ওরা ঘুমিয়ে আছে, ওদের ঘুমোতে দাও।
ওদের কবরে এখন গজিয়ে উঠেছে ঘাস,
যেমন যুবকের বুকে ঘন রোমরাজি।
ওরা ঘুমিয়ে আছে আমরা জেগে থাকবো বলে।
এখন ওদের কোনো ঝুটঝামেলা নেই,
নেই ঋণ কিংবা ব্যাঙ্ক ত্র্যাকাউন্টের ভাবনা,
প্রতি মাসে বাড়ি ভাড়া মেটানোর
দুশ্চিন্তা-কুশ ওদের রাতের ঘুমে চিড় ধরায় না আর;
ওরা বড় শান্তিতে নিদ্রিত এখন,
ওদের শান্তি ভঙ্গ কোরো না।
ওরা ঘুমিয়ে আছে, নিথর পাথর;
সেই পবিত্র পাথরে আঁচড় কেটো না।
ওরা রাইফেলের গর্জে-ওঠা মুখে পেতে দিয়েছিল বুক,
যাতে আজ আমাদের হৃৎপিণ্ড নির্বিঘ্নে স্পন্দিত হতে পারে।
ওরা ঘুমিয়ে আছে, ওদের ঘুমোতে দাও।
একদিন ওরা আমাদেরই মতো হেঁটে যেতো দীর্ঘ পথ দিয়ে,
আড্ডা দিতো কাফেটেরিয়ায়, চা-খানায়,
পেঙ্গুইন সিরিজের বই পড়তো, দেখতো নাটক,
নারী ও নিসর্গের প্রতি ভালোবাসা ছিল প্রবল,
বলতো দেশের ললাট থেকে দুর্দশার মেঘ মুছে ফেলবার কথা,
ওরা কাল ওদের কণ্ঠ স্তব্ধ হতে দিয়েছে,
আজ আমাদের কণ্ঠে আগামীর গান ঝংকৃত হবে বলে
ডাল ভাতের ক্ষুধার চেয়েও তীক্ষ্ম এক ক্ষুধায় জ্বলে
পানির তৃষ্ণার চেয়েও গভীর তৃষ্ণায় কাতর
ওরা ছুটে বেরিয়েছিল পথে,
ওদের সাধ আর স্বপ্ন বুলেটে ঝাঁঝারা হয়ে গিয়েছিল
আমাদের নানা রঙের
স্বপ্নের পাখায় আকাশ ছেয়ে যাবে বলে।
কারো মা তার সন্তানের মুখে পুরে দিয়েছিল
নারকেলের নাড়ু,
কারো জামার বোতামের ঘরে
টাটকা গোলাপ সাজিয়ে দিয়েছিল বোন,
বিদায়ের কালে কাউকে চুম্বন উপহার দিয়েছিল প্রিয়তমা।
প্রত্যাবর্তনের কথা বলে
ওরা কেউ ফিরে আসে নি,
আমরা আজ তাদের রক্তরঞ্জিত পথ ধরে এগিয়ে যাবো বলে।
যাবতীয় গোলাপ, রজনীগন্ধা, বকুল, চন্দ্রমল্লিকা,
কোকিল, দোয়েল, চন্দনা,
পায়রা, ময়ূর, শস্যরাশি এবং আবাল-বৃদ্ধবনিতাকে
গিলে খাচ্ছিল সোৎসাহে
কিম্ভুতকিমাকার এক জন্তু; ওরা সেই জানোয়ারকে
বাধা দিতে গিয়ে ঢলে পড়লো সূর্যাস্তের
জাফরানি গালিচা-বিছানো পথে,
আমাদের জীবনে সূর্যোদয় জয়োল্লাস ব্যাপক ছড়িয়ে দেবে বলে।
ওরা ঘুমিয়ে আছে, ওদের ঘুমোতে দাও।
পথশ্রান্ত ওরা, নিদ্রার গহ্বরে ওদের বিশ্রামের দরকার;
ওরা চেয়েছিল যেন ভয়ংকর দানবেরা মুখ খুলতে না পারে কখনো,
ওরা চেয়েছিল প্রাণীভূক উদ্ভিদ না জন্মায় এখানে,
ওরা পুতেছিল এমন একটি গাছ
যা কখনো বিকৃত হবে না রোমশ হাতের ঝটকায়,
আমাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যে
ওরা ওদের বর্তমানকে উৎসর্গ করেছিল অসীম সাহসিকতায়।
ওরা ঘুমিয়ে আছে, ওদের ঘুমোতে দাও;
আমাদের চোখের পাতা কোনো কুহকে বুজে এলে চলবে না আজ।