এ আমার কী হয়েছে আজকাল? যেদিকে তাকাই
মনে হয় অন্ধকার দাঁত নোখ বের ক’রে চোখ
পাকায় কেবল, বুঝি একটু পরেই
আমাকে ফেলবে গিলে। রাস্তার দু’পাশে
বাড়িগুলি অশ্রুপাত করে আর আমি
অশ্রুজলে ভিজে সপসপে এক বিষণ্ন ধীবর,
যার ছেঁড়া জালে কোনও মাছ ধরা পড়ছে না আর,
উঠে আসে শুধু কিছু বিষলতা, হাড়ের ভগ্নাংশ।
আসলে এই যে আমি একজন কবি-
বিষয়টি ভীষণ বিরক্তিকর এখন আমার
কাছে, যেন কুকুরের লেজে ঢ্যাঁড়া বেঁধে
দিয়েছে পাড়ার দুষ্ট বালকেরা মজা লুটে নিতে।
কবি ব’লেই তো
আমার দৃষ্টিতে ভেসে ওঠে বিপন্ন বসন্ত আর
উজাড় বাগান, সারি সারি ভয়াবহ
কংকালের জিন্দাবাদ ধ্বনি,
পুরাতন ঘাতক দলের হিংস্র লাঠির মিছিল।
কবি ব’লেই তো, অনেকের
সহাস্য মতানুযায়ী খামোকা শিউরে উঠি ক্ষণে
ক্ষণে রজ্জুকেই সর্প ভেবে, আমার নিজস্ব কিছু
পূর্বাভাস শুনে উপহাসে মেতে
ওঠেন আপনজন, পাড়াপড়শিরা থাকে খুব উদাসীন।
যখন সবাই রাতে ঘুমায় গভীর নিজ নিজ
বিছানায়, ভাসে স্বপ্নে, স্বপ্নহীনতায়;
আমি নিজে প্যাঁচার মতন জেগে থাকি প্রায়শই,
হিজিবিজি আঁকি শূন্যে, দেখি
কোন্ দূরে বিধবা বালিশ সিক্ত করে অশ্রুজলে,
জানালার ব্যথিত পর্দায় প্রস্ফুটিত
হাহাকার। কোথা ক্ষুধার্ত শিশু কেঁদে ওঠে, বেকার পুরুষ
কামে তপ্ত হ’য়ে আলিঙ্গনে বাঁধে
আপন নারীকে তার, চাঁদখেকো ছায়া
স্ফীত হ’তে হ’তে পুরোপুরি গ্রাস করে শহরকে।
স্পষ্টত বলতে গেলে, এই আমি কবি ব’লে নিজে
বড়ই বিরক্ত হই ইদানীং নিজেরই উপর; একা-একা
পথ হেঁটে গেলে মনে হয়
কে যেন ছায়ার মতো আমাকে অনুসরণ করে
সারাক্ষণ, আড়ি পেতে শোনে
যা আমি আবৃত্তি করি মনে-মনে, সুচতুর জাল
পেতে রাখে সম্মুখে আমার;
দাড়িতাকে গোপনে চুম্বন করি যখন, তখন
সে ঈর্ষায় জ্ব’লে যুগ্মতার চিত্রটিকে কখনঅ ছিঁড়তে
কখনও পুড়িয়ে ছারখার ক’রে দিতে চায় আর
এই কবি যন্ত্রণাকাতর প্রায় ক্রুশবিদ্ধ কবি
শব্দের পেছনে ছোটে বনবাদাড়ে, খাদের পাড় ঘেঁষে
ঢুকে পড়ে নরখাদকের কালো গুহায় এবং
জেনেশুনে বাড়ায় নিষ্কম্প হাত বিষধর সাপের খোঁড়লে।
১১.৪.৯৭