে এতটুকু নোংরাও যেমন উনি দেখতে পারেন না, তেমনি কোনও অন্যায়ও সহ্য করতে পারেন না। আর কথা না শুনলে খুব রেগে যান।
কে বললে? আমি তো দেখছি ওনার নাতনির একটার পর একটা অন্যায় উনি সহ্য করে যাচ্ছেন। কই কিছু তো বলছেন না?
ওই একটি জায়গাতেই উনি খুব নরম। আসলে মালা দিদিমণি তো বাপের এক মেয়ে। আর খুব অভিমানী। সেইজন্যে কেউ কিছুই বলে না ওকে।
তা হলে তো মাথায় চেপে বসবে।
আরে বসবে কী! বসেছে তো। তা যাক। ঠাকুমা বকাঝকা করলেও ঠাকুমার মতো মানুষ হয় না। আমার যখন আট বছর বয়স তখন উনি পুরী বেড়াতে গিয়ে আনন্দবাজার থেকে আমাকে কুড়িয়ে এনে মানুষ করেন। আমার তো কেউ কোথাও ছিল না। তাই ওনার শিক্ষায় মানুষ হয়েছি আমি। রোজ ভোরে উঠে স্নান করি। ঠাকুরের ফুল তুলি। ঘরের কাজ করি।
ঠাকুরের ফুল? ঠাকুর তো এখন নেই।
নাই বা রইল। ঠাকুমা যে ওই বেদিকেই ফুল দিয়ে সাজান। কত কাঁদেন ঠাকুরের জন্যে। ঠাকুমার বিশ্বাস তাঁর রাধাকৃষ্ণ আবার ফিরে আসবে ওই সিংহাসন আলো করে।
চন্দন বলল, ঠাকুমার বিশ্বাস হলেও আমার তো মনে হয় না আসবে। অত দামি জিনিস, আজ কতদিন হল খোয়া গেছে। আর কখনও ফেরত পাওয়া যায়? বনমালী বলল, চন্দনবাবু, একটা কথা আছে জানো তো, ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর’, ঠাকুমার বিশ্বাস সন্ন্যাসীপ্রদত্ত এই ঠাকুর কখনওই চুরি যাবার নয়। কেন না এখনও তাঁরা এমন কোনও অনিয়ম বা অনাচার করেননি যাতে বিগ্রহ কুপিত হয়ে চলে যেতে পারেন। তবু চলে যখন গেছেন তখন ধরে নিতে হবে তাঁর প্রতি গৃহেস্থের আন্তরিকতা কতখানি তা পরীক্ষা করবার জন্যই হয়তো তিনি ছলনা করেছেন। কাজেই একান্তভাবে তাঁকে ডাকলে মনে হয় আবার তিনি ফিরে আসবেন।
চন্দন সব শুনল। তারপর একসময় বলল, আচ্ছা বনমালীদা, বলতে পারো কাকাহিগড় কোথায়?
কাকাহিগড় !
হ্যাঁ, কাকাহিগড়।
ও নাম তুমি কোত্থেকে শুনলে?
যেখান থেকেই হোক শুনেছি। জায়গাটা কোথায়?
কাছাকাছিই আছে। দেওঘর শহরের পশ্চিমদিকে। কিন্তু ওই জায়গার ওপর তোমার এত কৌতূহল কেন?
এমনি। নামটা খুব পছন্দসই কিনা, তাই।
ওটা বুনো জায়গা। ঝোপঝাড়, টিলা আর মস্ত একটা ঢিপি আছে। তার আশেপাশে আছে কিছু খেতি জমি। ইদানীং এক সাধুবাবা এসেছেন ওখানে। কিন্তু তুমি কার মুখে শুনলে?
মালা জানতে চাইছিল কিনা, তাই!
অ। মালাদিদিমণি। তাই বলো। ভারী দুষ্টু মেয়ে। তবে মন ওর খুব ভাল। চন্দন মনে মনে বলল ‘ছাই’, মুখে বলল, আমাকে একদিন নিয়ে যাবে সেখানে?
বনমালী কীরকম যেন করুণ চোখে একবার তাকাল চন্দনের দিকে। তারপর বলল, চন্দনবাবু, তুমি আর যেখানে যেতে চাও আমি তোমাকে নিয়ে যাব। শুধু কাকাহিগড়ে যেয়ো না। দু’দিনের জন্য এসেছ। ভাল ভাল জায়গায় ঘুরে বেড়াও। খাও দাও। মন্দির দেখো, পাহাড় দেখো কিন্তু কাকাহিগড়। না না না।
আমার মনে হচ্ছে ওটা খুব রহস্যময় জায়গা, তাই না?
ঠিক তাই। আর তা ছাড়া ওখানকার যিনি সাধুবাবা তিনি খুব একটা সুবিধের লোক নন। শুনেছি ওখানে উনি চামুণ্ডাদেবীর কাছে নরবলি দেন। সে কী! এই সভ্য যুগে নরবলি! এত কড়া প্রশাসন সত্ত্বেও।
বাবু, যারা ক্রিমিনাল তারা কি আইনকানুন মানে? না ভয় করে। তা যাক গে, ওসব কথা থাক। চলো কাল ভোরবেলা স্নান করে ঠাকুরের ফুলটুল তুলে দিয়ে তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় বেড়াতে যাই।
কোথায় বনমালীদা ?
নন্দন পাহাড়ে। ভোরের আবছায়ায় পায়ে হেঁটে নন্দন পাহাড়ে বেড়াতে যেতে কী ভাল যে লাগে তা কী বলব!
ঠিক আছে যাব। যদি ঘুমিয়ে পড়ি তো আমাকে ডেকে নিয়ো কেমন? পারি তো ভাস্করমামাকেও সঙ্গে নেব।
মামাবাবুকে? তুমি নেহাতই ছেলেমানুষ চন্দনবাবু। তোমার মামাবাবুকে যদি বেলা আটটার আগে ঘুম থেকে তুলতে পারো তো তোমাকে চারটে পাকা পেয়ারা খাইয়ে দেব আমি।
এমন সময় রান্নাঘর থেকে রূপামাসি হাঁক দিলেন, চন্দন একবার এদিকে আয়।
যাই মাসিমা। বলে চন্দন ঘর থেকে বেরিয়ে এল। যাবার আগে বলল, তা হলে ওই কথাই রইল, কেমন?
হ্যাঁ গো, হ্যাঁ।
চন্দন রান্নাঘরে ঢুকতেই দেখল সেই দুর্বিনীত মেয়ে মালা বসে মনের আনন্দে হালুয়া খাচ্ছে। রূপামাসি চন্দনের দিকেও এক প্লেট হালুয়া এগিয়ে দিলেন। চন্দন সবে হালুয়াটা খেতে যাবে এমনসময় বাইরে ভাস্করমামার চেঁচামেচি শোনা গেল, চোর— চোর–পাকড়ো— পাকড়ো— জামাইবাবু!
নিরুপমবাবু এবং সুনন্দবাবু দালানে বসে গল্প করছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে একজন একটি লোহার রড এবং অন্যজন একটি দরজার খিল নিয়ে ছুটে বাইরে এলেন, কই, কোথায় চোর!
খাবার ফেলে চন্দন, রূপামাসি, মা সবাই ছুটে এলেন বাইরে।
ভাস্করমামা বলল, আমি পাঁচিলের গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকছি, হঠাৎ দেখি তিন চারজন লোক দৌড়ে পালাল।
নিরুপমবাবু বললেন, কোনদিকে গেল?
বাগানের দিকে।
তা হলে বেরোতে পারবে না। দুটো টর্চ নিয়ে এসো তো দেখি? মালা সঙ্গে সঙ্গে টর্চ আনতে ঢুকল।
রূপামাসি বলল, না না। বাগানে যেতে হবে না, এত রাতে অন্ধকারে। যদি পিছন থেকে লোহার রড-ফড মারে তখন? তা ছাড়া আজকাল ওদের কাছে বোমাও থাকে।
তাই বলে চুপচাপ বসে থাকব? একটু তাড়াতুড়ি না করলে হয়? আর এখন তো আমি একা নই।
এমন সময় ঘরের ভেতর থেকে মালা চিৎকার করে কেঁদে উঠল। তারপর টর্চ হাতে ছুটে এসে বলল, ও কাকা গো, আমার সাইকেলটা দেখতে পাচ্ছি না। রূপামাসি বলল, সে কী! কোথায় ছিল সাইকেল?
দালানে, দরজার পাশে।
সুনন্দবাবু এবং নিরুপমবাবু দু’জনে অবাক, দালানে! আমরা তো ঠায় বসে আছি। আমাদের নজর এড়িয়ে কখন কোন ফাঁকে নিয়ে পালাল ?
রূপামাসি বলল, চাবি দিসনি সাইকেলে?
না।
নিরুপমবাবু বললেন, তা হলে তো দেখতেই হচ্ছে। বাগানের দিকে যদি ওরা গিয়ে থাকে তো সাইকেল নিয়ে পালাতে পারবে না।
অতএব দলবদ্ধ হয়ে ওরা বাগানের দিকে এগোতে থাকল। চন্দন আর মালাও সঙ্গ নিতে ছাড়ল না। শুধু রূপামাসি ও দেবযানী রইলেন সদরের দিকে প্রহরায়।
কিন্তু না, বাগানের একদম ভেতর পর্যন্ত ঢুকেও কারও পাত্তা পাওয়া গেল না। সেই সঙ্গে সাইকেলটারও কোনও হদিস মিলল না। অতএব ফিরে এল সকলে। মালার চোখ দিয়ে সমানে জল ঝরছে। মালার অবস্থা দেখে ওর প্রতি আর কোনও রাগ বা ক্ষোভ রইল না চন্দনের।
একটু সান্ত্বনার সুরে বলল চন্দন, কী হবে কেঁদে? তোমার বাবাকে বোলো আবার নতুন সাইকেল কিনে দিতে।
মালা ফুঁপিয়ে কেঁদে বলল, বাবা আর দেবেন না। তা ছাড়া এরকম সাইকেলও হবে না আর। একেবারে আমার মনের মতনটি ছিল। তা ছাড়া সাইকেলটা চুরি গিয়ে এই মুহূর্তে আমার যে কী ক্ষতি হয়ে গেল, তা তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না। আমার এত পরিশ্রম সব ব্যর্থ হয়ে গেল।
একটা সাইকেলের জন্য তোমার এমন কী ক্ষতি হল যে, তুমি এত ভেঙে পড়ছ?
সে তুমি বুঝবে না। কেউ বুঝবে না। কাউকে বলা যাবে না সে কথা। সাইকেল যদিও বাবা আবার কিনে দেন তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে।
মালার বক্তব্য ক্রমশই যেন রহস্যময় হয়ে উঠল চন্দনের কাছে। তবে ও বুঝতে পারল এই ফুটফুটে কিশোরী মেয়েটি আর পাঁচটা মেয়ের মতো নয়।
যাই হোক। ওরা সকলে ফিরে এসে খাওয়াদাওয়া করে যখন শুতে গেল রাত তখন এগারোটা।
রাত তখন কত তা কে জানে? হঠাৎ দরজায় টক-টক শব্দ শুনে ঘুম থেকে উঠে বসল চন্দন। ভাস্করমামা তখন অঘোরে ঘুমোচ্ছে। উঃ সে কী দারুণ নাক ডাকার শব্দ। এমন ঘুম কেউ ঘুমোতে পারে।
চন্দন পা টিপেটিপে দরজার কাছে এসে সাড়া দিল, কে?
একবার দরজাটা খুলবে?
এ তো মালার গলা। এত রাতে মালা ওকে দরজা খুলতে বলছে কেন? তবে কি আবার নতুন করে কোনও বিপদ হয়েছে? কিন্তু তা যদি হত, তা হলে তো ভাস্করমামাকে ডাকত। যাই হোক, চন্দন এক মুহূর্ত দেরি না করে খুলে ফেলল দরজাটা।
কী ব্যাপার!
মালা ঠোটে তর্জনী রেখে চাপা গলায় বলল, চুপ, তারপর বলল, একবার এদিকে এসো তো।
চন্দন দরজার কাছ থেকে একটু সরে এল। মালা ওর হাত ধরে প্রায় টানতে টানতে সিঁড়িভেঙে ওকে টেনে নিয়ে গেল ছাদে। তারপর ছাদের আলশের ধারে দাঁড়িয়ে বলল, ওই দেখো।
চন্দন তাকিয়ে দেখল বহু দূরে বাগানের ঘন গাছপালার আড়ালে ছায়া ছায়া কালো কালো কারা যেন ঘোরাফেরা করছে। সামনেই কোজাগরি পূর্ণিমা। তাই জ্যোৎস্নায় ফুল ফুটে যাচ্ছে চারদিকে।
চন্দন বলল, বেশ রহস্যময় ব্যাপার তো।
মালা বলল, আমি ওদের অনুসরণ করতে চাই।
চন্দন বলল, তুমি কি পাগল হয়েছ মালা? ওরা কারা? দলে ওরা কতজন তা কি জানো?
চন্দন, তুমি যদি আমার পাশে থাক, তা হলে আমি কাউকে ভয় পাব না। তুমি না এলে আমি একাই যাব। এতদিন তো একা একাই সবকিছু করছিলাম আমি। কিন্তু তুমি যখন রয়েছ তখন…।
একা একা কী করছিলে তুমি?
সে অনেক কিছু। পরে সব বলব তোমাকে।
তোমার সঙ্গে যেতে আমার একটুও আপত্তি নেই। কিন্তু তুমি জেনে রেখো যে আশায় তুমি যাচ্ছ, তা কিন্তু সফল হবে না। অর্থাৎ ওই সাইকেল তুমি আর ফিরে পাচ্ছ না।
আরে না-না সাইকেলের জন্যে নয়। তা হলে তোমাকে সব কথা খুলে বলি শোনো। আমাদের বাড়ির এই মূর্তিচুরি এবং ডাকাতির ব্যাপারে আমি ভেতরে ভেতরে অনুসন্ধান করতে গিয়ে, অনেক কিছু আবিষ্কার করে ফেলেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের রাধাকৃষ্ণ মূর্তি দুষ্কৃতকারীরা পাচার করতে পারেনি। ওই সাইকেল নিয়ে আমি যে দিনরাত টো টো করে ঘুরে বেড়াতাম, তা ছেলেখেলা করতে নয়। আসলে আমি ওই মূর্তি উদ্ধারের জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যাক, এখন এসব কথা বলার মতো সময় নেই। পরে সব বলব। এখন বলো যাবে কি না?
যাব। নিশ্চয়ই যাব! কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছি না, এত রাতে তুমি টের পেলে কী করে, যে ওরা ওখানে ঘোরাঘুরি করছে?
ওরা প্রায়ই আসে, তবে কখন আসে তা জানতাম না। কারণ বাগানের ভেতরে যেখানে সেখানে সিগারেটের খোল, দেশলাই বাক্স ইত্যাদি দেখতে পাই আমি। তাতেই বুঝতে পারি এক বা একাধিক ব্যক্তির আসা যাওয়া আছে এখানে। আজ তোমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আমি ছাদে উঠে যখন বাগানের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম আমার সাইকেলটা কেউ লুকিয়ে রাখার পর নিয়ে পালাচ্ছে কি না, তখনই ওই আলো আমি দেখতে পাই। আমি একাই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ তোমার কথা মনে পড়ল। মনে হল তুমি তো আছ। তোমাকে ডাকলে নিশ্চয়ই তুমি ডাকে সাড়া দেবে এবং আমার সঙ্গে যাবে।
আমি যাব। চলো আর একটুও দেরি কোরো না। এক্ষুনি চলো।
ওরা তর তর করে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এল।