সকালে ফাউস্ট পড়লাম, কিছুক্ষণ তরতাজা
সংবাদপত্রও বটে, সদ্য-দেখা যুদ্ধার্ত পোলিশ
ফিল্মের নানান শট মনে পড়ে। করি ঘষামাজা
পঙক্তিমালা কবিতায়, জানালায় মেফিস্টোফিলিস
হাসে, পা দোলায় ঘন ঘন, তার উত্তোলিত ভুরু
সর্বক্ষণ জপে মৃত্যু, কখনো বা হঠাৎ দাঁড়িয়ে
আমাকে শোনায় তত্ত্ব রাশি রাশি। ভেনাসের ঊরু
অকস্মাৎ উদ্ভাসিত কিংবা প্ল্যাটো দিলেন বাড়িয়ে
তাঁর হাত মগজের কোষে কোষে। বেহুলা কখন
আসে লখিন্দরময় ভেলা নিয়ে খলখলে জলে,
নিজেই বিস্মিত হই। চিত্রকল্প যখন তখন
নেচে ওঠে চতুষ্পার্শ্বে, দেয়ালের থেকে কত ছলে হঠাৎ বেরিয়ে আসে চিত্রমালা,
শূন্য থেকে আসে,
যেমন মেঘের পরে জমে মেঘ। দুপুরে চৈনিক
রেস্তোরাঁয় তিনজন তীক্ষ্ম সমালোচকের পাশে
বসে আস্তে সুস্থে করলাম মধ্যাহ্ন ভোজন, ঠিক
বুঝতে পারিনি কী যে ওঁরা তিব্বতী মন্ত্রের মতো আউড়ে গেলেন কিছুক্ষণ নিশ্চল
জ্যাকেট হয়ে,
বোঝালেন কী কী বস্তু নিরঞ্জন সাহিত্যসম্মত।
বেরুলে নতুন বই কিছুকাল থাকি ভয়ে ভয়ে।
রিভিউ মুদ্রিত হলে কোথায় নতুন পাণ্ডুলিপি
আপনার বলবে কি প্রকাশক কিংবা সম্পাদক
‘আগামী সংখ্যায় অবশ্যই লেখা চাই’, বলে ছিপি
খোলা সোড়া বোতলের মতো হবেন কি? ধ্বক
করে ওঠে বুক অকস্মাৎ। থাক, আপাতত বেলা
থাক আড্ডা দিয়ে বাদ্য শুনে, স্বপ্নলোকে ছুঁড়ে ঢেলা।
প্রায়শই গাঢ় সন্ধ্যা উপহার দেয় কিছু কথা,
লতাগুল্ময় উৎস থেকে উচ্ছ্বসিত জ্যোৎস্নামাখা।
ঝরণার মতোন হাসি, আধফোটা স্বপ্ন, ব্যাকুলতা।
চোখ বুজলেই দেখি কালো বধ্যভুমির উপরে
একটি রহস্যময় পাখি উড়ে উড়ে গান গায়
সারারাত। কবেকার মিউজিসিয়ান আস্তে করে
প্রবেশ আমার ঘরে, ধুলো ঝাড়ে শরীরের, খায়,
মদ চামড়ার থলে শূন্য করে। তার বেহালার
তারে আদি কান্না, সুপ্রাচীন স্মৃতি বাজে, আমি তাকে
ঘরে রেখে নামি পথে। ফুটপাত, গাছ, অন্ধকার,
বেশ্যার চোখের মতো রেস্তোঁরার আলো শুধু ডাকে
আমাকেই, যে আমি তাদের আপনজন আর
আমার নিবাস এখানেই, এই সত্য হয় গান
অস্তিত্বের মাঠে, পুনরায় মধ্যরাতে ফিরে আসি
ঘরে, কড়া নাড়ি, শুতে যাই, দেখি বিধ্বস্ত বাগান
ঘরময়, পরাভুত নগরীর দেয়াল, মিনার
স্মৃতির অরণ্য চিরে জাগে, শব্দের বুদ্বুদ নাচে
শিরায় শিরায়, হয় পঙক্তিমালা, যেন আদিবাসী
আমি নগ্ন, নতজানু অন্ধকারে রহেস্যর কাছে।
ঘুমঘোরে ভাবি ফের অর্ফিয়ুস বাজাবে কি বাঁশি?